Samakal:
2025-05-01@05:13:48 GMT

যানজট কমায় শহরে স্বস্তি

Published: 2nd, March 2025 GMT

যানজট কমায় শহরে স্বস্তি

জমি বেচাকেনার ব্যবসা করেন বাদশা মিয়া। বাসা শহরের মাসদাইর লিচুবাগে। ব্যবসায়িক প্রয়োজনেই দিনে কয়েক দফা নারায়ণগঞ্জ শহরে যাতায়াত করতে হয় তাঁকে। এ সময় প্রতিটি দফায় শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে এক-দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। গতকাল রোববার তিনি সারাদিনে ছয়বার আসা-যাওয়া করেন। কিন্তু তেমন যানজটে পড়তে হয়নি। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, রমজানে শহরের যানজট নিরসনে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো। তাদের আর্থিক সহায়তায় শহরের বিভিন্ন প্রান্তে সম্মানীর বিনিময়ে কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর সুফলও মিলেছে হাতেনাতেই।
রোববার বিকেলে চাষাঢ়া বালুর মাঠ এলাকায় কথা হয় বাদশা মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, ‘গত কয়েক দিন শহরে এত যানজট ছিল, চাষাঢ়ার দিকে গেলে নিতাইগঞ্জ বা শহরের দক্ষিণ দিকে যাওয়ার কথা ভাবতেও কষ্ট হতো। কিন্তু আজ রোজার প্রথম দিন হলেও যানজট ছিল বেশ কম। ব্যক্তিগত কাজে শহরের দুই প্রান্তে সারাদিনে ছয়বার আসতে ও যেতে হয়েছে। কিন্তু কোথাও যানজটে বসে থাকতে হয়নি। একবার শুধু ২ নম্বর রেলগেটে ট্রেনের সিগন্যালে পড়েছি। এ ছাড়া শহরে আজ যানজট ছিল না।’
তাঁর বক্তব্যের সত্যতা মেলে শহরের মাসদাইর এলাকার বাসিন্দা মাজহারুল ইসলাম মুন্নার কথায়। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। মাজহারুল ইসলাম বলেন, জামতলা থেকে চাষাঢ়া যেতে প্রতিদিন যানজটে পড়া স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আজ তেমন যানজট ছিল না। বেশ শৃঙ্খলা ছিল সড়কে।
নগরীর বাবুরাইলের বাসিন্দা তানিয়া তান্নি ও পাইকপাড়ার বাসিন্দা ব্যাংকার রোকন উদ্দিন আরমানের সঙ্গে কথা হয় সমকালের। তারা বলেন, যানজট নিরসনে প্রশাসন ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার যৌথভাবে উদ্যোগ নিয়েছে বলে শুনেছেন। রাস্তার মোড়ে মোড়ে রোববার নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের লোগো দেওয়া হলুদ জ্যাকেট পরা কর্মীদের দেখেছেন। তারা যানজট নিরসনে কাজ করছেন। যে কারণে আজ ভোগান্তি অনেক কম ছিল। 
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহসভাপতি (অর্থ) ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সোহেল সারোয়ার বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরে এই মুহূর্তে বড় সমস্যা দুটি– যানজট আর নিরাপত্তাহীনতা। রোজায় যানজট আরও তীব্র হয়। এ সমস্যা সমাধানে বিকেএমইএ ২০ লাখ ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার ৫ লাখ টাকা দিয়ে প্রশাসনকে সহায়তা করছে। এই টাকায় ১৩০ জন সাধারণ কর্মী, ৪০ জন ছাত্র ও ১০ জন তদারকিকে সম্মানী দেওয়া হবে। তারা 
নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট নিয়ন্ত্রণের 
কাজ করছেন। 
রোজার প্রথম দিনে যানজটমুক্ত শহর উপহার দেওয়ায় প্রশাসন ও ব্যবসায়ীদের ধন্যবাদ জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ বি সিদ্দিক বলেন, রোজার প্রথম দিনে এমনিতেই যান চলাচল কম থাকে। মানুষ প্রথম ইফতার বাসায় করতে চান। সে কারণেও শহর সন্ধ্যায় ফাঁকা হয়ে যায়। ১০ রোজার পর থেকে যানজট বাড়তে থাকে। মানুষ রাস্তায় নামতে থাকেন। ফুটপাত, রাস্তা দখল করে অবৈধ দোকানপাট বসানো বেড়ে যায়। রোজার শেষ দিন পর্যন্ত প্রশাসন তৎপর থাকবে বলে তিনি আশা করছেন।
রোজার শেষ দিন পর্যন্ত এই কর্মসূচির পাশাপাশি প্রশাসনের অভিযান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিলুফা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, ‘দ্বিগু বাবুর বাজারের মাঝ দিয়ে যাওয়া মীর জুমলা রোড কয়েক দিন ধরেই আমরা খোলা রাখতে পেরেছি। নগরীতে অটোরিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। ফুটপাতের দোকানপাটও নিয়ন্ত্রিত। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী, পুলিশের সহায়তায় রোববার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। বাজার তদারকিও চলছে।’ তবে রোজার শেষ দিন পর্যন্ত যানজটমুক্ত নারায়ণগঞ্জ পেতে নগরবাসীকে আন্তরিক সহায়তা করার আহ্বান জানান তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য নজট ন র য়ণগঞ জ চ ম ব র য নজট ছ ল ব যবস য় য নজট ন প রথম শহর র

এছাড়াও পড়ুন:

কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ

ডাইং কারখানার বর্জ্যে মরছে ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রকাশ্যে এ দূষণ ঘটলেও দেখার কেউ নেই। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ ভুক্তভোগীদের। পরিবেশ কর্মকর্তা চাইছেন সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও নরসিংদী সদর উপজেলায় অন্তত ৬০টি ডাইং কারখানা ব্রহ্মপুত্র দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। নদের তীরে অবস্থিত এসব কারখানায় এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) থাকলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই প্রতিদিন নদে ফেলছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এ নদের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষজন।
অভিযোগ রয়েছে, নদের তীরে অবস্থিত কারখানাগুলো ইটিপি রাখলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ফেলছে। অনেক কারখানায় ইটিপি থাকলেও খরচ কমাতে বেশির ভাগ সময় তা বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া বেশকিছু কারখানার ইটিপি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট হওয়ায় সঠিকভাবে বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হয় না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, নরসিংদী সদর উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় ৫০টি ডাইং কারখানা। আড়াইহাজারে স্পিনিং মিলসহ ডাইং কারখানা রয়েছে অন্তত ১০টি। নরসিংদীর ডাইং কারখানাগুলোর মধ্যে পাঁচদোনা এলাকার আবদুল্লাহ ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ, বাঘহাটা এলাকার ফাইভ অ্যান্ড ফাইভ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, সাজেদা ডাইং, আনোয়ার ডাইং, শতরূপা ডাইং, রুকু ডাইং, মেসার্স একতা ডাইং, কুড়েরপাড় এলাকার ব্রাদার্স টেক্সটাইল, ইভা ডাইং, ভগীরথপুর এলাকার এম এমকে ডাইং, নীলা ডাইং, এইচ এম ডাইং, মা সখিনা টেক্সটাইল, মুক্তাদিন ডাইং, পাঁচদোনা এলাকার তানিয়া ডাইং, সান ফ্লাওয়ার টেক্সটাইল প্রভৃতি।
আড়াইহাজারের কয়েকটি কারখানা হলো– ভাই ভাই স্পিনিং মিলস, ছাবেদ আলী স্পিনিং মিল, রফিকুল ডাইং, দিপু ডাইং ও হাজী হাবিবুর ডাইং।
আড়াইহাজার পৌরসভার চামুরকান্দি এলাকার বাসিন্দা মিয়াজউদ্দিন মিয়া বলেন, দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদটি। দেশীয় জাতের মাছের অভয়াশ্রম এ নদ থেকে মাছ হারিয়ে গেছে।
আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার ইসমাইল হোসেন জানান, রফিকুল ডাইংয়ের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পানির রং কালচে হয়ে গেছে। একই অবস্থা অন্য কারখানাগুলোর। বর্জ্য নদে ফেলার বিষয়ে স্থানীয়রা কথা বলতে গিয়ে উল্টো কারখানা কর্তৃপক্ষের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
রফিকুল ডাইংয়ের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের ইটিপি নেই। ডাইংয়ের পানি তারা নির্দিষ্ট পানির ট্যাংকে রাখেন, সরাসরি নদে ফেলেন না। ট্যাংকে জমানো পানি কোথায় ফেলেন জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের গনেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হাসান শুভর ভাষ্য, কুড়েরপাড় এলাকার ডাইং কারখানাগুলোর রং মেশানো বর্জ্য পরিশোধন না করে ব্রহ্মপুত্রে ফেলায় নদটি এখন মৃতপ্রায়। দূষণের কারণে দুর্গন্ধে এর পারে দাঁড়ানো যায় না। স্থানীয়রা অনেকবার প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল শিলমান্দী ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইভা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড নামে একটি কারখানা থেকে বর্জ্য এসে পড়ছে নদের পানিতে। ভিডিও করতে দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে দেয়।
ইভা ডাইংয়ের ইটিপি ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে তারা প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। অনেক কারখানা সরাসরি নদে বর্জ্য ফেললেও তারা নদ দূষণ করেন না। 
একই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফাতেমা ডাইংসহ ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো থেকেও নদে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে এসব কারখানার কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, নদে বর্জ্য ফেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক বাবু জানান, ব্রহ্মপুত্রে নদে সরাসরি বর্জ্য ফেলছে ডাইংসহ যেসব কারখানা সেসবের অধিকাংশই নরসিংদী জেলার অন্তর্গত। তাই নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নদ দূষণমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, কখনও কখনও কিছু কারখানা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ছেড়ে দেয়। কোন কারখানা নদ দূষণ করছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন তা জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিস চালু হচ্ছে ১০ মাস পর
  • অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে, দুই বন্ধু নিহত
  • আজমির ওসমান বাহিনীর অন্যতম ক্যাডার মাসুম প্রকাশ্যে. আতঙ্ক
  • মে দিবসের সমাবেশকে সফল করতে মহানগর বিএনপির মতবিনিময় সভা 
  • নারায়ণগঞ্জে বালক (অনূর্ধ্ব-১৫) ফুটবল প্রতিযোগিতা ও প্রশিক্ষণের উদ্বোধন
  • নারায়ণগঞ্জে ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে তরুণের মৃত্যু
  • নারায়ণগঞ্জের কদম রসুল সেতুর সংযোগ সড়কের প্রবেশমুখ পুনর্নির্ধারণের দাবিতে স্মারকলিপি
  • জেলা প্রশাসককে ২৪’র শহীদদের স্মারক দিল জামায়াত
  • কমিউনিষ্ট পার্টির হাফিজের বিরুদ্ধে ইসমাইলের সংবাদ সম্মেলন
  • কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