Samakal:
2025-12-01@11:42:10 GMT

কত প্রাণহানিতে টনক নড়িবে

Published: 10th, July 2025 GMT

কত প্রাণহানিতে টনক নড়িবে

চট্টগ্রামের উত্তর আগ্রাবাদ এলাকায় বুধবার নালায় পড়িয়া ৩ বৎসরের শিশু হুমায়রার মর্মান্তিক প্রাণহানি নগরীটিতে নাগরিক নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি পুনরায় জনসমক্ষে আনিয়াছে। সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, গত এক দশকে নগরীর খাল-নালায় পড়িয়া প্রাণ হারাইয়াছেন ১৫ জন। বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত এই নগরীর খাল ও নালায় পড়িয়া প্রায়শ হতাহতের অঘটন সত্ত্বেও প্রশাসনের চৈতন্যের উদয় না হইবার বিষয় অধিক হতাশাজনক। ইতোপূর্বে বারংবার আমরা অত্র সম্পাদকীয়তে চট্টগ্রামের খাল-নালায় নিরাপত্তা বেষ্টনী ও স্ল্যাব স্থাপনের তাগিদ দিয়া আসিয়াছি; বাস্তবে উহা অরণ্যে রোদন প্রমাণ হইয়াছে।

স্বীকার্য, এই বৎসর বন্দরনগরীতে জলাবদ্ধতা অপেক্ষাকৃত হ্রাস পাইয়াছে। কিন্তু তাহাতে নাগরিক নিরাপত্তা যে নিশ্চিত হয় নাই– শিশু হুমায়রার প্রাণহানিই উহার সাক্ষ্য দিতেছে। আমাদের স্মরণে রহিয়াছে, ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট চট্টগ্রামের মুরাদপুরে জলাবদ্ধতায় সড়ক-খাল আম্র-দুগ্ধের রূপ পরিগ্রহ করে। ঐ দিন চশমা খালে নিমজ্জিত সবজি ব্যবসায়ী সালেহ আহমেদের অদ্যাবধি সন্ধান মেলে নাই। হুমায়রার এই দুর্ঘটনার আড়াই মাস পূর্বে নালায় প্রাণ হারায় আরেক শিশু সেহলিজ। এই সকল অঘটনে বারংবার ঝুঁকিপূর্ণ খাল-নালা সুরক্ষার বিষয় আলোচনায় আসিলেও চার বৎসর অতিক্রান্তে ‘মৃত্যুফাঁদ’ হইতে মানবজীবন সুরক্ষিত করিতে পারে নাই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। খাল-নালাগুলির উল্লেখযোগ্য অংশে নাই নিরাপত্তা বেষ্টনী। এমনকি তথায় কোনো ‘সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি’ও দৃষ্টিগোচর হয় নাই। ইতোপূর্বে প্রাণহানির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি দুই সংস্থাকে দায়ী করিলেও কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই সরকার।
আমাদের প্রশ্ন, আর কত প্রাণ বিসর্জনের বিনিময়ে সুরক্ষিত হইবে চট্টগ্রামের খাল-নালা? কত মাতৃক্রোড় শূন্য হইলে কর্তৃপক্ষের চৈতন্যোদয় হইবে? আমরা মনে করি, চট্টগ্রামের উভয় সংস্থাকে অনতিবিলম্বে জবাবদিহি করিতে হইবে। এতদ্ব্যতীত, নালা ও খালগুলিতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা বেষ্টনী দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেওয়ার জন্য বাধ্য করিতে হইবে। 

