রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান: ইউরোপীয় নেতারা কেন ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার বিরোধিতা করছেন
Published: 24th, November 2025 GMT
প্রায় চার বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ২৮-দফার একটি শান্তি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ইউক্রেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছেন।
তবে তথাকথিত এই ২৮-দফা পরিকল্পনা মেনে নিতে যুক্তরাষ্ট্র চাপ দেওয়ায় ইউক্রেন ও তাদের মিত্রদেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। দেশগুলো মনে করছে, এই পরিকল্পনা মেনে নেওয়ার অর্থ রাশিয়ার চাহিদার কাছে আত্মসমর্পণ করা।
বিশেষ করে এই পরিকল্পনা অনুসারে, রাশিয়াকে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া কিংবা ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর আকার ছোট করার প্রস্তাব মেনে নিতে হবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর শান্তি পরিকল্পনা মেনে নিতে ইউক্রেনকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন। তবে ইউরোপীয় নেতাদের বিরোধিতার মুখে তিনি কিছুটা সুর নরম করেছেন। গত শনিবার ট্রাম্প বলেছেন, তাঁর পরিকল্পনাটি ইউক্রেনের জন্য চূড়ান্ত কোনো প্রস্তাব নয়।
ট্রাম্পের এই মন্তব্য জেনেভায় শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে কূটনৈতিক সমঝোতার উপায় খুঁজে বের করার সুযোগ করে দিয়েছে।
ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা কেন যুক্তরাষ্ট্রের এই খসড়া পরিকল্পনার বিরোধিতা করছেন? জেনেভার আলোচনায় কারা অংশ নিয়েছেন? জেনেভা বৈঠকের এজেন্ডা কী? চলুন এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেখা যাক।
জেনেভায় চলমান আলোচনার মূল লক্ষ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া বিতর্কিত শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে সমঝোতার উপায় খোঁজার চেষ্টা করা। ইউরোপীয় মিত্ররা ইউক্রেনের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন।জেনেভা বৈঠকের এজেন্ডা কী
জেনেভায় চলমান আলোচনার মূল লক্ষ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া বিতর্কিত শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে সমঝোতার উপায় খোঁজার চেষ্টা করা। ইউরোপীয় মিত্ররা ইউক্রেনের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।
জেনেভার বৈঠকে ইউক্রেন, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, বৈঠকে রুশ প্রতিনিধিরাও থাকবেন।
আল-জাজিরার সাংবাদিক হাশেম আহেলবারা জেনেভা থেকে বলেছেন, ইউক্রেনের জন্য এই বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন প্রশাসনের ২৮-দফা খসড়া পরিকল্পনা নিয়ে ইউক্রেন ও ইউরোপজুড়ে তীব্র উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। পরিকল্পনায় রাশিয়াকে নিজেদের ভূখণ্ডের কোনো একটি অংশ ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব সবচেয়ে বেশি উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, স্থায়ী শান্তিচুক্তির বিনিময়ে ইউক্রেনকে লুহানস্ক, দোনেৎস্ক ও ক্রিমিয়ার নিয়ন্ত্রণ রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দিতে হবে। একই সঙ্গে খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়ার রণাঙ্গনে যুদ্ধরত বাহিনী আর অগ্রসর হতে পারবে না।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর আকার ছোট করার প্রস্তাবও বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইউক্রেনের সেনা সক্ষমতা ৯ লাখ থেকে কমিয়ে ৬ লাখ করতে হবে। অস্ত্রও কমাতে হবে।
প্রস্তাব দুটির একটিও ইউক্রেনের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এগুলো মেনে নিলে নিরাপত্তা ব্যাপক মাত্রায় বিঘ্নিত হবে বলে মনে করছে দেশটি।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর আকার ছোট করার প্রস্তাবও বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইউক্রেনের সেনা সক্ষমতা ৯ লাখ থেকে কমিয়ে ৬ লাখ করতে হবে।আরও পড়ুনইউক্রেন নিয়ে শান্তিচুক্তির আলোচনায় বড় ধরনের অগ্রগতির কথা জানাল যুক্তরাষ্ট্র১৪ ঘণ্টা আগেজেনেভা বৈঠকে কারা অংশ নিয়েছেন
