বাউল শিল্পীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) ‘প্রতিবাদী বাউল সন্ধ্যা’ শীর্ষক এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির পায়রা চত্বরে এই কর্মসূচি শুরু হয়। রাত ১০টা পর্যন্ত এই অনুষ্ঠান চলে।
আরো পড়ুন:
ঢাবিতে হল ছেড়েছেন বেশিরভাগ শিক্ষার্থী, রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
হল খালির বিষয়ে ঢাবি প্রক্টরের জরুরি বার্তা
অনুষ্ঠানে বাউল শিল্পীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জামিল খ্যাপা, আকাশ গাইন, জয়ন্ত দা, কানন মোল্লা। তারা বিভিন্ন বাউল গান পরিবেশনের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানান।
অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মনোয়ার হোসেন প্রান্ত গানের ফাঁকে বলেন, “বাংলার লোকসংস্কৃতি, মানবতাবাদ ও সাম্যের প্রতীক বাউল দর্শন। এই ভূখণ্ডের মুক্তচিন্তার ধারাকে শত শত বছর ধরে সমৃদ্ধ করেছে। ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের ঊর্ধ্বে দাঁড়িয়ে মানুষের অন্তর্দর্শন ও সাম্যের যে শিক্ষা বাউল সাধকেরা দিয়ে আসছেন, তা আমাদের সমাজকে আরও সহনশীল ও সমবায়ী করে তুলেছে।”
তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে বাউল শিল্পীদের ওপর সংঘটিত হামলার ঘটনা আমাদেরকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করেছে। এ ধরনের আক্রমণ কেবল একজন শিল্পীর ওপর নয়, এটি আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং সামাজিক সম্প্রীতির ওপর স্পষ্ট আঘাত।”
অন্যতম আয়োজক সদস্য স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ফেরদৌস সিদ্দিক সায়মন বলেন, “গণতান্ত্রিক সমাজে শিল্প-সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ কাম্য নয়। আমরা বাংলাদেশে সব নাগরিকের সমান মর্যাদা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সাংস্কৃতিক নিরাপত্তার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নয়, সংস্কৃতি ও মানবিক মূল্যবোধই একটি স্থিতিশীল ও অগ্রসর রাষ্ট্রের ভিত্তি।”
সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব আবিদুর রহমান মিশু বলেন, “বাউল দর্শন কেবল একটি শিল্পধারা নয়; এটি মুক্তচিন্তা, সাম্য ও মানবতার পথ। এই পথ রক্ষায় রাষ্ট্র, সমাজ ও রাজনৈতিক অঙ্গন সবাইকে একসাথে দাঁড়াতে হবে।”
আয়োজকরা অনুষ্ঠানে চারটি দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো- হামলার ঘটনাগুলোর দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত, দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা, বাউল ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং ঘৃণা, উস্কানি ও সহিংসতার বিরুদ্ধে সমন্বিত সামাজিক উদ্যোগ।
ঢাকা/সৌরভ/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব শ বব দ য অন ষ ঠ ন র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
জাবিতে একাডেমিক নিপীড়ন প্রতিরোধে নতুন প্ল্যাটফর্ম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ও নৈতিক অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস’ নামে নতুন প্ল্যাটফর্ম গঠিত হয়েছে।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের কনফারেন্স কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই প্লাটফর্মের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
আরো পড়ুন:
ঢাবির সাবেক ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
বাকৃবি শিক্ষার্থীদের রেলপথ অবরোধ
সংবাদ সম্মেলনে প্ল্যাটফর্মটির উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, একাডেমিক নিপীড়নের প্রতিকার ও প্রতিরোধের পাশাপাশি শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে সহযোগিতামূলক পরিবেশ গড়ে তোলাই হবে তাদের প্রধান লক্ষ্য।
প্ল্যাটফর্মটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, জুলাই ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি শিক্ষার্থীরা মৌলিক সংস্কার ও ন্যায়ভিত্তিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার যে প্রত্যাশা করেছিলেন, তা পূরণ হয়নি। অভিযোগ করা হয়, গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অভিযোগ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা এবং একাডেমিক ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতায় ঘাটতি পরীলক্ষিত হচ্ছে।
‘স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস’ প্ল্যাটফর্মের পক্ষে থেকে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের স্বার্থরক্ষায় জাকসুর কার্যকর ভূমিকা থাকা প্রয়োজন হলেও বর্তমানে তা যথাযথভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে না।
প্ল্যাটফর্মটি জানায়, তাদের কার্যক্রম হবে একাডেমিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এবং প্রতিকারমূলক উদ্যোগ নেওয়া, ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে ইতিবাচক আলোচনার পরিবেশ নিশ্চিত করা, সুনির্দিষ্ট দাবি ও নীতিগত প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা এবং দল-মত নির্বিশেষে শিক্ষার্থীদের মতবিনিময়ের উন্মুক্ত মঞ্চ তৈরি করা।
প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে জরুরি ভিত্তিতে তিনটি দাবি তুলে ধরা হয়েছে। দাবিগুলো হলো- জুলাই ২০২৪-এর ঘটনায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, গবেষণা ও ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্তদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং শিক্ষাঙ্গনে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা এবং কঠোর শাস্তি প্রয়োগ।
প্ল্যাটফর্মটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রশাসন যেন এসব অভিযোগ দ্রুত আমলে নিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে প্রয়োজনীয় বিচারিক সিদ্ধান্তে পৌঁছায়। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতা প্রমাণিত হবে বলে তারা মন্তব্য করেন।
প্ল্যাটফর্মটিতে সব শিক্ষার্থীকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
ঢাকা/আহসান/রাসেল