কোরআনে আছে, ‘নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য। তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময়ে এ-সংখ্যা পূরণ ক'রে নিতে হবে। আর যে-ব্যক্তির পক্ষে রোজা রাখা দুঃসাধ্য তার একজন অভাবগ্রস্তকে অন্নদান করা কর্তব্য। তবু যদি কেউ নিজের খুশিতে পুণ্য কাজ করে তবে তার পক্ষে বড়ই কল্যাণকর। আর যদি তোমরা উপলব্ধি করতে পারতে তবে বুঝতে, রোজা পালনই তোমাদের জন্য আরও বেশি কল্যাণকর । ’(সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৪)
রোজা রেখে কোনো ওজরের কারণে ভেঙে ফেললে তা পরে কাজা আদায় করতে হয়। কাজা হলো একটি রোজার পরিবর্তে একটি রোজা। কাজা রোজা পরবর্তীকালে সুবিধামতো সময়ে আদায় করা যায়, সব কাজা রোজা একত্রে আদায় করা জরুরি নয়।
রোজা রেখে ওজর ছাড়া কোনোরকম শয়তানি ধোঁকায় বা নফসের তাড়নায় তা ভঙ্গ করলে এর জন্য কাজা ও কাফফারা উভয় আদায় করতে হয়। কাফফারা কাফফারা পাপ বা অপরাধ থেকে মাফ পাওয়ার জন্য শরিয়ত-নির্দিষ্ট দণ্ড। ইসলামি পরিভাষায় কতিপয় অপরাধজনক কাজের পর তওবা কবুলের উদ্দেশ্যে আর্থিক বা শারীরিক ক্ষতিপূরণ আদায়ের নাম কাফফারা।
রমজান মাসের রোজা ভঙ্গ করলে কাফফারা তিনভাবে আদায় করা যায় ১.
একটি দাসমুক্ত করা ২. আর অক্ষম হলে ৬০ জন মিসকিনকে দুই বেলা ভালোভাবে তৃপ্তিসহ খাবার খাওয়ানো ৩.ধারাবাহিকভাবে ৬০দিন রোজা রাখা
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কাফফারা আদায়ের অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। একবার রমজানে এক সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমি নিজেকে ধ্বংস করে ফেলেছি, আমি রোজা পালন অবস্থায় স্ত্রী-সহবাস করে ফেলেছি।’ নবীজি (সা.) তাঁকে বললেন, ‘তুমি একজন দাস মুক্ত করে দাও।’ সে বলল, ‘এমন সামর্থ্য আমার নেই।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তবে এর বদলে দুই মাস বা ৬০ দিন রোজা রাখো।’ লোকটি বলল, ‘হে আল্লাহর নবী (সা.)! এমন শারীরিক সক্ষমতা আমার নেই।’ তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তবে তুমি ৬০ জন মিসকিনকে দুই বেলা আহার করাবে।’ লোকটি বলল, ‘হে আল্লাহর নবী (সা.)! এ রকম আর্থিক সংগতিও আমার নেই।’ তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে অপেক্ষা করতে বললেন। এর কিছুক্ষণ পর একজন সাহাবি রাসুল (সা.)-কে এক ঝুড়ি খেজুর হাদিয়া দিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) ওই লোককে বললেন, ‘এগুলো নিয়ে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করে দাও।’ লোকটি বলল, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.) এ এলাকায় আমার চেয়ে গরিব আর কে আছে?’ এ কথা শুনে রাসুল (সা.) স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি হাসলেন, যাতে তাঁর দাঁত দেখা গেল । তিনি (সা.) বললেন, ‘আচ্ছা! তবে খেজুরগুলো তুমিই তোমার পরিবার নিয়ে খাও।’ (বুখারি, হাদিস: ১৩৩৭, মুসলিম, হাদিস: ১১১১)।
আরও পড়ুনইফতারের দোয়া২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪রমজান মাসের রোজা ভঙ্গ করলে যেভাবে কাফফারা আদায়রোজা কাজা করার পরও কাফফারা আদায় করতে হয়। এই কাফফারা হলো একটি দাস মুক্ত করা, আর অক্ষম হলে ৬০ দিন রোজা রাখা এবং তা-ও না পারলে ৬০ জন মিসকিনকে দুই বেলা আহার করানো। যে কয়টি রোজা রাখার পর ওজর ছাড়া ভাঙবে, ততটির প্রতিটির পরিবর্তে একটি করে কাজা এবং একই রমজান মাসের জন্য তার সঙ্গে যুক্ত হবে একটি কাফফারা। অর্থাৎ একটি রোজা