জীবনের পথে চলতে গেলে মাঝেমধ্যে আমরা অন্যের ভুল দেখে তিরস্কার করি, কিন্তু নিজের অতীত ভুলে যাই। পবিত্র কোরআন আমাদের এই দুর্বলতা থেকে সতর্ক করেছে।

সুরা নিসার ৯৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদারগণ, যখন তোমরা আল্লাহর পথে সফর করো, তখন ভালো করে যাচাই করে নাও। যে তোমাদের দিকে সালাম ছুঁড়ে দেয়, তাকে বলো না যে তুমি মুমিন নও—দুনিয়ার সম্পদের লোভে। আল্লাহর কাছে তো অনেক “গনিমত” আছে। তোমরাও তো আগে এমনই ছিলে, অতঃপর, আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। সুতরাং ভালো করে যাচাই করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের কাজকর্মের খবর রাখেন।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৯৪)

তোমরা আগে কাফির ছিলে, শুধু ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে ইসলামে প্রবেশ করেছ। যদি কেউ তোমাদের ইসলামকে সন্দেহ করত, তাহলে কি তোমাদের ভালো লাগত?

এই আয়াতের শেষাংশ ‘কাজালিকা কুনতুম মিন কাবলু ফামান্নাল্লাহু আলাইকুম’—অর্থাৎ ‘তোমরাও তো আগে এমনই ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন’—এতে লুকিয়ে আছে গভীর শিক্ষা।

ইমাম ইবনে আশুর (রহ.

) তাঁর তাফসিরে বলেন, এই কথায় তিরস্কারের সঙ্গে সঙ্গে বড় একটা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। তোমরা আগে কাফির ছিলে, শুধু ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে ইসলামে প্রবেশ করেছ। যদি কেউ তোমাদের ইসলামকে সন্দেহ করত, তাহলে কি তোমাদের ভালো লাগত? (আত-তাহরির ওয়াত তানভির, ৫/২১৪, আল-মাকতাবাতুল ইসলামিয়্যাহ, তিউনিস, ১৯৮৪)

আরও পড়ুন“আল্লাহ ধনী, তোমরা দরিদ্র”০১ অক্টোবর ২০২৫

এটা আমাদের শেখায় যে অন্যকে দোষ দেওয়ার আগে নিজের অতীত অবস্থা স্মরণ করতে হবে। যেমন একজন শিক্ষক ছাত্রের ভুল দেখে রাগ করেন, কিন্তু ভুলে যান যে তিনিও একসময় ছাত্র ছিলেন এবং ভুল করতেন।

এই শিক্ষা জীবনের সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যাঁরা ছাত্রদের পরীক্ষা নেন, তাঁরা যেন অযথা কঠিন না হন, ছোটখাটো ভুল খুঁজে না বেড়ান। কর্মকর্তারা যেন তার অধীনদের প্রতি ন্যায়সংগত আচরণ করেন। মা–বাবা যেন সন্তানদের সাধারণ খেলাধুলা বা অসুস্থতার কষ্টে বকাঝকা না করেন। এতে সমাজে সহানুভূতি ও ভালোবাসা বাড়ে। ইমাম ইবনে আশুর বলেন, এটা মানুষকে নিজের অবস্থার সঙ্গে অন্যের অবস্থা মিলিয়ে দেখতে শেখায় (আত-তাহরির ওয়াত তানভির, ৫/২১৫, আল-মাকতাবাতুল ইসলামিয়্যাহ, তিউনিস, ১৯৮৪)

একবার সন্দেহের দরজা খুললে, তা বন্ধ করা কঠিন। যে সন্দেহ করে, তার প্রতিও সন্দেহ করা যায়। ফলে বিশ্বাস উঠে যায়, দুর্বল ইমানের লোকেরা ধর্মত্যাগ করে।

আয়াতটি মুসলিম সমাজের ঐক্য রক্ষার বড় একটা হেকমত শেখায়। ইসলামে কেউ প্রবেশ করলে তাকে সন্দেহ করলে বিশ্বাসের ভিত্তি নষ্ট হয়। একবার সন্দেহের দরজা খুললে, তা বন্ধ করা কঠিন। যে সন্দেহ করে, তার প্রতিও সন্দেহ করা যায়।

ফলে বিশ্বাস উঠে যায়, দুর্বল ইমানের লোকেরা ধর্মত্যাগ করে। সত্যবাদী ও মুনাফিকের মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। নবীজি (সা.) মুনাফিকদের সঙ্গেও মুসলিমদের মতো আচরণ করতেন-নামাজে তাদের পেছনে দাঁড়াতেন, জানাজা পড়তেন। এতে সমাজে শান্তি বজায়া থাকত। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১২৬৮)

আরও পড়ুনকোরআনের অনুপ্রেরণাদায়ী কয়েকটি আয়াত০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ইসলাম হৃদয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যারা নতুন করে ইসলামে আসে, তাদের সঙ্গে বাড়াবাড়ি না করে গ্রহণ করলে তারা ধীরে ধীরে এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়। প্রথমে সন্দেহ নিয়ে এলেও সময়ের সঙ্গে ইমান মজবুত হয়। পূর্ববর্তী মুসলিমদের পরবর্তী মুসলিমদের প্রতি বিশ্বাস এতে সাহায্য করে।

