আসামে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাংকে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে গ্রেপ্তার সাংবাদিক, প্রতিবাদে বিক্ষোভ
Published: 29th, March 2025 GMT
আসাম কো-অপারেটিভ অ্যাপেক্স ব্যাংকে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হওয়া সাংবাদিক দিলওয়ার হোসেন মজুমদার গত বৃহস্পতিবার গুয়াহাটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও আরেকটি মামলায় পুলিশ তাঁকে আবার গ্রেপ্তার করেছে। তাঁকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গৌহাটির কেন্দ্রে পল্টন বাজার থানার সামনে গতকাল শুক্রবার রাতভর মৌন বিক্ষোভ করেছেন সতীর্থ সাংবাদিকরা।
ভারতের বিভিন্ন প্রেসক্লাবের তরফে মজুমদারকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, বিবৃতি দিয়েছেন ভারতের একাধিক সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক নেতাও।
আসাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা অবশ্য বলেছেন, ‘দিলওয়ার সাংবাদিক নন। কেউ যদি লিখে দেয়, দিলওয়ার হোসেন মজুমদার সাংবাদিক, তাহলে তাঁকে এক্ষুনি ছেড়ে দেওয়া হবে।’
হিমন্তের বক্তব্য, দিলওয়ার ডাম্পারের ব্যবসা করেন। পোর্টালের কোনো সাংবাদিককেই তাঁরা পরিচয়পত্র দেন না। পোর্টালকে এখনো সাংবাদিকতা বলে বিবেচনা করা হয় না।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, অ্যাপেক্স ব্যাংক নিয়ে ব্যবস্থাপকের সঙ্গে দিলওয়ারের কোনো কথা হয়নি। তবে ব্যক্তিগত কাজে বা ঋণ চাইতে তিনি ব্যাঙ্কে গিয়েছিলেন কি না সেটা জানতে সাংবাদিকেরা ব্যাংকে গিয়ে কথা বলতে পারেন। দিলওয়ারের বিরুদ্ধে এখন ব্যাংকের নথিপত্র হাতানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।
গৌহাটির অন্যান্য সাংবাদিক অবশ্য দিলওয়ার সম্পর্কে অন্য কথা বলেছেন। তাঁদের বক্তব্য, দিলওয়ার সংবাদভিত্তিক পোর্টাল ‘দ্য ক্রসকারেন্টে’–এর প্রধান প্রতিবেদক। তিনি গত মঙ্গলবার অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছে কিছু প্রশ্ন রেখেছিলেন।
দিলওয়ারের সতীর্থ সাংবাদিকেরা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা আসাম কো-অপারেটিভ অ্যাপেক্স ব্যাংকের একজন পরিচালক এবং ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিধায়ক বিশ্বজিৎ ফুকনের এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান। ওই ব্যাংকের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সেই অভিযোগের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি।
আসামের সাবেক সংসদ সদস্য ও কংগ্রেস নেতা আবদুল খালেকও এই গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি সামাজিকমাধ্যমে লিখেছেন, আসামের মুখ্যমন্ত্রী এখন বিচারক হয়ে উঠেছেন। কে সাংবাদিক, আর কে সাংবাদিক নন—সেটা তিনিই এখন ঠিক করে দিচ্ছেন। গুয়াহাটি প্রেসক্লাব, প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া বা যেকোনো মিডিয়া সংস্থাকে সাংবাদিক নির্ধারণ করতে গেলে এখন হিমন্ত বিশ্বশর্মার সম্মতি নিতে হবে। এটা গণতন্ত্রের জন্য একটি মারাত্মক প্রবণতা।
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার আন্তর্জাতিক সূচকে ভারত ক্রমে নিচে নামছে। প্রেস ফ্রিডম (সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা) বিষয়ক আন্তর্জাতিক সূচকে ভারতের অবস্থান ২০২২ সালে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৪২ নম্বরে ছিল। ২০২৩ সালে ১৯ ধাপ নেমে ১৬১ নম্বরে গিয়ে ঠেকেছে। এরপরে সামান্য উন্নতি হয়। ২০২৪ সালে ভারত ১৬১ থেকে ১৫৯ নম্বরে উঠে এসেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম খ যমন ত র দ লওয় র হ মন ত মন ত র দ লওয
এছাড়াও পড়ুন:
মাগুরায় শিশু ধর্ষণ-হত্যা মামলায় সাক্ষ্য ৩ চিকিৎসকের
মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় চতুর্থ দিনের মতো সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বুধবার জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
এ দিন শিশুকে চিকিৎসা প্রদানকারী তিন চিকিৎসক সাক্ষ্য দেন। তারা হলেন– মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের ডা. সোহাস হালদার, নাকিবা সুলতানা এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. ইসরাত জাহান। তারা সবাই শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছিল মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করেন।
এর আগে সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মামলার ৪ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। বাদীপক্ষের আইনজীবী ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি মনিরুল ইসলাম মুকুল জানান, বিগত চার কার্যদিবস একটানা সাক্ষ্য গ্রহণ চলেছে। এ নিয়ে মোট ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। মামলায় মোট ৩৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হবে। আগামী রোববার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাদে অন্য সব সাক্ষী সাক্ষ্য দেবেন। বুধবার আসামিপক্ষের আইনজীবী স্বাধীনভাবে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। তিনি আদালতে আসামিরা নির্দোষ বলে যুক্তি উপস্থাপন করেন। আসামিরাও নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন।
বেড়াতে এসে ৬ মার্চ রাতে মাগুরা সদরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুর হিটু শেখের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয় ৮ বছরের শিশুটি। এই ধর্ষণের ঘটনা দেশজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে ঢাকা সিএমএইচে তাকে ভর্তি করা হয়েছিল। ১৩ মার্চ শিশুটি সেখানে মারা যায়। এ ঘটনায় শিশুটির মা আয়েশা আক্তার বড় মেয়ের শ্বশুর হিটু শেখসহ চারজনকে আসামি করে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেন। রিমান্ডে হিটু শেখ ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে।