মসজিদের আংশিক কাজ করে তুলে নিয়েছে ৩ কোটি টাকা
Published: 13th, March 2025 GMT
ঢাকার ধামরাইয়ে একটি মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের পুরো টাকা তুলে নিলেও আংশিক কাজ করার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। ঢাকা জেলা পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন তহবিল থেকে সাত দফায় প্রায় ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও ৫০ শতাংশ কাজও হয়নি। কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে বিল-ভাউচারের মাধ্যমে ঠিকাদার টাকা উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫ আগস্টের পর কাজ বন্ধ থাকায় এবং অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগ ওঠায় নির্মাণ শেষ হওয়া নিয়েও সংশয় রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুস সামাদ, ছানোয়ার হোসেন ও লোকমান হোসেনের ভাষ্য, চার বছর আগে মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু শেষ হচ্ছে না। তাদের প্রশ্ন, বরাদ্দকৃত এত টাকা গেল কোথায়? মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘শুনেছি মসজিদের নামে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এক থেকে দেড় কোটি টাকার কাজ হয়েছে।’
জেলা পরিষদ কার্যালয় থেকে জানা গেছে, বার্ষিক উন্নয়ন তহবিল থেকে চারটি অর্থবছরে ১০টি প্রকল্পের মাধ্যমে ধামরাইয়ের সাবেক এমপি বেনজীর আহমদের নিজ গ্রাম বৈন্যায় ৩ কোটি ২৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪৭৫ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে গ্রামের জামে মসজিদ উন্নয়ন প্রকল্পে ২ কোটি ৮৬ লাখ ১৮ হাজার ৪৭৫, পশ্চিমপাড়া পুকুরের ঘাটলা নির্মাণ প্রকল্পে ১৩ লাখ, মসজিদ থেকে নাট মন্দির পর্যন্ত রাস্তার উন্নয়নে ১৬ লাখ ৬৭ হাজার ও স্ট্রিট লাইটের উন্নয়নে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল।
মসজিদ উন্নয়নের জন্য সাতটি প্রকল্পে সাতবার অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। একটি প্রকল্পের কাজই শুরু হয়নি। বাকি ছয়টির আংশিক কাজ করে কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে বিল-ভাউচারের মাধ্যমে ঠিকাদার টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মসজিদ উন্নয়নের নামে দরপত্রের মাধ্যমে জেলা পরিষদ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫০ লাখ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫০ লাখ ও ২৫ লাখ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪৯ লাখ ও ৪৩ লাখ ২৮ হাজার ৪৭৫, ২২-২৩ অর্থবছরে ৪৮ লাখ ৯০ হাজার ও ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
সাতটি প্রকল্পে মোট ২ কোটি ৮৬ লাখ ১৮ হাজার ৪৭৫ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ টাকা দিয়ে মসজিদের ভবন নির্মাণ, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করার কথা রয়েছে। কিন্তু চার বছরে কাজ হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ। এর আগে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ লাখ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ লাখসহ ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। এরপরও নির্মাণ শেষ হয়নি। ছয়টি প্রকল্পের ঠিকাদার টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন।
সম্প্রতি সরেজমিন জানা গেছে, ৯৫ ফুট দৈর্ঘ্য ৬৫ ফুট প্রস্থের মসজিদের তিনতলা ভবনের ফাউন্ডেশন দেওয়া হয়েছে। একতলার ছাদ ঢালাই এবং সীমানাপ্রাচীর ও লোহার গ্রিল দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও এমপি বেনজীর আহমদ এবং জেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান।
মসজিদ নির্মাণের সাতটি প্রকল্পের ঠিকাদারদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে। এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আল তামিম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘৫ আগস্টের পর জেলা পরিষদের অনেক কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে বিধায় কাজ নাও করতে পারি।’ বাকি ছয় প্রকল্পের ঠিকাদারেরা বলেছেন, মসজিদের কাজ করেই বিল উত্তোলন করেছেন।
জেলা পরিষদের উচ্চমান সহকারী শেখ মাসুদ পারভেজের ভাষ্য, ‘আমি এ কার্যালয়ে যোগদানের আগেই প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন ঠিকাদারেরা।’ স্ট্রিট লাইটের জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। সরেজমিন দেখা যায়, শুধু সাবেক এমপি বেনজীর আহমদ ও তাঁর তিন ভাইয়ের বাড়ির সড়কে স্ট্রিট লাইট লাগানো হয়েছে।
জেলা পরিষদের উপসহকারী প্রকৌশলী (ধামরাইয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে তদারকি করা হয়েছে। কোনো অনিয়ম হয়নি। বিল উত্তোলনের বিষয়ে আমার কোনো যোগসাজশ নেই।’
