বাবার কাছে উচ্ছৃঙ্খল আচরণের নালিশ করায় প্রতিবেশীকে হত্যা
Published: 13th, November 2025 GMT
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় এক তরুণের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের বিষয়ে তাঁর বাবার কাছে নালিশ দেওয়ার দুই দিন পর অভিযোগকারী প্রতিবেশীকে মাথায় আঘাত করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় দুজনকে আসামি করে আজ বৃহস্পতিবার ফুলবাড়িয়া থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। তবে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
নিহত যুবকের নাম কবির হোসেন (৩০)। তিনি ফুলবাড়িয়া উপজেলার ১২ নম্বর আছিম পাটুলী ইউনিয়নের জঙ্গলবাড়ি চকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। বাড়ির কাছে একটি মাছের খামারে শ্রমিকের কাজ করতেন তিনি।
পুলিশ জানায়, একই গ্রামের খোকা মিয়ার ছেলে মো.
ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান বলেন, অভিযুক্ত তরুণের বিরুদ্ধে তাঁর বাবার কাছে মাদক গ্রহণ ও উচ্ছৃঙ্খল আচরণের অভিযোগ করেছিলেন নিহত যুবক। এ কারণেই মাথায় আঘাত করে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, নিহত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পলাতক। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ময়মনসিংহে বাবা–মেয়ের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার, মায়ের অবস্থাও গুরুতর
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায় গভীর রাতে শ্বশুরবাড়ি থেকে এক ব্যক্তি ও তাঁর সাত বছর বয়সী মেয়ের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় নিহত ব্যক্তির স্ত্রীকে গলাকাটা অবস্থায় উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটা থেকে সাড়ে তিনটার মধ্যে উপজেলার ভুবনকুড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ আমিরখাঁকুড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে একটি চিরকুটও উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বাঘবেড় খিশাকুড়ি এলাকার আমির হোসেনের ছেলে রতন মিয়া (৩০) ও তাঁর মেয়ে নূরিয়া খাতুন (৭)। রতন গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরে পোশাক কারখানায় কাজ করার সুবাদে নালিতাবাড়ীর রতন মিয়া ও হালুয়াঘাট উপজেলার ভুবনকুড়া ইউনিয়নের আমিরখাঁকুড়া এলাকার দুলাল মিয়ার মেয়ে জুলেখা খাতুনের (২৫) প্রেম হয়। তাঁরা ২০১৬ সালের ১১ জুলাই বিয়ে করেন। তাঁদের একটি কন্যাসন্তান হয়। বছর দুই–এক আগে জুলেখা গৃহকর্মীর কাজে দুবাই যান। স্ত্রী দুবাই চলে যাওয়ায় মেয়েকে নানার বাড়িতে রেখে পোশাক কারখানায় কাজ করতেন রতন। দেড় মাস আগে জুলেখা দুবাই থেকে দুই মাসের ছুটি নিয়ে দেশে আসেন। আবার দুবাই যেতে চাইলে স্বামী রতন মিয়া নিষেধ করেন। এ নিয়ে স্বামী–স্ত্রীর কলহ চলছিল। গতকাল সন্ধ্যায় রতন মিয়া গাজীপুর থেকে শ্বশুরবাড়িতে যান। পরে দিবাগত রাত তিনটার দিকে বাড়িতে চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে গিয়ে দেখেন, ঘরের মেঝেতে রতনের গলাকাটা দেহ, বিছানায় মেয়ের গলাকাটা দেহ ও জুলেখার গলায় কাটা ও হাতে জখম। রতন ও মেয়েটির মৃত্যু হলেও স্থানীয় লোকজন জুলেখাকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
খবর পেয়ে হালুয়াঘাট থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ দুটি উদ্ধার করে। আজ বুধবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিআইডির বিশেষ ক্রাইমসিন দল।
খবর পেয়ে রতনের বৃদ্ধ মা জুবেদা খাতুন ছুটে আসেন। আহাজারি করে তিনি বলেন, ‘আমার পুতে পরশু দিন আলাপ করছে, বউ আবার বিদেশ যাইবাগার চায়। আমি কইছি, বউয়েরে আর বিদেশ দিয়ো না, বাড়িত ঘর কইরা বউ লইয়া বাড়িত তুমি খাও। বউ যাওনের কাম নাই। বউ খালি বিদেশ যাইবাগার চায়, আমার পুতে দিবার চায় না, হের লাগি আমার পুতেরে মাইরালছে।’
এ ঘটনার পর নিহত রতনের শ্বশুর দুলাল মিয়া ও শাশুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুল ইসলাম বলেন, হত্যার ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। নারীকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে। নিহত রতনের শ্বশুর–শাশুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ পুরো বিষয়টি জানার চেষ্টা করছে এবং প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে হত্যায় ব্যবহৃত রক্তমাখা দা ও একটি চিরকুট। এ ছাড়া একটি বিষের বোতলও পাওয়া গেছে ঘটনাস্থলে। প্রাথমিকভাবে চিরকুটটি নিহত রতন মিয়ার লেখা বলে মনে করছে পুলিশ। চিঠিতে ‘আমাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী’ লিখে পাঁচজনের নাম লেখা আছে।
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে কলহের জেরে স্ত্রী–সন্তানকে হত্যা করে নিজে বিষপানে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করে থাকতে পারেন রতন মিয়া। কিন্তু রতনের গলার আঘাত দেখে মনে হচ্ছে, এখানে ভিন্ন কিছু ঘটে গেছে। নিজে নিজে গলা কাটলে এত গভীর হওয়ার কথা নয়। পুরো বিষয়টি উদ্ঘাটনে পুলিশ কাজ করছে।