খই খই এখন দ্যুতি ছড়াচ্ছেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে
Published: 25th, November 2025 GMT
টেবিল টেনিসে দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে পদক জিতে দেশের সুনাম উজ্জ্বল করেছেন রাঙামাটির দুর্গম এলাকার বাসিন্দা খই খই সাই মারমা। মাত্র ১৮ বছর বয়সে সৌদি আরবের রিয়াদে ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে মিশ্র দ্বৈতে রূপা জিতে সাড়া ফেলেছেন তিনি। তার এই কৃতিত্বকে বাংলাদেশের টেবিল টেনিসের ইতিহাসে বড় অর্জন বলে মনে করছেন পরিবারের সদস্যরা। গত ৭ থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত এই টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়।
রাঙামাটি সদর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে রাজস্থলী সদর উপজেলা। সেখান থেকে সীমান্ত সড়কে দিয়ে কয়েক কিলোমিটার পথ অতিক্রম করার পর পাহাড়ি এবড়ো-তেবড়ো রাস্তা দিয়ে যেতে হয় খই খই সাই মারমার গ্রাম চুশাক পাড়ায়। তার পরিবারের সদস্যরা কৃষি কাজ করে সংসার চালান। ছবির মতো সুন্দর এই পাড়ার সব ঘর মাচাং পদ্ধতিতে তৈরি।
আরো পড়ুন:
অসময়ের ব্ল্যাক বেবি তরমুজ চাষে চমক দেখালেন দুলাল
পঙ্গুত্ব তাকে ভিক্ষুক নয়, বানিয়েছে ব্যবসায়ী
মাচার ঘরে বসে কথা বলেন খই খই সাই মারমা
দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় বান্দরবানের লামায় কোয়ান্টামে ভর্তি হন খই খই সাই মারমা। সেখান থেকে তার টেবিল টেনিসের পথচলা শুরু। এরপর ভর্তি হন বিকেএসপিতে। যা আজকে তাকে সাফল্য এনে দিয়েছে।
গ্রামের বাড়ির মাচাং ঘরে বসে খই খই সাই মারমা বলেছেন কীভাবে দুর্গম এই পাহাড়ি গ্রাম থেকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে দ্যুতি ছড়িয়েছেন তিনি। তার ভাষ্য, দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় অর্থ সংকট দেখা দেয় পরিবারে। এলাকাবাসীর পরামর্শে মা মোহ্লাচিং মারমা তাকে কোয়ান্টামে ভর্তি করিয়ে দেন। সেখানে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার পাশাপাশি টেবিল টেনিসও ছিল। টেবিল টেনিসে আকৃষ্ট হন তিনি। সেই থেকে পথচলা শুরু। এরপর ইন্টার স্কুলসহ ঢাকায় কয়েকটি গেমসে অংশগ্রহণ করে প্রতিভার ঝলক দেখাতে থাকেন।
খই খই সাই মারমা গত জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে অনূর্ধ্ব-১৯ বিভাগে টেবিল টেনিসে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। সিনিয়রে খেলেছেন কোয়ার্টার পর্যন্ত। কিছুদিন আগে উডেন ফ্লোর জিমনেশিয়ামে ফেডারেশন কাপে জিতেছেন শিরোপা। মেয়েদের র্যাংকিংয়ে বর্তমানে খই খই সাই মারমা আছেন দ্বিতীয় স্থানে। গত বছর জানুয়ারিতে বাংলাদেশ টেবিল টেনিশ ফেডারেশন (বিটিটিএফ) আয়োজিত প্রাইজমানি র্যাংকিং প্রতিযোগিতায় বালিকা অনূর্ধ্ব-১৯ একক ও মেয়েদের সিনিয়র এককে জেতেন শিরোপা। একই বছর জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবার জুনিয়রে সেরা হন।
খই খই সাই মারমা বলেন, “কোয়ান্টামে অনেকটাই মজার ছলে খেলতে গিয়ে টেবিল টেনিসের মায়ায় পড়ি। সেখান থেকে শুরু। ২০২০ সালে অষ্টম শ্রেণিতে থাকাকালীন কোয়ান্টাম থেকে হাসান মুনীম সুমন স্যার আমাকেসহ আরো তিনজনকে নিয়ে গিয়ে ফেডারেশনে ক্যাম্প করান। সেখান
থেকে আমার উন্নতি শুরু। পাশাপাশি খেলাধুলা ও পড়ালেখার জন্য বিকেএসপিতে ভর্তি করিয়ে দেন।”
“২০২১ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ম্যাচ শুরু। সেই বছর কোনো ফল আসেনি। পরের বছর ভারতে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে ইয়ুথে সিঙ্গেলসে ব্রোঞ্জ পদক লাভ করি। একই বছর শ্রীলঙ্কায় দক্ষিণ এশিয়ানে মিশ্র দ্বৈতে ব্রোঞ্জ পদক পাই। ২৩ সালে কোরিয়াতে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ খেলি। একই বছর নেপালে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে দুইটি বিভাগে ব্রোঞ্জ পাই”, যোগ করেন তিনি।