চট্টগ্রামে বৃষ্টি হইলেই যে সড়ক হাঁটুজলে পূর্ণ হইয়া যায়, উহা কর্তৃপক্ষের ব্যতীত কে ভালো বুঝিবে! সংবাদমাধ্যমে বুধবার হইতেই এই মর্মে খবর প্রকাশ হইয়াছে, সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণে নগরীর অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়াছে। এমতাবস্থায় নালা-খাল যেহেতু সড়কের সহিত গলাগলি ভাব জমাইয়া তোলে; জনজীবন রক্ষার্থে জরুরি ভিত্তিতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। আমরা স্থায়ীভাবেই এই নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণের তাগিদ দিতেছি, যেন বৃষ্টি কিংবা স্বাভাবিক সময়েও মানুষের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত হয়। তৎসহিত চট্টগ্রামের খাল-নালা নিয়মিত পরিষ্কারে উদ্যোগ লইতে হইবে। সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলি এই লক্ষ্যে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ লইয়াছে বলিয়াই এইবার জলাবদ্ধতার সংকট তুলনামূলক কম দেখা গিয়াছে। ইহাই প্রমাণ করিতেছে, সদিচ্ছা থাকিলে পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব। চট্টগ্রামের দায়িত্বে থাকা দুই সংস্থার সেই সদিচ্ছা আমরা দেখিতে চাই। চট্টগ্রামে কয়েকটি খাল খননের মাধ্যমে যেই ইতিবাচক ফল পাওয়া গিয়াছে তাহাতে স্পষ্ট, জলপথগুলি প্রাণ ফিরিয়া পাইলে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার সংকট যদ্রূপ অনেকাংশে দূরীভূত হইবে, তদ্রূপ অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাণহানিও প্রতিরোধ সম্ভব হইবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নিকট নগরের অর্ধশতাধিক খালের তালিকা থাকিলেও অধিকাংশ এখন নালায় পরিণত। চট্টগ্রামের পাহাড়ি ছড়াগুলিও একদা প্রাণবন্ত ছিল, যাহা বর্তমানে দখল ও ভরাটে জেরবার। এই সকল স্রোতধারা চিহ্নিত করিয়া উদ্ধারে কার্যকর ব্যবস্থা লইতে হইবে। এই ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম পথ দেখাইলে উহা রাজধানীর জন্যও উদাহরণ হইয়া থাকিবে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ষ টন ব যবস নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

টাঙ্গাইলে সহকারী শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে প্রাথমিকের পরীক্ষার হলে দায়িত্বে অভিভাবকেরা

পরীক্ষার হলে নেই চেনা শিক্ষকেরা, প্রশ্নপত্র হাতে নিয়ে কক্ষ পরিদর্শকের ভূমিকায় দাঁড়িয়েছেন অভিভাবকেরা। কোথাও বাবা দায়িত্বে, কোথাও মা হাঁটাহাঁটি করছেন বেঞ্চের ফাঁকে। তিন দফা দাবিতে সহকারী শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির মধ্যে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আজ সোমবার এই দৃশ্য দেখা গেছে।

অভিভাবকেরা জানান, প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতি শুরু হলে উপজেলাজুড়ে বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এমন অবস্থায় বাধ্য হয়ে প্রধান শিক্ষকেরা অভিভাবকদের ডাকছেন। আর সেই ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে তাঁরা এই দায়িত্ব পালন করছেন।

আরও পড়ুন‘স্কুলে আসার পর স্যাররা বলল আজ পরীক্ষা হবে না’৪৮ মিনিট আগে

শিক্ষকদের সূত্রে জানা যায়, বেতন গ্রেড উন্নীতকরণসহ তিন দফা বাস্তবায়নের দাবিতে সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা গত বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন। কর্মসূচিতে বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন তাঁরা। আজ সখীপুর উপজেলার ১৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের নতুন সিদ্ধান্ত না আসায় আন্দোলনকারী সহকারী শিক্ষকেরা বার্ষিক পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন না। তাই বাধ্য হয়ে প্রধান শিক্ষকেরা অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন।

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সখীপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সহকারী শিক্ষকেরা অফিস কক্ষে বসে আছেন। পরীক্ষার হলগুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন অভিভাবকেরা। তবে দু-একটি কক্ষে অভিভাবক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ ছিলেন না। পরে প্রধান শিক্ষক আগ্রহী অভিভাবকদের খুঁজে এনে কক্ষের দায়িত্ব দিচ্ছিলেন।

