আবার আসিব ফিরে/ধানসিঁড়িটির তীরে/এই বাংলায়/হয়তো মানুষ নয়/হয়তো-বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে/হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে। বাংলা সাহিত্যের বিস্ময়কর বিরহের কবি জীবনানন্দ দাশ। ফুটিয়ে তুলে ছিলেন বাংলার প্রকৃতির বিস্ময়কর সৌন্দর্যের। প্রকৃতির মাঝে ডুবে থেকে সব বেদনা ভুলে থাকতে চেয়েছিলেন রূপসী বাংলার কবি। ভোরের কাক হয়ে আবার এই বাংলায় ফিরে আসার আগ্রহ প্রকাশ করলেও, কবি কি জানতেন হাজার হাজার বছর ধরে এদেশের মানুষের সাথে মিশে থাকা এই পাখির এমন শেষ পরিণতি ঘটবে?

ঢাকাকে বলা হতো ‘কাকের শহর’। এই শহরবাসীর ঘুম ভাঙত কাকের ডাকে। হরহামেশা দেখা মিলত হাজার হাজার কাক পাখির। এই শহরের আনাচে-কানাচে ডাস্টবিন ও ময়লার ভাগাড় ঘিরে দেখা যেত শত শত কাক। খাবার নিয়ে কত মারামারি আর শোরগোল। কাকের ভয়ে শিশুরা খাবার নিয়ে বাইরে যাওয়ার সাহস পেত না। ধানমন্ডি লেক, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এদের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু সেই কাকের উপস্থিতি এখন বিরল। 

কালো বর্ণ, লম্বা চঞ্চু, কর্কশ স্বর ও তিতকুটে মাংসের কারণে অন্য শিকারি পাখি বা প্রাণীর আগ্রহ খুব কমই থাকে। প্রাণীজগতের মধ্যে কাক অত্যন্ত বুদ্ধিমান, কৌশলী ও সাহসী। জীবের বেঁচে থাকার প্রয়োজনে জলবায়ু এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে নিজেদের খাপ খাওয়ানোর প্রতিভাকে আমরা অভিযোজন বলে থাকি এবং এই ক্ষমতা কাকেরই বেশি আছে। তারপরও আমাদের পরিবেশে, এমনকি হয়েছে বা ঘটছে, যে কারণে কাক উধাও হয়ে যাচ্ছে। 

দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ডামাডোলের মধ্যে বিষয়টির প্রতি অনেকের খেয়াল নেই।
  
কাকের বসবাস  

আটলান্টিক মহাদেশ ছাড়া পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র কাকের বসবাস। আদি প্রধান আবাসস্থল মধ্য এশিয়ায়। সেখান থেকে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। পৃথিবীতে প্রায় ৪০টিরও বেশি উপ-প্রজাতির কাক দেখা যায়। বাংলাদেশে পাতিকাক ও দাঁড়কাক দেখা যায়। ভুটানের জাতীয় পাখি দাঁড়কাক।

বাংলা সাহিত্যে কাক

কাক এদেশের মানুষের কাছে অতিপরিচিত এক পাখি। কাকের সাথে গল্প নেই এমন মানুষ পাওয়া খুবই দুষ্কর। বাংলা সাহিত্যে কাক পাখির পদচারণা অনেক ব্যাপক। রয়েছে অনেক  বিশ্বাস, গল্প, কবিতা, লোককাহিনী ও প্রবাদ। কাজী নজরুল ইসলাম, সুকুমার রায়, জসীম উদ্দীন, শামসুর রহমান ও সত্যজিৎ রায়সহ অনেকের সাহিত্যকর্মে কাকের উপস্থিতি লক্ষণীয়। প্রচলিত রয়েছে, অনেক লোকগাথা আর প্রবাদ। বিপর্যস্ত অবস্থাকে বোঝাতে ঝড়ো কাক, ধৈর্যশীল অর্থে তীর্থের কাক, দীর্ঘায়ু অর্থে ভূষণ্ডির কাক, অগোছালো বৈশিষ্ট্যের জন্য কাকের বাসা, বুদ্ধির কারণে কাকের বুদ্ধি, অগভীর নিদ্রা কারণে কাক নিদ্রা, পরিষ্কার স্বচ্ছ জল বোঝাতে কাকচক্ষু, অত্যধিক চেষ্টা অর্থে কাকচেষ্টা, খুব প্রাতঃকাল বুঝাতে কাকভোর বোঝানো হয়ে থাকে। কাকের ঠোঁটে মরা মাছ, কাকচক্ষু, কাকতালীয়,  কাকের ঠ্যাং বগের ঠ্যাং, কাকের মত ধূর্ত, কাক কাকের মাংস খায় না উপমা বাংলা ভাষায় অহরহ  ব্যবহৃত হয়। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের বিখ্যাত দুর্ভিক্ষের চিত্রমালাতে ও অনন্যা অনেক ছবিতে বারবার এসেছে কাক।

