ভূমিকম্পে সচিবালয়ের নতুন ভবনে ফাটল
Published: 25th, November 2025 GMT
রাজধানীতে গত ২১ নভেম্বর ভূমিকম্পের জেরে সচিবালয়ের নতুন নির্মিত ১ নম্বর ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অফিস থাকা ভবনটির ১০ তলা ও তার আশপাশের কয়েকটি স্থানে এই ফাটল সবচেয়ে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। আকস্মিক এ পরিস্থিতিতে ভবনে কাজ করা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) ভবনটি ঘুরে দেখা যায়, ১০ তলার ৯৩০ নম্বর কক্ষের দরজার নিচের অংশে উত্তর পাশের দেয়ালে বড় আকারের ফাটল তৈরি হয়েছে। পলেস্তরাও খসে পড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। এর একতলা উপরের ১০০ নম্বর কক্ষের সামনের দেয়ালেও মাঝ বরাবর ফাটল দেখা যায়।
আরো পড়ুন:
ভূমিকম্পের ঘটনায় আতঙ্কিত নয়, সচেতন হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
ভূমিকম্প ও দুর্ঘটনার আশঙ্কায় মধ্যপাড়া খনি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ
একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি নতুন ভবনে এমন ফাটল দেখা দুশ্চিন্তা বাড়ায়। ভবনটি চালুর বয়স এখনো এক বছরও হয়নি।”
তবে গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, যে ফাটলগুলো দেখা গেছে তা মূল কাঠামোর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়। নির্বাহী প্রকৌশলী মুনতাসির মামুন জানান, ইটের তৈরি ৫ ইঞ্চি পুরু দেয়ালের কিছু স্থানে ফাটল ধরেছে, কিন্তু স্থাপনার পিলার বা মূল স্ট্রাকচারে কোনো ক্ষতি হয়নি। বিশেষজ্ঞ দলের পরিদর্শনের পর নিশ্চিত হওয়া গেছে, ফাটলগুলো শিগগিরই প্রয়োজনীয় মেরামতের মাধ্যমে ঠিক করা যাবে।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ৮টার দিকে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে রাজধানীসহ সারাদেশ কেঁপে ওঠে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল নরসিংদী অঞ্চলে। এতে শিশুসহ ১০ জন নিহত এবং ছয় শতাধিক মানুষ আহত হন। পরবর্তীতে ঢাকায় আরও দুটি হালকা কম্পন অনুভূত হয়।
৪৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২০ তলা বিশিষ্ট সচিবালয়ের ১ নম্বর এই ভবনটি চলতি বছরের মে মাসে চালু হয়। ২০১৮ সালে একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পটির দুটি বেজমেন্টসহ পুরো নির্মাণকাজ শেষ হয় গত বছরের ডিসেম্বর মাসে।
ভবনের ফাটল কীভাবে হলো, গঠনগত কোনো জটিলতা আছে কি না—তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল বিভাগ ও প্রশাসনের মধ্যে আলোচনাও শুরু হয়েছে। তবে আপাতত ভবনটি ব্যবহারে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলীরা।
ঢাকা/এএএম/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ভ ম কম প ভ ম কম প প রক শ
এছাড়াও পড়ুন:
ভূমিকম্পে ধামরাইয়ে হেলে পড়া সেই ভবন ভেঙে ফেলা হচ্ছে
ঢাকার ধামরাইয়ে ভূমিকম্পে হেলে পড়া ঝুঁকিপূর্ণ চারতলা ভবনটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। রাইজিংবিডি ডটকমে খবর প্রকাশের পর উপজেলা প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষ ভবনটি ভেঙে ফেলার নির্দেশনা দেয়।
শনিবার (২২ নভেম্বর) সকাল থেকে ভবনটি ভাঙা শুরু হয়।
আরো পড়ুন:
এক সেকেন্ডের ব্যবধানে ২ বার ভূমিকম্প: আবহাওয়া অধিদপ্তর
ভূমিকম্প আতঙ্ক: রবিবার বন্ধ থাকবে ঢাবি
