Samakal:
2025-05-01@13:52:04 GMT

শিরিনার আঙিনায় ‘সোনার হাঁস’

Published: 15th, February 2025 GMT

শিরিনার আঙিনায় ‘সোনার হাঁস’

বাড়ির এক কোণে পুকুর। উঠান থেকে পুকুরের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত জালের ঘেরা। দু’ভাগে বিভক্ত ঘেরার একপাশে ফাওমি জাতের মুরগি, অন্য পাশে রয়েছে পিকিং জাতের হাঁস। গ্রাম্য সড়ক ধরে হেঁটে গেলে ওই বাড়ি থেকে হাঁস-মুরগির ডাক কানে আসে। গৃহবধূ শিরিনা আক্তার ও তার স্বামী সারোয়ার মিয়া মিলে বাড়তেই খামারটি গড়ে তুলেছেন। সীতাকুণ্ডে প্রথম পিকিং জাতের হাঁস পালন করেছেন তারাই। তাতে ঘুরে গেছে ভাগ্যের চাকা। 
শিরিনা আক্তারের বাড়ি মুরাদপুর ইউনিয়নের রহমতনগর গ্রামে। স্বামী সারোয়ার মিয়া ট্রান্সপোর্টের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সংসারে দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। শিরিনা আক্তার এনজিও সংস্থা ইপসার সদস্য তিনি। তাদের দু’জনের পাশাপাশি খামারটি দেখাশোনা করেন নাজিম খান নামে তাদের এক ভাগনে।
সরেজমিন দেখা যায়, গ্রাম্য সড়কের পাশেই শিরিনা আক্তারের বাড়ি। সড়কের পাশে টিনের বেড়া। মূল সড়ক থেকে বাড়িতে ঢুকতেই উঠোন। ঘরে যাওয়ার পথ বাদে উঠোনের বাকি অংশের চারপাশ ও ওপরের অংশ জাল দিয়ে ঘেরা। বসতঘরের সামনেই তৈরি করা হয়েছে মুরগি রাখার শেড। জালের ভেতর অবিরত ডেকে চলেছে ফাওমি জাতের অন্তত তিন শতাধিক মুরগি। পুকুরে সাঁতার কাটছিল ৯২টি সাদা রঙের পিকিং জাতের হাঁস। পাড় থেকে পুকুরের দিকে তৈরি করা হয়েছে হাঁসের বাসা।
সারোয়ার মিয়া জানান, চার মাস আগে ইপসার এক কর্মকর্তা বাড়ির ভেতরের জায়গা দেখে তাকে হাঁস-মুরগির খামার করার পরামর্শ দেন। ওই কর্মকর্তার কথা তার ভালো লাগে। পরে তিনি ইপসার সহযোগিতা চান।
সারোয়ার বলেন, ‘শুরুতে আমাদের ৫০টি পিকিং জাতের হাঁস দিয়ে সহযোগিতা করে ইপসা। পাশাপাশি ৮০ টাকা করে আরও ৫০টি এক দিনের পিকিং জাতের হাঁসের বাচ্চা কিনে নিই। প্রথমে ১০০টি পিকিং জাতের হাঁস ও ৩০০টি ফাওমি জাতের মুরগির বাচ্চা দিয়ে তাদের খামার শুরু করি। এখন পর্যন্ত ছয় লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। ইতোমধ্যে হাঁস থেকে প্রতিদিন ৪০-৫০টি ডিম পাই। খামার বাড়ানোর জন্য আপাতত আমরা ডিম বিক্রি করছি না। নতুন ইনকিউবেটর কিনেছি। সেখান থেকে বাচ্চা ফুটানো হবে। ফাওমি মুরগির বয়সও ১০০ দিন হয়েছে। আরও বড় হলে মোরগ বিক্রি শুরু করব।’
সারোয়ার মিয়া ও শিরিনা আক্তার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন জেলা হাঁস-মুরগি খামারের পোলট্রি ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন ইমনের কাছে। সাখাওয়াত বলেন, ‘কয়েক মাস আগে সারোয়ার মিয়া দম্পতি প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এরপর তারা খামার গড়ে তুলেছেন। ওই খামারটি আমি পরিদর্শন করেছি। প্রশিক্ষণের নির্দেশনা মোতাবেক তারা খামার করে সফল হয়েছেন।’
ইপসার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘পিকিং হাঁস দ্রুত বাড়ে। ফলে দ্রুত মাংস ও ডিম পাওয়া যায়। একটি পিকিং হাঁস ওজন ৩-৪ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতিটি হাঁস বছরে প্রায় ১৭০ থেকে ১৮০টি ডিম দিয়ে থাকে। মাংস খেতে বেশ সুসাদু, পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও নরম। সব বয়সের মানুষ পিকিং হাঁসের মাংস খেতে পারে।’ 
সাবেক উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তাহামিনা আরজু বলেন, ‘বাণিজ্যিকভাবে হাঁস চাষের জন্য সীতাকুণ্ড উপযুক্ত নয়। কারণ হাঁস প্রচুর খাবার খায়। সেটা প্রাকৃতিকভাবে না পাওয়া গেলে বাণিজ্যিক খাবার দিয়ে খামারিরা লাভবান হতে পারবেন না। তবে এ হাঁসের রোগবালাই তেমন নেই। ফাওমি জাতের মুরগিরও রোগবালাই কম।’

