অন্তর্বর্তী সরকার গত অক্টোবর মাসে আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীকে প্রধান করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করেছিল। এই কমিশন গঠনের উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছিল, জনপ্রশাসনকে জনমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ করে তোলার লক্ষ্যে সুপারিশ পেশ করা। এ কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তাদের প্রতিবেদন সরকারের কাছে পেশ করে।

এই প্রতিবেদনের পরিসর অনেক ব্যাপক। ১৪টি বিভিন্ন শিরোনামে প্রায় ২০০ সুপারিশ পেশ করেছে, যা মোট ১৭টি অধ্যায়ে বিস্তৃত। প্রতিবেদনটি সুলিখিত ও সুবিন্যস্ত। বাস্তবায়নের সুবিধার্থে সুপারিশগুলোকে প্রাধিকার ভিত্তিতে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি—এই তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের একটি অন্যতম সুপারিশ হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোর পরিবর্তন; এককেন্দ্রিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থা তথা প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা চালু করা। দেশের পুরোনো চারটি বিভাগ যথা ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগ নিয়ে চারটি প্রদেশ এবং রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্রশাসিত একটি ‘ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট’ গঠন।

প্রস্তাব অনুসারে, প্রতিটি প্রদেশের নিজস্ব আইনসভা ও নির্বাহী বিভাগ থাকবে এবং সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বেঞ্চ থাকবে।

কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, স্বরাষ্ট্র ও সীমান্ত নীতি, অর্থ ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা, মুদ্রা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিদেশি বিনিয়োগ, রেলওয়ে, মহাসড়ক, বিমান ও সমুদ্রবন্দর, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, বিজ্ঞান ও পারমাণবিক শক্তি থাকবে। এগুলো ছাড়া অন্য সব বিষয় প্রাদেশিক সরকারের হাতে ন্যস্ত হবে। কোনো কোনো বিষয়ে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার উভয়েরই ভূমিকা থাকবে, যেমন উচ্চশিক্ষা ও স্বাস্থ্যনীতি।

বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা প্রচলিত। হঠাৎ করে শাসনব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন অর্থাৎ এককেন্দ্রিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় রূপান্তর একটি জটিল বিষয়। এর সঙ্গে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিষয় জড়িত। যদিও এই সুপারিশগুলো এখন কেবল প্রস্তাব হিসেবে রয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা এবং জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হবে। তথাপি এই সুপারিশগুলো সংলাপের মূল ভিত্তি এবং ঐক্যমত গঠনের পাথেয় হিসেবে কাজ করবে। তাই এই সুপারিশমালাগুলোর পর্যালোচনা ও বিচার-বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।

প্রথমেই দেখা যাক, যুক্তরাষ্ট্রীয় (ফেডারেলিজম) শাসনব্যবস্থা কী এবং এই শাসনব্যবস্থা কখন কাম্য বা কখন কাম্য নয়। ফেডারেলিজম হলো এমন একটি শাসনব্যবস্থা যেখানে সরকারের মধ্যে বিভিন্ন স্তর বা কাঠামো থাকে এবং বিভিন্ন স্তরের মধ্যে সাংবিধানিকভাবে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক ক্ষমতা সুনির্দিষ্টভাবে ভাগ করা থাকে। একটি হচ্ছে কেন্দ্রীয় বা জাতীয় স্তর অন্যটি হলো প্রাদেশিক বা আঞ্চলিক স্তর। এই শাসনব্যস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে—সরকারের প্রতিটি স্তরে আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের কাঠামো ও প্রতিষ্ঠান থাকে।

