“ব্যস্ততার মধ্যেও বন্ধুত্বের টানে ছুটে আসে ওরা”
Published: 21st, March 2025 GMT
জীবনের কঠিন বাস্তবতায় গিয়াসউদ্দিন ইসলামিক মডেল স্কুলের এসএসসি ২০১৫ ব্যাচের সবাইকে বিচ্ছিন্ন হতে হলেও বিচ্ছিন্ন হয়নি তাদের বন্ধুত্বের হৃদয়ের টান। পেশাগত কারণে একেকজন আজ একেক স্থানে থাকলেও এখনো বন্ধুত্ব রয়েছে আগের মতোই।
তাই তো শত ব্যস্ততার মধ্যেও স্কুলজীবনের গল্পগুলো আবারও ফিরে পেতে, মজার স্মৃতিগুলো স্মরণ করতে প্রতিবছর একত্রিত হয় ওরা।
শুক্রবার (২১ মার্চ) সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল আবাসিক এলাকার স্কাই ফ্লাই হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে আয়োজন করা হয় এক ইফতার মাহফিলের। এসএসসি ব্যাচ-১৫ এর দিদারুল ইসলাম ও শরীফুল ইসলাম তনয়ের উদ্যোগে এ আয়োজন করা হয়। এর আগে গিয়াসউদ্দিন ইসলামিক মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সকল শিক্ষক-শিক্ষিক্ষার সুস্বাস্থ্য এবং মঙ্গলকামনা করে দোয়া করা হয়।
আয়োজকরা বলেন, বন্ধুদের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধন সবসময় সুদৃঢ় রাখতেই প্রতি বছর আমরা এই আয়োজন করে থাকি। নানান ব্যস্ততার মধ্যেও অধিকাংশই এ মিলনমেলায় অংশ নেন। এসময় উপস্থিত সবাই বিদ্যালয় জীবনের নানা স্মৃতিচারণ করার পাশাপাশি বিপদ-আপদে সবসময় এভাবে একত্রিত থাকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোন।
এসএসসি'১৫ ব্যাচের শরীফুল ইসলাম সাজিদ বলেন, আমার কাছে স্কুল জীবনটাই সেরা। বছরে একদিন ইফতারে আমরা সব বন্ধুরা একত্রিত হই। যার কারণে এই দিনটা আমার কাছে অন্যতম বিশেষ এক দিন।
নুরসাত খায়ের মিনার বলেন, একটা সময় স্কুলের বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গেই সময় বেশি কাটতো। যেই স্মৃতি আজও তাড়া করে বেড়ায়। কিন্তু জীবনের বাস্তবতায় একেকজন আজ একেক জায়গায়। তবুও বছরের এই একটা দিন সকল কাজ ফেলে রেখে এই মিলনমেলায় একত্রিত হই।
বদরুল আলম বলেন, প্রতিবছর ঈদের আগমূহুর্তে এই মিলনমেলা আমাদের ঈদের আনন্দটাকে সবসময় বাড়িয়ে দেয়। ইনশাল্লাহ যে কয়দিন বেঁচে আছি ততোদিন এই মিলনমেলায় অংশগ্রহণ করে যাবো।
আব্দুল্লাহ আল মফিজ বলেন, অনেক ব্যস্ততার মাঝেও বছরের একটা দিন আমরা স্কুল বন্ধুরা একসাথে হই। আজ স্কুলের বন্ধুদের সাথে ইফতার করে আমি ভীষণ উচ্ছ¡সিত। তবে আমাদের ব্যাচের সবাই উপস্থিত হতে পারলে আরও বেশি ভালো লাগতো।
এসময় এসএসসি-২০১৫ ব্যাচের আরও উপস্থিত ছিলেন নেওয়াজ শরীফ সাদী, শহীদুল ইসলাম, সবুজ মিয়া, সিফাতুল্লাহ খান, রাশেদুল ইসলাম রাজু, রিয়াজুল হাসান, এমদাদ, শাকিল আহম্মেদ, নাদিম, আলি সাকিব, মামুন, নাজমুস শাকিল, আমিনুল ইসলাম সাগর, রাফিউজ্জামান, দেলোয়ার, সোহান, ফাহিম, অনিক, তৌকির, হাবিব ওমর ও আজিজুল হাকিম বিজয়।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ বন ধ ত ব র একত র ত ল ইসল ম ম লনম ল জ বন র র বন ধ
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’
এবারের বাবা দিবস আমার কাছে একটু অন্যরকম। চারপাশ যেন কিছুটা বেশি নিস্তব্ধ, হৃদয়ের ভেতর যেন একটু বেশি শূন্যতা। কারণ এবার প্রথমবারের মতো আমার আব্বাকে ছাড়াই কাটছে দিনটি। আব্বা চলে গেছেন গত জানুয়ারিতে। ফলে বাবা দিবস এখন আর কেবল উদযাপনের দিন নয়– এটি হয়ে উঠেছে স্মরণ, অনুধাবন ও আমার জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উপলক্ষ। আব্বা না থেকেও আছেন, তবে এক ভিন্ন অনুভবে– আমার নীরব নিঃশব্দ অভিভাবক হয়ে।
