‘পুষ্পে পুষ্পে ভরা শাখি কুঞ্জে কুঞ্জে গাহে পাখি/গুঞ্জরিয়া আসে অলি পুঞ্জে পুঞ্জে ধেয়ে/তারা ফুলের ওপর ঘুমিয়ে পড়ে ফুলের মধু খেয়ে।’...মনে হয়েছে গানের ওই পঙ্‌ক্তিগুলোর মতো প্রকৃতিকে কেউ ওখানে সাজিয়ে রেখেছে। প্রকৃতই ওখানে পুষ্পে পুষ্পে শাখা ভরে আছে। সেই পুষ্পবনে দলে দলে উড়ছে মৌমাছি। তার কোনোটি ঘুমের মতো বসে আছে ফুলের বুকে। একেবারে গানের কথায়, গানের ভাবে মিলেমিশে আছে অযত্ন-অবহেলায় বেড়ে ওঠা বুনো ফুলের এই একটি সংসার।

মৌলভীবাজার শহরের কোদালীছড়ার পাড়ে ঢাকা বাসস্ট্যান্ড–সংলগ্ন কোদালীপুলের পূর্ব দিকে এই সংসার সাজিয়েছে হুরহুরে ফুল। অসংখ্য ফুল ফুটেছে ডালে ডালে। আর মৌমাছিরাও মধুর লোভে বুনো ফুলে আসর জমিয়েছে। গাছে গাছে মায়াভরা এত ফুল, চোখ ফেরানোর উপায় নেই। বুধবার সকালে এই বুনো ফুলের সঙ্গে দেখা।

বছর দুয়েক আগে মৌলভীবাজার পৌরসভার উদ্যোগে কোদালীছড়ার প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকার দুই পাড় পাকা করে বাঁধাই করা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে হাঁটার পাকা পথ। কোদালীছড়ার পাড় ধরে চলতে গিয়ে এই ফাল্গুনের সকালে অনেক স্থানেই দেখা মেলে চোখজুড়ানো কিছু ভাঁটফুলের সঙ্গে। কোথাও দু–চারটা গাছ, কোথাও ঝোপবেঁধে সাদা সাদা ভাঁটফুল ফুটে আছে। এই পথ ধরে দু–চারজন নারী, দু–একজন পুরুষ প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়েছেন। কোদালীপুলের কাছে একটি পতিত জমির কাছে রঙিন করে ফুটে আছে অনেকগুলো হুরহুরে ফুল। সাধারণত হাওর-বাঁওড়, ডোবা-নালা, জলাভূমির পাশে হুরহুরের দেখা মেলে। মৌলভীবাজারের হাকালুকি, কাউয়াদীঘি, হাইল হাওরসহ ছোট-বড় হাওরে এই হুরহুরে ফুটে থাকে। হাওর পর্যটক, হাওরপারের মানুষের চোখ জুড়ায়।

মৌলভীবাজার শহরের ভেতর এমন হাওর-প্রকৃতির পরিবেশ বসন্তের সকালটাকে আরও রঙিন, আরও উজ্জ্বল, আরও সুন্দর করে তোলে। হুরহুরের ডালে ডালে ঝাঁকে ঝাঁকে ফুল ফুটে আছে। সাদা-বেগুনি, সাদা-গোলাপি পাপড়ির ফুল। সবুজ চিরল পাতার ফাঁকে, শাখার মাথায় ঝোপালো ফুল ফুটে আছে। সেই ফুলের ওপর দলে দলে উড়ে আসছে মৌমাছি। কোনোটা এক ফুল থেকে আরেক ফুলে উড়ে যাচ্ছে। কোনোটি মধু খেয়ে যেন অলস হয়ে ফুলের ওপর ঘুমিয়ে পড়েছে। হুরহুরের পুরো বনে অনেক মৌমাছি। তারা গুনগুন করছে, নিজেদের পৃথিবীতে মগ্ন হয়ে আছে। ফুলেরাও যেন এমন অলির অপেক্ষাতেই থাকে। মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে ফুল। এ রকম মুহূর্তে ফুল ও মৌমাছি পরস্পর মিলেমিশে গেছে।

