পুরান ঢাকায় জবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, আহত ৭
Published: 4th, March 2025 GMT
পুরান ঢাকার ধোলাইখাল এলাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছেন বিএনপি নেতাসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। সোমবার (৩ মার্চ) মধ্য রাতে এ হামলায় সাত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
সোমবার রাতে জবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সম্রাটকে মারধর করা হয়। সম্রাটকে ছাড়িয়ে আনতে ঘটনাস্থলে গেলে ইতিহাস বিভাগের ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাবিবকে আটকে রাখেন বিএনপি নেতা শহীদুল হক সহিদ ও তার লোকজন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে স্থানীয়দের হামলায় জবির আরো কয়েক জন শিক্ষার্থী আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সম্রাট ধোলাইখাল এলাকায় একটি মার্কেটের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ভুলক্রমে ঢালাইয়ের ওপরে পা দেন। স্থানীয় লোকজন এসে তাকে ধাক্কা দিলে তিনি প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। এরপর স্থানীয় লোকজন ওই শিক্ষার্থীকে মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তার সহপাঠীদের মোবাইল ফোনে কল দিলে হাবিবসহ কয়েকজন ঘটনাস্থলে আসেন। স্থানীয় লোকজন তাদের ওপরও হামলা চালান এবং হাবিবকে গোয়ালঘাট যুব সংঘ নামে একটি ক্লাবে আটকে রাখেন। ওই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে প্রথমে সালাউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
হাবিবকে উদ্ধার করা জবি শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রায়হান হাসান রাব্বি বলেন, “আমি খবর পেয়ে টিপু সুলতান রোডে আসি। সেখানে টহলে থাকা পুলিশকে নিয়ে গোয়ালঘাট লেনে এসে একটি ক্লাবে অনেক জনের ভিড় দেখে সেখানে যাই। সেখানে হাবিবকে আহত অবস্থায় দেখতে পেয়েছি। আমরা জিজ্ঞেস করলে স্থানীয়রা বলেন, আগে ওকে হাসপাতালে নিয়ে যান। হাবিবকে সালাউদ্দিন মেডিকেল ও পরে ন্যাশনাল মেডিকেলে নেওয়া হয়।”
তিনি আরো বলেন, “আমি ন্যাশনাল মেডিকেলে থাকার সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষার্থী আহত অবস্থায় সেখানে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।”
আহতরা হলেন—ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগ ১৯তম ব্যাচের আবু বকর সিদ্দিক, আইন বিভাগের ১৬তম ব্যাচের আকাশ ও আবু সাঈদ মো.
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের মধ্যে বিএনপি ও যুবদলের লোক ছিলেন। তারা স্থানীয়দের নিয়ে শিক্ষার্থীদের মারধর করেন। হামলাকারীদের অন্যতম শহীদুল হক সহিদ। তিনি ওয়ারি থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং নবাবপুর দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক।
হামলার বিষয়টি ফেসবুকে ছড়ানোর পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী পুরান ঢাকার নবাবপুর এলাকার একটি ক্লাব ভাঙচুর করেন। রাত ১টার দিকে ওয়ারি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। পরে তল্লাশি করলে বিএনপি নেতা শহীদুল হক সহিদকে তার বাসায় পাওয়া যায়নি।
ঢাকা/লিমন/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র ওপর ল কজন ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
সমান কাজ করেও কম মজুরি পান আদিবাসী নারীরা
দিন যায়, আসে নতুন দিন। প্রযুক্তি আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে যায় অনেক কিছুই। শুধু বদল হয় না সমাজের পিছিয়ে পড়া কিছু জনগোষ্ঠীর ভাগ্য। বিশেষ করে, আদিবাসী নারী শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছেন যুগ যুগ ধরে।
সমালোচনার মুখে ও সময়ের প্রয়োজনে অনেক ক্ষেত্রেই লিঙ্গ বৈষম্য কমেছে। নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য দিনে দিনে কমছে। কিন্তু, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাঁওতাল পল্লীর নারী শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন আগের মতোই।
দিনাজপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটামোড় এলাকার সাঁওতাল পল্লী জয়পুর পাড়া। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামটি দেখতে বেশ সুন্দর। নিরিবিলি পরিবেশ, চারদিকে সবুজের সমারোহ। সবুজ ধানক্ষেত আর কিছু দূর পর পর সাঁওতালদের বাড়ি। কোথাও কোথাও উঁচু টিলার মাঝে বড় বড় পুকুর। পুকুর পাড়ে কিছু সাঁওতাল ঘর বেঁধে থাকছেন। পাশের বড় মাঠে খেলা করছে কিছু আদিবাসী শিশু।
আরো পড়ুন:
গাজীপুরে পেশা বদলাচ্ছেন অনেক শ্রমিক
ছোট্ট হাতে সংসারের হাল
পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের কেউ কেউ বাঁশের চটা তুলছেন, কেউ রান্নার জন্য গাছের ডাল কাটছেন। বাড়িতে পালন গরু-ছাগল দেখভাল করছেন পুরুষ ও নারী উভয়ই। নারীদের অধিকাংশই গরু-ছাগল চড়ানোসহ বিভিন্ন কাজে বাড়ির বাইরে। যদিও ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়নি তেমন।
কয়েকজন সাঁওতাল নারীকে কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়। তারদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমরাও পুরুষের মতো জমিতে বীজ বপন, চারা উত্তোলন, রোপণ, সার দেওয়া, নিড়ানি ও ধান কেটে ঘরে তোলা পর্যন্ত সব কাজ করি। কিন্তু, এখনো সেই আগের মতোই মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছি আমরা।”
গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা ইউনিয়নের জয়পুর পাড়া গ্রামের কর্মজীবী সাঁওতাল নারী মমতা হেমব্রম। তিনি বলেন, “পুরুষরা কাজ করে মজুরি পান ৫০০ টাকা আর আমাদেরকে দেওয়া হয় ৪৫০ টাকা। ক্ষেত-খামারের কাজ অনেক কঠিন। পুরুষ-নারী তো সমান কাজ করি। আমরা সমান মজুরি চাই, কিন্তু চাইলেও তো তারা দেন না।”
একই গ্রামের সাবিনা হাসদা। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, “এই অঞ্চলে অধিকাংশ পুরুষ ও নারী ধান-আখ ও মাছ চাষ ও গরু-ছাগল লালনপালন করেন। কাজ একই হলেও আমাদের মজুরি পুরুষের চেয়ে কম। আমরা সমান মজুরি চাই।”
সুরুজ মনি টুডু নামের আরেক নারী বলেন, “আমরা পুরুষের সমান কাজ করি, তাই আমরা এই মে দিবস থেকেই সমান মজুরি চাই। আপনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে সমান মজুরি নিশ্চিত করার দাবি করছি।”
সাপমারা গ্রামের দেলু মারমা বলেন, “আমাদের সব কাজই কৃষিনির্ভর। সে কারণে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের কাজ করতে হয়। তা না হলে সংসার চলে না। আমরাও চাই, পুরুষ এবং নারী যেন সমান মজুরি পান।”
পুকুর পাড়েই বাস করেন অমেদা হাজদা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “সব জায়গায় পুরুষের দাম বেশি, নারীদের দাম কম। সে কারণে তাদের মজুরি বেশি, আমাদের কম। আমাদেরকেও পুরুষের সমান দাম দেবে, সমান মজুরি দেবে, এটাই আমাদের দাবি।”
সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে রাইজিংবিডিকে বলেন, “এই এলাকার অধিকাংশ নারী তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নন। কর্মপরিবেশ, কর্মঘণ্টা বিষয়ে তাদের ধারণাই নেই। অনেকে জানলেও কাজ হারানোর ভয়ে ন্যায্য মজুরির বিষয়ে মুখ খুলতে চান না। সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা সমঅধিকারের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি।”
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গাইবান্ধার সাধারণ সম্পাদক রিকতু প্রসাদ বলেন, “গাইবান্ধার নারীরা আজও মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে, গোবিন্দগঞ্জের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নারীরা। নারী-পুরুষ সবাই শ্রমিক, বৈষম্য করতেই তাদের আলাদা চোখে দেখা হয়। মে দিবসে মুখে যতই বলি না কেন, পুরুষশাসিত সমাজে এখনো পরিবর্তন আসেনি। সমাজ থেকে মজুরি বৈষম্য দূর করার জোর দাবি জানাই।”
বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পী রাইজিংবিডিকে বলেন, সব ক্ষেত্রেই নারীরা অবহেলিত এবং বঞ্চিত। মুখে সবাই নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় উল্টো। সাঁওতাল তথা আদিবাসী নারীদের সমান মজুরি পাওয়া সাংবিধানিক অধিকার। তারা এ দেশেরই নাগরিক। তাদের সমান মজুরি নিশ্চিত করতে করা প্রয়োজন।
ঢাকা/মাসুম/রফিক