কাক নিয়ে কথকতা   

কাক সামাজিক ও গণতন্ত্রমনা পাখি। বাসা বাঁধা থেকে সব কাজে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয় এবং সবাই আকাশে উড়ে সমর্থন জানায়। ভরদুপুরে বা দুপুরের পরে এরা সমাবেশ করতে ভালবাসে। তখন সবাই একসাথে ডাকাডাকি করে। কখনো একসাথে উড়েও বেড়ায়। 

অনেকসময় শিকারি পাখিকে কায়দামত পেলে কাক দলবদ্ধভাবে ধাওয়া করে তার শিকার ছিনিয়ে নেয়। দলের কেউ অন্যায় করলে নিজেদের ভেতর বোঝাপড়া করে। 

একটি কাক বিপদে পড়লে অন্যরাও এগিয়ে আসে, এমনকি হাজার হাজার চলে আসে। প্রতিশোধ নিতে ভুল করে না। গবেষণায় দেখা গেছে, ১৭ বছর পর্যন্ত তারা তাদের শত্রুদের মনে রাখতে পারে।

কাক মানুষের মত প্রেমে মজে থাকে। একলা একটা কাক দেখা যায় কদাচিৎ ও সামাজিকভাবে একগামী। বিশেষ কোনো কারণ ছাড়াই দীর্ঘদিন এক সঙ্গীর সঙ্গেই কাটিয়ে দেয়। স্ত্রী কাকই অধিকাংশ সময়ে মূলত ডিমে তা দেয়। তবে বৃষ্টি নামলে, শিলাবৃষ্টি হলে বা প্রচণ্ড রোদ পড়লে স্ত্রী-পুরুষ একসঙ্গে ডিম আগলে রাখে।

কাককে পাখিদের আইনস্টাইন বলা হয়। কাক মানুষের মতোই পরিকল্পনা করে কাজ করে, যেমন কখন কী খাবে, কোথায় খাবার পাবে, সঙ্গীকে কতটুকু ভাগ দেবে ইত্যাদি। খুব সুযোগসন্ধানী ও চতুরতার কারণে বদনামও আছে। মাঝে মাঝে গর্ত করে তার খাবার লুকিয়ে রাখে  এবং এমনভাবে করে যাতে অন্য ব্যাপারটি দেখে না ফেলে! কাক নিরীহ, যে কারণে অন্যরা এসে কাকের বাসায় বাস করে। কাকের মাথায় এমন এক নিউরন খুঁজে পাওয়া গেছে যা প্রমাণ করে যে, তারা খুব বুদ্ধিমান ও কৌশলী। কাক যে কেবল যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারে তাই নয়, যন্ত্রপাতি নির্মাণেও এরা পারদর্শী। 

প্রকৃতির ঝাড়ুদার

কাক পাখি বিচরণ যত্রতত্র এবং সর্বভুক। প্রতিদিন আবর্জনা ও বর্জ্য খেয়ে দূষণমুক্ত পরিবেশের নিশ্চয়তা দিতে পরোক্ষভাবে কাজ করে। তাই একে প্রকৃতির ঝাড়ুদার বলা হয়। কাককে আমরা হেলথ ইন্সপেক্টরও বলি। 


কাক হারিয়ে যাওয়ার কারণ 

পক্ষীবিদ ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, নানা কারণে কমছে কাকের জনসংখ্যা। তবে প্রধান দুই কারণ হলো, আবাসস্থল হারানো ও খাদ্য সংকট। নগরায়ণ বৃদ্ধি ও উন্নয়নের কারণে পতিত জমি, জলাধার ও বনাঞ্চল কমেছে, সংকুচিত  হচ্ছে পাখির আবাসস্থল। ঢাকা শহরে নেই কাকদের বসার মতো জায়গা নেই,  বাসা বাঁধার মত গাছ ও জায়গা নেই।