হুরহুরে ফুলের আরও কিছু নাম আছে। নুনিরলতা, সূর্যাবর্ত্ত, হুলহুলে। পুংকেশর মাকড়সার মতো চারপাশে ছড়িয়ে থাকে বলে ইংরজিতে ‘ওয়াইল্ড স্পাইডার ফ্লাওয়ার’ বা বন্য মাকড়সা ফুল নামেও এই ফুলের পরিচিতি আছে।

হুরহুরে একটি সপুষ্পক, ঝোপালো উদ্ভিদ। এর ডালে অসংখ্য ছোট সবুজ পাতা থাকে। ফুল ডালের শীর্ষে পর্যায়ক্রমে ফুটে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাদা রঙের ফুলের দেখা মেলে। ফুল গোলাপি, বেগুনি, হলুদ ইত্যাদি রঙের হয়। বিভিন্ন রঙের হুরহুরে চোখজুড়ানো সৌন্দর্য তৈরি করে। এর বীজের আকৃতি অনেকটা শামুকের খোলসের মতো। হুরহুরে আকর্ষণীয় ও দ্রুত বর্ধনশীল গাছ। মৌটুসি পাখিও এই ফুল পছন্দ করে। গাছগুলো তাপ এবং খরা সহ্য করতে পারে। শীতের প্রথম দিক থেকে শুরু হয়ে বর্ষা-শরৎ পর্যন্ত এই ফুল ফুটে। বীজ দূরবাহী ও বৈরী পরিবেশে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এই ফ ল

এছাড়াও পড়ুন:

করিডর নিয়ে যা বলছে, তার প্রতিটি কথার জবাব দিতে হবে: আমীর খসরু

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠাতে যে করিডরের কথা বলা হচ্ছে, তা বুঝে বলা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেন, যদি বুঝে বলে থাকে, তাহলে প্রত্যেকটা কথার জবাব দিতে হবে।

আমীর খসরু বলেন, যদি দেশে একটি নির্বাচিত সরকার থাকত, তাহলে এমন একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা–সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে সংসদে আলোচনা হতো, জনগণের মতামত বিবেচনা করা হতো। অথচ এখন এমন সিদ্ধান্ত কে নিচ্ছে, কাদের সঙ্গে বসে নিচ্ছে, তা জাতি জানে না।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরের কাজীর দেউড়ি নাসিমন ভবনস্থ বিএনপি কার্যালয়ের সামনে মহান মে দিবস উপলক্ষে আয়োজিত মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথাগুলো বলেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দল এ সমাবেশের  আয়োজন করে।

আমীর খসরু নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা দেখছেন একটা সুবিধাবাদী শক্তি সৃষ্টি হয়েছে। এদের কোনো অবদান নেই। তাদের বেশির ভাগকে রাস্তায় দেখিনি। এখন এরা মজা মারছে। ক্ষমতার মজা মারছে। এটা কি ছাড়া যায়। এখন তারা নির্বাচনে যেতে চায় না। নির্বাচনে গেলে তো জনগণের নির্বাচিত সরকার হবে। তাদের ওই মজা তখন আর থাকবে না।’

জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য, গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য একেক দিন একেক দিন একেক কথা বলে। এটা না হলে নির্বাচন হবে না, ওটা না হলে নির্বাচন হবে না। প্রতিনিয়ত তারা একেকটা বয়ান শুরু করেছে। কারণ, তারা তো আনন্দে আছে। এখন এই বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে তারা লাভবান আছে। কাদের কথা বলছি বোঝানোর দরকার আছে? বুঝছেন তো কাদের কথা। সুতরাং এটা বেশি দিন চলতে গেলে জনগণের কাছে জবাবদিহি হতে হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, ‘যারা জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে আন্দোলনে ছিল না, এখন তারাই বলছে, নির্বাচন না হলেই ভালো। তারা একধরনের সুবিধা নিচ্ছে। কিন্তু জনগণ তাদের এ সুযোগ বেশি দিন দেবে না। বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন ছাড়া কাউকে ক্ষমতা গ্রহণের বৈধতা দেবে না।’’

বর্তমান সরকারের সময় যেভাবে শ্রমিকস্বার্থ উপেক্ষিত হচ্ছে, তা মেনে নেওয়া যায় না উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, বিএনপির ৩১ দফা রোডম্যাপে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার, সামাজিক নিরাপত্তা এবং তাদের পরিবারের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কল্যাণমূলক পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের সভাপতি এ এম নাজিম উদ্দীনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল্লাহ বাহারের পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়া প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