ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দিতে এসে ছাত্রলীগের দুই নেতাকর্মী মারধরের শিকার হয়েছেন। আজ রোববার দুপুর সোয়া একটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে তাদের আটক করে ক্যাম্পাসস্থ থানায় সোপর্দ করা হয়। 

আটক হওয়ারা হলেন- শাখা ছাত্রলীগের উপআপ্যায়ন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম নাঈম ও ‘সক্রিয় ছাত্রলীগ কর্মী’ মারুফ আহম্মেদ। তারা উভয়েই সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। 

জানা যায়, সকাল সাড়ে ১১টায় অনুষদ ভবনের ২৩১নং কক্ষে বিভাগটির চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা শুরু হয়। বিভাগকে না জানিয়ে নাঈম ও মারুফ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। বিষয়টি জানতে পেরে পরীক্ষা শুরুর দেড় ঘণ্টা পর কক্ষের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করাসহ শিক্ষার্থীরা জড়ো হন। পরে প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে তাদের থানায় নেওয়ার সময় ভবনের নিচতলায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মারুফকে মারধর করেন। পরবর্তীতে উভয়কে প্রক্টরিয়াল বডির গাড়িতে করে থানায় নেওয়া হয়। এ দিকে তাদের পরীক্ষার লিখিত উত্তরপত্র বিভাগের শিক্ষক শ্যাম সুন্দর সরকার কেটে দেন বলে জানা গেছে। 

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আটক নাঈম ও মারুফ ক্ষমতা দেখিয়ে ক্যাম্পাসের দোকানগুলো থেকে ফাও খাওয়া, শিবির ট্যাগ দিয়ে হল থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়া ও নির্যাতন করা, নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হওয়া, জুনিয়রদের র‌্যাগ দেওয়াসহ নানা অপরাধমূলক কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল। ৫ আগস্টের পর এসব অভিযোগ তুলে অনুষদ ভবনের সামনে মারুফকে ধরিয়ে দিতে ‘নির্যাতিত সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে একটি পোস্টার টানানো হয়। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির সমন্বয়ক মুখলেসুর রহমান সুইট বলেন, ‘নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও তাদের দোসরদের কোনো ছাড় হবে না। যারা তাদের প্রশ্রয় দেবে তাদেরকেও ছাড় দেওয়া হবে না। যেসব খুনিদের হাতে শহীদদের রক্ত লেগে আছে তাদের কার্যক্রম চালানোর অধিকার নেই।’

বিভাগের সভাপতি আসমা সাদিয়া রুনা বলেন, তারা আমাদের না জানিয়েই পরীক্ষা দিতে এসেছিল। জানার পর তাদের থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

প্রক্টর অধ্যাপক ড.

শাহীনুজ্জামান বলেন, বিভাগের শিক্ষক এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের থানা হেফাজতে দিয়েছে। এখন পুলিশ হেফাজতেই আছে। মামলার প্রক্রিয়া চলমান আছে। 

ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, ‘নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের দুজনকে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। সন্ত্রাস বিরোধী আইন মামলা তাদের চালান করা হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: থ ন য় স পর দ পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

নিরাপদ অভিবাসন ও ন্যায্য নিয়োগ সুবিধায় ঢাকায় ওইপি উদ্বোধন

ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট প্ল্যাটফর্ম (ওইপি) উদ্বোধন করেছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। নিরাপদ অভিবাসন ও ন্যায্য নিয়োগ প্রক্রিয়া অগ্রগতির ক্ষেত্রে এটি বাংলাদেশের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে প্ল্যাটফর্মটি উদ্বোধন করা হয়।

আরো পড়ুন:

সোনালী আঁশ লিমিটেডের মুনাফা বেড়েছে ১৭.৮৮ শতাংশ

শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দিল ওয়ালটন

বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং সুইজারল্যান্ড সরকারের যৌথ উদ্যোগে এই প্ল্যাটফর্মটি তৈরি করা হয়েছে।