কাকের খাদ্যতালিকা বেশ বড়। ফেলে দেওয়া খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ, হাঁসমুরগির ছানা, পোকামাকড়, ফলমূল, ফুলের মধু, ফসলের বীজ, পাখির ডিম, ছোট সরীসৃপ, সাপ, ব্যাঙ ইত্যাদি খায়। অথচ এগুলো এখন তারা পাচ্ছে না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত হওয়ার কারণে কাকের সহজলভ্য খাদ্যও কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি কৃষিকাজে রাসায়নিক এবং বিষ ব্যবহারের ফলে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে।  

অনিয়ন্ত্রিত হারে বেড়ে চলেছে পলিথিন, প্লাস্টিক  এবং রাসায়নিক ব্যবহার।  বর্জ্যে এসব ধাতব পদার্থের ভাগ আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। এ ছাড়া বর্জ্যের ওপরই কীটনাশক বা ইনসেকটিসাইড ছিটানো হয় যা কাকের দেহে বিষক্রিয়া ঘটায়।

কাক শুধু পানি খায় না, গোসল করার প্রবণতাও প্রবল। জলাধারের অভাবে সেই সুযোগও দিন দিন কমে যাচ্ছে আর যেটুকু পানি পায়, সেটাও আবার দূষিত। 

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর গবেষণা দেখা গেছে, অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার বা বার্ড ফ্লু ভাইরাসের কারণে অনেক স্থানে গণহারে কাকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। যত্রতত্র পোল্ট্রি খামারের মরা মুরগি ফেলার কারণে এমনটি ঘটছে। কাকের স্বাভাবিক আয়ুষ্কাল ১০-১৫ বছর। তবে রাণীক্ষেত, Escherichia coli ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ, কলেরা, বটুলিজম ও বসন্তে আক্রান্ত হয়েও কাক মারা যায়।

বন ও জীববৈচিত্র্য গবেষকদের মতে, কাকসহ বিভিন্ন পাখির সংখ্যা কমে যাওয়ার আরেকটি বড় কারণ মোবাইল টাওয়ারের মতো প্রযুক্তিগত স্থাপনার আধিক্য। এগুলো থেকে বের হওয়া তেজস্ক্রিয়া থেকে বাঁচতে পাখিরা নিরাপদ স্থানে চলে যায়।
ইদানীং অনেকে ‘কাকের মাংস খাওয়া’ শুরু করেছে। তাছাড়া বিরক্তিকর মনে করে বিষ প্রয়োগ ও অন্যভাবে হত্যার খবর পাওয়া যায়। অনেক সময় বৈদ্যুতিক তারে আটকা ও ঝড়ের কবলে পড়ে মারা যেতে দেখা যায়। 

প্রতিকূল আবহাওয়া বা জলবায়ু পরিবর্তন কাকের খাদ্য এবং বাসস্থানকে প্রভাবিত করছে। পাশাপাশি প্রজননেও বাধা সৃষ্টি করছে।
অনেকের মতে, অনেক সময় পাখি এক স্থানে খাবার না পেলে বা অন্য স্থানে চলে যায়। তবে ঢাকাসহ সারাদেশে কাকের সংখ্যা ও তাদের কমে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো গবেষণা তথ্য বা জরিপ নেই বন বিভাগের কাছে।

চীনের চড়ুই পাখি নিধনের গল্প 

উন্নয়ন প্রয়োজন, তবে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংস করে নয়। প্রকৃতির আপন গতিতে বাধার সৃষ্টি করলে, সেটা যে কতটা ভয়ানক বিপদ আনতে পারে, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো চীনের চড়ুই পাখি নিধনের গল্প। সমাজতান্ত্রিক চীনের বিপ্লবী নেতা মাও সে তুং, যাকে প্রায়শই সে দেশের জাতির জনক বলা হয়। চীনের উন্নয়নে মরিয়া হয়ে বিভিন্ন ধরনের আকাশচুম্বী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি। ১৯৫৮-১৯৬১ সময়কালে মাও সে তুং স্লোগান তুললেন, দু’পায়ে হাঁটা। অর্থাৎ, একই সময়ে শিল্প ও কৃষির উন্নয়ন। শিল্প ও কৃষি খাতে ইংল্যান্ড, আমেরিকাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে বিশাল কর্মযজ্ঞ ও কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। ঐ সময় কথিত একদল বিশেষজ্ঞরা বললেন, বছরে প্রতিটি চড়ুই পাখি খেয়ে ফেলে প্রায় ৪.

