অবশেষে তিতাসের পাইপলাইন মেরামত, নারায়ণগঞ্জে তিন দিন পর গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক
Published: 25th, November 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় পঞ্চবটি-মুক্তারপুর উড়ালসড়ক পাইলিংয়ের সময় ফেটে যাওয়া তিতাস গ্যাসের পাইপলাইন তিন দিন পর মেরামত করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়। এতে টানা তিন দিন ভোগান্তিতে থাকা আবাসিক ও শিল্প-গ্রাহকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।
তিতাস গ্যাসের ফতুল্লা অঞ্চলের ব্যবস্থাপক মো.
গত শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সদর উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়নের শাসনগাঁও এলাকায় পঞ্চবটি-মুক্তারপুর উড়ালসড়কের পাইলিংয়ের সময় মাটির গভীরে থাকা পাইপে আঘাত লাগে। এতে পাইপ ফেটে গ্যাস বের হতে থাকে। দুর্ঘটনা এড়াতে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে জেলার বড় অংশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এতে হাজার হাজার আবাসিক ও শিল্প-গ্রাহক চরম ভোগান্তিতে পড়েন। তাঁদের বাইরে থেকে খাবার কিনে খেতে হয়েছে। অনেককে লাকড়ির চুলা, ইলেকট্রিক চুলা ও গ্যাস সিলিন্ডারে রান্নার কাজ সারতে হয়েছে। এতে বাড়তি টাকা খরচ করতে হয়েছে।
দক্ষিণ সস্তাপুর এলাকার বাসিন্দা নারায়ণগঞ্জ কলেজের প্রভাষক ফারজানা আফরোজ প্রথম আলোকে বলেন, তিন দিন পর চুলায় গ্যাস এসেছে। এই কয়েক দিন গ্যাস না থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
ফতুল্লা শিল্পাঞ্চলের একটি ডাইং কারখানার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কারখানা পুরোপুরি গ্যাসনির্ভর হওয়ায় ডাইং, সুইং, প্রিন্টিং ও ফিনিশিংসহ সব শাখার কাজ বন্ধ ছিল। এতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় রপ্তানির সময়সূচি ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
শুধু পোশাক ও ডাইং কারখানা নয়, রি-রোলিং মিল, স্পিনিং মিলসহ হাজারো শিল্পকারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কাজ বন্ধ থাকায় উৎপাদনভিত্তিক মজুরিতে কাজ করা শ্রমিকদের এই তিন দিনে আয় কমে বিপাকে পড়তে হয়েছে।
এলাকাবাসী ও শিল্পমালিকদের অভিযোগ, পঞ্চবটি-মুক্তারপুর উড়ালসড়কের পাইলিংয়ের সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অসতর্কতা, অবহেলা ও তিতাস গ্যাসের গাফিলতির কারণে গত এক বছরে ২৮ বার গ্যাসের প্রধান পাইপলাইন ফেটে গেছে। তবে এবার টানা তিন দিন সরবরাহ বন্ধ থাকা একটি নতুন রেকর্ড।
তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তা মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, উড়ালসড়কের কাজের স্থানে তিতাসের কর্মকর্তা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন নিয়মিত উপস্থিত থাকেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে গ্যাস সরবরাহে আর কোনো সমস্যা হবে না।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ য স সরবর হ ন র য়ণগঞ জ য় র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিন
শরীয়তপুর, মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলার মাঠ থেকে সারসংকটের যে ধারাবাহিক খবর আসছে, তাতে প্রশ্ন উঠছে, এটি কি নিছক বিচ্ছিন্ন ঘটনা, নাকি বৃহত্তর সমস্যার পূর্বাভাস।
কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের জন্য এটি কেবল উদ্বেগের বিষয় নয়; বরং খাদ্যনিরাপত্তা, কৃষি অর্থনীতি এবং জাতীয় স্থিতিশীলতার ওপর এক গভীর ছায়া ফেলছে। কারণ, রোপণ মৌসুমে সার না পাওয়া মানে শুধু উৎপাদন বিঘ্নিত হওয়া নয়; বরং একটি মৌলিক অর্থনৈতিক চক্রের ওপর আঘাত হানা।
সারসংকটের প্রথম সরাসরি প্রভাব পড়বে ফসলের উৎপাদনে। ধান, সবজি, ডাল কিংবা তেলবীজ—প্রতিটি খাতেই উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা বাস্তবসম্মত। দেশের খাদ্যশস্যের চাহিদা যেহেতু নির্দিষ্ট, সেহেতু খাদ্য সরবরাহ কমে গেলে বাজারে তার তীব্র প্রভাব পড়তে বাধ্য। খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে তা সবচেয়ে বেশি আঘাত করবে নিম্নমধ্যবিত্ত ও দিনমজুর শ্রেণিকে। অথচ তাদের আয় স্থির কিন্তু ব্যয় বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
সার সরবরাহসংকট, কারখানা বন্ধ থাকা কিংবা আমদানি সমস্যার ব্যাখ্যা দেওয়া হলেও মাঠপর্যায়ে কৃষকের অভিজ্ঞতার সঙ্গে তা মিলছে না। বরং প্রশ্ন উঠছে—সংকটের এই চরিত্র কি কেবল প্রশাসনিক ব্যর্থতার ফল, নাকি সুপরিকল্পিত কোনো নাশকতার অংশ?
ইতিহাস বলে, সংকট কখনো কখনো সৃষ্টি করা হয়। বিতরণব্যবস্থায় একচেটিয়া প্রভাব, পরিবেশক-ডিলারদের কারসাজি কিংবা কিছু গোষ্ঠীর মজুতদারি—সবই ইচ্ছাকৃতভাবে বাজারে ঘাটতি তৈরির কৌশল হতে পারে। প্রশ্ন হলো এই সংকট থেকে কারা লাভবান হতে পারে? ফসল উৎপাদন কমলে খাদ্যমূল্য বাড়ে, বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়—এতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে কোনো গোষ্ঠী লাভবান হওয়ার সুযোগ পায় কি না, তা গভীরভাবে তদন্ত করা জরুরি।
সংকট মোকাবিলার জন্য এখনই নীতিগত ও প্রশাসনিকভাবে কঠোর সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। প্রথমত, সার বিতরণব্যবস্থায় পূর্ণাঙ্গ অডিট দরকার। এ ক্ষেত্রে ডিলার, পরিবেশক, মাঠপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের ভূমিকা পর্যালোচনা করা জরুরি। দ্বিতীয়ত, মজুতদারি ও কারসাজির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অভিযান দরকার। এর অংশ হিসেবে সংকট সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তৃতীয়ত, স্থানীয় উৎপাদন সক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে হবে। এর জন্য বন্ধ কারখানাগুলো দ্রুত চালু করা এবং ভেঙে পড়া উৎপাদন অবকাঠামো পুনর্গঠন করা অপরিহার্য।
সর্বোপরি সারসংকট সমাধানে সবচেয়ে বেশি দরকার সরকারের সদিচ্ছা, কঠোর তদারকি এবং স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা। মনে রাখা দরকার, সংকট আরও গভীর হওয়ার আগেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।