গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, তাঁরা বাংলাদেশে একটি উৎপাদনশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করতে চান, যার মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে সুযোগের সমতা তৈরি হবে। এই পরিকল্পনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ শিক্ষার পুনর্বাসন পরিকল্পনা হাজির করতে চান। এ জন্য দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে।

আজ সোমবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে গণসংহতি আন্দোলনের উদ্যোগে ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে শিক্ষা সংস্কার ভাবনা’ শীর্ষক সভার আলোচনায় জোনায়েদ সাকি এ কথা বলেন। গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের উদ্দেশে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে ‘আপনার মতামত, আমাদের ইশতেহার’ শীর্ষক উদ্যোগের অংশ হিসেবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় জোনায়েদ সাকি বলেন, একদিকে মানবিক জনগোষ্ঠী তৈরি এবং অন্যদিকে দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি করা, দুটো কাজই খুব জরুরি এবং দুটোই বর্তমানের চাহিদার সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে আমাদের করতে হবে। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব শিশুর শিক্ষাকে রাষ্ট্রের খাতে আনতে হলে একদিকে যেমন বাজেটের প্রয়োজন আছে, অন্যদিকে শিক্ষাব্যবস্থার নীতিকাঠামোতেও পরিবর্তন আনতে হবে।

শিক্ষকদের বেতনকাঠামো প্রসঙ্গে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, শিক্ষকদের বেতন, সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদাকে একটা সুনির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড় করাতে হবে। শিক্ষকদের জন্য একটা স্বতন্ত্র বেতন স্কেল হওয়া দরকার। একেবারে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন স্কেল এবং তাঁদের মর্যাদার কাঠামো তৈরি করতে হবে। শিক্ষকদের মর্যাদা এবং তাঁদের কাজের মূল্যায়ন—এই দুটো জিনিসকে একসঙ্গে করে বাজেট পরিকল্পনা করতে হবে। এর সঙ্গে যুক্ত হবে অবকাঠামো ও তথ্যপ্রযুক্তিগত সব ধরনের আধুনিক সুবিধা।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, দেশের শিক্ষার সবচেয়ে বড় সংকট মানসম্পন্ন শিক্ষক না থাকা। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রতিটি স্তরের শিক্ষার মানও নেমে গেছে। দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাব ও দলবাজি এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। আগে শিক্ষক প্রশিক্ষণ ছিল কঠোর ও মানসম্পন্ন, এখন প্রায় অকার্যকর। তাই শুধু বেতন বাড়িয়ে ভালো শিক্ষক তৈরি হবে না। শিক্ষকদের শেখানোর প্রতি অঙ্গীকার ও সততা থাকতে হবে।

তথ্যনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থায় টিকে থাকা কঠিন উল্লেখ করে সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, ‘সনদনির্ভর শিক্ষা এখন দক্ষতা ও মানবিকতার বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমরা শুধু তথ্যনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলছি। শিক্ষা মানে কেবল তথ্য দেওয়া নয়, তথ্য থেকে জ্ঞান আর জ্ঞান থেকে প্রজ্ঞার দিকে যাত্রা। তথ্যনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থায় প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকা কঠিন। সুতরাং কারিকুলাম পরিবর্তন নয়, প্রকৃত শিক্ষা সংস্কার করতে হলে সমাজের কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা বলেন, শিক্ষার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় সংঘর্ষ ও সংযোগ তৈরি হয়েছে রাজনীতির। ৫ আগস্টের ঘটনার পর বিষয়টি এখন শিক্ষাকেন্দ্রিক না হয়ে রাজনীতিকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাণিজ্য। এ দেশে শিক্ষা মানে হচ্ছে বাণিজ্য, ব্যবসা।

সভায় সভাপতির বক্তব্যে গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, গণসংহতি আন্দোলনের ইশতেহার প্রণয়নের অংশ হিসেবে এই আলোচনাগুলোর আয়োজন করা হয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের আলোচনা এবং জনগণের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে দলের নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করা হবে।

সভার শুরুতে গণসংহতি আন্দোলনের শিক্ষা সংস্কার ভাবনা তুলে ধরেন দলের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সদস্যসচিব আতিকুল বারী চৌধুরী।

আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন লেখক ও মানবাধিকারকর্মী ইলিরা দেওয়ান, শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠক আবুল হাসনাত, প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক মনযূরুল হক, লেখক ও শিক্ষক সফিক ইসলাম এবং আমাদের পাঠশালার প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ক ষ ব যবস থ ন র ভর শ ক ষ ব শ বব দ য শ ক ষকদ র ইশত হ র

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারিভাবেই প্রাকৃতিক উৎস থেকে মাছ সংগ্রহের আগ্রহ কমে গেছে: মৎস্য উপদেষ্টা

ছবি; ওয়েভ ফাউন্ডেশন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