Samakal:
2025-07-11@19:00:34 GMT

কত প্রাণহানিতে টনক নড়িবে

Published: 10th, July 2025 GMT

কত প্রাণহানিতে টনক নড়িবে

চট্টগ্রামের উত্তর আগ্রাবাদ এলাকায় বুধবার নালায় পড়িয়া ৩ বৎসরের শিশু হুমায়রার মর্মান্তিক প্রাণহানি নগরীটিতে নাগরিক নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি পুনরায় জনসমক্ষে আনিয়াছে। সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, গত এক দশকে নগরীর খাল-নালায় পড়িয়া প্রাণ হারাইয়াছেন ১৫ জন। বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত এই নগরীর খাল ও নালায় পড়িয়া প্রায়শ হতাহতের অঘটন সত্ত্বেও প্রশাসনের চৈতন্যের উদয় না হইবার বিষয় অধিক হতাশাজনক। ইতোপূর্বে বারংবার আমরা অত্র সম্পাদকীয়তে চট্টগ্রামের খাল-নালায় নিরাপত্তা বেষ্টনী ও স্ল্যাব স্থাপনের তাগিদ দিয়া আসিয়াছি; বাস্তবে উহা অরণ্যে রোদন প্রমাণ হইয়াছে।

স্বীকার্য, এই বৎসর বন্দরনগরীতে জলাবদ্ধতা অপেক্ষাকৃত হ্রাস পাইয়াছে। কিন্তু তাহাতে নাগরিক নিরাপত্তা যে নিশ্চিত হয় নাই– শিশু হুমায়রার প্রাণহানিই উহার সাক্ষ্য দিতেছে। আমাদের স্মরণে রহিয়াছে, ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট চট্টগ্রামের মুরাদপুরে জলাবদ্ধতায় সড়ক-খাল আম্র-দুগ্ধের রূপ পরিগ্রহ করে। ঐ দিন চশমা খালে নিমজ্জিত সবজি ব্যবসায়ী সালেহ আহমেদের অদ্যাবধি সন্ধান মেলে নাই। হুমায়রার এই দুর্ঘটনার আড়াই মাস পূর্বে নালায় প্রাণ হারায় আরেক শিশু সেহলিজ। এই সকল অঘটনে বারংবার ঝুঁকিপূর্ণ খাল-নালা সুরক্ষার বিষয় আলোচনায় আসিলেও চার বৎসর অতিক্রান্তে ‘মৃত্যুফাঁদ’ হইতে মানবজীবন সুরক্ষিত করিতে পারে নাই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। খাল-নালাগুলির উল্লেখযোগ্য অংশে নাই নিরাপত্তা বেষ্টনী। এমনকি তথায় কোনো ‘সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি’ও দৃষ্টিগোচর হয় নাই। ইতোপূর্বে প্রাণহানির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি দুই সংস্থাকে দায়ী করিলেও কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই সরকার।
আমাদের প্রশ্ন, আর কত প্রাণ বিসর্জনের বিনিময়ে সুরক্ষিত হইবে চট্টগ্রামের খাল-নালা? কত মাতৃক্রোড় শূন্য হইলে কর্তৃপক্ষের চৈতন্যোদয় হইবে? আমরা মনে করি, চট্টগ্রামের উভয় সংস্থাকে অনতিবিলম্বে জবাবদিহি করিতে হইবে। এতদ্ব্যতীত, নালা ও খালগুলিতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা বেষ্টনী দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেওয়ার জন্য বাধ্য করিতে হইবে। 

চট্টগ্রামে বৃষ্টি হইলেই যে সড়ক হাঁটুজলে পূর্ণ হইয়া যায়, উহা কর্তৃপক্ষের ব্যতীত কে ভালো বুঝিবে! সংবাদমাধ্যমে বুধবার হইতেই এই মর্মে খবর প্রকাশ হইয়াছে, সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণে নগরীর অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়াছে। এমতাবস্থায় নালা-খাল যেহেতু সড়কের সহিত গলাগলি ভাব জমাইয়া তোলে; জনজীবন রক্ষার্থে জরুরি ভিত্তিতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। আমরা স্থায়ীভাবেই এই নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণের তাগিদ দিতেছি, যেন বৃষ্টি কিংবা স্বাভাবিক সময়েও মানুষের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত হয়। তৎসহিত চট্টগ্রামের খাল-নালা নিয়মিত পরিষ্কারে উদ্যোগ লইতে হইবে। সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলি এই লক্ষ্যে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ লইয়াছে বলিয়াই এইবার জলাবদ্ধতার সংকট তুলনামূলক কম দেখা গিয়াছে। ইহাই প্রমাণ করিতেছে, সদিচ্ছা থাকিলে পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব। চট্টগ্রামের দায়িত্বে থাকা দুই সংস্থার সেই সদিচ্ছা আমরা দেখিতে চাই। চট্টগ্রামে কয়েকটি খাল খননের মাধ্যমে যেই ইতিবাচক ফল পাওয়া গিয়াছে তাহাতে স্পষ্ট, জলপথগুলি প্রাণ ফিরিয়া পাইলে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার সংকট যদ্রূপ অনেকাংশে দূরীভূত হইবে, তদ্রূপ অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাণহানিও প্রতিরোধ সম্ভব হইবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নিকট নগরের অর্ধশতাধিক খালের তালিকা থাকিলেও অধিকাংশ এখন নালায় পরিণত। চট্টগ্রামের পাহাড়ি ছড়াগুলিও একদা প্রাণবন্ত ছিল, যাহা বর্তমানে দখল ও ভরাটে জেরবার। এই সকল স্রোতধারা চিহ্নিত করিয়া উদ্ধারে কার্যকর ব্যবস্থা লইতে হইবে। এই ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম পথ দেখাইলে উহা রাজধানীর জন্যও উদাহরণ হইয়া থাকিবে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ষ টন ব যবস নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্গতদের পার্শ্বে দাঁড়ান