৫ কেজি শস্যদানা। তাহলে প্রতি এক মিলিয়ন চড়ুই পাখি হত্যা করতে পারলে, আনুমানিক ৬০ হাজার মানুষের খাদ্য সংস্থান করা সম্ভব হবে। 

মাও সে তুং সেই হঠকারী পরামর্শ গ্রহণ করলেন। তিনি ১৯৫৮ সালে Four Pest Campaign-এর ডাক দিলেন- মশা, ইঁদুর, মাছি ও চড়ুই নিধন অভিযানে। চড়ুই নিধনের নাম দেওয়া হলো ‘Eliminate sparrows Campaign’ (Xiamie Maque Yundong)- চড়ুই নির্মূল অভিযান। 

মাও সে তুংয়ের কথা মানে বেদবাক্য। দেশপ্রেম, লাল পতাকা নিয়ে দলে দলে চড়ুই নিধন কর্মসূচিতে ঝাঁপিয়ে পড়লো সাধারণ মানুষ। গ্রামবাসী, কৃষক, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, সরকারি অফিসের কর্মী, কারখানার শ্রমিক, সেনা, পুলিশ সবাই ছোট্ট পাখির বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে গেল। বেশি হত্যায় পুরস্কারেরও ব্যবস্থা ছিল। তাড়া করে ও বিষ দিয়ে মারা, বাসা ভাঙা, ডিম ভাঙা, ছানা মেরে ফেলা, গুলি করে আর অন্য কোনভাবে হোক; যে যেভাবে পারে চড়ুই মারা শুরু করল। চড়ুই যেন স্থির হয়ে বসতে না থাকতে পারে সেজন্য ড্রাম, থালা, বাটি ইত্যাদি বাজানো হতো। এক সময় উড়তে উড়তে ক্লান্ত হয়ে অজ্ঞান হয়ে পাখিগুলো নিচে পড়লে তাদের হত্যা করা হত। আবার বিকট শব্দের কারণে চড়ুইরা প্রাণত্যাগ করত।  

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, কমপক্ষে ৬০ কোটি চড়ুইয়ের গণহত্যা ঘটেছিল এবং প্রায় চড়ুইশূন্য হয়েছিল গণচীন। পাখি নিধনের নেশা এমনভাবে জেঁকে ধরেছিল যে, শুধু চড়ুই নয়, অন্যান্য পাখির সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে কমে গিয়েছিল। হঠকারী সিদ্ধান্তের ফলাফল ছিল, ১৯৫৯ সাল থেকে শুরু হয় নজিরবিহীন মহাদুর্ভিক্ষ। যে দুর্ভিক্ষ ‘দ্য গ্রেট ফেমিন’ নামে পরিচিত। কমপক্ষে পাঁচ কোটি মানুষ প্রাণ হারায় সেই মহাদুর্ভিক্ষে। ‘Cannibalism’- নরমাংস ভক্ষণের ঘটনাও বহু জায়গায় ঘটেছিল। 

দুর্ভিক্ষের কারণ যেমন আংশিক ছিল প্রাকৃতিক খরা, তেমনি ছিল মনুষ্যনীতি, চড়ুই পাখি নিধন।  শস্যদানার পাশাপাশি চড়ুই ও অন্যান্য পাখি নানা ধরনের পোকামাকড়ও খায়। বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় জ্যামিতিক হারে বেড়ে যায় পোকামাকড়ের সংখ্যা। পঙ্গপালে ছেয়ে যায় দেশ। শস্য বাঁচানোর জন্য অনেক কিছু করা হলো, শস্য গিয়েছিল পোকামাকড়ে পেটে। বাধ্য হয়ে মাও সে তুং নীতি আংশিক পরিবর্তন করেন। ১৯৬০ সালে Four Pest Campaign-এ চড়ুইকে রেহাই দিয়ে তার স্থলে ছারপোকাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আর চড়ুইশূন্য চীনে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে কয়েক লাখ চড়ুই আমদানি করতে বাধ্য হয়েছিল।  