প্রকল্পগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন ইউএনও মামনুন আহমেদ অনীক। তাঁর ভাষ্য, ‘বরাদ্দকৃত টাকার তুলনায় তেমন কোনো কাজই হয়নি।’ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোয়াজ্জম হোসাইন বলেন, ‘আগে যারা দায়িত্বে ছিলেন, তারা চক্রের মাধ্যমে প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এসব প্রকল্প তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: মসজ দ প রকল প র মসজ দ র ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
বালু ব্যবসার নামে প্রতারণা কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা
নবীগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর এক বালু ব্যবসায়ীর (ঠিকাদার) বিরুদ্ধে ব্যবসায়িক অংশীদারের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগকারীরা বলছেন, তাদের কয়েক কোটি টাকা ঠকিয়ে এখন লাপাত্তা এক সময়ের সহযোগী মতিউর রহমান নামের ওই বালু ব্যবসায়ী।
অভিযোগকারীরা জানান, মতিউর তাঁর লাইসেন্স ব্যবহার করে বালু উত্তোলন করে বিক্রির কথা বলে প্রতারণার ফাঁদ পাতেন, যা অন্যরা বুঝতে পারেননি। কথা ছিল সেই লাইসেন্সে বালু উত্তোলনের পর তা বিক্রি করে ভাগের টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হবে অংশীদারদের। এই কথায় তিনি বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কোটি টাকা আদায় করলেও তাদের টাকা বুঝিয়ে না দিয়ে এখন গা-ঢাকা দিয়েছেন। এ নিয়ে সর্বত্র আলোচনা চলছে।
জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার হিড়িক পড়েছে। নদীর বালু তোলা নিয়ে চলছে নানা রকম প্রতারণা। তেমনি একটি প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন স্থানীয় কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী। তাদের প্রায় দুই কোটি টাকা বেহাত হয়েছে মা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মতিউর রহমানের কারণে। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মতিউর রহমান কুশিয়ারা নদীর বালুর অনুমতি পেয়েছেন বলে এলাকার প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রচার করেন। পরে তিনি শেয়ার বিক্রির কথা জানান দেন। যার ভিত্তিতে ১৬টি শেয়ার তিনি বিক্রি করবেন বলে জানান। তিনি এ বিষয়ে প্রথমে যোগাযোগ করেন শেরপুর মুক্তানগর রিসোর্টের মালিক জাবেদ রনি আহমদের সঙ্গে।
আলোচনার পর জাবেদ রনি ও তাঁর বন্ধু ইমরান আহমদের কাছে থেকে ব্যাংক একাউন্ডের মাধ্যমে এক কোটি ২৯ লাখ টাকা নেন মতিউর। এর বিপরীতে কোনো লাভ বা শেয়ার না দেওয়ায় তারা সিলেট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, মামলায় আসামি মতিউর রহমান, বাদী ইমরান আহমদ ও ১ নম্বর সাক্ষী জাবেদ রনি আহমদের নাম উল্লেখ করেছেন। মতিউর রহমান কুশিয়ারা নদীর বালু উত্তোলনের জন্য জগন্নাথপুর উপজেলার অন্তর্গত খানপুর মৌজার ১ নম্বর খতিয়ানে জমি লিজ নেওয়ার কথা জানান এবং সেখান থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি পেয়েছেন বলে অনুমতিপত্র দেখান। তবে বালু উত্তোলনের জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হবে। তাই ১৬টি শেয়ার (প্রতিটি শেয়ারের বাজার মূল্য ৩০ লাখ টাকা) বিক্রি করবেন। তখন বাদী ইমরান ও ১ নম্বর সাক্ষী জাবেদ রনি আহমদ আসামির কাছ থেকে চারটি শেয়ার ক্রয় করলে আলোচনা সাপেক্ষে ইমরান আহমদ ও ১ নম্বর সাক্ষী জাবেদ রনিকে প্রতিটি শেয়ারের মূল্য বাবদ পাঁচ লাখ টাকা ছাড় দেন এবং চারটি শেয়ারের দাম একত্রে এক কোটি টাকা নির্ধারণ করেন। সে মোতাবেক ২০২৪ সালের ৮ জানুয়ারি ৪ নম্বর সাক্ষীর বাড়িতে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে নগদ তিন লাখ টাকা আসামিকে দেওয়া হয়। যা আসামির ব্যবসায়িক প্যাডে করা চুক্তিপত্রে উল্লেখ রয়েছে।
পরবর্তী সময়ে বাকি ৯৭ লাখ টাকা বাদী ও ১ নম্বর সাক্ষী পরিশোধ করার পর আসামি মতিউরের সঙ্গে ৩০০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র সম্পাদন করতে সম্মত হন এবং চুক্তির শর্তমতে ব্যবসার লভ্যাংশ প্রতি মাস শেষে হিসাব করে চারটি শেয়ারের বিপরীতে ১৬ অংশ বাদী ও ১ নম্বর সাক্ষীকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আসামি নিজে ও তাঁর লোক মারফত ব্যাংকের মাধ্যমে ও নগদে সর্বমোট এক কোটি ২৯ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। যাতে বাদী ও ১ নম্বর সাক্ষীর চারটি শেয়ার বাবদ এক কোটি টাকা এবং অন্যান্য শেয়ারহোল্ডারদের ২৯ লাখ টাকা। কয়েক মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও ব্যবসার মাসিক হিসাব সম্পর্কে আসামি মতিউর অংশীজনের কোনো হিসাব বুঝিয়ে দেননি। একপর্যায়ে মতিউর রহমান গা-ঢাকা দেন।
ইমরান আহমদ চৌধুরী জানান, বালু ব্যবসায়ী মতিউর প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে এখন আত্মগোপনে রয়েছে। তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
রনি আহমদ বলেন, কয়েক বন্ধু মিলে এক কোটি ২৯ লাখ টাকা তাঁকে দিয়েছেন। এ ছাড়া নগদে আরও ৫০ লাখ টাকা বিভিন্নজনের কাছে থেকে তাঁকে সংগ্রহ করে দিয়েছেন। সে নারায়ণগঞ্জের একজন ব্যবসায়ীর কাছে থেকে আর ৩০ লাখ টাকা নিয়েছে যার চুক্তিনামার সাক্ষীও তিনি।
অভিযোগ ও মামলার ব্যাপারে জানতে মা এন্টারপ্রাইজের মতিউর রহমানের মোবাইল ফোন নাম্বারে একাধিকবার কল করেও সাড়া মেলিনি।