ভাইয়ের ক্ষমতাবলে ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা
Published: 25th, February 2025 GMT
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম (দোলন মুন্সি) ভাইয়ের ক্ষমতাবলে প্যানেল চেয়ারম্যান হয়েছেন। বিএনপি নেতাকর্মীর একটি অংশের প্রতিবাদ ও তোপের মুখে তাঁর দায়িত্বগ্রহণ অনুষ্ঠান ভেস্তে যায়। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে ইউনিয়ন পরিষদের সেবা কার্যক্রম। ব্যাপক ভোগান্তি পোহাচ্ছে ইউনিয়নের ৩০ হাজার নাগরিক।
গত ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান আব্দুল গফফার খান জনরোষের ভয়ে আত্মগোপনে চলে গেলে প্যানেল চেয়ারম্যান-১ শহিদুল ইসলাম কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশাসক হিসেবে কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন। পরে জেলা প্রশাসক উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.
গত ১১ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক তাঁকে আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করে চিঠি দেন। তিনি গত সোমবার বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নিতে স্থানীয় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে সচিবের মাধ্যমে চিঠি দিয়ে দাওয়াতপত্র দেন। এতে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীর একটি অংশের প্রতিবাদ ও তোপের মুখে অনুষ্ঠান ভেস্তে যায়।
স্থানীয়রা জানান, ইউপি সদস্য জাহিদুলের ভাই জহিরুল ইসলাম সুমন মুন্সি হাইকোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। তাঁর ক্ষমতাবলে যুবলীগ নেতা জাহিদুল প্যানেল চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ও ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে সরিয়ে প্যানেল চেয়ারম্যানের পদে আসেন।
ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের খান ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মুজ্জাম্মেল আরিন্দা জানান, জাহিদুল আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি আমির হোসেন আমুর কাছের লোক হিসেবে এলাকায় পরিচিত। তাঁকে কেউ ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে চায় না।
সুবিদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহমেদ মাস্টার জানান, হাইকোর্টের রায়কে সম্মান দেখিয়ে জাহিদুলকে বাধা দিচ্ছি না। তিনি যুবলীগের সক্রিয় নেতা ছিলেন এটি সবাই জানে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য বল গ ন ত ল ইসল ম য বল গ ব এনপ সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলিম সমাজকে বিজ্ঞানমুখী করার উপায়
ইসলামি সভ্যতা এক সময় জ্ঞান–বিজ্ঞানে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়েছে, কিন্তু উনিশ শতক থেকে মুসলিম উম্মাহ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ইউরোপীয় শক্তির উত্থান, উসমানীয় খিলাফতের পতন ও বিজ্ঞানে পশ্চিমা আধিপত্য মুসলিমদের জ্ঞানচর্চাকে পিছিয়ে দিয়েছে।
ইসলামি স্বর্ণযুগে (অষ্টম-ত্রয়োদশ শতাব্দী) মুসলিম পণ্ডিতরা গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, চিকিৎসা ও প্রকৌশলের ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রেখেছিলেন। ইবনে সিনা, আল-খাওয়ারিজমী এবং আল-বিরুনির মতো পণ্ডিতেরা বিজ্ঞানকে কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে এগিয়ে নিয়েছিলেন।
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমরা তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে চিন্তা করে এবং বুদ্ধিমানেরা উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা সদ, আয়াত: ২৯)
