সবার জন্য নিয়ে আসুক সুখ ও সমৃদ্ধি
Published: 30th, March 2025 GMT
দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর পবিত্র ঈদুল ফিতর সমাগত। এটি মুসলমানদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব, যার মাধ্যমে কেবল একটি ধর্মীয় অধিকার পূর্ণ হয় না, বরং এটি মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি ও ঐক্য গড়ার একটি উপায় হিসেবে কাজ করে। ঈদ উত্সবের মধ্যে সবার জন্য রয়েছে আনন্দের এক সমান অনুভূতি, ধনী-নির্ধননির্বিশেষে।
বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও ঈদুল ফিতর উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দের সঙ্গে উদ্যাপিত হয়। ঈদের সকালে মুসলমানরা একত্র হয়ে ঈদগাহে নামাজ আদায় করেন, যেখানে একে অপরকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। তারপর প্রতিটি ঘরে ঘরে ফিরনি-পায়েসের আয়োজন হয়, যা সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ এবং ঐক্যের বন্ধন আরও দৃঢ় করে।
ঈদের সময়ে শহর ছেড়ে বিপুলসংখ্যক মানুষ গ্রামে ছুটে যান তাঁদের প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে। আবার অনেকে নিজেদের পছন্দের স্থানগুলোতে ঘুরতে যান। এ সময়ে একত্রে অনেক মানুষ যাত্রা করায় সড়ক, নৌপথ ও ট্রেনে ব্যাপক ভিড় লক্ষ করা যায়। অনেকেই ইতিমধ্যে ঢাকা ছেড়ে গন্তব্যে রওনা হয়েছেন।
প্রতিবছর ঈদের ছুটির শুরুতে যাতায়াতের চাপ বেড়ে যায় এবং শেষ মুহূর্তে তা জনভোগান্তির কারণ হয়। তবে এবারের ঈদ অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন। এবারের ঈদের আগে সঠিক সময়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে এবং বাস-লঞ্চের সেবা আগের তুলনায় অনেক শৃঙ্খলাপূর্ণ ছিল। এর ফলে ঈদযাত্রায় রেলস্টেশন বা বাস টার্মিনালে অস্বাভাবিক ভিড় এবং ব্যাপক জনভোগান্তি লক্ষ করা যায়নি। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে, যা সরকারের জন্য একটি প্রশংসনীয় কৃতিত্ব। শেষ পর্যন্ত সবার যাত্রা যাতে নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে আশা করি।
এ বছর আমরা ঈদ উদ্যাপন করছি এমন এক সময়ে, যখন গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন চলছে এবং সেখানে নারী-শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। বিশ্বজনমত উপেক্ষা করে এখনো সেখানে হত্যাযজ্ঞ চলছে। গাজার মুসলমানদের জন্য এবার ঈদটি একটি দুঃখজনক বাস্তবতার মধ্যে উদ্যাপিত হবে। আমরা গাজার প্রতি গভীর সহমর্মিতা প্রকাশ করছি এবং বিশ্বের সব শান্তিপ্রিয় মানুষের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি।
অন্যদিকে গত শুক্রবার মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে ভূমিকম্পে বিপর্যয় নেমে এসেছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। এসব শোকাবহ ঘটনার খবর ঈদের আনন্দের ওপর এক বিষাদ ছায়া ফেলেছে। আমরা এসব অঞ্চলের মানুষের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
প্রতিবছর ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাপক সম্প্রসারিত হয়। ধনী-গরিব সবাই সাধ্যমতো নতুন জামাকাপড় কেনেন। সে জন্য ঈদের আগে মার্কেট ও শপিং মলগুলোতে ব্যাপক জমজমাট দৃশ্য দেখা যায়। তবে দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, অন্যান্য দেশে যেখানে উৎসব বা ধর্মীয় পার্বণে পণ্যের দাম কমানো হয়, সেখানে আমাদের দেশে বিপরীত ঘটনা ঘটে। ঈদের সময়ে ব্যবসায়ীরা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে দেন।
ঈদুল ফিতর যে আনন্দের বার্তা নিয়ে এসেছে, তা যেন সমাজের সব স্তরের মানুষের জীবনে অর্থবহ হয়ে ওঠে। ঈদের আনন্দের সঙ্গে মানুষের জীবনে সবার জন্য তৌফিক অর্জিত হোক, এমনটাই আমাদের কামনা। ঈদ আমাদের সমাজে সামষ্টিক জীবনে সম্প্রীতি ও শুভবোধের চর্চা উজ্জীবিত করুক এবং মানুষের মধ্যে বৈষম্য দূর করুক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
ঈদ সবার জীবনে অনাবিল আনন্দ নিয়ে আসুক এবং সবার জন্য ঈদের শুভেচ্ছা ও আনন্দের বার্তা বয়ে আনুক। সবাইকে ঈদ মোবারক।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আনন দ র আম দ র সব র জ ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।