হাইমচরে পানির অভাবে বোরো ধান রোপণ করা যাচ্ছে না
Published: 27th, January 2025 GMT
চাঁদপুরের হাইমচরে জমি প্রস্তুত করেও পানি অভাবে বোরো ধান রোপণ করতে পারছে না কৃষক। এভাবে চলতে থাকলে বীজতলায় ধানের চারা বেশি দিন রাখলে ভালো উৎপাদন না হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে হাইমচরে চরভাঙ্গা, গন্ডামারা, কমলাপুর, ছোট লক্ষীপুরসহ মেঘনা নদীর পূর্ব অঞ্চল সরেজমিন গেলে চাষিরা তাদের এ হতাশার কথা জানান।
সেখানে দেখা যায়, চাষিরা জমি প্রস্তুত করেও পানি সংকটে ধান রোপণ করতে পারছে না। দ্রুত পানির প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তারা।
আরো পড়ুন:
বানভাসি কৃষকদের আশার আলো বিনাধান-২০
৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, শনিবার শেষকৃত্য মনমোহনের
হাইমচরে খাল সংস্কার না হওয়ায় বর্ষাকালে পানি নামতে না পারায় ফসলের জমি, বাড়ি-ঘর পানিতে ডুবে যায়। গত বর্ষায়ও এলাকার চাষিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাই পানি উন্নয়ন বোর্ড হাইমচরে দুটি খাল পুনঃখননের কাজ শুরু করেছে।
চরভাঙ্গা গ্রামের মহসিন, নাইমুল, ফারুকসহ কয়েকজন জানান, জমি প্রস্তুত করেও পানির অভাবে বোরো ধান রোপণ করা যাচ্ছে না। বহুদিন ধরে খাল পুনঃখনন করার কাজ চলমান রয়েছে। কবে তা শেষ হবে, আর খালে পানি আসবে; তা তারা জানেন না। বর্ষায় পানি বেশি থাকায় চাষ করতে পারেননি। এখন ঠিক মতো পানি না পেলে ধান রোপণ করতে না পারলে না খেয়ে থাকতে হবে।
তারা আরো জানান, দু-একজন চাষি পুকুর, ডোবা থেকে পানি দিয়ে চাষাবাদ শুরু করলেও পানির অভাবে ধানের চারা মারা যাচ্ছে।
হাইমচর উপজেলার দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান গাজী জানান, দুটি খাল পুনঃখননের কাজ চলছে। এরমধ্যে উত্তরে কমলাপুর থেকে মহজমপুর ব্রিজ পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার; দক্ষিণে টেক কান্দি থেকে সাবু মাস্টারের মোড় পর্যন্ত ২ কিলোমিটার খনন কাজ চলমান রয়েছে। তিনি আশা করেন, কয়েক দিনের মধ্যে খাল পুনঃখনন করে পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
হাইমচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাকিল খন্দকার বলেন, ‘‘আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে পানি সরবরাহ করার জন্য চিঠি দিয়েছি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড খাল পূনঃসংস্কার কাজ করায় পানি সরবরাহে বিলম্ব হচ্ছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘বোরো ধান চাষিরা যদি সময় মতো পানি না পায় তাহলে চাষে বিঘ্ন হবে। তাই আমরা বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছি। দ্রুত যেন পানি সরবরাহ করা হয়।’’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাকিল খন্দকার জানান, হাইমচরে ৬৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়। ফসল ঠিক মতো ঘরে তোলা গেলে ২ হাজার ৯৭৮ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে। ১ হাজার ৬০০ কৃষককে ৫ কেজি ধান বীজ, ১০ কেজি ডিএপি সার, ১০ কেজি করে এমওপি সার দেওয়া হয়েছে। এখানে ৪ হাজার ২০০ জন চাষি বোরো ধান চাষে সম্পৃক্ত রয়েছেন।
ঢাকা/জয়/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর খ ল প ন খনন সরবর হ
এছাড়াও পড়ুন:
৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় গত জুলাই মাসে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) উপকারভোগীদের জন্য ৭৭ দশমিক ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রক্রিয়া অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) একজন ডিলার (পরিবেশক) তুলেও নেন। তবে ওই মাসে টিসিবির অন্য পণ্য পেলেও চাল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুরের ৮ ইউনিয়নে টিসিবির উপকারভোগী কার্ডধারী আছেন ১৫ হাজার ৫৬৭ জন। এসব উপকারভোগী নিজেদের কার্ড দেখিয়ে প্রতি মাসে একবার ইউনিয়নের টিসিবির নিয়োগ করা ডিলারের কাছ থেকে বাজারের চেয়ে কম মূল্যে তেল, চিনি, ডাল ও চাল কিনতে পারেন। গত জুলাইয়ে ডিলারদের কাছ থেকে তেল, চিনি ও ডালের একটি প্যাকেজ কিনতে পেরেছেন তাঁরা। ওই মাসে চালের বরাদ্দ আসেনি বলে জানানো হয় কার্ডধারীদের।
মহম্মদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিতে দেখা গেছে, গত ৩০ জুলাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মজনুর রহমান স্বাক্ষরিত দুইটি বিলি আদেশে (ডিও) উপজেলার হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে একজন ওএমএস ডিলারের অনুকূলে ৭৭ দশমিক ৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই দিনই মহম্মদপুর ও বিনোদপুর খাদ্যগুদাম থেকে এ চাল তুলেও নেওয়া হয়।
সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।শরিফা, টিসিবির কার্ডধারী, রাজাপুর ইউনিয়নটিসিবি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন টিসিবি উপকারভোগীদের চাল ছাড়া অন্য পণ্য সরাসরি তাঁদের নিয়োগ করা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে। চালের বরাদ্দ দেওয়া হয় খাদ্য বিভাগ থেকে। এ অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রথমে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ করা ওএমএস বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অনুকূলে ২৬ টাকা কেজি দরে চাল বরাদ্দ দেয়। সেই চাল ওই ডিলারদের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে নেন টিসিবির ডিলাররা। এরপর তাঁরা ৩০ টাকা কেজি দরে ওই চাল উপকারভোগীদের কাছে বিক্রি করেন।
উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পারুল নামে টিসিবির এক উপকারভোগী ১ সেপ্টেম্বর জানান, আগস্ট মাসে চাল, ডাল, তেল ও চিনির প্যাকেজ পেলেও জুলাই মাসে তাঁদের চাল ছাড়া অন্য তিন ধরনের পণ্যের প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল। জুলাই মাসে তাঁদের জানানো হয় চাল বরাদ্দ হয়নি।
বিষয়টি জানতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে টিসিবির নিয়োগ করা ৮ জন ডিলারের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের মধ্যে মহম্মদপুর সদর, নহাটা, পলাশবাড়ীয়া, বালিদিয়া, রাজাপুর ও বাবুখালী ইউনিয়নের ডিলার জানিয়েছেন, জুলাই মাসে তাঁদেরকে চাল দেওয়া হয়নি। নহাটা ও রাজাপুর ইউনিয়নের ডিলার মিলন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিলন ঘোষ ৪ সেপ্টেম্বর বলেন, ‘জুলাই মাসে আমাদের বলা হইছিল চাল বরাদ্দ নেই। এ কারণে চাল ছাড়া অন্য পণ্যগুলো বিক্রি করেছি। তবে অ্যাপে দেখাইছিল চাল। কিন্তু আমরা পাইনি।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পানঅবশ্য বিনোদপুর ও দীঘা ইউনিয়নের দুই ডিলার দাবি করেছেন তাঁরা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে চালও কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০ জন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাঁরা কেউই চাল পাননি। এর মধ্যে বিনোদপুর বাজারের একজন ফল ব্যাবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জুলাই মাসে ডিলার জানাইছিল চাল ফুরায় গেছে।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান বলে খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে হোসেনিয়া কান্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তাঁর মুঠোফোনে সোমবার যোগাযোগ করা হলে একজন ধরে জানান, ওই নম্বর হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে কেউ ব্যবহার করেন না।
জানতে চাইলে টিসিবির ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিসের উপপরিচালক আকরাম হোসেন সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিসিবির চাল খাদ্য বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়। আর বিতরণ কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। যেখানে প্রতি ইউনিয়নে একজন ট্যাগ অফিসার আছেন, যিনি এগুলো তদারকি করেন।’
জেলার কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ টাকা কেজি দরে কেনা এসব চাল বাজারে প্রায় ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। উপকারভোগীদের কাছে তা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। এ হিসাবে উপকারভোগীদের ফাঁকি দিয়ে এ চাল বাজারে বিক্রি করতে পারলে কেজিতে ২২ থেকে ২৪ টাকা লাভ হয়।
চাল না পাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন মহম্মদপুরের ইউএনও শাহীনুর আক্তার। সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাল দেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ কেউ দেয়নি। খাদ্য অফিস থেকে আমি যত দূর জানতে পেরেছি তাতে সবকিছু দেওয়া হয়ে গেছে। বরাদ্দ থাকলে তা আটকে রাখার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখব।’
হঠাৎ এক মাসে চাল না পাওয়ায় বিপাকে পড়েন উপকারভোগীরা। রাজাপুর ইউনিয়নের শরিফা নামের টিসিবি কার্ডধারী এক নারী বলেন, ‘সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।’