ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায় ইউক্রেনকে যেসব বিষয়ে ছাড় দিতে হবে
Published: 24th, November 2025 GMT
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে ২৮ দফা শান্তি প্রস্তাব করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ প্রস্তাব মেনে নেওয়ার জন্য কিয়েভকে চাপ দিচ্ছেন তিনি। আবার ইউক্রেনকে রাজি করানোর জন্য প্রস্তাবে কিছু পরিবর্তন আনার কথাও বলেছে তাঁর প্রশাসন। সব মিলিয়ে ট্রাম্পে বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধে ভালো কিছুই হতে যাচ্ছে।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন শান্তি প্রস্তাবে পরিবর্তন আনার কথা বলা হচ্ছে। আসলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রাথমিক যে ২৮ দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তা নিয়ে ব্যাপক আপত্তি আছে কিয়েভের। আর ইউক্রেনই নয়, দেশটির ইউরোপীয় মিত্ররাও বলছে, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনায় রাশিয়ার ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। এগুলো মেনে নেওয়া মানে ইউক্রেনের জন্য আত্মসমর্পণ।
ট্রাম্প যে ২৮ দফা শান্তি প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তাতে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের পাশাপাশি দেশটির কিছু ভূখণ্ড রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া, ইউক্রেনের সেনাসংখ্যা সীমিত করা, সামরিক জোট ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইস্যুসহ নানা ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। চলুন দেখে দেওয়া যাক প্রাথমিক শান্তি প্রস্তাবের বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী, ইউক্রেনকে কী কী ছাড় দিতে হবে—
সামরিক বাহিনী ও ন্যাটোতে যোগদান: ট্রাম্পের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর সেনাসংখ্যা ৬ লাখের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে। এ ছাড়া দেশটির সংবিধানে উল্লেখ করতে হবে যে তারা ন্যাটোতে যোগ দেবে না। ন্যাটোকেও ইউক্রেনকে যুক্ত না করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি দেশটিতে সেনা মোতায়েন করতে পারবে না ন্যাটো।
পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ ভাগাভাগি: ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী, ইউক্রেনের জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে অবস্থিত পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা হবে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা আইএইএর অধীনে। এই কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আধাআধি করে পাবে রাশিয়া ও ইউক্রেন। ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর পর জাপোরিঝঝিয়ার বড় অংশ দখল করে নেয় রুশ বাহিনী।
যুদ্ধ বন্ধের শান্তিচুক্তির ১০০ দিনের মধ্যে ইউক্রেনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী গত বছরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।ভূখণ্ড ত্যাগ: ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নিয়েছিল রাশিয়া। এই উপদ্বীপসহ ইউক্রেনের লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক অঞ্চল রাশিয়ার ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। স্বীকৃতিদাতাদের মধ্যে থাকবে যুক্তরাষ্ট্রও। ইতিমধ্যেই এই দুই অঞ্চলের বেশির ভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে মস্কো। অঞ্চলগুলোকে গণভোটের মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করাও হয়েছে।
দোনেৎস্ক থেকে সেনা সরাবে ইউক্রেন: দোনেৎস্ক অঞ্চলে এখনো যেসব এলাকা ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেখান থেকে তারা সরে যাবে। সেনা প্রত্যাহার করা এই এলাকাগুলোকে নিরপেক্ষ বেসামরিক এলাকা (বাফার জোন) হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এসব এলাকাকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়া হবে। তবে সেখানে রুশ সেনারা প্রবেশ করতে পারবেন না।
সম্মুখসারি বরাবর থামবে যুদ্ধ: ইউক্রেনের খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে সম্মুখসারি বরারব যুদ্ধ থামবে। এ ছাড়া দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, ক্রিমিয়া, জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসন বাদে ইউক্রেনের বাকি অঞ্চলগুলো থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেবে রাশিয়া। পরে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে রাশিয়া বা ইউক্রেন ভূখণ্ডের বিষয়ে হওয়া ঐকমত্যে পরিবর্তন আনতে পারবে না।
জেনেভা আলোচনার বিষয়ে জানাশোনা থাকা ব্যক্তিরা সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনার ২৮ দফা কমিয়ে ১৯টি করা হয়েছে।১০০ দিনের মধ্যে নির্বাচন: যুদ্ধ বন্ধের শান্তিচুক্তির ১০০ দিনের মধ্যে ইউক্রেনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী গত বছরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে যুদ্ধের কারণে জরুরি অবস্থা জারি থাকায় তা অনুষ্ঠিত হয়নি। এ নিয়ে আগে থেকেই সমালোচনা করে আসছিল মস্কো। এমনকি নির্বাচন নিয়ে ট্রাম্পের সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছিল কিয়েভকে।
