মানিকগঞ্জে বাউল আবুল সরকারকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর অনুসারীদের ওপর হামলাকে দেশের ধর্মীয় ও সামাজিক, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি চরম হুমকি হিসেবে দেখছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এসব ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সংস্থাটি।

আজ সোমবার টিআইবি এক বিবৃতিতে অবিলম্বে বাউলদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক অঙ্গীকারের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রমাণ রাখার আহ্বান জানায়।

মানিকগঞ্জের ঘিওরের এক ইমামের করা ধর্ম অবমাননার মামলায় পালাকার আবুল সরকারকে গত বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এরপর গতকাল রোববার তাঁর অনুসারীরা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের সময় ‘মানিকগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতা’ ব্যানারে একদল ব্যক্তি তাঁদের ওপর হামলা চালান।

এ ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের ক্ষোভ–বিক্ষোভ প্রকাশের মধ্যে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের বিবৃতি এল।

বিবৃতিতে বলা হয়, মানিকগঞ্জের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, হামলার মুহূর্তে পুলিশ দৃশ্যত অনাগ্রহী ও পর্যবেক্ষক ভূমিকায় অবস্থান করেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও গুরুতর করে তোলে। প্রকাশ্য হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃশ্যমান অনীহা ও সরকারের নীরবতাকে গোষ্ঠীগত সহিংসতার একটি অনানুষ্ঠানিক অনুমোদন হিসেবে ব্যাখ্যা করার ঝুঁকি তৈরি করে। এই পরিবেশে শিল্পীরা আত্মগোপনে যাচ্ছেন, পালাগান ও মাজারভিত্তিক সাংস্কৃতিক ধারার অনেকে তাদের কার্যক্রম সংকুচিত করতে বাধ্য হচ্ছেন এবং বৈচিত্র্যময় লোকসংস্কৃতির অনুশীলন এখন ভীতির সংস্কৃতির মুখে পড়ছে।

আরও পড়ুনমানিকগঞ্জে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে বাউলশিল্পী আবুল সরকার কারাগারে২১ নভেম্বর ২০২৫

টিআইবি বলছে, ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে শিল্পীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হলেও প্রকাশ্য দিবালোকে সংগঠিত হামলা থেকে আহত বাউলশিল্পীদের রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয় পর্যবেক্ষকের ভূমিকা এবং এ প্রসঙ্গে সরকারের নীরবতা আইনের শাসন, মানবাধিকার, মত প্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের সাংবিধানিক অধিকারকে পদদলিত করেছে।’

‘বিষয়টিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখানোর সুযোগ নেই’ মন্তব্য করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে এমন মনে হওয়া অমূলক নয় যে এ ঘটনা একটি সুসংগঠিত কৌশলের অংশ। দেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, লোকঐতিহ্য, আধ্যাত্মিক অনুশীলন এবং সংখ্যালঘু বিশ্বাসের ওপর চাপ বিভিন্ন সময়ে সামনে এসেছে। উদ্বেগের বিষয় হলো গত বছর কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর এ প্রবণতা ব্যাপকভাবে বেড়ে চলেছে।’

উদাহরণ হিসেবে বিভিন্ন জেলায় মাজার ভাঙচুর, কবর থেকে মৃত পীরের দেহ উত্তোলন ও অগ্নিসংযোগ, বাউল আসর বন্ধ, বাদ্যযন্ত্র জব্দ, গ্রামীণ মেলা ও নাটক বন্ধ করা, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণাপূর্ণ ঘোষণার বিষয়গুলো তুলে ধরা হয় বিবৃতিতে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সরকার নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে ধর্মান্ধ, উগ্র ও অশোভন তৎপরতার প্রতি নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। কেন—এ প্রশ্নের যেমন জবাব পাওয়া যায়নি, তেমনি ধর্মান্ধ মহলের উগ্র চাপের মুখে সরকারি প্রাথমিক স্কুলে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত কেন বাতিল করে এ ধরনের অপশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করল, তারও কোনো সদুত্তর নেই। এর মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় যে সরকারের নীরবতা এবং দুর্বল আইন প্রয়োগ একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী তাদের জন্য রাষ্ট্রীয় তোষণ হিসেবে ব্যবহার করছে।’