কাক না থাকলে কী ঘটতে পারে

কোনকিছুই অনর্থ সৃষ্টি নয়। প্রাণী বিজ্ঞানীদের মতে, বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেম বা চক্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন জীবসমষ্টি পরস্পরের সাথে এবং তাদের পারিপার্শ্বিক জৈব ও অজৈব উপাদানের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে একটি জীবনধারা গড়ে ওঠে। বাস্তুসংস্থানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ কাক। এই চক্রে অন্যান্য পাখি, পতঙ্গ, সরীসৃপ, মৎস্য, স্তন্যপায়ী, বৃক্ষ ইত্যাদি সবই আছে। এটাকে মালা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, কোনো একটি প্রাণী যদি মালা থেকে খসে, তাহলে পুরো ব্যবস্থাই উল্টাপাল্টা হয়ে যায়। 

প্রতিকূল পরিবেশের কারণে বাস্তুতন্ত্রের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে এবং প্রকৃতির খাদ্যশৃঙ্খল একেবারেই ভেঙে পড়েছে। অনেক প্রজাতির পশুপাখি ও মাছের বিলুপ্তি ঘটেছে, আবার অনেক কিছু বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। 

অন্যদিকে, নতুন নতুন প্রজাতির আবির্ভাব হচ্ছে। যেমন, নানা ধরনের বর্জ্য ও আবর্জনার কারণে বুড়িগঙ্গা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দেশি জাতের সব মাছ। জাল ফেললেই উঠে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে খাওয়ার অযোগ্য বিষাক্ত সাকার মাছ। 

কাক হারিয়ে যাওয়ায় বাস্তুতন্ত্রের বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে। কাক একসময় শহর বেশি পরিচ্ছন্ন রাখত। এখন এই পরিচ্ছন্নতার জন্য বছরে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। অনেকের মতে, কাক কমে যাওয়ায় উচ্ছিষ্ট খাবার এখন কুকুরের খাবারে পরিণত হয়েছে। ফলে কুকুরের বংশবৃদ্ধি ঘটছে এবং মানুষ বেশি বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। 

অন্যদিকে, আবর্জনা ও বর্জ্যের কারণে পরিবেশ দূষিত হয়ে জীবাণুর বিস্তৃতি ঘটছে এবং মানুষের মধ্যে নতুন নতুন রোগের সংক্রমণ ঘটছে ।
কাককে মানুষের কাজে লাগানো

বুদ্ধিমান কাককে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন ধরনের কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে। ফ্রান্সের একটি থিম পার্কের ময়লা অপসারণ ও পরিচ্ছন্নতার কাজ করানোর জন্য বেশ কিছু কাককে কাজে লাগানো হয়েছে। তারা পার্কে পড়ে থাকা সিগারেটের শেষাংশ ও অন্যান্য ছোটখাটো আবর্জনা সংগ্রহ করে বাক্সে এনে জমা করে। 

কাক রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন

যুগের পর যুগ পাখি ও বন্যপ্রাণীদের নিছক উৎপীড়ন মনে করেছে মানুষ। কখনও ঠান্ডা মাথায়, কখনো দলবেঁধে মহাউল্লাসে তাদের হত্যা করা হয়। দেশের প্রকৃতি যখন অনেকটাই বন্যপ্রাণী এবং পাখিশূন্য, তখন সবচেয়ে অভিযোজন ক্ষমতা সম্পন্ন কাকের হারিয়ে যাওয়া প্রকৃতি বিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলেছে। আমরা নিজেরাই নতুন করে কোনো বিপদ ডেকে আনছি কি না, আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।

গবেষকদের মতে, সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাখি কমছে এশিয়া মহাদেশে। আবার আর গত ৩০ বছরে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে ভয়ঙ্করভাবে কমছে পাখির সংখ্যা। শুধু শহর নয়, একই অবস্থা গ্রামেও। একসময় হাওর এলাকায় প্রচুর কাক দেখা যেত কিন্তু এখন আর দেখা যায় না।   

