বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি অবাঞ্ছিত ঘোষণা পদত্যাগকারী ও পদবঞ্চিতদের
Published: 15th, February 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন সদ্য ঘোষিত কমিটি থেকে পদত্যাগকারী ও পদবঞ্চিত নেতারা। একই সঙ্গে নতুন কমিটি ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
বৃহস্পতিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্যসচিব আরিফ সোহেল স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানাকে আহ্বায়ক ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সিফাত হাসান সাকিবকে সদস্যসচিব করা হয়। কমিটির উপদেষ্টা সদস্য হিসেবে রয়েছেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মো.
কমিটি গঠন করার পর থেকেই অনেক শিক্ষার্থী এই কমিটিকে বিতর্কিত বলে আখ্যা দেন। পরে গত শুক্রবার রাতে কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ফেরদৌস শেখ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শাহিন মিয়া ও সংগঠক রাকিব হোসাইন। নতুন কমিটির দাবি তুলে রোববার থেকে আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন পদত্যাগী ও পদবঞ্চিত নেতারা।
নতুন কমিটি ঘোষণার দাবি জানিয়ে মো. ফেরদৌস শেখ শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘বিপ্লবীরা কখনো মাথা নত করে না। আর মাথা নত করার জন্য আন্দোলন করেনি। ফ্যাসিজমের পতন হয়েছিল এই বিপ্লবীদের মাধ্যমেই। যারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিল, তাদের ব্যতীত এসব পকেট কমিটি কখনোই মেনে নেওয়া হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই পকেট কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বিপ্লবীদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লিস্ট যাবে কেন্দ্রে, কেন্দ্র থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়।’
এ আগে বৃহস্পতিবার ফেসবুকে পোস্ট করেন শাহিন মিয়া। তিনি লেখেন, ‘জবিতে (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি মূলত পদত্যাগ করা সমন্বয়ক নূর নবীর পছন্দের লোকদের নিয়ে করা হয়েছে। এখানে কোনো ধরনের যোগ্যতার মূল্যায়ন করা হয়নি। এখানে দেখা হয়েছে নূর নবীর অনুগত কি না। এই ব্যক্তিগত কমিটি মানি না এবং প্রত্যাখ্যান করছি।’
এ বিষয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নুরনবী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যারা কমিটির জন্য নাম জমা দিয়েছিল, সবাইকে আমরা রাখার চেষ্টা করেছি। এখন কেউ যদি বলে আমাকে রাখা হয়নি কেনো, আমার উত্তর হলো সে তার নাম পাঠায়নি। যারা কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছে তাদের সবাইকে গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা সম্ভব নয়। যারা কাজ করবে, সময় দেবে তার উপর ভিত্তি করে আমরা কমিটি করেছি।’
পদবঞ্চিত আরেক শিক্ষার্থী মাকসুদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যারা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের স্বপ্ন দেখি, বৈষম্যবিরোধী কমিটিতে থেকে তাদের পরে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। তাহলেই সমস্যার সমাধান হবে। তা না হলে আমাদের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের স্বপ্ন চুরমার হয়ে যাবে। এই আমাদের পরিশ্রম বৃথা যেতে পারে না। আমরা এই কমিটি মানি না।’