ফেডারেলিজমের একটি সুবিধা হচ্ছে এই যে এই ব্যবস্থায় ক্ষমতা বিভিন্ন স্তরে ভাগাভাগি হয় বলে এটা ক্ষমতার অতিরিক্ত ব্যবহারকে কেন্দ্রীভূত করতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, ফেডারেলিজম যদিও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে সহায়ক, তবু এই শাসনব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল। এটি সরকারি নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে জটিল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে এবং বাস্তবায়নের গতি মন্থর করে দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন স্তর কিংবা অঞ্চল বা প্রদেশের মধ্যে সংঘাত ও বিরোধের সৃষ্টি করতে পারে কিংবা বিদ্যমান বিরোধকে আরও তীব্র করে তুলতে পারে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী উইলিয়াম এইচ রাইকার তাঁর ফেডারেলিজম: অরিজিন, অপারেশন, সিগনিফিকেন্স (১৯৬৪) বইয়ে বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন কীভাবে ফেডারেলিজম কখনো কখনো জাতীয় ঐক্য ও সংহতিকে দুর্বল করতে পারে, বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে উৎসাহিত করতে পারে, এমনকি গণতন্ত্রকে অস্থিতিশীল করে তুলতে এবং জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আরেন্ড লিজফার্ট তাঁর প্যাটার্নস অব ডেমোক্রেসি (১৯৯৯) বইয়ে ৩৬টি দেশের সরকারের ধরন, কাঠামো এবং কার্যকারিতা বিচার-বিশ্লেষণ করে ওপরের একই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অ্যান্ডারসন তাঁর ফেডারেলিজম গ্রন্থে বলেন যে ফেডারেলিজম সর্বদা সর্বোত্তম শাসনপদ্ধতি নয় এবং সব দেশের জন্য এই ব্যবস্থা উপযুক্ত নয়, ফেডারেলিজম কিছু দেশের জন্য উপযুক্ত, কিন্তু সবার জন্য নয়। ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, ইতিহাস, ঐতিহ্য, জাতিগত বৈশিষ্ট্য এবং ভৌগোলিক ভিন্নতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার প্রয়োজন হয়ে ওঠে।

ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, ইতিহাস, ঐতিহ্য, জাতিগত বৈশিষ্ট্য এবং ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ একটি সমজাতীয় (হোমোজেনাস) রাষ্ট্র। এরপর সংস্কার কমিশনের ফেডারেলিজম শাসনব্যবস্থা সুপারিশের পেছনের যুক্তি কী?

জনসংস্কার কমিশন এই সুপারিশের পেছনে দুটি যুক্তি দিয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে, ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার সুযোগ হ্রাস করা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে সরকারি সেবার মানোন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা। এ ছাড়া বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশের জনসেবার জন্য যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে।

এখন দেখা যাক, শাসনব্যবস্থার ধরনের সঙ্গে তথা এককেন্দ্রিক বা যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকাব্যবস্থার সঙ্গে গণতন্ত্রের মানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না। যদিও প্রচলিত ধারণায় মনে হয়, ফেডারেল শাসনব্যবস্থা গণতন্ত্রের উন্নয়নে সহায়ক কিন্তু বিভিন্ন দেশের বাস্তব অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে তা প্রতীয়মান হয় না। যেমন নরওয়ে, যুক্তরাজ্য, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ায় এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা প্রচলিত। কিন্তু গণতন্ত্রের মানের সূচকে এই সব দেশ অনেক ওপরে। অন্যদিকে অনেক যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার দেশ যেমন রাশিয়া, নাইজেরিয়া, ভেনেজুয়েলা, পাকিস্তান গণতন্ত্রের সূচকে অনেক পেছনে রয়েছে।

ভেনেজুয়েলা প্রজাতন্ত্রের ২৩টি প্রদেশ এবং রাজ্য সরকার রয়েছে। কিন্তু সাবেক প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজ ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো সেখানে কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচনে কারচুপিসহ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অকার্যকর করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নাইজেরিয়া আরও একটি ফেডারেল প্রজাতন্ত্র, যেখানে ৩৬টি রাজ্য রয়েছে এবং প্রতিটি রাজ্যে রাজ্য সরকার রয়েছে। নাইজেরিয়া প্রায় ৩০ বছর সামরিক ও বেসামরিক কর্তৃত্ববাদী শাসনের অধীনে ছিল।

পাকিস্তান একটি ফেডারেল প্রজাতন্ত্র, যার ৪টি প্রদেশ রয়েছে এবং প্রতিটি প্রদেশের নিজস্ব সরকার রয়েছে। ফেডারেল কাঠামো থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অধীনে ছিল। এখনো পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো সুদূর ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারেনি এবং গণতান্ত্রিক মানের সূচকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

ভারত পৃথিবীর একটি বৃহৎ ফেডারেল রাষ্ট্র, যার ২৮টি রাজ্য এবং প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব সরকার রয়েছে। নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সাল থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর মেয়াদকালে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও গণতন্ত্রের সূচকে ভারত পিছিয়ে পড়েছে। মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষমতা কেন্দ্রীকরণ, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং রাজ্যের স্বায়ত্তশাসন দুর্বল করার অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস কর্তৃক প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, ফেডারিলিজম গণতন্ত্রের পশ্চাদপসরণ রোধে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। ফেডারেল এবং এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রে গণতন্ত্রের পশ্চাদপসরণের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ফেডারেল রাষ্ট্রের মধ্যে ২২ শতাংশ রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণ ঘটেছে। অন্যদিকে এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রের মধ্যে ২০ শতাংশ রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণ ঘটেছে। এই পরিসংখ্যান স্পষ্ট বোঝা যায়, ফেডারেল রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণের হার এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রের তুলনায় বেশি।