আরও পড়ুনধর্ম অবমাননার অজুহাত তুলে হামলা-মামলা বন্ধের দাবি ২৫৮ নাগরিকের৫৫ মিনিট আগে

অন্তর্বর্তী সরকার এ ধরনের অপতৎপরতা প্রতিরোধে স্বচ্ছ অবস্থান বা ভূমিকা নিতে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে বলে টিআইবির পর্যবেক্ষণ। বিবৃতিতে বলা হয়, এর ফলে একদিকে ধর্মান্ধতা ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হয়েছে, অন্যদিকে শান্তিপূর্ণ ধর্মচর্চা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও স্বাধীনতা হরণ হয়েছে। উগ্রতাকে রাষ্ট্রীয় তোষণের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘রাষ্ট্রের দ্রুততম পদক্ষেপটি যখন একজন শিল্পীর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়, অথচ প্রকাশ্য সহিংসতার বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র দৃঢ়তা অনুপস্থিত থাকে, তখন রাষ্ট্র আসলে কী বার্তা দেয়? সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বৈচিত্র্যের ওপর আক্রমণকারী শক্তির সামনে রাষ্ট্র ভীত, অপারগ, নাকি পরিকল্পিতভাবে প্রশ্রয় দিচ্ছে—এমন প্রশ্ন ওঠাও অমূলক নয়।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইফত খ র জ জ ম ন সরক র র ন রবত ম ন কগঞ জ প রক শ ট আইব

এছাড়াও পড়ুন:

ধর্মেন্দ্রর সেরা পাঁচ চরিত্র

আজ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন বলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেতা ধর্মেন্দ্র। ৬ দশকের বেশি সময়ের অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সিনেমা উপহার দিয়েছেন। তার হিট সিনেমার তালিকা মোটেও ছোট নয়। পাশাপাশি দর্শক-সমালোচকদেরও ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছেন এই বরেণ্য অভিনেতা। তবে তার ক্যারিয়ারে এমন কিছু চরিত্র যুক্ত হয়েছে, যা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এমন পাঁচ চরিত্র নিয়ে সাজানো হয়েছে এই প্রতিবেদন— 

অশোক (অনুপমা)
হৃষিকেশ মুখার্জি নির্মিত অন্যতম সাড়া জাগানো সিনেমা ‘অনুপমা’। ১৯৬৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ সিনেমায় ‘অশোক’ চরিত্রে অভিনয় করেন ধর্মেন্দ্র। এটি চিন্তাশীল কোমল ও শান্ত স্বভাবের চরিত্র। ক্ল্যাসিক্যাল এই সিনেমায় বিশেষ আবেগময় সৌন্দর্য যোগ করেছেন ধর্মেন্দ্র। তার সংবেদনশীল ও হৃদয়ছোঁয়া অভিনয় স্মরণীয় ও মর্মস্পর্শী প্রেমকাহিনি গড়ে তুলেছে। সিনেমাটির বিভিন্ন চরিত্রে আরো অভিনয় করেছেন—শর্মিলা ঠাকুর, তরুণ বোস, দুলারি প্রমুখ। 

আরো পড়ুন:

ধর্মেন্দ্রকে কেন ‘সুপারস্টার’ বলা হয়নি?