খই খই সাই মারমা বলেন, “সৌদি আরবে যাওয়ার আগে দেশে একটি টুর্নামেন্ট হয়। সেখানে টিমস’সে রানার আপ এবং সিঙ্গেলসে চ্যাম্পিয়ন হই।”
সৌদি আরবে ইসলামিক সলিডারিটি টুর্নামেন্ট সম্পর্কে এই উদীয়মান খেলোয়াড় বলেন, “আশা করিনি এতো ভালো ফল হবে। সিঙ্গেলস ও ডাবলসে আমরা হেরে যাই। মিক্স ডাবলসে একটা সুযোগ ছিল। প্রথমে আফ্রিকার গায়েনার সঙ্গে খেলা হয়, তাদের সঙ্গে ৩-২ এ জিতি। তারপর মালদ্বীপের সঙ্গে জিতে ব্রোঞ্জ পদক নিশ্চিত করি। বাহরাইনের সঙ্গে জিতে আমরা ফাইনালে উঠি। ফাইনালে তুরস্কের কাছে হেরে রূপা পদক লাভ করি।”
বিকেএসপির উচ্চ মাধ্যমিকে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী খই খই সাই মারমা বলেন, “যদি ফেডারেশন আন্তর্জাতিক আরো টুর্নামেন্ট খেলতে পাঠায় এবং জাতীয় দলের জন্য একজন স্থায়ী বিদেশি কোচ রাখে, তাহলে বিদেশি দলগুলোর সঙ্গে লড়াই করা সহজ হবে।”
খই খই সাই মারমার অর্জিত বিভিন্ন পদক
নিজের এই সফলতার জন্য পরিবার, কোয়ান্টাম, কোচ, বিকেএসপি, টিটি ফেডারেশন ও সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন খই খই সাই মারমা। এই খেলোয়াড়ের স্বপ্ন অলিম্পিকে অংশ নেওয়া।
খই খই সাই মারমার মা মোহ্লাচিং মারমা বলেন, “আমার মেয়ের এতদূর পৌঁছাতে যারা সহযোগিতা করেছেন, তাদেরকে সবাইকে ধন্যবাদ ও আশীর্বাদ করছি।”
তার বড় বোন হ্লাহ্লাউ মারমা বলেন, “আমার বোন দেশকে রিপ্রেজেন্ট করছে, আদিবাসীকে রিপ্রেজেন্ট করছে, এতে আমরা অনেক খুশি।”
গ্রামের কার্বারি উনুমং মারমা বলেন, “আর্থিক কষ্টে বড় হওয়া খই খাই সাই মারমার সাফল্যে আমরা গ্রামবাসী তাঁকে সংবর্ধনা দেব। আগামীতে তার আরো সাফল্য কামনা করছি।”
ঢাকা/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সফলত ব ক এসপ পর ব র ই বছর
এছাড়াও পড়ুন:
বাসিন্দাদের ‘ঘুম পাড়িয়ে’ ৪ ঘরে চুরি
দুপুরে খাবারের পর থেকেই ঘুম ঘুম ভাব ছিল স্কুলশিক্ষক সাহাব উদ্দিনের। ঘরে থাকা স্ত্রী-পুত্রও ঝিমাচ্ছিলেন। তাই গতকাল সোমবার রাতে ঘরের দরজা বন্ধ করে একটু আগেভাগেই ঘুমিয়ে পড়েন সাহাব উদ্দিন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। আজ মঙ্গলবার সকালে যখন তাঁর ঘুম ভাঙে, তখন তিনি দেখেন, ঘরের দরজা খোলা, ভেতরে এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে আসবাব ও কাপড়চোপড়। লোহার আলমারির দরজা, কাঠের আলমারির ড্রয়ার—সবকিছুই ভাঙা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ঘরে রাখা তিন ভরি স্বর্ণালংকার, পাঁচ হাজার টাকা ও দুটি মুঠোফোন নেই।
সাহাব উদ্দিনের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে। গতকাল রাতের কোনো এক সময়ে তাঁর বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। ঘরের লোহার আলমারির দরজা ভেঙে লুটপাট এবং জিনিসপত্র তছনছ করা হলেও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকায় কিছুই বুঝতে পারেননি সাহাব উদ্দিন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
কেবল সাহাব উদ্দিনের ঘর নয়, গত চার দিনে একই কায়দায় চুরির ঘটনা ঘটেছে সন্তোষপুর ইউনিয়নের আরও তিনটি ঘরে। ভুক্তভোগীদের দাবি, চোরেরা তাঁদের কোনো বিশেষ কৌশলে ঘুম পাড়িয়ে ঘরের মালামাল লুট করেছে।
স্কুলশিক্ষক সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘গতকাল বেলা দুইটার পর থেকেই চোখে ঘুম আর ভাবনায়ও অসারতা দেখা দেয়। রাতে বিছানায় শুতেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি। রাতে খাটের পাশে থাকা লোহার আলমারি ভাঙার শব্দও বুঝতে পারিনি। বদ্ধ ঘরে চোর কখন, কীভাবে ঢুকেছে তার কোনো আলামত নেই।’