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে মঙ্গলবার হইতে সূচিত বারিধারার কারণে ভোগান্তিতে নিপতিত দেশের লক্ষ মানুষ। বিশেষত উপকূলীয় অঞ্চলের অধিবাসীর দুর্ভোগ চরমে উপনীত। মাত্র এক বৎসরের ব্যবধানে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লাসহ চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা পুনরায় প্লাবিত হইবার শঙ্কায় পড়িয়াছে।

ফসলি জমি ও আমনের বীজতলা নিমজ্জিত হওয়া; পুকুর ও খামারের মৎস্য ভাসিয়া যাওয়া; সড়কপথ জলমগ্ন হওয়ায় চলাচলে অসুবিধাসহ বহুমাত্রিক সংকট ইতোমধ্যে দৃশ্যমান। অতিবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ফেনীর দুইটি নদীর বেড়িবাঁধের কয়েক স্থান ভাঙিয়া যাইবার কারণে অনেক গ্রাম প্লাবিত এবং গত বৎসরের ন্যায় পুনরায় বৃহদাকার বন্যার আশঙ্কার উদ্ভব হইয়াছে। 

গত বৎসর ফেনীর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পর সরকারের তরফ হইতে বাঁধ সুরক্ষার অঙ্গীকার করা হইয়াছিল। অথচ ঐ ভয়াবহ বন্যার পরও গতানুগতিক বাঁধ সংস্কার পদ্ধতিমুক্ত হইতে পারেনি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। এই বৎসরও দায়সারা প্রকারে বাঁধ সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ হইয়াছে বলিয়া সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে আসিয়াছে। খোদ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাগণ বলিয়াছেন, এই প্রকার সংস্কার ও মেরামত কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্ষুদ্রাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা হইলেও গত বৎসরের আগস্টের ন্যায় বৃহদাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নহে। অথচ বন্যা নিয়ন্ত্রণে টেকসই বাঁধ নির্মাণের বিকল্প নাই।

কেবল ফেনীতেই নহে; সমগ্র দেশেই বাঁধ লইয়া অভিযোগের অন্ত নাই। অনিয়মের কারণে বৎসরে বাঁধ নির্মাণে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয় বটে; উহা টেকসই হয় না। নির্মাণজনিত ত্রুটি ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করিয়া বাঁধ নির্মাণের ফলে উহা মানুষকে বন্যা ও অন্যান্য দুর্যোগ হইতে সুরক্ষা দিতে অক্ষম।

সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেনীর বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে ২০০৬ সালে সূচিত ১৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প ২০১০ সালে সমাপ্ত হইবার পর কয়েক বৎসর বন্যামুক্ত ছিল এলাকাবাসী। ২০১৩ সালে আকস্মিক বন্যায় বাঁধের তিনটি স্থানে ভাঙন ধরিবার পর প্রতি বৎসরই বাঁধ ভাঙিতেছে। অভিযোগ রহিয়াছে, দুষ্টচক্র প্রতি বৎসর বাঁধ মেরামতের নামে অর্থ লোপাট করিতেছে। ভাঙনের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রভাবশালী মহল স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দিকে অগ্রসর না হইয়া অতি দ্রুততায় কোটি টাকা ব্যয়ে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে, যাহাতে পরের বৎসর পুনরায় বরাদ্দপ্রাপ্তি সহজ হয়। এই ক্ষেত্রে প্রতিবারই নির্দিষ্ট কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশপ্রাপ্তির অভিযোগ রহিয়াছে।

আমরা বারংবার বলিয়া আসিয়াছি, বর্ষার পূর্বেই টেকসই বাঁধ নির্মাণ করিতে হইবে। তবে বর্তমান ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে যেই দুর্ভোগের উদ্ভব, উহা হইতে তাৎক্ষণিক মানুষের মুক্তিও জরুরি। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাবাসীকে আশ্রয়কেন্দ্রে গমন বিষয়ে সচেতন করিতে হইবে। 

আমরা জানি, উপকূলীয় অঞ্চলের অধিবাসীরা বন্যা, ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রকার দুর্যোগ মোকাবিলা করিয়া জীবন ধারণ করিয়া থাকেন। সরকার তাহাদের স্বস্তির বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে অনেক সময় উহা প্রতিপালিত হয় না। আমরা মনে করি, সংগ্রামী এই সকল মানুষের পাশে সরকারকে দাঁড়াইতেই হইবে। তাহাদের জন্য টেকসই বাঁধ নির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের আবাসন নিশ্চিতকরণ এবং প্রয়োজনে তথাকার মানুষদের অধিক হারে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় লইতে হইবে। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুর্গতদের পার্শ্বে দাঁড়ান