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

দাবানলে পুড়ছে ইসরায়েল, ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা

ইসরায়েলের জেরুজালেম শহরের কাছে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ দাবানল। শুষ্ক আবহাওয়ায় তীব্র বাতাসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছেন অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা। এমন পরিস্থিতিকে ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ। খবর সিএনএন, টাইমস অব ইসরায়েল, বিবিসি, আল জাজিরার

দাবানল নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছে ইসরায়েল। দাবানলে এ পর্যন্ত অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন। তবে কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। 

দাবানলকবলিত কয়েকটি এলাকার মানুষজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্তজ বলেছেন, এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জাতীয় জরুরি অবস্থার মধ্যে আছি।’

জেরুজালেমের অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের কমান্ডার শমুলিক ফ্রিডম্যান বলেন, ইসরায়েলের ইতিহাসে এটি সম্ভবত সবচেয়ে বড় দাবানল। সতর্ক করে তিনি বলেন, কিছু সময়ের মধ্যে ঘণ্টায় ৬০ মাইলের বেশি গতিতে বাতাস বইতে পারে, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলতে পারে।

এই দাবানলের কারণে বুধবার ইসরায়েলের মেমোরিয়া ডেতে তেল আবিব ও জেরুজালেমের মধ্যে সংযোগকারী প্রধান সড়ক ‘রুট-১’ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ঘন ধোঁয়ার মধ্যে মানুষ সড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।

কয়েক ঘণ্টা পরে জরুরি সেবাকর্মীরা মহাসড়কে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা সারি সারি গাড়ি তল্লাশি করে দেখছিলেন, ওই সব গাড়ির মধ্যে কেউ আটকে আছেন কি না।

অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের কমান্ডার শমুলিক ফ্রিডম্যান বলেন, আমরা এখনো জানি না, কী কারণে আগুন লেগেছে। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো সূত্রও খুঁজে পাইনি। এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।

ইসরায়েলি পুলিশ বলেছে, তারা সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। ওই ব্যক্তি একটি খোলা মাঠে আগুন লাগানোর চেষ্টা করছিলেন বলে পুলিশের দাবি।

এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি পুলিশ দাবি করেছে, জেরুজালেমের পুলিশ কর্মকর্তারা পূর্ব জেরুজালেমের একজন বাসিন্দাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেছে। ওই ব্যক্তি তখন শহরের দক্ষিণ প্রান্তের একটি খোলা মাঠে আগুন লাগানোর চেষ্টা করছিলেন। তার কাছ থেকে একটি লাইটার, তুলা ও অন্যান্য দাহ্য পদার্থ উদ্ধার করা হয়েছে।

ইসরায়েলি পুলিশের দাবি, ৫০ বছর বয়সী সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি পূর্ব জেরুজালেমের উম তুবা এলাকার বাসিন্দা। উম তুবা এলাকায় আরব ফিলিস্তিনিরা বসবাস করে থাকে।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদন সার দাবানল মোকাবিলায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, এমন ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে কথা বলছেন। তিনি তাদের কাছ থেকে উড়োজাহাজের সহায়তা চেয়েছেন। ইতালি ও মেসিডোনিয়া থেকে তিনটি উড়োজাহাজ শিগগিরই ইসরায়েলে পৌঁছাবে বলে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল জানিয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দাবানল ছড়িয়ে পড়া এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্তজ বলেন, ‘আমরা জাতীয় জরুরি অবস্থার মধ্যে আছি। জীবন বাঁচাতে এবং দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে সব বাহিনীকে সক্রিয় করতে হবে।’

ইসরায়েলের ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ সার্ভিস জানিয়েছে, প্রায় ১২০টি দল এবং ১২টি অগ্নিনির্বাপণ বিমান ও হেলিকপ্টার দাবানল মোকাবিলায় কাজ করছে।

শামির মেডিকেল সেন্টার ও কপলান মেডিকেল সেন্টারের তথ্যমতে, দাবানলের কারণে অন্তত ডজন খানেক মানুষকে এই দুটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ইতিমধ্যে জেরুজালেমের উপকণ্ঠে অবস্থিত হাদাসা মেডিকেল সেন্টারের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের প্রতি অনুরোধ করা হয়েছে, ‘জরুরি প্রয়োজন ছাড়া’ কেউ যেন হাসপাতালে না আসেন। হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও যাদের অবস্থা গুরুতর নয়, তাদের হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে দাবানলে আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

গত সপ্তাহে যে এলাকায় দাবানল দেখা দিয়েছিল, এবারও দাবানল প্রায় একই জায়গায় ছড়িয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