পশ্চিমা বিজ্ঞান প্রকৃতিকে জয় করার বা শোষণের বিষয় হিসেবে দেখে, যা ইসলামের শিক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে পরিবেশদূষণ, সম্পদের অপব্যবহার ও বৈশ্বিক অসাম্য বেড়েছে।এ আয়াত মুসলিমদের জ্ঞানের সন্ধানে উৎসাহিত করত।
পশ্চিমা রেনেসাঁ ও আলোকিত যুগের প্রভাবে বিজ্ঞানে পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি প্রাধান্য পায়। পশ্চিমা বিজ্ঞান প্রকৃতিকে জয় করার বা শোষণের বিষয় হিসেবে দেখে, যা অনেক ক্ষেত্রে ইসলামের শিক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে পরিবেশদূষণ, সম্পদের অপব্যবহার ও বৈশ্বিক অসাম্য বেড়েছে। বাংলাদেশে, নদীদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এই সমস্যার স্পষ্ট উদাহরণ।
আরও পড়ুনআপনি কি জানেন, এই ১০টি উদ্ভাবন মুসলিমদের১৯ জুন ২০২৫পশ্চিমা বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা এবং ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গিপশ্চিমা বিজ্ঞান প্রায়ই দার্শনিক ও অবিশ্বাসী দৃষ্টিভঙ্গির ওপর জোর দেয়, যা প্রকৃতিকে আল্লাহর সৃষ্টি হিসেবে না দেখে একটি বস্তুগত সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে। অথচ কোরআনে বলা হয়েছে, ‘মানুষের হাতের কাজের কারণে স্থল ও সমুদ্রে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।’ (সুরা রুম, আয়াত: ৪১) এ বিপর্যয়ের উদাহরণ হলো বৈশ্বিক উষ্ণতা, দূষণ ও সম্পদের অসম বণ্টন। শিল্পের বর্জ্যে নদীদূষণ ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এই সমস্যার ফল।
ইসলামি বিজ্ঞান প্রকৃতিকে আল্লাহর সৃষ্টি হিসেবে দেখে, যা সম্মান ও দায়িত্বের সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘পৃথিবী থেকে ক্ষতিকর কিছু সরিয়ে ফেলা ইমানের একটি শাখা।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৫,২৩৯)
এই শিক্ষা বিজ্ঞানকে নৈতিক ও টেকসই পথে পরিচালিত করতে পারে।
বিজ্ঞানমুখী প্রজন্ম গড়ার প্রয়োজনীয়তামুসলিম সমাজের একটি বিরাট অংশ উপর্যুক্ত নানা কারণে ও আর্থিক দৈন্যদশার মুখে পড়ে বিজ্ঞান থেকে পিছিয়ে পড়েছে। কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি, পদ্ধতি ও প্রয়োগ পুনর্বিন্যাস করে তাদের জাগিয়ে তোলা সময়ের দাবি। এর উদ্দেশ্য শুধু পশ্চিমা বিজ্ঞানকে প্রত্যাখ্যান নয়, বরং এর সঙ্গে ইসলামি মূল্যবোধের সমন্বয় ঘটানো। বিজ্ঞান শিক্ষা যেহেতু ব্যাপকভাবে পশ্চিমা মডেলের ওপর নির্ভরশীল, তাই সেখানে ইসলামি দার্শনিক তত্ত্বের মাধ্যমে একটি ভারসাম্য আনাও জরুরি। এটি আমাদের পরিবেশ, সামাজিক ন্যায়বিচার ও নৈতিকতার প্রতি দায়িত্বশীল করে তুলবে।
পৃথিবী থেকে ক্ষতিকর কিছু সরিয়ে ফেলা ইমানের একটি শাখা।সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৫,২৩৯কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমরা আমাদের রাসুলদেরকে সুস্পষ্ট প্রমাণসহ পাঠিয়েছি এবং তাঁদের সঙ্গে কিতাব ও ন্যায়বিচারের মানদণ্ড নাযিল করেছি, যাতে মানুষ ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে।’ (সুরা হাদিদ, আয়াত: ২৫)
অর্থাৎ, আমাদের বিজ্ঞানচর্চা যেন ন্যায় ও কল্যাণের পথে ব্যবহার হয়, সেদিকে মনোনিবেশ করতে হবে।
আরও পড়ুনবাগদাদের জ্ঞানের বাতিঘর২৭ জুন ২০২৫ব্যবহারিক পদক্ষেপবিজ্ঞানের সঙ্গে ইসলামের এই সমন্বয় ঘটানোর জন্য আমরা বেশ কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি। যেমন:
১. শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামি মূল্যবোধের সমন্বয়
বিজ্ঞান শিক্ষায় কোরআন ও সুন্নাহর শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। পরিবেশবিজ্ঞান পড়ানোর সময় সুরা রুম (আয়াত: ৪১) বা আকাশবিজ্ঞানের সময় কোরআন কসমোলজিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করেছে, সেসবও আলোচনা করা যেতে পারে। এটি শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের নৈতিক দিক সম্পর্কে সচেতন করবে।
২. টেকসই গবেষণার প্রচার
জলবায়ু পরিবর্তন, নদীদূষণ এবং কৃষি–সংকটের মতো সমস্যা সমাধানে গবেষণাকে ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সংযুক্ত করা যেতে পারে। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি বা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির গবেষণায় কোরআনের টেকসই উন্নয়নের শিক্ষা প্রয়োগ করা যেতে পারে।
ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, যেখানে শাস্ত্রীয় পাঠদান করা যায়, সেগুলোর সঙ্গে বিজ্ঞানের কত গভীরতম সংযোগ রয়েছে, তা শিক্ষকগণ আলোচনা করতে পারেন।৩. মুসলিম বিজ্ঞানীদের নেটওয়ার্ক গঠন
মুসলিম বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যেতে পারে, যেখানে তারা কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে বিজ্ঞানের নতুন ব্যাখ্যা ও সমাধান প্রস্তাব করতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান এ উদ্যোগ নিতে পারে।
৪. পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি
ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে পরিবেশ সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে। মসজিদে খুতবার মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরা, বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম বা নদী পরিষ্কার অভিযানে সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। বিভিন্ন দাতব্য সংগঠনের সঙ্গে সহযোগিতায় এই কার্যক্রম জোরদার করা যায়।
৫. নৈতিক বিজ্ঞান শিক্ষা
বিজ্ঞান শিক্ষায় নৈতিকতার ওপর জোর দেওয়া উচিত। কোরআনের শিক্ষা, যেমন ‘তোমরা ন্যায় প্রতিষ্ঠা করো’ (সুরা হাদিদ, আয়াত: ২৫), বিজ্ঞানীদের প্রকৃতির শোষণের পরিবর্তে এর সংরক্ষণে উৎসাহিত করবে। শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবেশ নৈতিকতার কোর্স চালু করা যেতে পারে।
৬. প্রদর্শনীর আয়োজন করা
প্রাচীন মুসলিম বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন উদ্ভাবন ও আবিষ্কার নিয়ে জনপরিসরে প্রদর্শনীর আয়োজন করা যায়। এবং বর্তমান বিজ্ঞানকে তাদের আবিষ্কার কীভাবে প্রভাবিত করেছে, তা–ও চাইলে সেখানে ব্যাখ্যা করার ব্যবস্থা রাখা যায়।
৭. শাস্ত্রীয় পাঠে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, যেখানে শাস্ত্রীয় পাঠদান করা যায়, সেগুলোর সঙ্গে বিজ্ঞানের কত গভীরতম সংযোগ রয়েছে, তা শিক্ষকগণ আলোচনা করতে পারেন। প্রয়োজনে মৌলিক ব্যবহারিক বিজ্ঞান ও জনজীবনে তার প্রভাববিষয়ক সিলেবাস গঠন করা যায়।
বিজ্ঞান যে মুসলিম সমাজের ভেতরে ‘ধর্মবিরোধিতা’র কোনো অংশ নয়, বরং নৈতিক ও শাস্ত্রীয় শিক্ষার সঙ্গে বিজ্ঞানের পাঠ আমাদের আরো বেশি জীবন–সংকট দূর করবে, সেটা বোঝানো এই সময়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হওয়া উচিত। এটাই আমাদের ঐতিহাসিক গৌরব ফিরিয়ে আনতে পারে এবং আমাদের দেশ ও জাতিকেও সমৃদ্ধ করতে পারে। বিজ্ঞানভীতি দূর করতে পারলে আমাদের শিশুরাও সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে।
আরও পড়ুনগণিতে ইবনে হাইমের অবদান২৩ জুলাই ২০২৫