সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পৌষ (মকর) সংক্রান্তির রয়েছে নানা আনুষ্ঠানিকতা। এর অন্যতম স্মারক হলো মেরামেরির ঘর পোড়ানো। প্রাচীন লোক ঐতিহ্যর এই সংস্কৃতি আর আগের মত দেখা যায় না। তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো অনেকে ধর্মীয় এই আনুষ্ঠানিকতাকে মনে ধারণ করে পালন করেন। 

আবহমান বাংলার ঐতিহ্যের ধারক-বাহক অনেক কিছুই আজ বিলুপ্তপ্রায়। পৌষ সংক্রান্তির শীত উত্তাপের স্বাক্ষর ‘মেরামেরি’ হারিয়ে যেতে বসেছে। এটি আমাদের আবহমান বাংলার এক লোক সংস্কৃতি। তবে ঐতিহ্যের অনেক কিছুই কালের গর্ভে হারালেও এখনো টিকে আছে কিঞ্চিত পরিমাণে।

মেরামেরির অস্থায়ী এই ঘরটি খড়কুটো দিয়ে তৈরী করা হয় সংক্রান্তির রাতে। পরদিন ভোর বেলা স্নান করে ঘরে আগুন জালিয়ে ছোট বড় সবাই মিলেমিশে গানবাজনার সাথে আমোদপ্রমোদ করেন। এখানে সাধ্যমত খাবারদাবার করেন তারা। আগুনের চারপাশ ঘিরে পৌষ সংক্রানিতর পিঠাপুলি খাওয়া মেরামেরির রীতি।

পৌষসংক্রান্তির (মকর) সকালে মৌলভীবাজারের রাজনগরের নন্দিউড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেলো শীতের কুয়াশা ঢাকা সকালে মেরামেরির ঘর পুড়িয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতেছে এলাকার শিশুকিশোররা। বয়স্করাও শীত উপেক্ষা করে যোগদেন নব আনন্দ প্রাণের এই উৎসবে। কিছুক্ষণ পরে গম্বুজ আকৃতির মেরামেরির ঘর পুড়তে শুরু হয়। আগুনের লেলিহান শিখায় ঘরটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। অনেকের মতে দস্যুতাকে বিনাশ করার জন্য প্রতীকী এই আয়োজন। 

স্থানীয় বাসিন্দা শিপ্রা মালাকার বলেন, “পুরানো ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তিতে মেরামেরির ঘর পুড়ানোর রীতি চলে আসছে, তাই আমরাও পালন করি।”

আরেক বাসিন্দা খোকন মালাকার বলেন, “দুই দিন আগ থেকে খড়কুটো দিয়ে মাঠে মেরামেরির ঘর তৈরী করা হয়। ভেতরে কাঁচা বাঁশ দেওয়া হয়। সকালে আগুন জালানোর সময় বাঁশ পুড়ে শব্দ হয়। এতে সবাই আনন্দ পায়।”

নন্দিউড়া গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা দীননাথ (৭০) বলেন, “এই অনুষ্ঠান ধর্মীয় রীতিতে পালন করা হয়। শত বছর আগ থেকেই পালন হয়ে আসছে। যদিও আধুনিক যুগে এসে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে।”

ঢাকা/আজিজ/ইমন

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

জকসু নির্বাচন নিয়ে ছাত্রদলের ১২ দাবি

আসন্ন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে ১২ দফা দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।

সোমবার (৩ নভেম্বর) সংগঠনটির নেতারা জকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসানের কাছে এসব দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন।

আরো পড়ুন:

২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন না হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা হবে: আপ বাংলাদেশ

২৭ নভেম্বরই জকসু নির্বাচন চায় ছাত্রশিবির

স্মারকলিপিতে ছাত্রদল অভিযোগ করেছে, জকসু নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন গোষ্ঠী সংবিধি ও আচরণবিধি নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করছে। তারা বিশ্বাস করে, নির্বাচন কমিশন একটি নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের জন্য দায়বদ্ধ।

স্মারকলিপিতে উল্লেখিত ছাত্রদলের ১২ দফা দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে হবে; নির্বাচনে অমোচনীয় কালি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে; স্বচ্ছ গ্লাসের ব্যালট বাক্স ব্যবহার করতে হবে এবং প্রতিটি বাক্সে আলাদা নম্বর থাকতে হবে; ব্যালট ছাপানোর সংখ্যা, কাস্টিং ভোটার ও নষ্ট ব্যালটের সংখ্যা প্রকাশ করতে হবে; কোনো মিডিয়া ট্রায়ালের ক্ষেত্রে (ভুল তথ্য প্রচার হলে) সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, তবে সরকার অনুমোদিত সব মিডিয়াকে অবাধ স্বাধীনতা দিতে হবে; পোলিং এজেন্টরা নিজ কেন্দ্রেই অবস্থান করবেন, তবে অন্য কেন্দ্রে প্রবেশ বা অনুমতি ছাড়া পরিবর্তন করা যাবে না।

বাকি দাবিগুলো হলো- ডাকসু, চাকসু, রাকসু ও জাকসুর নির্বাচনের সময়সূচি বিবেচনা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের যোগাযোগের সুবিধা অনুযায়ী যথাযথ সময় রেখে জকসু নির্বাচন নির্ধারণ করতে হবে; আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন হলে নির্বাচনী প্রচারণার আচরণবিধি স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করতে হবে, পাশাপাশি ফাউন্ডেশনের চুক্তি ও অবস্থান বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে হবে; অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এমফিল শিক্ষার্থীদেরও জকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে এবং বিধিমালা থেকে তাদের বাদ দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে।

এছাড়া জকসুর আচরণবিধির ৬ নম্বর ধারার আলোকে সক্রিয় ছাত্রসংগঠনগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটির সদস্যদের জন্য বিশেষ কার্ড দিতে হবে, যা নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টা আগে কার্যকর হবে; রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর কার্যকরী কমিটির সদস্যদের নির্বাচনী প্রচার ও অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ঘোষিত ধারাবাহিক কর্মসূচি চলমান রাখার সুযোগ দেওয়ার দাবি করেন।

নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানিয়ে সংগঠনটির পক্ষ থেকে স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়েছে, যেন একটি গণতান্ত্রিক, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা হয়, যেখানে সব ছাত্র সংগঠনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়। অন্যথায়, কমিশন কোনো গোষ্ঠীর প্রভাব বা চাপের মুখে পড়ছে বলে শিক্ষার্থীদের মনে হতে পারে।

ছাত্রদলের নেতারা জানান, তারা সন্তোষজনকভাবে নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি উপস্থাপন করেছে এবং কমিশনের নিরপেক্ষ ভূমিকার ওপর তাদের আস্থা রয়েছে।

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