Samakal:
2025-09-18@05:10:49 GMT

মঞ্চে বলয় ভাঙার লড়াই

Published: 30th, January 2025 GMT

মঞ্চে বলয় ভাঙার লড়াই

থিয়েটার আর্ট ইউনিটের নতুন নাটক ‘বলয়’-এর উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়ে গেল গত ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে। নাটকটির পাণ্ডুলিপি, পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন মোকাদ্দেম মোরশেদ। নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়নকালে হলের লবিতে একটি ইনস্টলেশন দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। ‘বলয়’ নাটকটি এগিয়ে গেছে মূলত তিনটি চরিত্রকে কেন্দ্র করে। এঁরা হলেন– রাজনীতিক, বিজ্ঞানচিন্তক ও ধর্মতাত্ত্বিক। তারা গেছেন মনোবিশ্লেষকের কাছে কাউন্সিলিংয়ের জন্য। কারণ, তাদের উপলব্ধি, তারা একটি বলয়ের মধ্যে আটকে গেছেন । হাঁপিয়ে উঠেছেন তারা, বলয় থেকে মুক্ত হতে চান। 

বিজ্ঞান-ধর্ম-রাজনীতির কথা, যুক্তির পিঠে যুক্তি, যুক্তি খণ্ডন, আস্থা-অনাস্থা অনুভবের কথা, তারা ফিরে যান তাদের আপন সত্তায়। নিজের সঙ্গেই নিজের কথোপকথন। নাট্যকারের ভাষায় এটি অন্তর্দ্বন্দ্বের নাটক। একটি চক্র, একটি বলয় ঘিরে রেখেছে আমাদের প্রত্যেককে। সামাজিক বলয়, রাজনীতির বলয়, ধর্মীয় বলয়, যুক্তি-অযুক্তির বলয়, ক্ষমতার বলয়, শোষণের বলয়, শাসকের বলয়। বলয়বৃত্তে ছটফট করা প্রাণ ছুটে যেতে চায়, মুক্ত হতে চায়; হয়তো ছুটে যায়ও কিন্তু পড়ে যায় আরেক বলয়ে। 

সংলাপই এ নাটকের প্রাণ। চমৎকার অর্থপূর্ণ সংলাপগুলো দর্শককে নাড়া দিয়ে যায়, জাগিয়ে তোলে কিছু প্রশ্ন অথবা অনুসন্ধানের ইচ্ছা। এ কনটেম্পোরারি অন্তর্দ্বন্দ্বের নাটকটি যেন নিজেকেই নিজে বিশ্লেষণ করে দেখিয়ে দেয় নানান অসংগতি, অযুক্তির বলয়ে আমাদের বসবাস। গল্পের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ সেট, আলো, আবহ, অভিনয় দক্ষতা এবং সর্বোপরি ডিরেক্টোরিয়াল ওয়ার্ক নাটকটিকে অর্থবহ করে তুলেছে। বলয় নাটকটিকে থিয়েটার আর্ট ইউনিটের একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রযোজনা বলা যেতে পারে। রাজনীতিক বিজ্ঞানচিন্তক ধর্মতাত্ত্বিক চরিত্রে যথাক্রমে– সেলিম মাহবুব, স্বাধীন শাহ্, রেজাউল আমিন সুজনের দুর্দান্ত অভিনয় দর্শকদের নজর কেড়েছে। মনোবিশ্লেষক চরিত্রে নাহিদ সুলতানা লেমন উতরে গেছেন। দর্শনার্থী এবং অমৃতা চরিত্রে রূপদানকারী রানা সিকদার ও মাহমুদা সুলতানা ভাবনার অভিনয় উপস্থাপনের আরও সুযোগ আছে বলে মনে হয়। আরেকটি ইন্টারেস্টিং চরিত্র মানসিক রোগী, তিনি একজন পিটিএসডি। যে চরিত্র আমজনতার পক্ষে কথা বলে, তাঁর কথাই যেন আমজনতার কথা। চরিত্রের রূপদানকারী হাসনাত প্রদীপ তাঁর অভিনয়শৈলী দিয়ে দর্শকের নজর কেড়েছেন। 