জেনেভার আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন মার্কিন সেনাবাহিনীর সচিব ড্যানিয়েল ড্রিসকোল।
ইউক্রেনের পক্ষে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন মোট ৯ জন কর্মকর্তা। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দপ্তরের প্রধান অ্যান্ড্রি ইয়ারমাক, ইউক্রেনের প্রধান আলোচক ও বিশেষ দূত রুস্তম উমেরভ। জেলেনস্কি তাঁদেরকে সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করার অনুমতি দিয়েছেন।
ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির নিরাপত্তা উপদেষ্টারা আলোচনায় যোগ দিয়েছেন, আছেন ইতালিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারাও।
ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে কেন ইউরোপীয় নেতারা উদ্বিগ্ন
ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা মনে করছে, ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট নয়। তারা বলছে, রাশিয়ার কাছে কোনো ভূমি ছেড়ে দেওয়া হবে না। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন বলেন, ‘যেকোনো গ্রহণযোগ্য ও টেকসই শান্তি পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা এবং যুদ্ধ শেষ করা, ভবিষ্যৎ সংঘাতের বীজ বপন করা নয়।’
উরসুলা ভন ডার লেন আরও তিনটি মূল নীতির কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো কোনো রাষ্ট্রকে জোরপূর্বক সীমান্ত পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া যাবে না। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর ক্ষমতার ওপর কোনো সীমা বেঁধে দেওয়া যাবে না। শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইউরোপীয় ইউনিয়নকে কেন্দ্রীয় ভূমিকায় রাখতে হবে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন বলেন, ইউক্রেনের তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের স্বাধীনতা ও সার্বভৌম অধিকার থাকতে হবে।
আরও পড়ুনযুদ্ধ বন্ধের পরিকল্পনা ঘিরে মার্কিন সমর্থন হারানোর শঙ্কায় ইউক্রেন২১ ঘণ্টা আগেএম৭৭৭ হোইৎজার কামান থেকে গোলা ছুড়ছেন ইউক্রেনের সেনারা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ইউক র ন র স ন ইউক র ন র প র প রস ত ব উদ ব গ
এছাড়াও পড়ুন:
সরকার এখনো নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি: রাশেদ খাঁন
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন বলেছেন, সরকার এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি। এটি সরকারের ব্যর্থতা অথবা অযোগ্যতা অথবা সদিচ্ছার অভাব।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার শাখারিদহ বাজারে নির্বাচনী গণসংযোগকালে তিনি এসব কথা বলেন।
রাশেদ খাঁন বলেন, শুধু মুখে বললেই তো হবে না। ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা নির্বাচন দিতে হলে সেরা পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আগামী নির্বাচনে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে যদি সংসদে পাঠানো না যায়, তাহলে ওই ব্যবসায়ীরা আওয়ামী মমতাজরা যেভাবে সংসদে গেল, এখনো যদি ওই ধরনের লোকেরা সংসদে যায়, তাহলে পরিবর্তনটা কী হবে?
তিনি আরো বলেন, আমি আমজনতার ভাই। আমি কখনোই নেতা হিসেবে আসিনি। আমি আপনাদের লোক। জুলাই আন্দোলন আপনারা করেছেন। মূল্যায়ন যদি করতে হয়, তবে সবার আগে আপনাদের করতে হবে। জনগণের বাইরে কোনো কিছু চিন্তা করার সুযোগ নেই।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন গণ অধিকার পরিষদের ঝিনাইদহ জেলা শাখার সভাপতি প্রভাষক এম সাখাওয়াত হোসেন, হরিনাকুন্ডু উপজেলার সভাপতি মারুফ জিতু, জেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি রিহান আহমেদ রাইহান, যুব অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মিশন আলীসহ অন্য নেতাকর্মীরা।
ঢাকা/সোহাগ/রফিক