চাঁদপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল শত বছর আগে। কিন্তু এখনো এই পৌরসভা সুপেয় পানি সরবরাহের মতো মৌলিক নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে পারেনি। এটি নিঃসন্দেহে চরম ব্যর্থতা। নাগরিকদের অভিযোগ, পৌর কর্তৃপক্ষ ময়লাযুক্ত, ঘোলা এবং দুর্গন্ধময় পানি সরবরাহ করছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য এক চরম ঝুঁকি তৈরি করেছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, পৌরসভার পানি শোধনাগারেই রয়েছে বড় ধরনের ত্রুটি। শহরের নতুন বাজার শোধনাগারে পাম্পের সাহায্যে ডাকাতিয়া নদী থেকে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো পাশের নালা থেকেও দূষিত পানি সরাসরি শোধনাগারে প্রবেশ করছে। যদিও শোধনাগারের একজন পাম্প অপারেটরের বক্তব্য, বর্ষায় পানি কিছুটা ঘোলা থাকে এবং তাঁরা ফিটকিরি ও ব্লিচিং ব্যবহার করেন। তবে এই বক্তব্য নাগরিকদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে একেবারেই মেলে না। কারণ, ফিটকিরি ব্যবহারের পরও অনেক গৃহিণীকে প্রায়ই ফিল্টার করতে হচ্ছে।
পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দার ক্ষোভ যথার্থ। তিনি বলেন, ‘এটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও এখনো তৃতীয় শ্রেণির সেবা দেওয়া হচ্ছে।’ স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের দাবি, এই সমস্যার জন্য বিগত সরকারের মদদপুষ্ট কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও লুটপাটকে দায়ী করা হয়েছে। এর মধ্যে পানির বিল বাড়ানোর ঘটনাও সাধারণ মানুষের ক্ষোভকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
দূষিত পানি পান করার ফলে জনস্বাস্থ্যের ওপর যে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে, তার প্রমাণ পাওয়া যায় চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কথায়। তিনি জানিয়েছেন, প্রতিদিন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত অনেক রোগী আসছেন, যাঁদের অবস্থা গুরুতর হলে মতলব আইসিডিডিআরবিতে স্থানান্তর করা হচ্ছে।
পৌরসভার প্রশাসক মো.
চাঁদপুর পৌরসভার পানি সরবরাহ নিয়ে এ দুর্ভোগ নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। অচল ভূগর্ভস্থ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি দ্রুত মেরামত করে চালু করতে হবে। নতুন বাজার শোধনাগারে নালার দূষিত পানি প্রবেশ বন্ধ করার জন্য দ্রুত স্থায়ী প্রকৌশলগত সমাধান নিশ্চিত করতে হবে। পানির লাইনের সঙ্গে ড্রেনের লাইনের লিকেজ চিহ্নিত করে দ্রুত সংস্কার করতে হবে। বিগত দিনের দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সারে গ্যাসের দাম ১৬ থেকে বেড়ে ২৯ টাকা ২৫ পয়সা
সার কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ১৬ টাকা থেকে একলাফে বাড়িয়ে ২৯ টাকা ২৫ পয়সা করা হয়েছে। নতুন দাম আগামী ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করার আদেশ দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন।
আজ রোববার বিইআরসি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ নতুন দাম ঘোষণা করেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিইআরসির সদস্য মো. আবদুর রাজ্জাক, মো. মিজানুর রহমান, সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ শাহিদ সারওয়ার প্রমুখ।
পেট্রোবাংলা এবং গ্যাসের বিতরণ কোম্পানিগুলো ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করার আবেদন করেছিল। সে প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি গ্রহণ করা হয় গত ৬ অক্টোবর।
সার কারখানায় পুরো মাত্রায় গ্যাস দেওয়া হলে ২০ লাখ টনের ওপরে সার উৎপাদন করা সম্ভব। আর ২০ লাখ টন সার উৎপাদন করা গেলে গ্যাসের দাম ৩০ টাকা হলেও আমদানির তুলনায় কম দাম পড়বে। বছরে ৩০–৩২ লাখ টন ইউরিয়া সার জোগান দিতে হয়। গ্যাসের অভাবে আমদানি করে ১৬–২১ লাখ টন জোগান দিতে হয়।দাম বাড়ানোর পর সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ না বাড়লে পেট্রোবাংলাকে জরিমানা করা হবে কি না বা দাম কমানো হবে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, পেট্রোবাংলা এলএনজি আমদানি বাড়িয়ে সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বাড়াবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, দাম বাড়ানো হলে বাড়তি ৭ কার্গো এলএনজি আমদানি করে সারে সরবরাহ করা হবে। ছয় মাস (অক্টোবর-মার্চ) পুরো মাত্রায় (২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হবে। অবশিষ্ট ছয় মাসের মধ্যে (এপ্রিল-মে) ১৬৫ মিলিয়ন হারে, জুনে ১৭৫ মিলিয়ন আর জুলাই-সেপ্টেম্বরে ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস সরবরাহ করবে।
সার কারখানায় পুরো মাত্রায় গ্যাস দেওয়া হলে ২০ লাখ টনের ওপরে সার উৎপাদন করা সম্ভব। আর ২০ লাখ টন সার উৎপাদন করা গেলে গ্যাসের ৩০ টাকা হলেও আমদানির তুলনায় কম দাম পড়বে। বছরে ৩০–৩২ লাখ টন ইউরিয়া সার জোগান দিতে হয়। গ্যাসের অভাবে আমদানি করে ১৬–২১ লাখ টন জোগান দিতে হয়।
ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার পিএলসির দৈনিক চাহিদা ৭২ মিলিয়ন ঘনফুট, শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের চাহিদা ৪১ মিলিয়ন ঘনফুট, চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের চাহিদা ৪৩ মিলিয়ন ঘনফুট, যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের চাহিদা ৪১ মিলিয়ন ঘনফুট, আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের চাহিদা ৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত আশুগঞ্জ সার কারখানা অনেক পুরনো হওয়ায় গ্যাস খরচ অনেক বেশি, যে কারণে কারখানাটি বন্ধ রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুনসার কারখানার জন্য গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব০৬ অক্টোবর ২০২৫এ ছাড়া বিদেশি কোম্পানির মালিকানাধীন কাফকো সার কারখানায় দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট। কাফকোকে চুক্তির আওতায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করা হয়। আর তাদের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক দরে ডলারে সার কিনে নেয় বাংলাদেশ। সম্প্রতি কোম্পানিটির সঙ্গে ৩০ টাকা দরে চুক্তি নবায়ন করা হয়েছে।