রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের প্রভাবে তিন মাস ধরে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এতে স্থলবন্দরে থাকা আলু, সিমেন্টসহ বিভিন্ন পণ্য নষ্ট হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানি-রপ্তানিকারকরা। অনেকে টেকনাফ থেকে গুটিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসা চালু করছেন।
সর্বশেষ গত ১২ এপ্রিল আরাকান আর্মির দখলে থাকা রাখাইন রাজ্যে মংডু থেকে ১৩৮ পিসের একটি কাঠের বোট আসে। এরপর থেকে টেকনাফ-মংডু সীমান্ত বাণিজ্যে পণ্যে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া গত বছরের ডিসেম্বরে মিয়ানমার অংশের ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইয়াঙ্গুন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে চারটি পণ্যবাহী নৌযান আটক করে কমিশন দাবি করে আরাকান আর্মি। এরপর থেকে ছয় মাস ধরে ইয়াঙ্গুন দিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার বাণিজ্য বন্ধ ঘোষণা করে মিয়ানমারের জান্তা সরকার।
এ বিষয়ে টেকনাফ স্থলবন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা মো.
সরেজমিন দেখা যায়, পুরো বন্দর খাঁ খাঁ করছে। রপ্তানীকৃত আলুতে পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। টিনশেড একটি গুদামে বস্তায় বস্তায় আলু পচে পড়ে আছে। নাফ নদের জেটি ঘাটে নেই কোনো পণ্যবাহী ট্রলারও। কাজ না থাকায় বেকার দিন পার করছেন হাজারো শ্রমিক ও আমদানি-রপ্তানিকারকের প্রতিনিধি।
আমদানিকারক এক্সপ্রেস এজেন্সির প্রতিনিধি মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে যুদ্ধের পর তিন মাস ধরে পুরোপুরিভাবে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। যদিও তার আগে মংডুর সঙ্গে ব্যবসা চালু ছিল, সেটিও বন্ধ। এর প্রভাবে স্থলবন্দরে আমাদের আমদানিকৃত আলু পচে গেছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সিমেন্টও। এতে শতাধিক ব্যবসায়ী বিপাকে পড়েছেন। জানি না কবে আবার স্থলবন্দরের ব্যবসা সচল হবে।’
বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বন্দরের কয়েকটি গুদামে ২ হাজার ৭০০ বস্তা আলু, ২২ হাজার ৮৫০ বস্তা সিমেন্ট, ১ হাজার ৯০ বস্তা কোমল পানীয় রয়েছে। এ ছাড়া চিপস, চানাচুর, বিস্কুট, প্লাস্টিক পণ্য মজুত রয়েছে। ইতোমধ্যে সব আলু নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েকশ বস্তা সিমেন্টও নষ্ট হওয়ার পথে।
জানা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে রাখাইন রাজ্যে সিমেন্ট রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ২৩৮ টন, আলু রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ১৭৪ টন। সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ থাকায় সরকার প্রতিদিন ৪ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
টেকনাফ ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। বন্দরে কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আমাদের এখান জনবল অন্যখানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’ টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি কীভাবে স্থলবন্দরে বাণিজ্যে চালু করা যায়।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আমদ ন র খ ইন র জ য ব যবস আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
শিশুদের হত্যার ভয় দেখিয়ে মিরসরাইয়ের দুই বাড়িতে ডাকাতি