এ বিষয়ে রাকিব হোসাইন বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যদি রাজনৈতিক দল হওয়ার আগে রাজনৈতিক পরিচয় হয়ে থাকে, তাহলে আমি নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছি। আমার কাছে এটি এখনো নির্দলীয় প্ল্যাটফর্ম, যে ব্যানারটা ছিল স্বৈরাচার পতনের শেষ হাতিয়ার, যে ব্যানারটার পেছনে পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ। তাই এই প্ল্যাটফর্মের দায়িত্বকে আমি গৌরবের বলেই মনে করি। এখানে প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার সব শিক্ষার্থীর রয়েছে। তাই এটিকে এখনই রাজনৈতিক পদ কিংবা পরিচয় বলে ভাবার কোনো সুযোগ দেখছি না। আর যদি তা–ই হয়, নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছি।’
সদ্য ঘোষিত কমিটিতে পদবঞ্চিত শিক্ষার্থী ফয়সাল মুরাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনে অনেক সহযোদ্ধা ছিল। হল থেকে মেয়ে শিক্ষার্থীরা আসত। তাদের রাখা হয়নি। আন্দোলনের সম্মুখসারিতে যারা ছিল, তাদেরকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধীর কমিটি একজন ব্যক্তির পছন্দের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুনবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পদবঞ চ ত র জন ত ক পদত য গ
এছাড়াও পড়ুন:
সন্তানদের টানে বিচ্ছেদ থেকে বন্ধন, আদালত চত্বরে আবার বিয়ে
তিন বছর আট মাস আগে বিবাহবিচ্ছেদ হয় এক দম্পতির। পরে দুই কন্যাসন্তানের হেফাজত চেয়ে আদালতে পাল্টাপাল্টি মামলা করেন মা ও বাবা। শুনানির সময় বাবার সঙ্গে আদালতে সন্তানদের দেখা হতো। কিন্তু এতটুকু দেখাতে মন ভরত না সন্তানদের। সন্তানেরা মা-বাবাকে সব সময় একসঙ্গে কাছে পেতে চাইত। সাত বছর বয়সী বড় কন্যা প্রতিবার সাক্ষাতের সময় কান্নাকাটি করে মা-বাবাকে একসঙ্গে থাকার জন্য আকুতি জানাত।
পরে দুই কন্যার মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে ব্যথা ও অভিমান ভুলে ওই দম্পতি আবার একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় তিন বছর মামলা চালানোর পর গত মার্চ মাসে আদালত চত্বরে তাঁদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মলয় কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, শুধু কন্যাদের মানসিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ওই দম্পতি আবার এক হয়েছেন। আপসের পর ধর্মীয় বিধান মেনে আদালত চত্বরে তাঁদের আবার বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। তাঁরা সংসার শুরু করেছেন।
যেভাবে দ্বন্দ্ব, যেভাবে আপস
২০১৭ সালে পারিবারিকভাবে এই দুজনের বিয়ে হয়। তাঁরা দুজনই উচ্চশিক্ষিত। দুজনই উচ্চপদে চাকরি করেন। বিয়ের পর নারীর বাবার বাড়িতে তাঁদের সংসার শুরু হয়। পরে রাজধানীতে একটি ভাড়া বাসা নিয়ে থাকা শুরু করেন। বিয়ের এক বছরের মাথায় তাঁদের কন্যাসন্তানের জন্ম হয়।
নারীর ভাষ্য, বিয়ের পর তাঁদের সংসার ভালোই চলছিল। স্বামী যৌতুক চেয়েছিলেন। এ কারণে মেয়ের সুখের কথা ভেবে যৌতুক হিসেবে ছয় লাখ টাকা ব্যয় করে টিভি, ফ্রিজ, খাট ও আলমারি উপহার দেন তাঁর বাবা।
মামলায় ওই নারী অভিযোগ করেন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তাঁর স্বামীর ভাড়া বাসায় ওঠার কয়েক মাস পর থেকে সংসারে অশান্তি শুরু হয়। ভাড়া বাসার পাশে তাঁর ননদের বাসা ছিল। শাশুড়ি কখনো তাঁদের সঙ্গে, আবার কখনো মেয়ের বাসায় থাকতেন। তুচ্ছ কারণে শাশুড়ির সঙ্গে তাঁর প্রায় সময় মনোমালিন্য হতো। এ নিয়ে স্বামী তাঁকে কটু কথা বলতেন। একপর্যায়ে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতেন স্বামী। তবু সন্তানের কথা ভেবে অত্যাচার সহ্য করে সংসার করতে থাকেন তিনি।
মামলায় ওই নারী আরও অভিযোগ করেন, একপর্যায়ে বাবার কাছ থেকে জমি লিখে নিতে স্বামী তাঁকে চাপ দিতে শুরু করেন। এ প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন আরও বেড়ে যায়। একসময় তাঁদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। পরে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বিয়ের চার বছরের মাথায় তিনি স্বামীকে তালাক দিয়ে সন্তান নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান।