শিক্ষকদের পরিবর্তে অভিভাবক দিয়ে পরীক্ষা চালানো মোটেই ঠিক হচ্ছে না। কারণ, তাঁরা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ নন।ফারজানা আক্তার, অভিভাবক

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে পরীক্ষা চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানান বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক শাহীনা আখতার। তিনি বলেন, ‘সহকারী শিক্ষকেরা আমাকে কোনো সহযোগিতা করছেন না। এমনকি অভিভাবকদেরও পরীক্ষার হলে দায়িত্ব পালনে বাধা দিচ্ছেন।’ তবে অভিযোগটি অস্বীকার করে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আফরোজা আক্তার বলেন, ‘আমরা পরীক্ষার চালাতে কোনো বাধা দিচ্ছি না, তবে সহযোগিতাও করছি না। প্রধান শিক্ষকই আমাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করছেন না।’

এদিকে পরীক্ষা গ্রহণে এমন বিশৃঙ্খল পরিবেশ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন অভিভাবক। তাঁরা বিদ্যালয়টির মূল ফটকের সামনে হইচই করে প্রতিবাদও জানিয়েছেন। ফারজানা আক্তার নামের এক অভিভাবক বলেন, শিক্ষকদের পরিবর্তে অভিভাবক দিয়ে পরীক্ষা চালানো মোটেই ঠিক হচ্ছে না। কারণ, তাঁরা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ নন।

আরও পড়ুন‘শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা, বাজে নজির হয়ে থাকবে’৩ ঘণ্টা আগে

আরেকজন অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সহকারী শিক্ষকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন, এটা ভালো কথা। কিন্তু খুদে শিক্ষার্থীদের দিকে তাকিয়ে নিজেদের দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল।

এ ছাড়া পরীক্ষার হলে অভিভাবকদের দায়িত্ব পালনের সময় নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকদের কেউ কেউ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক বলেন, ‘যেসব অভিভাবক পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁরা নিজেদের ও পরিচিত শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর বলে দিয়েছেন।

পরীক্ষা গ্রহণে কোনো ধরনের স্বজনপ্রীতি হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সখীপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্বরত এক অভিভাবক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই ব্যক্তি বলেন, ‘আমার বাচ্চা যে কক্ষে বসে পরীক্ষা দিচ্ছিল, সে কক্ষে দায়িত্ব পালন করিনি। আমি চেষ্টা করেছি, সহকারী শিক্ষকদের মতোই দায়িত্ব পালন করতে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনুরোধেই মূলত এটি করেছি।’

আমার বাচ্চা যে কক্ষে বসে পরীক্ষা দিচ্ছিল, সে কক্ষে দায়িত্ব পালন করিনি। আমি চেষ্টা করেছি, সহকারী শিক্ষকদের মতোই দায়িত্ব পালন করতে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনুরোধেই মূলত এটি করেছি।পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত এক অভিভাবকআরও পড়ুন‘স্কুলে এসে দেখছি পরীক্ষা স্থগিত’৫ ঘণ্টা আগে

উপজেলার দু–একটি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকদের চাপ প্রয়োগ করে পরীক্ষা গ্রহণের দায়িত্ব পালনে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কালিদাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও কেন্দ্রীয় দাবি বাস্তবায়ন কমিটির সক্রিয় কর্মী মুক্তি মালেক। তিনি বলেন, তবে অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা বার্ষিক পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে বিরত ছিলেন।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিক অধিদপ্তর থেকে বার্ষিক পরীক্ষা চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী উপজেলার প্রতিটি বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। তবে কিছু বিদ্যালয়ে অভিভাবকেরা পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করেছেন বলে শুনেছি ও দেখেছি। তবে আমি মনে করি, সহকারী শিক্ষকদের অন্তত পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করা উচিত।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