যৌক্তিক কারণ ছাড়া ভাঙলে তার জন্য কাজা ও কাফফারা হবে ৬১ রোজা, দুটি ভাঙলে হবে ৬২ রোজা, তিনটি ভাঙলে হবে ৬৩ রোজা। কাফফারা ৬০টি রোজা একত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আদায় করতে হয়। কারও যদি কাজা, কাফফারাসহ মোট ৬১ বা তার বেশি হয়, তবে কমপক্ষে ৬১টি রোজা একটানা আদায় করতে হবে। কাফফারার রোজার মধ্যে বিরতি হলে বা ভাঙলে আরেকটি কাফফারা ওয়াজিব হয়ে যাবে। অর্থাৎ ৬১টি রোজা পূর্ণ হওয়ার আগে বিরতি হলে পুনরায় নতুন করে এক থেকে শুরু করে ৬১টি পূর্ণ করতে হবে। যে রোজাগুলো রাখা হলো তা নফল হিসেবে পরিগণিত হবে। কোনো গ্রহণযোগ্য ওজর বা আপদের কারণে ভাঙতে হলে তা ক্ষমার যোগ্য । নারীরা বিশেষ বিরতির সময় বাদ দিয়ে ধারাবাহিকভাবে আদায় করবে।
আরও পড়ুনসুরা ফাতহে সাহাবিদের কয়েকটি গুণের উল্লেখ রয়েছে২৫ অক্টোবর ২০২৩রোজা রেখে কোনো ওজরের কারণে ভেঙে ফেললে তা পরে কাজা আদায় করতে হয়। কাজা হলো একটি রোজার পরিবর্তে একটি রোজা। কাজা রোজা পরবর্তীকালে সুবিধামতো সময়ে আদায় করা যায়। সব কাজা রোজা একত্রে আদায় করা জরুরি নয় শিশু নাবালেগ অবস্থায় রোজা রাখা ফরজ নয়, তবু তারা নিজেদের আগ্রহে ও বড়দের উৎসাহে রোজা রেখে থাকে। এ অবস্থায় তারা যদি রোজা রেখে কখনো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যেকোনোভাবে রোজা ভেঙে ফেলে, তাহলে তাদের এ রোজার কাজা বা কাফফারা কোনোটিই প্রয়োজন হবে না। কাফফারা, ফিদিয়া ও সদাকাতুল ফিতরের টাকা তাঁদের দেওয়া যাবে, যাঁদের জাকাত তথা ফরজ ও ওয়াজিব সদকা প্রদান করা যায়। কোরআনে আছে সাদকা (জাকাত অর্থে) তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও সেই কাজে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য; যাদের মনোরঞ্জন প্রয়োজন তাদের জন্য, দাস মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে সংগ্রামকারী ও মুসাফিরদের জন্য। এ আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সবর্জ্ঞ তত্ত্বজ্ঞানী । (সুরা তওবা, আয়াত: ৬০)
আরও পড়ুনরমজানের সাহ্রি ও ইফতারের সময়সূচি ২০২৫২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র জন য র পর ব আল ল হ বলল ন
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্দিককে মারধর ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা, যা বললেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি
শোবিজের একঝাঁক একঝাঁক অভিনয়শিল্পীকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি করা হয়েছে। প্রথমে ইরেশ যাকের, তারপর সুবর্ণা মুস্তাফা, অপু বিশ্বাস, নুসরাত ফারিয়া, নিপুণসহ ১৭ অভিনয়শিল্পীর নাম প্রকাশ্যে এসেছে। এরই মধ্যে গতকাল অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর ও লাঞ্ছিত করে রাজধানীর রমনা থানায় সোপর্দ করা হয়। এসব বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চর্চা চলছে। এ নিয়ে অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আজাদ আবুল কালাম নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।
সিদ্দিকের ওপর হামলা ও লাঞ্ছনা ঘটনা নিয়ে আজাদ আবুল কালাম গণমাধ্যমে বলেন, “সিদ্দিকের সঙ্গে যা ঘটেছে, এটা তো মব। এই মব ভায়োলেন্সকে তো ঠেকাচ্ছে না। কেন যেন মনে হচ্ছে, মব ভায়োলেন্সকে নীরবে বলা হচ্ছে, করে যাও। আমাদের কিছুই করার নেই। একজনের রাজনৈতিক চিন্তাচেতনা থাকতে পারে। অভিনেতা হিসেবে সিদ্দিক সবার কাছে পরিচিত। কিছু লোক তাকে এভাবে রাস্তায় ধরে মেরে দেবে!”