জাতীয় সমন্বিত এই ডিজিটাল গেটওয়ে শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পক্ষকে এক প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করবে। এর মধ্যে রয়েছেন বিদেশে যেতে আগ্রহী কর্মী, রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি, ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (বিএমইটি), টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, বিদেশি নিয়োগকর্তা, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এবং প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ।

এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অভিবাসন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সেবার মান উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

একই সঙ্গে এটি দালালচক্রের ভূমিকা কমাতে এবং কর্মীদের জন্য অভিবাসন ব্যয় হ্রাসে সহায়তা করবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম, বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন মি. ডেইপাক এলমার এবং আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মি. ম্যাক্স টুনন।

এছাড়া বিভিন্ন দূতাবাস, উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান, জাতিসংঘ সংস্থা, রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি, নিয়োগদাতা সংস্থার সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন এবং অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নিয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া।

উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, “নিরাপদ, স্বচ্ছ এবং কার্যকর অভিবাসনের জন্য এই উদ্যোগটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি। দেশের জন্য তাদের অবদান উল্লেখযোগ্য। তাদের এই যাত্রা নিরাপদ, সুরক্ষিত এবং সম্মানজনক করার দায়িত্ব আমাদের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা এই প্ল্যাটফর্মে আরো নতুন ফিচার যুক্ত করতে পারব, যা শ্রমিক, নিয়োগকর্তা ও সরকার, সব পক্ষের জন্যই কাজে আসবে।”

পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম বলেন, “ন্যায্য ও স্বচ্ছ নিয়োগব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে গন্তব্য দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক শ্রম চুক্তি আরও শক্তিশালী করা সম্ভব হবে।”

তিনি উল্লেখ করেন, “ওইপি গন্তব্য দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশের অভিবাসন ব্যবস্থার প্রতি আস্থা বৃদ্ধি করবে, যা দীর্ঘমেয়াদে আরো বেশি সুযোগ সৃষ্টি করবে।”

আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মি. ম্যাক্স টুনন বলেন, “ওইপি মূলত ন্যায্য নিয়োগ নীতিমালাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার একটি কার্যকর পদক্ষেপ। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তথ্য ও সেবাকে কেন্দ্রীভূত করায় রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি আরো ভালোভাবে তদারকি করা সম্ভব হবে, কর্মীরা নির্ভরযোগ্য তথ্য পাবে এবং সামগ্রিকভাবে অভিবাসন প্রক্রিয়া আরো নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও নিয়মতান্ত্রিক হবে।”

বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন মি. ডেইপাক এলমার বলেন, “শুধু প্রযুক্তি দিয়েই অভিবাসন শাসন ব্যবস্থার সমস্যাগুলো সমাধান হবে না। এই প্ল্যাটফর্মের প্রকৃত সাফল্য নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, রিক্রুটিং এজেন্সি, নিয়োগকর্তা এবং অভিবাসী নিজে কতটা দায়বদ্ধতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে এটিতে যুক্ত হয় এবং ব্যবহার করে তার ওপর। সব অংশীজনের প্রতিশ্রুতি, দায়িত্ববোধ ও জবাবদিহিতাই শেষ পর্যন্ত এর কার্যকারিতা নির্ধারণ করবে।”

সমাপনী বক্তব্যে সিনিয়র সচিব ড. নিয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, “ওইপি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে একটি প্রকল্পের সমাপ্তি নয়, বরং শ্রম অভিবাসন ব্যবস্থাপনাকে নতুন মাত্রায় উন্নীত করার একটি নতুন পর্যায়ের সূচনা হলো। আমরা প্ল্যাটফর্মটির ফিচার আরো সমৃদ্ধ করব, প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় আরো সুদৃঢ় করব এবং অংশীজনদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাব, যাতে অভিবাসী কর্মীরা মর্যাদা, নিরাপত্তা ও আস্থার সঙ্গে তাদের বিদেশযাত্রা পরিকল্পনা করতে পারে।”

ঢাকা/এনটি/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