পেঁয়াজ-সবজির ভালো ফলনেও হতাশ কৃষক
Published: 15th, February 2025 GMT
দুইশ কেজি বেগুন ক্ষেত থেকে বাজারে নেওয়া পর্যন্ত পরিবহন খরচ ৯৬০ টাকা। পাঁচ টাকা কেজি দরে বিক্রি মাত্র এক হাজার টাকা। দুপুরে খাবার খরচ এক থেকে দেড়শ টাকা যোগ করলে কত টাকা ক্ষতি হচ্ছে তা ভেবে দেখুন।
এভাবেই হতাশার সুরে নিজের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করছিলেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের চর মৌকুড়ি গ্রামের কৃষক সেন্টু মণ্ডল।
রাজবাড়ীতে সবজি আর পেঁয়াজের ফলন ভালো হলেও হাসি নেই কৃষকের মুখে। বরং রয়েছে প্রচণ্ড বিরক্তি, হতাশা আর দীর্ঘশ্বাস। পরিবহন খরচ না ওঠায় অনেকের ক্ষেতের সবজি ক্ষেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে। কেউ গরু দিয়ে খাওয়াচ্ছে বহু কষ্ট করে উৎপাদন করা সবজি।
রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর ওই পার থেকে ভ্যানে করে বেগুন এনে খেয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন সেন্টু মণ্ডল। এ সময় কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি জানালেন, এক বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছিলেন। এই বেগুন চাষ করতে তিন মাসে তাঁকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। সার, কীটনাশক, কামলাসহ বিভিন্ন খাতে তিন দফায় তাঁর খরচ হয়েছে ১৭ হাজার টাকা। বেগুনের ফলন ভালো হয়েছে। তিনশ কেজি বেগুন উৎপাদন হয়েছে। বাজারে দাম নেই বলে একশ কেজি বেগুন গরুকে খাইয়েছেন। দুইশ কেজি বেগুন রাজবাড়ী বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন। ক্ষেত থেকে নদীর পার পর্যন্ত আনতে খরচ হয়েছে চারশ টাকা, নদী পার করতে খরচ দুইশ টাকা, ওই পার থেকে বাজারে নিতে খরচ ৬০ টাকা, ট্রলি ভাড়া একশ টাকা, আড়তদারকে দিতে হবে দুইশ টাকা। সব মিলিয়ে খরচ হবে ৯৬০ টাকা। বাজারে এখন বেগুনের কেজি পাঁচ টাকা করে। বিক্রি করার চেয়ে না করা ভালো। গরুকে আর কত খাওয়াবেন। এজন্য বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন বাধ্য হয়ে। তিনি টমেটোর চাষ করেছিলেন। টমেটো ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে। পেঁয়াজ নিয়ে আছেন আরও বিপদে। ৪১ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন করতে গিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। ৬৫ মণ পেঁয়াজ পেয়েছেন তিনি। প্রথম দফায় ৩০ মণ পেঁয়াজ ঢাকা নিয়ে বিক্রি করেছেন ৪৬ হাজার টাকা, দ্বিতীয় দফায় ৩৫ মণ বিক্রি করেছেন ৩৭ হাজার টাকা। মোট বিক্রি ৮৩ হাজার টাকা। তাঁর পরিবহন খরচ হয়েছে ৯ হাজার টাকা।
গত শুক্রবার রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, দিগন্তজোড়া ফসলের ক্ষেত। একটি ক্ষেতে টমেটো তুলছিলেন রহিমা খাতুন, তাঁর মেয়ে রিনা বেগম ও ননদ শাহানা বেগম। কাছে যেতেই তাদের হতাশার কথা বললেন। তারা বলেন, এত কষ্ট করে সবজি উৎপাদন করে এখন বিক্রি হচ্ছে না। ফেলে দিতে হচ্ছে। ক্ষেতে এলে কাঁদতে হচ্ছে। ঋণ করে চাষাবাদ করে এখন দেনা হয়ে গেছে। সার, বীজের দাম কমিয়ে দিলেও তাদের ভালো হতো।
রাজবাড়ী বাজার ঘুরে দেখা গেছে– ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন এসব সবজির দাম ১০ টাকা কেজির মধ্যে। তবুও চাহিদা নেই। মরিচের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, সবজির দাম গত এক মাস ধরেই কম। বৃষ্টির কারণে আগাম সবজি চাষ করতে না পেরে সবাই একসঙ্গে চাষ করেছেন। একসঙ্গে বাজারে ওঠার কারণে দামটা পড়ে গেছে। দ্বিতীয় কারণ উৎপাদন অনেক বেশি। মানুষ ফুলকপি, বাঁধাকপি এসব পছন্দ করছে না। একসঙ্গে না করে ভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করতে তারা পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, পেঁয়াজ ধরে রাখতে পারলে কয়েকদিন পরেই দাম বাড়বে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ ষ কর
এছাড়াও পড়ুন:
বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশনা চেয়ারম্যানের
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ সংস্থাটির সবাইকে একত্রিত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। কমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে এক সভায় তিনি এ অনুরোধ জানান।
আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি ভবনের মাল্টিপারপাস হলে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিএসইসির কমিশনার মোহসিন চৌধুরী, আলী আকবর, ফারজানা লালারুখসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। বিএসইসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সভায় বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, দেশের পুঁজিবাজার ও অর্থনীতিসহ জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় এই সংস্থার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পরিপূর্ণ দায়িত্বশীল হয়ে ও শৃঙ্খলার সঙ্গে কাজ করতে হবে। সভায় কর্মকর্তাদের দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য কাজ করার নির্দেশনা দেন তিনি।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে নতুন উদ্যমে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, সবাই একসঙ্গে কাজ করলে বিএসইসির কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে। গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য কাজ করার নির্দেশনা দেন তিনি।
বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা আগের সব ভুলভ্রান্তি ভুলে গিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন উদ্যমে কাজ করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি কমিশনের বিভিন্ন সমস্যার সুরাহা করার বিষয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আশ্বাস দেন তাঁরা।
বিএসইসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কমিশনের সঙ্গে পূর্ণ উদ্যম ও শৃঙ্খলা বজায় রেখে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।