প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে আজাদ আবুল কালাম বলেন, “দলবদ্ধভাবে সিদ্দিককে শারীরিকভাবে আঘাত করেছে, আক্রমণ করেছে, গায়ে থেকে জামাকাপড় খুলে ফেলেছে, এরপর থানায় সোপর্দ করেছে। থানায় যদি সোপর্দ করতেই হয়, তাহলে প্রথমে কেন আইন হাতে তুলে নিল? তাকে হেনস্তা করে আইনের হাতে তুলে দেবে— এই মব জাস্টিস, মব ভায়োলেন্স সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। এটা তো একটা সময় নানা স্তরে হবে। এসব কর্মকাণ্ড সরকারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে, যেখানে মব ভায়োলেন্স, সেখানে কঠোর হস্তে দমন করবে।”
ঢালাওভাবে অভিনয়শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়ে বিস্মিত আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, “ঢালাওভাবে হত্যা মামলা হচ্ছে! দেখে মনে হচ্ছে, সবাইকে মামলার মধ্যে ফেলতে হবে। ৩০০-৪০০ জন মামলার আসামি, এটা অবাস্তব একটা অবস্থা। একজন সুবর্ণা মুস্তাফার মতো শিল্পী রাস্তায় গিয়ে মানুষকে গুলি করবে? যে মানুষটি মামলা করেছেন, তিনি আন্দোলনের সময় আহত হয়েছেন, গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন; তিনি মামলা করেছিলেন অনেক লোকের নামে। মামলার নথিতে শিল্পীদের অনেকের নাম দেখলাম, তারা রাস্তায় নেমে মানুষকে গুলি করবে!”
সরকারিভাবে এ ধরনের মামলাকে প্রতিরোধ করা উচিত বলে মনে করেন আজাদ আবুল কালাম। তিনি বলেন, “সরকারিভাবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও উচিত হবে এ ধরনের মামলাকে প্রতিরোধ করা। নিরুৎসাহিত করা। যে ব্যক্তি মামলা করছেন, যদি প্রমাণিত হয়, শিল্পীরা কেউই গুলি করেনি, তখন তো এটা মিথ্যা মামলা হবে। এ রকম মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রে, যে ব্যক্তি শিল্পীদের নামে মামলা করেছেন, তার কী শাস্তি হবে, তারও বিধান থাকতে হবে।”
“কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে, তা জানানোর একটা প্রক্রিয়া আছে। শুধু শিল্পী না, একজন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধেও যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে আপনি তার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগপর্যন্ত তাকে অপরাধী বলতে পারেন না। তাকে সামাজিকভাবে হেয় করতে পারেন না। মামলা করে তাকে সামাজিকভাবে হেয় করা শুরু করলেন, এই প্রক্রিয়া যদি চলতে থাকে, এটাই যদি আমাদের মনস্তত্ত্ব হয়, তাহলে বিভক্তি আরো বাড়বে।” বলেন আবুল কালাম আজাদ।