এটা যে অশনি সংকেত আর দিনশেষে ক্ষতিটা মানুষেরই, আমাদের সবাইকে এটা আগে উপলব্ধি করা প্রয়োজন। 

অকারণে কাক হত্যা, এদের খাদ্যভাণ্ডার ও আবাসস্থল ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকতে হবে। পাশাপাশি বন অধিদপ্তরের উদ্যোগে সবুজায়ন বৃদ্ধিসহ বংশবৃদ্ধির জন্য ব্রিডিং সেন্টার ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

ভারত, পাকিস্তান, নেপালসহ পৃথিবীর বহু দেশ আগে থেকেই পশুপাখি সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়ে অনেক সফলতা পেয়েছে। 

এখনই সচেতন না হলে বা উদ্যোগ গ্রহণ না করলে হয়ত এমন দিন আসবে, যেদিন আমাদের বিদেশ থেকে কাক ও অন্যান্য পাখি আমদানি করতে হবে। 

আধুনিকতা ও উন্নয়ন যা-ই বলি না কেন, কোনভাবেই প্রকৃতি ও জীববৈচিত্রকে অবহেলা করে নয়, তাদের সাথে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। তা না হলে প্রকৃতি যে কত নিষ্ঠুর ও নির্মম হতে পারে, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রাষ্ট্রের পাশাপাশি আমাদের প্রত্যেককে সচেতন হওয়া ও উদ্যোগ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।

 

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

ঢাকা/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য ব ব যবস থ পর ব শ ধরন র ব যবহ

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকার শ্রমিক সমাবেশে সজল- সাহেদের নেতৃত্বে মহানগর যুবদলের অংশগ্রহণ 

১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে ঢাকা নয়াপল্টনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের শ্রমিক সমাবেশে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল ও সদস্য সচিব সাহেদ আহমেদের নেতৃত্বে মহানগর মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিশাল শোডাউন করে অংশগ্রহন করেছে ।

বৃহস্পতিবার (১ মে ) দুপুর দুইটায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় এ কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।  এতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল ও সদস্য সচিব সাহেদ আহমেদের নেতৃত্বে এসময়ে আরও উপস্থিত ছিলেন, মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরে এলাহী সোহাগ, যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন কমল, যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ মোহাম্মদ অপু, যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক মোফাজ্জল হোসেন আনোয়ার, যুগ্ম আহ্বায়ক শাকিল মিয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান খলিল শ্যামল, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল আলম সজিব, যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন সেন্টু, যুগ্ম আহ্বায়ক আক্তারুজ্জামান মৃধা, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রাফি উদ্দিন রিয়াদ, শহিদুল ইসলাম,ওয়াদুদ ভূইয়া সাগর, পারভেজ খান, মোঃ আরমান হোসেন, কামরুল ইসলাম রনি, মিনহাজ মিঠু, আশিকুর রহমান অনি, জুয়েল রানা, কামরুল হাসান মাসুদ, এরশাদ আলী, ফয়েজ উল্লাহ সজল,আলী ইমরান শামীম, তরিকুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম আপন, শাহীন শরীফ, মাগফুর ইসলাম পাপন, জুনায়েদ আলম ঝলক, ফয়সাল আহমেদ, সাইদুর হাসান রিপন, আরিফ খান, কায়সার আহমেদ, এড. শাহিন খান, কাজী নাইসুল ইসলাম সাদ্দাম, আলী হোসেন সৌরভ, বাদশা মিয়া, মাসুদ রানা, মাকসুদুর রহমান শাকিল, রুবেল সরদার, রিয়াজুল আলম ইমন, জুনায়েদ মোল্লা জনি, হাবিবুর রহমান মাসুদ, আঃ কাদির, আশরাফুল হক তান্না, জাহিদুল হাসান শুভ, মাহফুজুর রহমান ফয়সাল প্রমুখ ।

এছাড়াও মহানগর যুবদলের আওতাধীন নারায়ণগঞ্জ সদর,সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর থানারষ ও উপজেলা বিভিন্ন ওয়ার্ডের যুবদলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