রাতে বিছানায় শুতেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি। রাতে খাটের পাশে থাকা লোহার আলমারি ভাঙার শব্দও বুঝতে পারিনি। বদ্ধ ঘরে চোর কখন, কীভাবে ঢুকেছে, তার কোনো আলামত নেই।সাহাব উদ্দিন, বাসিন্দা, সন্তোষপুর ইউনিয়ন, সন্দ্বীপ।শিক্ষক সাহাব উদ্দিনের ছেলে শাহীন (২৫) স্থানীয় মুনশিরহাটে একটি দোকান করেন। গতকাল বিকেলে দোকানেই তিনি ঝিমুতে শুরু করেন। পরিবারের সবারই গতকাল ঘুম ঘুম ভাব থাকায় শাহীনের ধারণা, ঘরে দুপুরের খাবারের সঙ্গে কেউ কিছু মিশিয়ে দিয়েছেন। শাহীন বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছিল প্রেশার লো (রক্তচাপ কমে যাওয়া) হয়ে গেছে। গতকাল বিকেলেই দোকানে বারবার ঢলে পড়ে যাচ্ছিলাম। পরে আমি ডাক্তারের কাছে গিয়ে প্রেশারও চেক করি।’
আজ সকাল সাড়ে ছয়টায় সাহাব উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে মুখোমুখি তিনটি ঘর। সাহাব উদ্দিনের ঘরের আসবাব ও কাপড়চোপড় ছড়িয়ে–ছিটিয়ে পড়ে আছে মেঝেতে। ভাঙা আলমারি পড়ে আছে। কয়েকটি খোলা ব্যাগও পড়ে আছে মেঝেতে। সাহাব উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের চোখে তখনো ঘুম ঘুম ভাব।
একই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আমানত আলী সেরাংয়ের বাড়ির মিজানুর রহমানের ঘরেও গত রাতে একই কায়দায় চুরির ঘটনা ঘটেছে। ঘরটিতে রাতে আলমারি ভেঙে জিনিসপত্র ও টাকা চুরির ঘটনা ঘটলেও টের পাননি বাসিন্দারা। মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কী ঘটেছিল জানি না। আমার শোবার ঘর থেকেই একটি ব্রিফকেস নিয়ে গেল, লোহার আলমারি ভেঙে সব জিনিসপত্র ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রেখে গেল—আমি, আমার স্ত্রী আর মা কিছুই টের পাইনি।’
গত রোববার রাতে একই কায়দায় চুরি হয় ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রবাসী ফরিদ উদ্দিনের ঘরে। ফরিদ বলেন, ‘বিকেল থেকেই ঘরের সবার ঝিমুনি ছিল। রাতে তাড়াতাড়ি সবাই ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে ৮টায় ঘুম ভেঙে দেখি ঘরের জিনিসপত্র তছনছ করে স্বর্ণালংকার, টাকা ও মুঠোফোন চুরি করা হয়েছে। কে আমাদের এভাবে ঘুম পাড়িয়ে সবকিছু চুরি করে নিয়ে গেল, কিছুই বুঝতে পারছি না।’
গত শুক্রবার রাতে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. ইব্রাহীমের ঘরেও চুরির ঘটনা ঘটে। ইব্রাহীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুক্রবার বিকেল থেকেই আমি এবং আমার স্ত্রীর ঝিমুনি শুরু হয়। শারীরিক ও মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ি। রাতে পুরো ঘরের জিনিসপত্র তছনছ করে দেড় ভরি স্বর্ণালংকার ও ৭০ হাজার টাকা চুরি করা হয়েছে। আমার পাকা ঘরে কোন দিক দিয়ে চোর ঢুকেছে, সেটিও বুঝতে পারছি না। যতটুকু মনে পড়ে, আমরা দরজা বন্ধ করেই ঘুমিয়েছি।’
সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম সফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা গতকাল বাসিন্দাদের সঙ্গে এ বিষয়ে মতবিনিময় করেছি। তাঁদের সচেতন থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের টহল বাড়ানোর সিদ্ধান্তও হয়। তবে এরপর রাতেই দুটি ঘরে চুরির ঘটনা ঘটেছে।’ ওসি বলেন, ‘হয়তো নেশাজাতীয় কোনো দ্রব্য খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে চুরির ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। তবে বিষয়টি নিশ্চিত নই। আমরা বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখছি।’