নাট্যকার, নির্দেশক মোকাদ্দেম মোরশেদ বলেন, রাজনৈতিক বলয়সহ সামগ্রিক পারিপার্শ্বিক বলয়ের একটা স্থানান্তর ঘটেছে। এক বলয় থেকে অন্য বলয়ে আমরা স্থানান্তরিত হয়েছি। বলয় কিন্তু রয়েই গেছে। বলয় থেকে বলয়ে গমন অথবা আটকেপড়া বলয়ে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের স্পন্দন, অনুকূলে বা প্রতিকূলে মুক্তিহীন বলয়বন্দি বহমান এই জীবন– এ উপলব্ধিই ‘বলয়’ নাটকের চিন্তা সূত্র। এতে আছে চরিত্রের স্ববিরোধী অবস্থান; নিজেকেই নিজে বিশ্লেষণ করার একটি ইচ্ছা। দলের ৪০তম প্রযোজনাটির আবহ পরিকল্পনায় সেলিম মাহবুব, আলোক পরিকল্পনায় সুদীপ চক্রবর্তী। থিয়েটার আর্ট ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক এবং প্রযোজনা অধিকর্তা কামরুজ্জামান মিল্লাত বলেন, এস এম সোলায়মানের ভাব ও আদর্শে প্রতিষ্ঠিত নাট্যদল সব সময় নাটকের মধ্য দিয়ে মানুষের কথা মানুষের সামনে বলেছে। নাটক বলয়-এ মানবজীবনের সংকটকে চিনে নিয়ে সম্ভাবনার দুয়ার খোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত। থিয়েটার আর্ট ইউনিটকে অভিনন্দন চমৎকার একটি প্রযোজনা উপহার দেওয়ার জন্য, বাংলাদেশের নাট্যচর্চায় মৌলিক নাটকের যাত্রা অব্যাহত থাকুক।   

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ন টকট র একট

এছাড়াও পড়ুন:

নীতি সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ, কী প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতে

অবশেষে সুদের হার কমিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের পর এই প্রথম সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে দুর্বলতার লক্ষণ, আফ্রো-আমেরিকানদের মধ্যে উচ্চ বেকারত্ব, কর্মঘণ্টা কমে যাওয়া ও নতুন চাকরি সৃষ্টির গতি কমে যাওয়ায় ফেড এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমিয়ে ৪ থেকে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়ার পর ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে সুদহার আরও কমতে পারে। তিনি বলেন, শ্রমবাজারের ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা এখন তাঁর ও সহকর্মী নীতিনির্ধারকদের প্রধান উদ্বেগ। খবর রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক দিন ধরেই ব্যাপক হারে সুদ কমানোর দাবি তুলছিলেন। তাঁর বক্তব্য, এতে অর্থনীতি চাঙা হবে। তবে ফেডের এ সিদ্ধান্ত তাঁর প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। ফেডের পর্ষদে নতুন গভর্নর স্টিফেন মিরান ছিলেন একমাত্র ভিন্নমতাবলম্বী। তিনি ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট হারে সুদহার কমানোর পক্ষে ছিলেন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও বড় কাটছাঁটের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সুদের হার নির্ধারণে রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্ন সব সময়ই তোলা হয়। ট্রাম্প সম্প্রতি ফেডের এক গভর্নর লিসা কুককে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। যদিও কুক আদালতের লড়াইয়ে আপাতত নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন এবং বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান মিরানকে ফেডের পর্ষদে বসান।

শ্রমবাজারে দুর্বলতা

পাওয়েল বলেন, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে, তরুণেরা আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়ছেন। সামগ্রিকভাবে চাকরি সৃষ্টির গতি খুবই কম। শ্রমবাজারকে আর দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না।

পাওয়েল আরও সতর্ক করেন, নতুন চাকরির সংখ্যা এখন বেকারত্বের হার স্থিতিশীল রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে সামান্য ছাঁটাইও বেকারত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে।

