বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শ্বাসকষ্ট নিয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর হৃদ্‌যন্ত্র ও ফুসফুসে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছে। মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে, তাঁর বুকে সংক্রমণ ও হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে। প্রায় ৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

অর্থবিত্তের মালিক হতে রাজনীতি অনেকের কাছে ‘জাদুর কাঠি’

বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর আয়–ব্যয়ে স্বচ্ছতা নেই। এ ব্যাপারে দলগুলো ‘হাইড অ্যান্ড সিকের’ (লুকোচুরি) আশ্রয় নিয়ে থাকে। এর পাশাপাশি অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার জন্য অনেকের কাছে রাজনীতি হয়ে উঠেছে ‘জাদুর কাঠি’।

‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থায়ন সংস্কৃতি ও ব্যবসা সুরক্ষা: বাস্তবতা ও সমাধানের পথ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বিশিষ্টজনদের আলোচনায় এসব বিষয় উঠে এসেছে। বিশিষ্টজনদের মধ্যে ছিলেন সুজন সম্পাদক, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও ব্যবসায়ীরা। আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর রমনায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে এই সভা হয়। সভার আয়োজক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিকস (দায়রা)।

সভার শুরুতে রাজনৈতিক অর্থায়ন বিষয়ে দায়রার একটি গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ‘প্যাট্রন-ক্লায়েন্ট’ (সুবিধাদাতা-সুবিধাভোগী) সম্পর্কের কারণে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অর্থায়নের বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। রাজনৈতিক অর্থায়নের বিষয়টিতে পরিবর্তনের জন্য দলের খরচের আইনি সীমাকে বাস্তবসম্মত করা, দলসংশ্লিষ্ট এনটিটিকে (প্রতিষ্ঠান বা সত্তা) তদারকিতে আনাসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়।

এরপর শুরু হয় সভার মূল আলোচনা। সভায় সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অনিষ্টের বড় কারণ রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন–বাণিজ্য। এর মাধ্যমে রাজনীতি ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ কোনো দল দেশে আছে কি না, সেটা একটা মৌলিক প্রশ্ন। ছলেবলে-কৌশলে মনোনয়ন নিয়ে অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার জন্য রাজনীতি অনেকের কাছে ‘জাদুর কাঠি’ হয়ে উঠেছে।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাজনীতি ও নির্বাচনী সংস্কৃতি দুর্বৃত্তায়িত। রাজনৈতিক ও নির্বাচনী অঙ্গনকে পরিচ্ছন্ন করতে হলে দুর্বৃত্তদের দূরে রাখতে হবে।

‘সিন্ডিকেট’ ভাঙতে হবে

আলোচনায় অংশ নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার পুরো সমস্যার একটা অংশ অর্থায়ন। রাজনৈতিক পুঁজির তিনটা অংশ—অর্থ, পেশিশক্তি ও ধর্ম। এগুলোকে সার্বিকভাবে না দেখলে সমস্যার সমাধান হবে না। রাজনীতি, ব্যবসা ও আমলাতন্ত্র—এই তিন ক্ষেত্রে যে সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে, তা ভাঙতে না পারলে বাস্তবে অগ্রযাত্রা হবে না।

দেশে নির্বাচনব্যবস্থার দুটি দুর্বলতার কথা সভায় উল্লেখ করেন নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি। তাঁর বিবেচনায় ওই দুটি দুর্বলতা হলো দলের আয়ের উৎস এবং অভিযোগের ব্যবস্থাপনা। তিনি বলেন, আইনে রাজনৈতিক দলের আয়ের উৎসগুলো বলা নেই। বৈধ আয়ের উৎস কীভাবে হতে পারে, সেটা নিয়ে কাজ করতে হবে। আইনে বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট করতে হবে। যেসব উৎস জানামতে আছে, সেগুলোর আইনিভিত্তি দেওয়া যায়।

রাজনৈতিক ‘দালালি’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশে ৫৫ থেকে ৭৫ শতাংশ ব্যবসাই ‘কালো ব্যবসা’। সেখানে এমপি-মন্ত্রী হতে পয়সা দেবেন না, তা হয় কী করে? এর জন্য ইনফরমাল ইকোনমিকে (অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি) ঠিক করতে হবে। এ ছাড়া ব্যাংকের সুশাসন ঠিক না হলে রাজনৈতিক অর্থায়ন ঠিক হবে না।

জবাবদিহির প্রশ্ন চলে আসবে বলে ব্যবসায়ীরা অনেক সময় রাজনৈতিক দলকে অর্থায়নের বিষয়টি প্রকাশ করতে চান না বলে উল্লেখ করেন শাশা ডেনিমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ। তিনি বলেন, যারা সরকারে আসবে, তাদের ‘দালালি’ করলে পলিসি (নীতি) পাস করানো যাবে—এমন চিন্তা থেকেও অনেকে ‘দালালি’ করে থাকে।

বিডি জবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফাহিম মাসরুর বলেন, ‘ব্ল্যাক ইকোনমির’ (কালোটাকার অর্থনীতি) সঙ্গে রাজনীতির যে সম্পর্ক, সেটাকে ডিসকানেক্ট (ভেঙে দেওয়া) করার জন্য কাজ করতে হবে। দেশের ৯৯ শতাংশ ব্যবসারই রাজনৈতিক প্যাট্রন (পৃষ্ঠপোষক) দরকার নেই, যদি আইনের শাসন থাকে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীন করত পারলে কালোটাকার সরবরাহ কমবে।

পরিবর্তন চাইলেন রাজনৈতিক নেতারাও

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা দায়রার এই আলোচনা সভায় অংশ নেন। তাঁরাও রাজনৈতিক অর্থায়নের বিদ্যমান সংস্কৃতিতে পরিবর্তন হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন।

সভায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, রাজনৈতিক অর্থায়নের ক্ষেত্রে যে সমস্যা, সেটি কোনো দলের একক কোনো সমস্যা নয়। এটি একটি আর্থসামাজিক সমস্যা। দলগুলোর খরচে স্বচ্ছতা আনতে হলে নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী হতে হবে।

উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশেও রাজনৈতিক দলকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুদান দেওয়ার সংস্কৃতি চালু করা যেতে পারে বলে মনে করেন শামা ওবায়েদ। তবে আলোচনায় তিনি এই প্রশ্নও তোলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে যেভাবে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়, কোনো সচিব বা সরকারি কর্মকর্তাকে একইভাবে জিজ্ঞেস করা হয় কি না।

খরচের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে ‘হাইড অ্যান্ড সিক’ (লুকোচুরি) সংস্কৃতি রয়েছে বলে উল্লেখ করেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। তবে তিনি দাবি করেন, রসিদ ছাড়া জামায়াতের কোনো আয় নেই, ভাউচার ছাড়া কোনো ব্যয় নেই।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, গত ১৬ বছরে দেশে ব্যবসা ও রাজনীতির ‘নেক্সাস’ (সম্পর্ক) বেড়েছে। এর ফলে সৎ ব্যবসায়ীরাও রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে পারছেন না।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন বলেন, রাজনৈতিক দলের ব্যয়ের ক্ষেত্রে দুটি দিক আছে—নির্বাচনী কার্যক্রম এবং দল চালানো। দল চালানোর ক্ষেত্রে ভলান্টারি (স্বেচ্ছাসেবা) মডেলের দিকেই যাওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

সভার সঞ্চালক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ শাহান। সভায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাজ্জাদ সিদ্দিকী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