এক সময়ে ছবিযুক্ত ভোটার আইডি কার্ড ছিল বড় রাজনৈতিক দাবি। ২০০৭ সালে আবির্ভূত ‘এক-এগারো’ সরকারের অন্যতম বড় কাজ ছিল ছবিযুক্ত ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করা। ভোটার তালিকা করা যেহেতু নির্বাচন কমিশনের বিষয়, স্বাভাবিকভাবেই ছবিযুক্ত ভোটার আইডি কার্ড হয়ে গেল নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত। 

ভোটার আইডি কার্ড তৈরির কাজে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করতে এক-এগারোর সরকার সেনাবাহিনীকে নিয়োগ করে। ফলে সফলভাবে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগেই ভোটার আইডি কার্ড প্রস্তুত হয়ে যায়। এই সাফল্য নির্বাচন কমিশনকে অধিকতর উৎসাহী করে তোলে এবং ২০১০ সালের ৩ নম্বর আইনের সহায়তায় ছবিযুক্ত ভোটার আইডি কার্ডকে জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) রূপান্তরিত করে। ভোটার আইডি কার্ডের ধারাবাহিকতায় জাতীয় পরিচয়পত্রেরও অভিভাবক হয়ে পড়ে নির্বাচন কমিশন। লজিং মাস্টারের ঘরজামাই হওয়ার মতো!

ভোটার আইডি কার্ড শুধু ভোট প্রদানের জন্য প্রযোজ্য হলেও জাতীয় পরিচয়পত্র আইনানুগভাবে ১.

নাগরিক অধিকার ও সুবিধাদি, ২. জাতীয় পরিচয়, ৩. ড্রাইভিং লাইসেন্স, ৪. মোটরযান রেজিস্ট্রেশন, ৫. পাসপোর্ট, ৬. জমি ক্রয়-বিক্রয়, ৭. ব্যাংক হিসাব খোলা, ৮. ব্যাংক ঋণ গ্রহণ, ৯. টিন নম্বর, ১০. মোবাইল সিম ক্রয়, ১১. সরকারি অনুদান ও ভাতাপ্রাপ্তি এবং ১২. চাকরির আবেদন করতে ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়। অবশ্য প্রথম দুটি দফার আলোকে জুতা সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ– সর্বত্র জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যবহার বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে।
যা হোক, প্রশ্ন উঠতে থাকে, নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্রের অভিভাবক হতে পারে কিনা! 

জাতীয় পরিচয়পত্রকে নির্বাচন কমিশন থেকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়ার জন্য ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন-২০২৩’ জারি করা হয়। কোনো কোনো গোষ্ঠীর প্রবল আপত্তির ফলে ব্যবস্থাপনাটি স্থানান্তর হওয়ার আগেই সরকারের পতন ঘটে। গত ১৬ জানুয়ারি আইনটি বাতিল হয়ে গেছে। জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন এবং পাসপোর্ট পরিষেবা নিয়ে ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন (কমিশন) ২০২৫’ নামে পৃথক কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে জাতীয় পরিচয়পত্রের ঘরজামাই অবস্থানের পরিবর্তে নিজস্ব ঘরবসতির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য নির্বাচন কমিশন আগের অবস্থানেই অনড়; জাতীয় পরিচয়পত্রের অভিভাবকত্ব ‘ইজ্জত কা সওয়াল’ হয়ে উঠেছে। 

একজন নির্বাচন কমিশনার ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে রাজশাহীতে এক মতবিনিময় সভায় বলেছিলেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৮ থেকে ২৪ লাখ মৃত ব্যক্তির নাম ভোটার তালিকায় ছিল। তিনি বলেছিলেন, সেই নামগুলো বাদ যাবে। রাজনীতিক নন, খোদ নির্বাচন কমিশনার উচ্চারিত এমন বক্তব্য স্বাভাবিকভাবেই অনেক গুরুত্ব পেয়েছিল। 
২০২৪ সালের ৪ জানুয়ারি তৎকালীন নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৯ জন। আবার চলতি বছর ২ মার্চ জাতীয় ভোটার দিবসে ঘোষিত তালিকায় ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪ জন। দুই সময়ের মধ্যে ভোটার সংখ্যার ফারাক ৪০ লাখ ৪২ হাজার ৯৮৫ জন। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ হলেও ভোটার বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়। গত বছরের সংখ্যার ১ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধিতে ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা ১৭ লাখ ৯৫ হাজার ৩৩৯ জন। অর্থাৎ বর্তমানে ঘোষিত নতুন ভোটার সংখ্যার প্রায় কাছাকাছি। তাহলে কি ১৮ থেকে ২৪ লাখ কথিত মৃত ভোটার তালিকায় রয়েই গেছে? 

জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে না থাকলে খুব সহজেই মৃত ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যেত। কিন্তু নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিল না করে মৃত ভোটারকে বাদ দিতে পারে না। জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন ২০১০-এর ধারা ১০ অনুসারে ‘কোনো নাগরিকের নাগরিকত্ব অবসান হইলে তাহার জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত জাতীয় পরিচয়পত্রে প্রদত্ত জাতীয় পরিচিতি নম্বর অন্য কোনো নাগরিকের বরাবরে প্রদত্ত জাতীয় পরিচয়পত্রে ব্যবহার করা যাইবে না।’ কিন্তু একজন নাগরিকের মৃত্যুর পরও সম্পত্তির বাটোয়ারা, সন্তানদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়নসহ নানান কাজে মৃত ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যবহার এড়ানো সম্ভব নয়। ফলে মৃত ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র চাইলেই বাতিল করা যায় না। সে কারণেই বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মৃত ব্যক্তিদের ভোটার তালিকায় থাকা স্বাভাবিক এবং সংখ্যাটি উত্তরোত্তর বৃদ্ধিও পেতে পারে।

একইভাবে একজন নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্রে উল্লিখিত নির্বাচনী এলাকার ভোটার হন। পরে তিনি অন্য কোনো নির্বাচনী এলাকায় স্থানান্তরিত হলে জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা পরির্বতন না করা পর্যন্ত পুরোনো এলাকার ভোটার থাকেন। এই ঠিকানা পরিবর্তনের দায় ব্যক্তির। অনেক সময়ই ব্যক্তির এমন গড়িমসির কারণে কোনো কোনো নির্বাচনী এলাকায় প্রকৃত ভোটারের সংখ্যায় তারতম্য ঘটে থাকে। অথচ জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকা প্রণয়ন– দুটি পৃথক কর্তৃত্বের আওতায় থাকলে নির্বাচন কমিশন নির্দ্বিধায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে পারবে। আবার ভোটারও জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে ভোট দেবেন। 

নির্বাচন কমিশন হয়তো গত ১৮ বছরের অভিভাবকত্বের অভ্যাসজনিত কারণে জাতীয় পরিচয়পত্রকে হাতছাড়া করতে আগ্রহী নয়। জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য। এই তথ্যভান্ডার পরিষেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা সমীচীন নয়। যে যুক্তিতে জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে থাকতে পারে না, সেই একই যুক্তিতে পাসপোর্ট বা অন্য পরিষেবাও জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে একই ছাতার নিচে থাকতে পারে না।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ‘জাতীয় নাগরিক ডেটা কমিশন’ নামে একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন সংবিধিবদ্ধ কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছে। তাতে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন তথ্য ব্যবস্থাপনা এবং ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স অর্থাৎ জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে, বিয়েবিচ্ছেদ ইত্যাদি কার্যক্রমের নিবন্ধন সম্পন্ন করা হবে। আবার পাসপোর্ট পরিষেবাকে নবগঠিত কমিশনের আওতায় আগ বাড়িয়ে আনতে গেলে তা আরেকটি হযবরল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে বাধ্য। 
মোটা কথা, জাতীয় নাগরিক ডেটা কমিশন গঠন করা হোক। এর এখতিয়ারে থাকুক জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধনসহ ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স। জাতীয় পরিচয়পত্র পাক নিজস্ব বসতঘর। পাসপোর্ট পরিষেবাকে টানাহ্যাঁচড়া না করাই ভালো।

আকম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী: অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র এখত য় র ব যবহ র পর ষ ব সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএসসি প্রোগ্রাম, জেএসসি ছাড়াও ভর্তি

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপেন স্কুল পরিচালিত এসএসসি প্রোগ্রামের মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান শাখায় ২০২৬-২০২৭ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ভর্তির যোগ্যতা জেএসসি পাস হতে হবে। জেএসসি ছাড়াদের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

ভর্তির দরকারি তারিখ—

১. অনলাইনে ভর্তি এবং আবেদনের তারিখ শেষ তারিখ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৬।

২. অষ্টম শ্রেণি বা সমমানের সনদবিহীন ভর্তি-ইচ্ছুকদের ভর্তি পরীক্ষা : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৬।

