নির্বাচনে ‘ইসলামপন্থীদের একটি বাক্স’ দিতে একমত দুই দল
Published: 8th, March 2025 GMT
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ‘ইসলামপন্থীদের একটি বাক্স’ দেওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এ বিষয়ে কৌশল নির্ধারণে অন্য সমমনা ইসলামী সংগঠনগুলোর সঙ্গে কার্যকর আলোচনার জন্য উভয় দল আন্তরিকভাবে চেষ্টা করবে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কার্যালয়ে দুই দলের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। আজ শনিবার ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সভায় বর্তমান দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় উভয় দল ইসলাম, দেশ ও মানবতার কল্যাণে এবং দেশপ্রেমিক গণমানুষের প্রত্যাশা বাস্তবায়নে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের একটি বাক্স দেওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছে।’
সভায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, সহসভাপতি মাওলানা আবদুল কুদ্দুস কাসেমী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমদ, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফিন্দী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া ও মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর বয়স ন্যূনতম ২৩ করার প্রস্তাব গণ অধিকার পরিষদের
জাতীয় সংসদের মেয়াদ চার বছর ও সংসদ সদস্য নির্বাচনে প্রার্থীর বয়স ২৫ বছরের পরিবর্তে ন্যূনতম ২৩ বছর নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে গণ অধিকার পরিষদ।
আজ সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে গণ অধিকার পরিষদের এই অবস্থানের কথা জানান দলটির সভাপতি নুরুল হক। সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
নুরুল হক বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিবাদের সময় বাংলাদেশের জনগণ নিষ্পেষিত ছিল। গত ৫৩ বছরের বাস্তবতায় এখন আমাদের রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। ইতিহাসে এমন বিরল পরিস্থিতি আর তৈরি হয়নি। রাজনৈতিক ঐকমত্য গঠন করে এই সংস্কারকে দীর্ঘস্থায়ী করতে হবে।’
এর আগে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের দেওয়া ১৬৬টি সুপারিশের মধ্যে ১২৭টির সঙ্গে একমত থাকলেও আজকের আলোচনার পর গণ অধিকার পরিষদ নতুন আটটি প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়েছে। এ ছাড়া সাতটি প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত ও ২৩টির সঙ্গে আংশিক একমত হওয়ার কথা জানিয়েছে দলটি।
মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস যথেষ্ট নয় দাবি করে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, একজন সন্তানের লালন–পালনের জন্য নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়ানোর পাশাপাশি দুই বছর পর্যন্ত তাঁর অফিস সময় অর্ধেক করার প্রস্তাব দিয়েছে গণ অধিকার পরিষদ। সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়ায় সংসদের দুই–তৃতীয়াংশ সদস্যের মতামতের পাশাপাশি গণভোটের আয়োজন করারও প্রস্তাব জানায় দলটি।
নুরুল হক বলেন, রাষ্ট্রের সংবিধানের সঙ্গে সাধারণ জনগণের আকাঙ্ক্ষা জড়িয়ে থাকে। সব সংশোধনী নয়, কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের আয়োজন জরুরি। সেই ধারাগুলোও সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে।
সংবিধানের ৭০ নম্বর অনুচ্ছেদের ক্ষেত্রে গণ অধিকারের অবস্থান হলো, সংবিধান সংশোধন, অর্থ বিল ও আস্থা ভোট ছাড়া অন্য বিষয়গুলোয় সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে অর্থাৎ দলের বিরুদ্ধেও ভোট দিতে পারবেন।
জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) নাম পরিবর্তন করে জাতীয় সাংবিধানিক পরিষদ করার প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। নুরুল হক বলেন, বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে একটি নাম সাবলীল নয়। আর এনসিসি গঠনের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও তিন বাহিনীর প্রধানের পাশাপাশি পুলিশপ্রধানকেও যুক্ত করা জরুরি।
রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি হলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করার প্রস্তাব জানায় দলটি।
ছাত্রসংগঠন ও শ্রমিক সংগঠন কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করতে পারবে না, ঐকমত্য কমিশনের এমন প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে গণ অধিকার পরিষদ। নুরুল হক বলেন, ‘আমরা কমিশনকে জানিয়েছি, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনের পাশাপাশি পেশাজীবী সংগঠনকেও রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি থেকে মুক্ত করতে বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে। পাশাপাশি কোনো পেশাজীবী সংগঠনের এমন সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হলে শাস্তির বিধান রাখতে মতামত দিয়েছি।’
সম্প্রতি গণহারে নতুন নতুন রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব হচ্ছে দাবি করে নুরুল হক বলেন, একটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন পেতে হলে অন্তত তিন থেকে চার বছর সক্রিয় কার্যক্রমে যুক্ত থাকার বাধ্যবাধকতা রাখতে হবে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে আলোচনায় অংশ নেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, সাবেক বিচারপতি এমদাদুল হক ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।
বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের নতুন অধ্যায়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন হয়েছে।
সম্মিলিতভাবে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, তাঁদের লক্ষ্য দ্রুত একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা।
সংস্কার প্রশ্নে সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, শুধু আলোচনার মধ্য দিয়েই সংস্কার বাস্তবায়ন হবে না। সবার একত্র থাকার তাগিদ সব সময় জারি রাখতে হবে।
আলোচনায় অংশ নেওয়া গণ অধিকার পরিষদের ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলে রয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, সিনিয়র সহসভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র ফারুক হাসান, গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর সদস্য খালিদ হোসেন, হাবিবুর রহমান রিজু, সাকিব হোসেন, দপ্তর সম্পাদক শাকিলুজ্জামান, মানবাধিকারবিষয়ক সহসম্পাদক ফাতেমা দিশা, যুব উইংয়ের সদস্য মুমতাজুল ইসলাম ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ।