বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরের প্রবৃদ্ধির মডেল ছিল অবকাঠামোকেন্দ্রিক, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক ছিল না; বরং অর্থনৈতিক গণতন্ত্রকে ক্ষয় করেছে। দুর্নীতিকেও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। তাই প্রবৃদ্ধির ধারণাটি নতুন করে ভাবতে হবে।

রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আজ সোমবার বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন সম্মেলনের তৃতীয় দিনে স্পিড টক বা একক বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। বর্তমানে হোসেন জিল্লুর রহমান বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, প্রবৃদ্ধি এখন আর শুধু অর্থনীতিবিদদের বিষয় নয়, এটিকে কিছু সংখ্যা বা অবকাঠামো প্রকল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা দুঃখজনক হবে। তিনি বলেন, ‘প্রবৃদ্ধির প্রক্রিয়াটিকেই আমি একধরনের গণতান্ত্রিক যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে দেখি। তার কারণ এখানে বহু কণ্ঠস্বর প্রবেশ করতে চায়; নিজেদের দাবি তুলে ধরে এবং প্রভাব বিস্তার করতে চায়।’

বক্তব্যের শুরুতে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘২০২৪ সালের আগস্টে আমরা একটি বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছি। এটি কোনো সাধারণ পরিবর্তন নয়। এটি ছিল বেশ গভীর। বহুস্তরীয় একটি পরিবর্তন। তারপরও প্রশ্নটি তোলা যায়, এটি কি সত্যিই একটি রাপচার (অতীতের ধারাবাহিকতাকে ভেঙে নতুন বাস্তবতা বা গঠনমূলক পরিবর্তন) ছিল?’

বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, গত বছরের আগস্টের পর প্রায় ১৫ মাসে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। নানা উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়েছে। বিভিন্ন সংস্কার চিন্তা সামনে এসেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও উচ্চাভিলাষী এজেন্ডা নিয়েছে। রাজনৈতিক বাস্তবতায়ও নানা ধরনের সম্পৃক্ততা দেখা যাচ্ছে। তবে চিন্তার বাস্তবতায় আসলে কী ঘটছে? কোন ধরনের ধারণা আজ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে চালিত করছে বা দেশের অভ্যন্তরে এবং বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অবস্থান নির্ধারণে কোন ধারণাগুলো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। আমার কাছে মনে হয়, বাংলাদেশ এখনো একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘আইডিয়ার যুদ্ধক্ষেত্র’।

রাষ্ট্রের সঙ্গে সমাজের সম্পর্ক কী হবে, তা নিয়ে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, রাষ্ট্র নিঃসন্দেহে একটি প্রাতিষ্ঠানিক বাস্তবতা। তবে রাষ্ট্রের সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে? রাষ্ট্র কীভাবে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ ও এগিয়ে নেবে? এগুলো এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন রাষ্ট্রকে ‘উন্নয়নমূলক রাষ্ট্র’ হিসেবে দেখেছি। এখন আমরা সেই ধাপ পেরিয়ে এসেছি। আজ রাষ্ট্র-সমাজ সম্পর্ক ন্যায়বিচার ও আস্থার ভিত্তিতে হতে হবে।

শিক্ষা মানবসম্পদে রূপান্তর হচ্ছে না মন্তব্য করে পিপিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, দুঃখজনকভাবে গত ১৫ মাসে আমরা অত্যন্ত জরুরি শিক্ষা খাতে যথেষ্ট মনোযোগ দিইনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে। সনদ বাড়ছে। তবে মানবসম্পদ ততটা বাড়ছে না। শিক্ষা ও মানব মূলধনের এই বিচ্ছিন্নতা ভবিষ্যতের সমাজ বিনির্মাণের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রাজনীতি নিয়ে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, গত ১৫ মাসে যে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে, এটি কি সত্যিকারের রাপচার ছিল? নাকি এটি শুধু এলিটদের দিয়ে নির্মিত পরিবর্তনের একটি মায়া? সামনের জাতীয় নির্বাচন কি আমাদের রূপান্তরের দিকে নিয়ে যাবে, নাকি আবার একটি এলিটদের প্রস্তুত করা পরিবর্তনের ভ্রম তৈরি হবে? এই প্রশ্ন অনুসন্ধান করতে হবে।

জিল্লুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের জোট দেখেছি। গঠনমূলক পরিবর্তনের জন্য আমি যে নতুন ধরনের জোটের কথা বলছি তা হলো অ্যাকটিভিস্ট, উদ্যোক্তা ও পেশাজীবীদের নতুন জোট। এ ধরনের জোট অতীতে আমাদের প্রয়োজন ছিল। তবে আমরা তা গড়ে তুলতে পারিনি। রাজনৈতিক জানালা খুললেও এ ধরনের সামাজিক জোট না থাকায় গভীর রূপান্তর ঘটেনি। তিনি আরও বলেন, আইডিয়ার যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এগুলোর সঙ্গে লড়াই করতে হবে। লড়াইয়ে থাকতে হবে এবং জয় করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ স ন জ ল ল র রহম ন ব প রব দ ধ র র জন ত ক ব স তবত ন ধরন র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

খালেদা জিয়া হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে, দেশবাসীর দোয়া কামনা

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মেডিকেল বোর্ডের নিবিড় তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। রবিবার (২৩ নভেম্বর) রাতে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সোমবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, “খালেদা জিয়া দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। মহান আল্লাহ দ্রুত সুস্থ করে তুলুন।”

আরো পড়ুন:

‘বেগম খালেদা জিয়ার হার্ট ও চেস্টে ইনফেকশন হয়েছে’

রাতে হাসপাতালে ভর্তি হলেন খালেদা জিয়া

এর আগে গত ১৫ অক্টোবর বিএনপির চেয়ারপারসন এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। একদিন থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। ৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।

গত ৭ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। ১১৭ দিন লন্ডনে অবস্থান শেষে গত ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