বিভিন্ন দেশের বাস্তব অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ক্ষমতা বিকেন্দ্রীভূত হলেও এর সঙ্গে জনসেবার মানের কোনো সরাসরি সম্পর্ক পাওয়া যায় না। উদাহরণ হিসেবে নাইজেরিয়া, ব্রাজিল ও ভারতের কথা উল্লেখ করা যায়। এই তিনটি দেশে ফেডারেল শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান। কিন্তু জনসেবার মান অনুন্নত। আমলাতান্ত্রিক দক্ষতা নিম্ন এবং দুর্নীতিও ব্যাপক। অন্যদিকে ফ্রান্স, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা থাকলেও জনসেবার মান উন্নত, দুর্নীতি অনেক কম এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নপ্রক্রিয়া দ্রুত।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স—এ দুটি উন্নত দেশে রাষ্ট্রীয় সেবার তুলনামূলক পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র ফ্রান্সের জনসেবার মান উন্নত। যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে অনেক মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত, সেখানে ফ্রান্সের জনগণ তুলনামূলক কম খরচে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। একইভাবে ফ্রান্সের গণপরিবহনব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক জনমুখী; জনগণ অল্প খরচে বিভিন্ন গণপরিবহনের সুযোগ পাচ্ছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মতো জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও কেন্দ্র এবং রাষ্ট্রীয় সরকারের সমন্বয়হীনতার জন্য যুক্তরাষ্ট্র কাঙ্ক্ষিত জনসেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। যেমন ধরা যাক, হারিকেন ক্যাটরিনা ঘূর্ণিঝড় ব্যবস্থাপনার বিষয়টি। মার্কিন সিনেটের ২০০৬ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেডারেল, রাজ্য এবং স্থানীয় সরকারগুলোর মধ্যে সময়মতো সমন্বয়ের অভাবে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে বিলম্ব হয়। এর ফলে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

সরকারি কার্যকারিতা সূচক, জনসেবার মান, বেসামরিক পরিষেবার দক্ষতা এবং নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কার্যকারিতা মূল্যায়ন করে ২০২৩ সালের সরকারি কার্যকারিতা সূচকে দেখা যায়, এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র সিঙ্গাপুর, ডেনমার্ক, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, জাপান, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারি কার্যকারিতার সূচকে অনেক যুক্তরাষ্ট্রীয় রাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। সংস্কার কমিশন যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সমর্থনে নেপালের উদাহরণ তুলে ধরলেও বাংলাদেশ সরকারি কার্যকারিতার দিক থেকে নেপালের ওপরে আছে।

কমিশন বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের কাছে জনসেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থার প্রবর্তনের যুক্তি তুলে ধরেছেন। কিন্তু চীন ও ইন্দোনেশিয়ার জনসংখ্যা বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি এবং জনসেবার মানও অনেক দেশের চেয়ে ভালো। জাপান, ফ্রান্স, ভিয়েতনামের জনসংখ্যাও বেশি এবং এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থার মাধ্যমে ভালো মানের জনসেবা প্রদান করছে। কাজেই জনবহুল রাষ্ট্র বলে বাংলাদেশকে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থায় যেতে হবে, কমিশনের এই যুক্তিটি যথার্থ নয়।  

বাংলাদেশের সংবিধানে একক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত রয়েছে, যা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ। কমিশন এককেন্দ্রিক থেকে প্রাদেশিক সরকারব্যবস্থা চালু করার মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে। সংবিধানের মৌলিক কাঠামো তত্ত্ব অনুযায়ী, এই সুপারিশ বাস্তবায়নের এখতিয়ার বাংলাদেশের আইনসভা বা জাতীয় সংসদের নেই। এর বাস্তবায়নপ্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল, যা জনগণের সরাসরি সম্মতি ছাড়া সম্ভব নয়।

 বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা থেকে এটা স্পষ্ট, ফেডারেল রাষ্ট্রব্যবস্থার সঙ্গে গণতন্ত্রের মান বা সরকারি সেবার মানের কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই। শুধু যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা গ্রহণ করলেই দেশের গণতন্ত্রের মান উন্নত হবে বা সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে—এই সরলীকৃত ধারণা বাস্তবসম্মত নয়। এককেন্দ্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয়—উভয় শাসনব্যবস্থারই কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে।

ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, জাতিগত বৈশিষ্ট্য ও ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ একটি সমজাতীয় রাষ্ট্র। শুধু যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা গ্রহণ করলেই দেশের গণতন্ত্রের মান উন্নত হবে বা সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে—এই সরলীকৃত ধারণা বাস্তবসম্মত নয়।

এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থায় রূপান্তর একটি জটিল ও বহুমাত্রিক প্রক্রিয়া এবং এর নানা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, ভৌগোলিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক তাৎপর্য রয়েছে। এই প্রশাসনিক বিভাজন সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানসিক বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে, যা দেশের স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করতে পারে এবং দেশের নিরাপত্তাকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে। এসব বিষয় যথাযথভাবে মূল্যায়ন না করে দেশকে চারটি প্রদেশে বিভক্ত করার প্রস্তাব সুবিবেচনাপ্রসূত বলে মনে হয় না।

গোলাম রসুল অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস, অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, ঢাকা। এবং সাবেক সরকারি কর্মকর্তা

[email protected]

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: একক ন দ র ক র ষ ট র য় শ সনব যবস থ র গণতন ত র র ম ন ক শ সনব যবস থ র ষ ট রব জ ঞ ন গণত ন ত র ক প ক ন দ র করণ জনস ব র ম ন এই স প র শ ব যবস থ য় ব যবস থ র র জন ত ক য় সরক র ক সরক র সরক র র র জন য ন ইজ র র জনস র একট ক ষমত র গণত গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

কোনও মহামানবকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মানুষ আন্দোলন করেনি: আমির খসরু

কোনও মহামানবকে বাংলাদেশের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য দেশের মানুষ আন্দোলন-সংগ্রাম করেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

সোমবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, কোনও মহামানব কোনও দেশের গণতন্ত্রের সমাধান দেবে তার জন্য দেশের জনগণকে অপেক্ষা করতে হবে, এটা বিশ্বাস করার কারণ নেই।

এদিন বিকেল সাড়ে ৩টায় ন্যাপ ভাসানীর সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক উপস্থিত উপস্থিত ছিলেন।

পরে বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে আমজনতার দলের সঙ্গে বৈঠকে করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। আমজনতার দলের আহ্বায়ক কর্নেল অব. মিয়া মশিউজ্জামানের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে বাংলাদেশ পিপলস পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির নেতারা।

বিএনপির পক্ষে বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন।

আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আমির খসরু বলেন, মানুষ বলতে কারা? আমার বুঝতে একটু অসুবিধা হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি, যারা জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করছে। যারা রাজনৈতিক দল হিসেবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাস্তায় লড়াই করেছে, আমাদের সঙ্গে যারা রাস্তায় ছিল, ইতোমধ্যে প্রায় ৫০টি দল, পরিষ্কারভাবে ব্যক্ত করেছে ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচনের জন্য।

তিনি আরও বলেন, সংস্কারের জন্য যে কথাগুলো বলা হয়, সংস্কারের ব্যাপারে যেখানে ঐকমত্য হবে- সেই সংস্কারগুলো দ্রুত করে নির্বাচন কমিশনকে বলা হোক, নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করে রোডম্যাপ দিয়ে ভোটের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। তো জনগণ বলতে কারা? 

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এখন জনগণ বলতে যদি কোনও একটি বিশেষ গোষ্ঠী, সুবিধাভোগী- যারা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে গিয়ে, জনগণের ভোটাধিকারের বিরুদ্ধে গিয়ে গণতন্ত্রকে সংস্কারের মুখোমুখি করছে! এটা তো কারও বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কারণ নেই। ১৬ বছরের যুদ্ধটা ছিল গণতন্ত্রের জন্য, দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য, জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে আনার জন্য। যে সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে, তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। সেটা যে সরকারই হোক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘মিয়ানমারকে মানবিক করিডোর দেওয়া স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে সংকট’
  • মিয়ানমারকে মানবিক করিডর দেওয়ার অধিকার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই: সিপিবি
  • সাবেক বিচারপতি খায়রুল হককে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ 
  • কোনো মহামানবকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মানুষ আন্দোলন করেনি: আমীর খসরু
  • কোনও মহামানবকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মানুষ আন্দোলন করেনি: আমীর খসরু
  • কোনও মহামানবকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মানুষ আন্দোলন করেনি: আমির খসরু
  • জনগণ গণতন্ত্রের জন‍্য রক্ত দিয়েছে, কোনো মহামানবের প্রতিষ্ঠার জন্য নয়: আমীর খসরু
  • নতুন কর্মসূচি দিল যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রদল