মূল্যস্ফীতি বনাম কর্মসংস্থান

মূল্যস্ফীতি এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতির হার ৩ শতাংশে উঠবে, যেখানে ফেডের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ শতাংশ। কিন্তু ফেড মনে করছে, কর্মসংস্থানের ঝুঁকি এখন বেশি গুরুত্ব পাওয়ার মতো বিষয়।

ফেডের নতুন পূর্বাভাসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়িয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ করা হতে পারে বলা হয়েছে। বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশেই স্থির থাকবে বলে তারা অনুমান করছে।

রাজনৈতিক টানাপোড়েন

এ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নাটকও কম ছিল না। ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা থাকলেও ফেডের পর্ষদের অন্য দুই ট্রাম্প-মনোনীত গভর্নর মিশেল বোম্যান ও ক্রিস্টোফার ওয়ালার শেষ পর্যন্ত মূল সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন। ওয়ালার বরাবরই শ্রমবাজারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলে আসছেন।

পাওয়েল অবশ্য পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ‘আমাদের সংস্কৃতির মূল বিষয় হলো তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত। আজকের বৈঠকে সুদহার ব্যাপক হারে কমানোর বিষয়ে বিপুল সমর্থন ছিল না।’

বাজারের প্রতিক্রিয়া

সুদহার কমানোর ঘোষণার পর ওয়াল স্ট্রিটে প্রথমে শেয়ারের দাম বাড়লেও পরে ওঠানামা করে। শেষমেশ মিশ্র পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন শেষ হয়। ডলার কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে ঠিক, কিন্তু ট্রেজারি বন্ডের সুদ প্রায় অপরিবর্তিত। বাজার এখন প্রায় নিশ্চিত, অক্টোবরের বৈঠকেও সুদ কমানো হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, ফেডের সাম্প্রতিক নীতি পরিবর্তনের মানে হলো তারা এখন ধীরে ধীরে ‘নিরপক্ষে’ অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি সাময়িকভাবে কিছুটা বাড়লেও ২০২৬ সালের মধ্যে স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নীতিসুদ কী

কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটাই নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। রেপোর বাংলা হচ্ছে পুনঃক্রয় চুক্তি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে এটি পরিচিত। অর্থনীতিতে নগদ তারল্যের জোগান দিতে বা অন্যভাবে বলতে গেলে ব্যাংকগুলোর জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সরবরাহ করতে মুদ্রানীতির এ হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ হাতিয়ার ব্যবহার করে।

কোভিডের পর রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তখন ফেডারেল রিজার্ভ বাজারে মুদ্রার চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে দফায় দফায় নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। ফলে নীতি সুদহার গত দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহারের প্রভাব

বিশ্ব অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিসুদের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। ফেডের নীতিসুদের হার বাড়লে ট্রেজারি বন্ডের দাম কমে এবং সুদহার কমলে ট্রেজারি বন্ডের দাম বাড়ে। এর কারণ হলো বাজারে নতুন ও অধিক সুদের বন্ড আসার পর পুরোনো বন্ডের কুপন (সুদ) কম মনে হয়, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম কমে যায়। আবার যখন সুদের হার কমে, তখন নতুন বন্ডের কুপন কম হওয়ায় পুরোনো বন্ডের উচ্চ কুপনযুক্ত সুদ বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম বেড়ে যায়।

নীতিসুদ কমলেও একই প্রক্রিয়া ঘটে, তবে বিপরীতভাবে। সুদের হার কমলে নতুন বন্ডের কুপনও কমে যায়। এতে আগের উচ্চ সুদের কুপনযুক্ত বন্ডগুলো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বিনিয়োগকারীরা এই পুরোনো বন্ডগুলো কিনতে আগ্রহী হন, ফলে সেগুলোর দাম বেড়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা তখন তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ বাজারেও বিনিয়োগ আগ্রহী হন। এতে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগপ্রবাহ বাড়ে এবং ডলারের চাপ কিছুটা কমে।

সে কারণে বাজার নীতি সুদহারের দিকে তাকিয়ে থাকে, সুদ কমলে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