থিয়েটার আর্ট ইউনিটের নতুন নাটক ‘বলয়’-এর উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়ে গেল গত ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে। নাটকটির পাণ্ডুলিপি, পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন মোকাদ্দেম মোরশেদ। নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়নকালে হলের লবিতে একটি ইনস্টলেশন দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। ‘বলয়’ নাটকটি এগিয়ে গেছে মূলত তিনটি চরিত্রকে কেন্দ্র করে। এঁরা হলেন– রাজনীতিক, বিজ্ঞানচিন্তক ও ধর্মতাত্ত্বিক। তারা গেছেন মনোবিশ্লেষকের কাছে কাউন্সিলিংয়ের জন্য। কারণ, তাদের উপলব্ধি, তারা একটি বলয়ের মধ্যে আটকে গেছেন । হাঁপিয়ে উঠেছেন তারা, বলয় থেকে মুক্ত হতে চান।
বিজ্ঞান-ধর্ম-রাজনীতির কথা, যুক্তির পিঠে যুক্তি, যুক্তি খণ্ডন, আস্থা-অনাস্থা অনুভবের কথা, তারা ফিরে যান তাদের আপন সত্তায়। নিজের সঙ্গেই নিজের কথোপকথন। নাট্যকারের ভাষায় এটি অন্তর্দ্বন্দ্বের নাটক। একটি চক্র, একটি বলয় ঘিরে রেখেছে আমাদের প্রত্যেককে। সামাজিক বলয়, রাজনীতির বলয়, ধর্মীয় বলয়, যুক্তি-অযুক্তির বলয়, ক্ষমতার বলয়, শোষণের বলয়, শাসকের বলয়। বলয়বৃত্তে ছটফট করা প্রাণ ছুটে যেতে চায়, মুক্ত হতে চায়; হয়তো ছুটে যায়ও কিন্তু পড়ে যায় আরেক বলয়ে।
সংলাপই এ নাটকের প্রাণ। চমৎকার অর্থপূর্ণ সংলাপগুলো দর্শককে নাড়া দিয়ে যায়, জাগিয়ে তোলে কিছু প্রশ্ন অথবা অনুসন্ধানের ইচ্ছা। এ কনটেম্পোরারি অন্তর্দ্বন্দ্বের নাটকটি যেন নিজেকেই নিজে বিশ্লেষণ করে দেখিয়ে দেয় নানান অসংগতি, অযুক্তির বলয়ে আমাদের বসবাস। গল্পের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ সেট, আলো, আবহ, অভিনয় দক্ষতা এবং সর্বোপরি ডিরেক্টোরিয়াল ওয়ার্ক নাটকটিকে অর্থবহ করে তুলেছে। বলয় নাটকটিকে থিয়েটার আর্ট ইউনিটের একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রযোজনা বলা যেতে পারে। রাজনীতিক বিজ্ঞানচিন্তক ধর্মতাত্ত্বিক চরিত্রে যথাক্রমে– সেলিম মাহবুব, স্বাধীন শাহ্, রেজাউল আমিন সুজনের দুর্দান্ত অভিনয় দর্শকদের নজর কেড়েছে। মনোবিশ্লেষক চরিত্রে নাহিদ সুলতানা লেমন উতরে গেছেন। দর্শনার্থী এবং অমৃতা চরিত্রে রূপদানকারী রানা সিকদার ও মাহমুদা সুলতানা ভাবনার অভিনয় উপস্থাপনের আরও সুযোগ আছে বলে মনে হয়। আরেকটি ইন্টারেস্টিং চরিত্র মানসিক রোগী, তিনি একজন পিটিএসডি। যে চরিত্র আমজনতার পক্ষে কথা বলে, তাঁর কথাই যেন আমজনতার কথা। চরিত্রের রূপদানকারী হাসনাত প্রদীপ তাঁর অভিনয়শৈলী দিয়ে দর্শকের নজর কেড়েছেন।
নাট্যকার, নির্দেশক মোকাদ্দেম মোরশেদ বলেন, রাজনৈতিক বলয়সহ সামগ্রিক পারিপার্শ্বিক বলয়ের একটা স্থানান্তর ঘটেছে। এক বলয় থেকে অন্য বলয়ে আমরা স্থানান্তরিত হয়েছি। বলয় কিন্তু রয়েই গেছে। বলয় থেকে বলয়ে গমন অথবা আটকেপড়া বলয়ে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের স্পন্দন, অনুকূলে বা প্রতিকূলে মুক্তিহীন বলয়বন্দি বহমান এই জীবন– এ উপলব্ধিই ‘বলয়’ নাটকের চিন্তা সূত্র। এতে আছে চরিত্রের স্ববিরোধী অবস্থান; নিজেকেই নিজে বিশ্লেষণ করার একটি ইচ্ছা। দলের ৪০তম প্রযোজনাটির আবহ পরিকল্পনায় সেলিম মাহবুব, আলোক পরিকল্পনায় সুদীপ চক্রবর্তী। থিয়েটার আর্ট ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক এবং প্রযোজনা অধিকর্তা কামরুজ্জামান মিল্লাত বলেন, এস এম সোলায়মানের ভাব ও আদর্শে প্রতিষ্ঠিত নাট্যদল সব সময় নাটকের মধ্য দিয়ে মানুষের কথা মানুষের সামনে বলেছে। নাটক বলয়-এ মানবজীবনের সংকটকে চিনে নিয়ে সম্ভাবনার দুয়ার খোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত। থিয়েটার আর্ট ইউনিটকে অভিনন্দন চমৎকার একটি প্রযোজনা উপহার দেওয়ার জন্য, বাংলাদেশের নাট্যচর্চায় মৌলিক নাটকের যাত্রা অব্যাহত থাকুক।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।