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে একই গ্রামের দুটি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাত দল ওই দুই বাড়ির চার পরিবারের পরিবারের পুরুষ সদস্যদের বেঁধে শিশু ও নারীদের জিম্মি করে টাকা, স্বর্ণালংকার, কম্বল ও মুঠোফোন নিয়ে যায়। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত দেড়টা থেকে ভোর সাড়ে চারটা পর্যন্ত উপজেলার হিঙ্গলী ইউনিয়নের একটি গ্রামের পাশাপাশি দুই প্রবাসী বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, বুধবার রাত দেড়টার দিকে ডাকাত দল প্রথম হানা দেয় কুয়েত প্রবাসীর বাড়িতে। দ্বিতল পাকা বাড়ির মূল ঘর লাগোয়া রান্নাঘরের গ্রিল কেটে ডাকাত দল ঘরে ঢোকে। দলে সাত থেকে আটজন ছিল বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। এ সময় প্রবাসীর স্ত্রী ও সন্তান একা ছিলেন ঘরে। ডাকাত দল ওই বাড়িতে ঢুকে প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণ ও সন্তানকে হত্যার হুমকি দিয়ে ৫০ হাজার টাকা, দুই ভরি স্বর্ণালংকার ও একটি মুঠোফোন নিয়ে যায়।
ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় দুই ভাড়াটিয়ার বাড়িতেও ডাকাতেরা হানা দেয়। সেখান থেকে চার হাজার টাকা ও দুটি মুঠোফোন নিয়ে যায় তারা।
রাত চারটার দিকে প্রথম বাড়ি থেকে ৫০০ মিটার পশ্চিমে আরেক প্রবাসীর বাড়িতে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে পড়ে ডাকাত দলের সদস্যরা। সেখানে একতলা নির্মাণাধীন বাড়ির মালিক সৌদি আরব প্রবাসীর শ্বশুর, তাঁর স্ত্রী ও ছোট দুই শিশুপুত্র ছিল। শাবল দিয়ে সদর দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে পুরুষ সদস্যদের হাত পা বেঁধে ফেলে ডাকাতেরা। পরে দুই শিশুকে হত্যা ও বাড়ির নারীদের ধর্ষণের হুমকি দিয়ে নগদ ৫০ হাজার টাকা, সাতটি কম্বল ও একটি মুঠোফোন নিয়ে যায়। ২২ মিনিটের মধ্যে ডাকাতি শেষ করে নির্বিঘ্নে চলে যায় তারা।
ডাকাতির শিকার এক প্রবাসীর স্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, রাত দেড়টার দিকে রান্নাঘরের জানালা ভেঙে ডাকাত দলের সদস্যরা ঘরে ঢুকে পড়ে। তাদের পরনে হাফপ্যান্ট ও কালো রঙের মুখোশ ছিল। তাদের সবার হাতে দেশি ধারালো অস্ত্র ছিল। ডাকাতেরা তাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। ধর্ষণের হমকি দেয়। তাঁর ছেলেকেও মারধর করে। এরপর তারা দ্বিতীয় তলায় তাঁর দুই ভাড়াটিয়ার ঘরেও হানা দেয়।
ডাকাতি হওয়া আরেক বাড়ির বাসিন্দা প্রবাসীর শ্বশুর প্রথম আলোকে বলেন, মেয়ের স্বামী প্রবাসে থাকায় একা বাড়িতে তিনি সবার দেখভাল করেন। বুধবার ভোর চারটার দিকে ঘরের দরজা ভেঙে সাত–আটজন ডাকাত ঢুকে দেশি অস্ত্রের মুখে তাঁকে বেঁধে ফেলে। এরপর মেয়েকে ধর্ষণ ও দুই নাতিকে হত্যার হুমকি দেয় তারা। এ সময় ঘরে থাকা ৫০ হাজার টাকা, ৭টি কম্বল ও একটি মুঠোফোন নিয়ে গেছে ডাকাতরা। ২২ মিনিট সময়ের মধ্যে ঘরের ভেতর তাণ্ডব চালিয়ে চলে যায় তারা।
দুই বাড়ির চারটি পরিবারে ডাকাতির ঘটনার বিষয় জানতে চাইলে জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার রাতে হিঙ্গুলী ইউনিয়নে এক বাড়িতে গ্রিল কেটে ও আরেক বাড়িতে দরজা ভেঙে চুরি বা ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। গ্রামটি ফেনী নদীর পাড়ে হওয়ায় নদীর উত্তর পাশের ছাগলনাইয়া উপজেলার সমিতির বাজার এলাকা থেকে শেষ রাতে ডাকাত দল এখানে এসে হানা দেয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।