বরেণ্য অভিনেতা ধর্মেন্দ্র মারা গেছেন

শাকা (ফুল আউর পাথর)
বলিউডের আলোচিত ও হিট সিনেমা ‘ফুল আউর পাথর’। ও. পি. রালহান পরিচালিত এই সিনেমা ১৯৬৬ সালে মুক্তি পায়। সিনেমাটিতে ‘শাকা’ চরিত্রে অভিনয় করেন ধর্মেন্দ্র। এই সিনেমা ধর্মেন্দ্রকে রাতারাতি তারকা বানিয়ে দেয়। শক্তপোক্ত কিন্তু ভেতরে নরম হৃদয়ের ‘শাকার’ ভূমিকায় দুর্দান্ত ভারসাম্য বজায় রেখেছেন ধর্মেন্দ্র। পর্দায় তার শক্তিশালী উপস্থিতি ও স্মরণীয় অভিনয়ের কারণে প্রথম ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে মনোনয়ন লাভ করেন ধর্মেন্দ্র। সিনেমাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন—মীনা কুমারি, মদন পুরি, ললিতা প্রমুখ। 

সত্যপ্রিয়া আচার্য (সত্যকাম)
ধর্মেন্দ্র অভিনীত ‘সত্যকাম’ সিনেমাও পরিচালনা করেন হৃষিকেশ মুখার্জি। সিনেমাটিতে ‘সত্যপ্রিয়া আচার্য’ চরিত্রে অভিনয় করেন ধর্মেন্দ্র। ইমোশনাল-ড্রামা ঘরানার এই সিনেমায় ধর্মেন্দ্র তার অন্যতম শক্তিশালী অভিনয় দর্শকদের উপহার দিয়েছেন। দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজে সততা ধরে রাখার সংগ্রাম করা এক সৎ লোকের চরিত্র আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন ধর্মেন্দ্র। এই চরিত্রে অভিনয় করে সমালোচক ও দর্শকদের কাছ থেকে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান ধর্মেন্দ্র। ১৯৬৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন—শর্মিলা ঠাকুর, সঞ্জীব কুমার, অশোক কুমার প্রমুখ।

বিরু (শোলে)
বলিউডের আলোচিত চলচ্চিত্র ‘শোলে’। রমেশ সিপ্পি নির্মিত সিনেমাটি শুধু চলচ্চিত্রই নয়, এটি ভারতীয় সিনেমার মিথ। ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী এই সিনেমায় ‘বিরু’ চরিত্রে অভিনয় করেন ধর্মেন্দ্র। ‘বিরু’ চরিত্রে অভিনয় করে দেশজুড়ে সাড়া ফেলেছিলেন এই অভিনেতা। তার উদ্যম, হাস্যরস, সাহসিকতা এবং আইকনিক সংলাপগুলো তাকে ভারতীয় সিনেমার অন্যতম চরিত্রে পরিণত করে। অমিতাভ বচ্চন ও হেমা মালিনীর সঙ্গে তার দৃশ্যগুলো এখনো দর্শকদের মনে দাগ কেটে আছে। ১৯৭৫ সালে মুক্তি পায় সিনেমাটি।

প্রফেসর পরিমল ত্রিপাঠি (চুপকে চুপকে)
হৃষিকেশ মুখার্জি নির্মিত আলোচিত সিনেমা ‘চুপকে চুপকে’। ১৯৭৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ সিনেমায় ‘প্রফেসর পরিমল ত্রিপাঠি’ চরিত্রে অভিনয় করেন ধর্মেন্দ্র। এই ক্ল্যাসিক কমেডি ঘরানার চলচ্চিত্রে ধর্মেন্দ্রকে অত্যন্ত সহজভাবে দর্শকদের হাসাতে দেখা যায়। ড্রাইভার সেজে মজার কাণ্ড ঘটানো এক অধ্যাপকের চরিত্রে তার অভিনয় বলিউডের সেরা কৌতুকাভিনয়ের মধ্যে অন্যতম। সিনেমাটিতে আরো অভিনয় করেছেন—অমিতাভ বচ্চন, শর্মিলা ঠাকুর, জয়া বচ্চন, ওম প্রকাশ প্রমুখ। 

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