ইমাম ইবনে আশুর বলেন, এ জন্যই আল্লাহ আবার বলেন, ‘ফাতাবাইয়্যানু’—যাচাই করো এবং শেষে যোগ করেছেন ‘ইন্নাল্লাহা কানা বিমা তা’মালুনা খাবিরা’—আল্লাহ তোমাদের কাজের খবর রাখেন। এতে সতর্কতা ও প্রতিদান—দুটিই আছে (আত-তাহরির ওয়াত তানভির, ৫/২১৬, আল-মাকতাবাতুল ইসলামিয়্যাহ, তিউনিস, ১৯৮৪)

এই আয়াত আমাদের জীবনের প্রতিটি স্তরে প্রয়োগ করা যায়। একজন নতুন মুসলিম যখন মসজিদে আসেন, তাকে সন্দেহের চোখে না দেখে হাসিমুখে গ্রহণ করলে তার হৃদয়ে ইসলামের ভালোবাসা জাগে।

একজন ছাত্র যদি ভুল করে, শিক্ষক যদি নিজের ছাত্রজীবন স্মরণ করে ক্ষমা করেন, তাহলে ছাত্র আরও ভালো করার চেষ্টা করে।

একজন ছাত্র যদি ভুল করে, শিক্ষক যদি নিজের ছাত্রজীবন স্মরণ করে ক্ষমা করেন, তাহলে ছাত্র আরও ভালো করার চেষ্টা করে। মা–বাবা যদি সন্তানের ছোট্ট দুষ্টুমি বা অসুস্থতার কান্নাকে সহানুভূতির সঙ্গে দেখেন, তাহলে সন্তানের মনে নিরাপত্তা জাগে।

সমাজে যখন বিশ্বাসের সংকট দেখি, তখন এই আয়াত স্মরণ করা উচিত। একে অপরের প্রতি সন্দেহ ছড়ালে শান্তি নষ্ট হয়। নবীজির যুগে মুনাফিকরা ছিল, কিন্তু তাদের বাহ্যিক ইসলামকে মেনে নেওয়া হতো। এতে সমাজের ঐক্য রক্ষা পেত। আজও আমরা যদি নতুনদের প্রতি বিশ্বাস রাখি, তাহলে ইসলামের আলো আরও ছড়াবে।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে নিজের অতীত স্মরণ করার তাওফিক দিন। অন্যের প্রতি যেন সহানুভূতি রাখি, সন্দেহ না করি। কারণ, আমরাও তো একসময় অজ্ঞ ছিলাম, আল্লাহ আমাদের হেদায়েত দিয়েছেন। এই অনুগ্রহের কথা ভুললে আমরা অকৃতজ্ঞ হয়ে যাই।

আরও পড়ুনযাঁর নামে কোরআনের আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে০৮ এপ্রিল ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ল হ ত ম দ র আম দ র কর ছ ন ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

গুলিতে নিহত মামুন কোর্টে গিয়েছিলেন হাজিরা দিতে

পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে গুলিতে নিহত ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া গেছে। তার নাম সাইফ মামুন (৫৫)। তিনি একজন ব্যবসায়ী। হত্যা মামলায় হাজিরা দিতে তিনি কোর্টে গিয়েছিলেন। 

সোমবার (১০ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে তাকে গুলি করে দুর্বত্তরা। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে  চিকিৎসক দুপুর ১২টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত সাইফের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মোবারক কলোনী এলাকায়। তার বাবার নাম এসএম ইকবাল হোসেন। বাড্ডার আফতাবনগর এলাকায় একটি বাসায় স্ত্রী ও ২ মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতেন।

ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মহিবুল্লাহ জানান, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালের সামনে হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে বাইরে এসে দেখা যায় একজন ব্যক্তি রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তার উপর পড়ে আছেন।

“আমরা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ঢামেকে পাঠানো হয়, পরে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন,” বলেন তিনি।

নিহতের স্ত্রী রিপা আক্তার বলেন, “আমার স্বামী আজ কোর্টে হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বের হওয়ার পর দুর্বৃত্তরা আমার স্বামীকে গুলি করে। পরে খবর পেয়ে ঢাকা মেডিকেলে এসে স্বামীর রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পাই।”

রিপা আক্তার বলেন, “আমার স্বামী বিএনপি সমর্থক ছিলেন এবং পাশাপাশি ব্যবসা করতেন তিনি।”

ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মোহাম্মদ ফারুক বলেন, “মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে অবগত করা হয়েছে।” 

ঢাকা/বুলবুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিয়ে করেছেন প্রিয়াঙ্কা জামান
  • সন্তকবি রবিদাসের ‘বেগমপুরা’ শহর
  • দুরারোগ্য রোগে আক্রান্তদের হজের অনুমতি দেবে না সৌদি সরকার: ধর্ম মন্ত্রণালয়
  • চীনের তিয়ানগং স্টেশনে যাবেন পাকিস্তানি মহাকাশচারী
  • উখিয়ায় মার্কেটে আগুন, দগ্ধ একজনের মৃত্যু
  • দিনাজপুরে ভুল অস্ত্রোপচারে দুই যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ
  • বৈষম্য দূর হবে বাস্তব উদ্ভাবনে
  • প্রাথমিক শিক্ষকদের টানা আন্দোলনে বার্ষিক পরীক্ষার ওপর প্রভাব পড়ার শঙ্কা
  • গুলিতে নিহত মামুন কোর্টে গিয়েছিলেন হাজিরা দিতে