আমাদের সমাজে কিংবা বলা যায় পারিবারিক সংস্কৃতির বাবারা সবসময় প্রকাশের ভাষায় ভালোবাসা বোঝান না। তাদের স্নেহ, দায়িত্ববোধ ও নিবেদন অনেক সময়েই নীরব থাকে, তবে গভীরভাবে অনুভব করা যায়। আমার আব্বাও ছিলেন তেমনই একজন। আব্বা ছিলেন আমার দিকনির্দেশক, আমার রক্ষাকবচ, আমার জীবনপথের চুপচাপ ভরসা।
আব্বার অ্যাজমা ছিল, তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতেন, আমাদের প্রতিও ছিল তাঁর সজাগ দৃষ্টি। আমি কিংবা আমার মেয়ে সামান্য অসুস্থ হলেই তিনি অস্থির হয়ে যেতেন। তাঁর যখন ৭৯ বছর বয়স, তখনও আমি ডাক্তারের কাছে একা যেতে গেলে বলতেন, ‘তুমি একা যাবে কেন? আমি যাচ্ছি।’ এই কথা বলার মানুষটাকে প্রতি পদে পদে আমার মনে পড়ে, যেন দূর থেকে দেখছেন সবই। আর আমিও তাঁর কনুই-আঙুল ধরে হেঁটে যাচ্ছি জীবনের পথে।
আব্বা ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ধার্মিক মানুষ। শৈশব থেকে নামাজের গুরুত্ব তিনি আমার মধ্যে গভীরভাবে বপন করার চেষ্টা করে গেছেন। কখনও নরম সুরে, আবার কখনও খুব জোর গলায়। তখন মনে হতো তিনি চাপ দিচ্ছেন; কিন্তু এখন তাঁর অনুপস্থিতির নিস্তব্ধতায় আমি সেই কণ্ঠস্বরের জন্য আকুল হই।
অফিস থেকে ফিরতে দেরি করলে কিংবা আত্মীয়ের বা বন্ধুর বাসায় গেলে বাবার ফোন আসত, ‘কোথায়? কখন ফিরবি?’ সেসব ফোন একসময় মনে হতো আব্বার বাড়াবাড়ি। এখন মনে হয়, একটাবার হলেও যদি ফোনে তাঁর নামটা দেখতাম! ছোট ছোট এসব প্রশ্ন– এই উদ্বেগই তো ছিল নিঃশব্দ ভালোবাসা। এগুলোই ছিল বাবার নিজের মতো করে যত্ন নেওয়ার ভাষা। সেই ভাষাটাই আজ আর শোনা যায় না। আব্বা নেই, এখন জীবনযাপনে এক অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে থাকে।
আব্বা ছিলেন একজন ব্যাংকার। হয়তো চেয়েছিলেন আমি তাঁর পেশার ধারাবাহিকতা বজায় রাখি। কিন্তু কোনোদিন চাপ দেননি। বরং নিজের ইচ্ছেমতো পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন; ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। আব্বাই আমাকে নিজের ওপর আস্থা রাখতে শিখিয়েছেন। বিয়ে করেছি, বাবা হয়েছি, নিজস্ব ক্যারিয়ার গড়েছি– তবুও বাবার সেই গাইডেন্স কখনও ফুরায়নি। আব্বা কখনও অর্থ বা অন্য কোনো সহায়তার কথা বলেননি; বরং সবসময় নিজে থেকেই পাশে থেকেছেন। মনে পড়ে, একবার মেয়ের অসুস্থতার সময় আমি অর্থকষ্টে ছিলাম, কিছু বলিনি তাঁকে। কিন্তু তিনি ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন, পাশে থেকেছেন।
এখন অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মনে হয়, ‘বাবা হলে কী করতেন?’ তাঁর শিক্ষা, অভ্যাস, স্নেহ– সবকিছু এখন আমার আচরণে, আমার সিদ্ধান্তে, আমার ভালোবাসায় প্রতিফলিত হয়। তাঁকে ছুঁতে না পারলেও আমি প্রতিদিন তাঁর উপস্থিতি অনুভব করি– স্মৃতিতে, নৈঃশব্দ্যে, নানা রকম ছোট ছোট মুহূর্তে।
এই বাবা দিবসে আব্বার কোনো ফোন আসবে না, থাকবে না কোনো উপহার বা আলিঙ্গনের মুহূর্ত; যা আছে সেটি হলো আব্বার প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা আর অপার ভালোবাসা। যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সন্তানদের শুধু দিয়েছেন, বিনিময়ে কিছু চাননি কখনোই। তাঁর জীবনদর্শন আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি– এগুলোই নিজের জীবনে ধারণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি, হয়তো পুরোপুরি পারছি না; কিন্তু আমার মনে হয় এ চেষ্টাটাই আমার জীবনে শৃঙ্খলা এনেছে।
বাবাকে হারানোর শোক যেমন গভীর, তেমনি গভীর তাঁর রেখে যাওয়া ভালোবাসা। নিজের অনুভবকে চাপা না দিয়ে, বরং বাবাকে নিজের ভেতরে জায়গা দিন। বাবার কথা বলুন, তাঁর শেখানো পথে হাঁটুন। কারণ প্রিয় মানুষরা চলে যান বটে, কিন্তু তাঁদের ভালোবাসা থেকে যায় সবসময়।
লেখক: কমিউনিকেশনস প্রফেশনাল