এর আগে, ২০২৪ সালের মে মাসে আংশিক হেলে পড়ে ভবনটি। শুক্রবার ভূমিকম্পের পর আরো বেশি হেলে পড়লে ওই ভবনটি ভাঙার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সরেজমিনে শনিবার দুপুরের দিকে ধামরাই পৌরসভার ঢুলিভিটা এলাকায় গড়ে ওঠা ধানসিঁড়ি হাউজিং প্রকল্পের ভেতরের মো. জিয়াউদ্দিনের বাড়ির চারতলার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ভাঙার কাজ করতে দেখা যায় শ্রমিকদের।
ভবন মালিক ও স্থানীয়রা জানান, ধানসিঁড়ি হাউজিং প্রকল্পের ভেতরে পাশাপাশি দুটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। দুই ভবনের মধ্যে ১০ ফুট জায়গায় করিডরের মতো আরেকটি চারতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এটির ভেতর দিয়েই পেছনের দিকে অপর মূল ভবনে ঢুকতে হয়। এই করিডরের মতো অংশটিই পাশের ছয় তলা ভবনের ওপর হেলে পড়ে।
ভবনটিতে ঢুকে দেখা যায়, করিডরের তৃতীয় তলার অংশটি পাশের ছয়তলা ভবনের ওপর হেলে রয়েছে। তিন তলার বারান্দার রেলিংয়ের ইটের গাঁথুনির অংশটি ফেটে গেছে। তবে করিডরের আর কোথাও কোনো ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। যদিও করিডর দিয়ে ঢুকে চারতলা ভবনের ভেতরেও কোনো ক্ষয়ক্ষতির চিত্র দেখা যায়নি।
ভবনের মালিকপক্ষ জানায়, ওই প্লটটিতে ছয়তলা ভবন করার অনুমতি ছিল। এর মধ্যে সেটি দুটি প্লট আকারে বিক্রি করে মালিক। চার শতাংশের একটি অংশ কিনে নেন মো. রফিক। তিনি সেখানে তিন তলা ভবন নির্মাণ করেন। আর পেছনের দুই শতাংশ জমি কিনে নেন মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন। সেখানে তিনি নির্মাণ করেন চারতলা ভবন।
এছাড়া তিনতলা ভবন ও পাশের অপর ছয়তলা ভবনের মাঝখানে সড়কের মতো থাকা প্রায় ১০ ফুট চওড়া ও প্রায় ৪২ ফুট লম্বা জমি কিনে নিয়ে সেখানে করিডরের মতো বর্ধিত চারতলা সংযুক্ত ভবন নির্মাণ করেন জিয়াউদ্দিন। সেটিই ২০২৪ সালে প্রথম হেলে পড়ে। আর শুক্রবার এটি পুরোপুরি কাৎ হয়ে যায়। প্রশাসনের নির্দেশে সকাল থেকেই ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু করে মালিকপক্ষ।
মালিকপক্ষ বলছে, নিজ ইচ্ছাতে কয়েকদিনের মধ্যেই ভবনটির ঝুঁকিপূর্ণ অংশ ভেঙ্গে ফেলতেন তারা। কিন্তু গতকাল হঠাৎ ভূমিকম্প হওয়ায় আজই ভাঙার কাজ শুরু করেছেন। অচিরেই ঝুঁকিপূর্ণ অংশ ভেঙ্গে ফেলা হবে বলে জানান তারা।
ভবন মালিক মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিনের ছেলে মোনায়েম বলেন, “আসলে আগেই এটা আমাদের ডাঙার পরিকল্পনা ছিল। প্রশাসন যতটা ভাঙতে বলবে, সেটা ভাঙতাম। কিন্তু গতকাল যে ভূমিকম্প হয়েছে, তাতে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। যেজন্য দ্রুত এটা ভাঙার উদ্যোগ নেই। আজ সকাল থেকে ভাঙার কাজ চলছে। অর্ধেকের বেশি ভাঙা হয়ে গেছে। খুব দ্রুত ভাঙা শেষ হবে।”
সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসন ও ভবন মালিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ভাঙ্গা শুরু করায় স্থানীয় বাসিন্দারা স্বস্তি জানান।
ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মামনুন আহমেদ অনীক বলেন, “শুক্রবার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পর আমরা ওখানে লোক পাঠাই। পরিদর্শনের পর ভবনটি ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের দিকে অবশ্যই আমরা দায়িত্বশীল থাকব।”
ঢাকা/সাব্বির/মেহেদী