তালাক কার্যকরের (তিন মাস) আগে স্বামীর পরিবারের সদস্যরা তালাকের নোটিশ প্রত্যাহারের অনুরোধ করতে থাকেন। স্বামী ও তাঁদের স্বজনেরা ওই নারীর কাছে অঙ্গীকার করেন, আর কখনোই শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা হবে না। স্বামীর অনুরোধ ও সন্তানের কথা ভেবে কার্যকর হওয়ার আগে ওই নারী তালাকের নোটিশ প্রত্যাহার করে নেন। আবার সংসার শুরু করেন।
আদালতের কাছে নারী দাবি করেন, আবার সংসার শুরুর পর থেকে কয়েক মাস তাঁর স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক বেশ ভালো ছিল। তবে দ্বিতীয় সন্তান গর্ভে আসার পর থেকে আবারও স্বামী নির্যাতন করা শুরু করেন। তিনি এতটাই উগ্র হয়ে ওঠেন যে নির্যাতন ঠেকাতে পরিবারের অন্য সদস্যরা এগিয়ে এলে স্বামী তাঁদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করতেন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আবারও স্বামীর বাসা ছেড়ে চলে যান বাবার বাসায়। ২০২১ সালের ৩০ আগস্ট তিনি আবার তাঁর স্বামীকে তালাকের নোটিশ দেন। তালাক কার্যকরও হয়। ছয় মাস পর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর দ্বিতীয় কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। স্বামী কখনো দ্বিতীয় সন্তানকে দেখতে আসেননি।
তবে এই নারীর সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তাঁর সাবেক স্বামী। সাবেক স্বামীর অভিযোগ, তাঁর মায়ের সঙ্গে স্ত্রীর বনিবনা হতো না। এ কারণে স্ত্রী প্রায় সময় তাঁর মায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন। একদিন রাগ করে তাঁর স্ত্রী বড় মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান। দ্বিতীয় সন্তান জন্মের পর কন্যাদের দেখতে তিনি শ্বশুরবাড়িতে গেলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে মারধর করেন। এ সময় তিনি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ ফোন দেন। পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে।
এ ঘটনার পর তাঁদের দুজনের মধ্যে আর কোনো সমঝোতা হয়নি। পরে দুই কন্যার হেফাজত চেয়ে সাবেক স্ত্রীকে বিবাদী করে পারিবারিক আদালতে মামলা করেন সাবেক স্বামী। অন্যদিকে ওই নারীও সাবেক স্বামীকে বিবাদী করে একই ধারায় মামলা করেন।
আরও পড়ুনবিয়ের অনেক বছর পরও কেন বিচ্ছেদ হয়১০ জুলাই ২০২৪বিবাদীপক্ষের আইনজীবী মলয় কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, এই দম্পতির বড় সন্তানের বয়স প্রায় সাত বছর, আর ছোট সন্তানের বয়স চার বছর। পারিবারিক আদালতে মামলার শুনানি চলাকালে আদালতকক্ষে স্বামী-স্ত্রীর দেখা হতো। দুই কন্যা তখন মা–বাবা দুজনের সঙ্গেই কথা বলত। তারা কান্নাকাটি করত; সবাই মিলে একসঙ্গে থাকতে চাইত। একসময় স্বামী-স্ত্রী দুজনই সন্তানের মানসিক অবস্থার কথা চিন্তা করে আবার একসঙ্গে সংসার করার সিদ্ধান্ত নেন।
আইনজীবী মলয় কুমার সাহা বলেন, মা–বাবার বিচ্ছেদের পর সন্তানেরা মানসিক যন্ত্রণার মুখোমুখি হয়। শিশুর মানসিক বিকাশে মা–বাবার আদর-ভালোবাসা বিরাট ভূমিকা রাখে। বিচ্ছেদের কারণে আদর-ভালোবাসার ঘাটতি সন্তানদের জীবনে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। এ কারণে দুই কন্যার মানসিক সুস্থতার কথা ভেবে গত মার্চ মাসে আপস করে ওই দম্পতি আবার বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁরা সংসার শুরু করেছেন। তাঁদের ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। তাঁরা এখন সুখে আছেন।
আরও পড়ুনবিচ্ছেদের ৫০ বছর পর আবার একসঙ্গে দুজন ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪আরও পড়ুনডিভোর্সের পরও সন্তানের কথা ভেবে এক ছাদের নিচে থাকা কি ঠিক২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