ভূমিকম্প: জাপান, হাইতি ও চিলি থেকে শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা
Published: 24th, November 2025 GMT
২০১১ সালের ১১ মার্চ জাপানের সেন্দাই শহরে এক ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়, যার মাত্রা ছিল ৯.১। ভূমিকম্পটি শুরু হয় বেলা ২টা ৪৬ মিনিটে এবং স্থায়ী হয় ৬ মিনিট। অসংখ্যবার আফটারশক (পরাঘাত) হয়, যেগুলোর কোনো কোনোটির মাত্রা ছিল ৭-এর ওপরে। ওই ভূমিকম্পে প্রায় ২০ হাজারের মতো মানুষ মারা যায়।
তখন ছিল শীতকাল, তাপমাত্রা থাকত মাইনাস ও মাঝেমধ্যে বরফ পড়ত। আমি তখন ওই শহরের তোহোকু বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছিলাম এবং পরিবার নিয়ে সেখানে ছিলাম।
ভূমিকম্পের সময় আমি ছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে, আমার স্ত্রী বাসায় আর আমাদের চার বছরের মেয়ে তার স্কুলে। আমি ক্যাম্পাসে ব্যাডমিন্টন খেলছিলাম সদ্য নির্মিত বড় একটি গেমস রুমে। আমি দৌড়ে কাঠের একটি শক্ত কাঠামোর নিচে শুয়ে ছিলাম ভূমিকম্প না থামা পর্যন্ত। এরপর বাইরে বের হয়ে অন্যদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি।
আমার স্ত্রী বাসায় থাকার কারণে ভূমিকম্পের তীব্রতা বেশি টের পেয়েছে। আমাদের বাসা ছিল দোতলায়। ভূমিকম্প শুরু হলে সে একটি শক্ত টেবিলের নিচে আশ্রয় নেয়। ভূমিকম্পের তীব্র ঝাঁকুনিতে তার চোখের সামনে বাসার ফ্রিজটি কয়েক ফুট সামনে চলে যায় এবং একটি বড় বুকশেলফ রুমের এক কোণ থেকে মাঝখানে চলে আসে। পানির কল নিজে নিজে খুলে যায় ও পানি পড়তে শুরু করে।
আরও পড়ুনএ ভূমিকম্প হুঁশিয়ারি সংকেত, বড় বিপদ তো সামনে২২ নভেম্বর ২০২৫ভূমিকম্প থামার পর ইন্দোনেশিয়ান এক প্রতিবেশীর সঙ্গে সে দোতলা থেকে নিচে নেমে আসে। এরপর আমার স্ত্রী মেয়েকে আনতে স্কুলে চলে যায়। স্কুল থেকে তাকে জানানো হয়, ভূমিকম্পের সময় শিক্ষার্থীদের নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছিল। যেহেতু সুনামির সতর্কবার্তা ছিল তাই শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের হস্তচালিত গাড়িতে বসিয়ে উঁচু স্থানে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু পরে সতর্কবার্তা তুলে নেওয়ায় শিশুদের ক্লাসরুমে নিয়ে আসা হয়।
আমাদের বাসার মালিকের সঙ্গে আলাপ করে জানলাম বাসায় থাকা অনিরাপদ হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আমরা প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড় নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেলাম। আশপাশের স্কুলগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। স্কুলগুলো ওভাবেই তৈরি করা। আমরা তিন দিন সেখানে ছিলাম। আমাদের নিয়মিত দুই বেলা খাবার দেওয়া হয়েছে। সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে সুশৃঙ্খলভাবে খাবার নিয়েছি। মুঠোফোনে চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আশ্রয়কেন্দ্রের বাইরে অনেকগুলো অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছিল। একসময় আশ্রয়কেন্দ্রে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগে যায়। আগুন লাগার মাত্র দশ মিনিটের মধ্যে অগ্নিনির্বাপক গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ও হেলিকপ্টার চলে আসে। অল্প সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। আশপাশের দোকানগুলোতে খাবার কেনার লাইন পড়ে যায়। সবাই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে প্রয়োজনীয় শুকনা খাবার, বাচ্চাদের দুধ ও ওষুধ কিনে নেয়।
আরও পড়ুনথাইল্যান্ডের মতো ভূমিকম্পে ঢাকার কী পরিণতি হতে পারে২৮ মার্চ ২০২৫ভূমিকম্পের পর কোনো কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল যে তারা আর পড়াশোনায় মন বসাতে পারেনি। কেউ কেউ ডিগ্রি শেষ না করেই যার যার দেশে ফিরে যায়। যারা পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিল, তাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের পরামর্শের ব্যবস্থা করা হয়। এক বছর পর যেসব শিক্ষার্থী এই ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে তাদের ওপরে একটা জরিপ করা হয়।
আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে উঠি, তখন আমাদের বাসাটির সবচেয়ে শক্তিশালী জায়গা দেখিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যাতে আমরা ভূমিকম্পের সময় সেখানে আশ্রয় নিতে পারি। এ-ও বলা হয়েছিল যে ওই ছাত্রাবাসগুলো ৭ মাত্রার ভূমিকম্প–সহনীয় করে তৈরি করা হয়েছে। অথচ ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের পরেও সেগুলো অক্ষত ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের যে রুমে আমরা পড়াশোনা করতাম, সেখানে প্রত্যেক টেবিলে একটি করে হেলমেট দেওয়া ছিল, যাতে ভূমিকম্প হলে আমরা ওটা পরে টেবিলের নিচে আশ্রয় নিতে পারি। টেবিলগুলোও ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। ভূমিকম্প হলে কী কী করতে হবে সে নির্দেশনাও ছিল। যেমন তিনতলা কিংবা তার ওপরে যারা ছিল, তাদের ভূমিকম্পের সময় দৌড়ে নিচে না নামার নির্দেশনা ছিল। প্রত্যেক ফ্লোরের কোন কোন জায়গায় আশ্রয় নিতে হবে তা নির্দিষ্ট করা ছিল। সবাই একত্রে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গেলে কী বিপদ ঘটতে পারে সে ব্যাপারেও শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হয়েছিল। আমাদের ওই বিল্ডিংটিতে ভূমিকম্প হওয়ার দশ সেকেন্ড আগে সতর্কবার্তা পেতাম।
