বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আসলাম চৌধুরী আট বছর পর নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিজ এলাকা সীতাকুণ্ডে এবার ঈদ উদ্‌যাপন করবেন। এ জন্য উচ্ছ্বসিত কর্মীরাও। আর কর্মীদের আপ্যায়নের জন্য রয়েছে মেজবানি মাংস, পরোটা, মিষ্টি ও সেমাই। আজ রোববার চাঁদ দেখা গেলে কাল সোমবার ঈদ।

শুধু আসলাম চৌধুরী নন, চট্টগ্রাম বিএনপির সব নেতার বাসা কিংবা গ্রামের বাড়িতে কর্মীদের আপ্যায়নের জন্য থাকবে মেজবানি মাংস, পরোটা, জর্দা ভাত, সেমাই ও মিষ্টি। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে আগামী ডিসেম্বর কিংবা জুনে। সেই হিসেবে এবারের ঈদটা নেতা-কর্মীদের নিয়ে নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় উদ্‌যাপন করবেন মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির নেতারা। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সময় ১৬ বছর ‘গায়েবি’ মামলায় বেশির ভাগ নেতা-কর্মীর কারাগারে কেটেছে ঈদ। এবার স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঈদ উদ্‌যাপন করতে পারবে বলে খুশি তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীরা।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আসলাম চৌধুরী জুলাই-আগস্ট ছাত্র–জনতার আন্দোলনের পর গত বছরের ২০ আগস্ট জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পান। তাঁর বিরুদ্ধে ৭৬টি মামলা হয় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। ২০১৬ সালের ১৫ মে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে আসলাম চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে আট বছর কারাগারের চার দেয়ালের ভেতর ঈদ করেছেন আসলাম চৌধুরী। এবার তিন নিজ সংসদীয় এলাকা সীতাকুণ্ডে ঈদ করবেন। এবার নেতার সঙ্গে ঈদ করতে পেরে খুশি কর্মীরাও। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ–আপ্যায়ন সম্পাদক মামুনুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, এত বছর নেতাকে কাছে পাইনি। নিজেরাও পুলিশি গ্রেপ্তার এড়াতে ঈদ উদ্‌যাপন করেছি আত্মগোপনে থেকে। এবার মন খুলে প্রিয় নেতার সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপন করব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও তাঁর নগরের মেহেদীবাগের বাসায় ঈদের দিন সকাল থেকে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী মো.

সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, মেজবানি মাংস, পরোটা, জর্দা ভাত, সেমাই ও মিষ্টি থাকবে আপ্যায়নের জন্য। মেজবানের জন্য পাঁচটি গরু জবাই হবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেনও এবার নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঈদ উদ্‌যাপন করবেন। ২০২১ সালে গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তিনি ঈদ করেছিলেন কারাগারে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ৮৮টি। ঈদের দিন সকাল ১০টা থেকে নগরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন মেয়র। পরদিন একটি কমিউনিটি সেন্টারে মেজবানের ব্যবস্থা করেছেন। মেয়রের একান্ত সহকারী মারুফ উল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের দিন ও পরের দিন নেতা–কর্মীদের মেজবানি মাংস, সেমাই দিয়ে আপ্যায়নের ব্যবস্থা রয়েছে।

গ্রামের বাড়ি হাটহাজারীর মীরেরহাটে নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঈদ করবেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন নেতা-কর্মীদের সেমাই, মাংস ও পরোটা দিয়ে আপ্যায়ন করা হবে। পরদিন আমি প্রতিটি ইউনিয়নে নেতা–কর্মীদের ঘরে ঘরে যাব শুভেচ্ছা জানাতে।’ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক, উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য শাকিলা ফারজানাও হাটহাজারীতে নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঈদ উদ্‌যাপন করবেন।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মেহেদীবাগের বাসায় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও আপ্যায়নের জন্য টাঙানো হয়েছে শামিয়ানা। আজ দুপুরে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ম দ র ন য় আসল ম চ ধ র কর ম দ র স ঈদ র দ ন ন র জন য ব এনপ র ন করব ন কর ম র

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ

বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।

এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।

৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।

এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্‌ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।

কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