ক্ষমা: শান্তি প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রায় চার বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে জড়িত সব পক্ষ তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য পূর্ণ ক্ষমা পাবে। ভবিষ্যতে কোনো দাবি না করার বিষয়ে তাদের একমত হতে হবে। তাদের কোনো অভিযোগও আমলে নেওয়া হবে না। রাশিয়ার বিরুদ্ধে একাধিকবার গণহত্যার অভিযোগ এনেছে ইউক্রেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে।
ট্রাম্পের প্রস্তাবে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব নিয়ে গতকাল রোববার সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে আলোচনার সময় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিষয়টি নিয়ে জানাশোনা আছে—এমন কয়েকজন ব্যক্তি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আদ্রি ইয়ারমাকের নেতৃত্বে আলোচনায় এ পরিবর্তন আনা হয়েছে।
জেনেভা আলোচনার বিষয়ে জানাশোনা থাকা ব্যক্তিরা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনার ২৮ দফা কমিয়ে ১৯টি করা হয়েছে। কিয়েভ ও তাদের ইউরোপীয় অংশীদারদের দাবি—ভূখণ্ড নিয়ে আলোচনার শুরু অবশ্যই ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে বর্তমান সম্মুখসারি থেকে হওয়া উচিত।
আরও পড়ুনহয়তো ভালো কিছু ঘটছে: ট্রাম্প৩ ঘণ্টা আগেইউক্রেন ও দেশটির ইউরোপীয় মিত্রদের দাবি—ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল রুশ বাহিনীর দখলে রয়েছে, সেগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া যাবে না। আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ন্যাটোতে যোগ দেওয়া না দেওয়ার সিদ্ধান্ত ইউক্রেন নিজেই নেবে।
জেনেভায় আলোচনা শেষে কিয়েভে ফেরার পর জেলেনস্কিকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলেছেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনার নতুন সংস্করণ আরও বেশি বাস্তবভিত্তিক। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গেও কথা বলেছেন জেলেনস্কি। শান্তি প্রক্রিয়ায় ইউরোপের দেশগুলোকে যুক্ত করার জন্য ভ্যান্সকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টও এতে রাজি হয়েছেন বলে জানা গেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র য দ ধ বন ধ ইউক র ন র র ইউর প য় প রস ত ব র জন য দ শট র অন য য়
এছাড়াও পড়ুন:
নোবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির নেতৃত্বে নাহিদ ও নাসিফ
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (নোবিপ্রবিসাস) নবগঠিত কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচনে সভাপতি পদে জয়ী হয়েছেন আমার দেশ পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নাহিদুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন আমার সংবাদ পত্রিকার প্রতিনিধি মুদ্দাচ্ছির আহমদ নাসিফ।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) নোবিপ্রবিসাসের সদস্যদের অংশগ্রহণে দুপুর দেড়টােয় ভোটগ্রহণ শুরু হয় এবং চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। বিকাল সাড়ে ৫টায় নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
আরো পড়ুন:
টিএইচই ইন্টারডিসিপ্লিনারি সায়েন্স র্যাংকিংয়ে দেশ সেরা ঢাবি
গবেষণায় অনুদান পেলেন নোবিপ্রবির ১৮ শিক্ষক
বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন অডিটোরিয়াম ভবনের দ্বিতীয় তলায় প্রক্টর অফিসে উৎসবমুখর পরিবেশে নোবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
এই নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. শিবলুর রহমান। সহকারী কমিশনার ছিলেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) শাহানাজ আক্তার ও ফার্মেসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: আব্দুল বারেক।
নোবিপ্রবিসাসের নবনির্বাচিত অন্যরা হলেন: সহ-সভাপতি জেরিন ফেরদৌস (আওয়ার নিউজ বিডি), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল্লাহ আল নাইম (বিডি২৪লাইভ), দপ্তর সম্পাদক নিয়াজ উদ্দিন (যুগান্তর), পাঠাগার ও প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক রহমত উল্ল্যাহ আরিফ (কালবেলা), কোষাধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল তৌহিদ (এশিয়ান টিভি), প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোস্তাকিম সাদিক (দৈনিক ইনকিলাব)।
কার্যকরী সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন মো. শফিউল্লাহ (রাইজিংবিডি ডটকম), তৌফিক আল মাহমুদ (সময়ের কন্ঠস্বর) ও মিরাজ মাহমুদ (পাবলিকিয়ান টুডে)।
সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে নতুন নির্বাচিত সভাপতি নাহিদুল ইসলাম সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “নোবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের একটি আস্থার জায়গা। সেই আস্থা ধরে রাখতে ভবিষ্যতে আমরা একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করে যাব।”
সাধারণ সম্পাদক মুদাচ্ছির আহমদ বলেন, “সাংবাদিক সমিতির সদস্যদের ভালোবাসায় আমি সিক্ত। অন্যায়ের বিরুদ্ধে নোবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতি সবসময় সবার আগে থাকবে। এই সংগঠন সবসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণে কাজ করে যাবে বলে আমি আশা রাখি।”
ঢাকা/শফিউল্লাহ/রাসেল