২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি হাইতিতে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল, যেখানে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ২০ হাজার।.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম কম প র স ব শ বব দ য র ভ ম কম প ভ ম কম প র ভ ম কম প হ আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
চৌদ্দগ্রামে বিএনপি ও জামায়াত নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে আহত ৭, দলীয় কার্যালয় ও বাড়ি ভাঙচুর
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বিএনপির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় বিএনপির একটি ইউনিয়ন কার্যালয় ও এক কর্মীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বিএনপির তিনজন ও জামায়াতের একজনের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার জগন্নাথদীঘি ইউনিয়নের জগন্নাথদীঘির উত্তর পাড় এলাকায় অবস্থিত স্থানীয় বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জন্য বিএনপি ও জামায়াত নেতারা পরস্পরকে দায়ী করেছেন। দুই পক্ষই থানায় দুটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জগন্নাথদীঘি ইউনিয়ন বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে কথা–কাটাকাটি থেকে সংঘর্ষে জড়ান বিএনপি ও জামায়াতের নেতা–কর্মীরা। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের শুরু হয়। এ সময় বিএনপির কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। এ সময় বিএনপি ও ছাত্রদলের তিন কর্মীকে কুপিয়ে জখমসহ ছয়জনকে আহত করা হয়। একই সময় জামায়াতের সহযোগী সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের এক কর্মীর মাথা, হাত ও পায়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে পাশের বিজয়করা গ্রামে বিএনপি কর্মী রাজুর বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।
গুরুতর আহত বিএনপি কর্মী সাইফুল ও নুরুন্নবীকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আরেক কর্মী আলম চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কর্মী মো. ইসমাইল হোসেনকেও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, রোববার রাতে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের একটি অনুষ্ঠান শেষে ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয়ে ৬-৭ জন নেতা-কর্মী অবস্থান করছিলেন। এমন সময় জামায়াত-শিবিরের ৩০-৪০ জন নেতা-কর্মী অতর্কিত হামলা চালিয়েছেন। বিএনপির কর্মীরা বাধা দিতে গেলে তাঁদের মারধর করা হয়। একপর্যায়ে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বিএনপি ও ছাত্রদলের তিন কর্মী রক্তাক্ত আহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত আরও তিনজন স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন। কার্যালয়ে হামলার পর তাঁরা বিজয়করা গ্রামে বিএনপির এক কর্মীর বাড়িতেও হামলা ও ভাঙচুর করেছেন।
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মুহাম্মদ বেলাল হোসাইন সোমবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে জামায়াতের কর্মীদের স্থানীয় বিষয় নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছিল। একপর্যায়ে হঠাৎ করেই তাঁরা ইসমাইলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে শুরু করেন। তাঁর পুরো মাথায় কোপানো হয়েছে। এ ছাড়া হাত ও পায়েও কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন, ইসমাইলকে এভাবে কুপিয়ে জখম করায় স্থানীয় লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে বিএনপির কার্যালয় ও তাদের এক কর্মীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে বলে জেনেছেন। এতে জামায়াতের কোনো নেতা-কর্মী জড়িত ছিলেন না।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দীন আহমেদ আজ সোমবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, রোববার রাতে দুই দলের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে জড়ানোর খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এ ঘটনায় বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষ থেকে থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।