৩. ওরিয়েন্টেশন ও টিউটোরিয়াল ক্লাস শুরু : ১৫ মে ২০২৬।

ভর্তির যোগ্যতা—

১. জেএসসি বা জেডিসি বা অষ্টম শ্রেণি বা সরকার স্বীকৃত সমমানের পরীক্ষায় পাস বা উত্তীর্ণ হতে হবে। (ভর্তির তারিখ ০২/১১/২০২৫ থেকে ৩১/০১/২০২৬)।

২. সরাসরি অনলাইন ভর্তির জন্য: osapsnew.bou.ac.bd

ভর্তির যোগ্যতা(জেএসসি ছাড়া) —

১. যেসব শিক্ষার্থীর জেএসসি বা জেডিসি বা অষ্টম শ্রেণি বা সরকার স্বীকৃত সমমানের সনদপত্র নেই তারাও ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন, এ ক্ষেত্রে বয়স হতে হবে ন্যূনতম ১৪ বছর (৩১/১২/২০২৫ তারিখে)।

২. এসব আবেদনকারীকে যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য বাউবি কর্তৃক নির্ধারিত ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

৩. এ জন্য ভর্তির প্রাথমিক আবেদন ফরম ফি বাবদ ৩০০ টাকা দিতে হবে।

৪. ভর্তি পরীক্ষার বিষয়, মানবণ্টন, তারিখ ও পরীক্ষা কেন্দ্র এবং প্রক্রিয়ার বিস্তারিত তথ্য বাউবি’র ওয়েবসাইট, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্র এবং স্টাডি সেন্টার থেকে পাওয়া যাবে। (অনলাইনে আবেদনের তারিখ ০২/১১/২০২৫ থেকে ৩১/০১/২০২৬)।

প্রয়োজনীয় কাগজ যা লাগবে—

১. দুই কপি ছবি।

২. জেএসসি বা জেডিসি বা অষ্টম শ্রেণি বা সরকার স্বীকৃত সমমানের পরীক্ষায় পাস বা উত্তীর্ণের সনদ।

৩. জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদের সত্যায়িত ফটোকপি।

ভর্তি ও অন্যান্য ফি—

অনলাইন আবেদন ফি: ১০০ টাকা,

রেজিস্ট্রেশন ফি : ১০০ টাকা,

কোর্স ফি (প্রতি কোর্স ৫২৫ টাকা): ৩৬৭৫ টাকা,

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আবশ্যিক) ব্যবহারিক ফি: ১০০ টাকা,

একাডেমিক ক্যালেন্ডার ফি:৫ টাকা,

ডিজিটাল আইডি কার্ড ফি: ২০০ টাকা,

পরীক্ষা ফি (প্রতি কোর্স ৫০ টাকা) : ৩৫০ টাকা,

প্রথম বর্ষ নম্বরপত্র ফি : ৭০ টাকা,

মোট আবেদন ফি: ৪৬৯৬ টাকা।

বিজ্ঞান শাখার জন্য দুটি ব্যবহারিক কোর্সের জন্য অতিরিক্ত ২০০ টাকা জমা দিতে হবে।

দরকারি তথ্য—

১. অষ্টম শ্রেণি বা সমমান পাসের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর নাম, পিতা ও মাতার নাম এবং জন্ম তারিখ ইত্যাদি প্রদত্ত সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী একই রকম হতে হবে।

২. জেএসসি বা জেডিসি পাসের ক্ষেত্রে জেএসসি বা জেডিসি সনদ অনুযায়ী হতে হবে। ২০২০ সাল কিংবা তার পরবর্তীতে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অষ্টম শ্রেণি পাশ সনদে বা প্রমাণকে বোর্ড কর্তৃক ইস্যুকৃত রেজিস্ট্রেশন নম্বর উল্লেখ থাকতে হবে। সনদবিহীনদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ অনুযায়ী হতে হবে।

৩. তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষার্থীরা কোর্স ফির শতকরা ৬০ ভাগ ছাড় পাবেন।

# বিস্তারিত তথ্যের জন্য ওয়েবসাইট

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএসসি প্রোগ্রাম, জেএসসি ছাড়াও ভর্তি
  • সঞ্চয়পত্র কেনার পর যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকবেন
  • সঞ্চয়পত্র জালিয়াতির ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ১
  • সঞ্চয়পত্রে জালিয়াতির ঘটনায় ছাত্রদল নেতার নাম