মানুষ বলছে, সব দলের শাসন দেখা হয়েছে, বাকি শুধু ইসলামি শাসন দেখার: গোলাম পরওয়ার
Published: 15th, June 2025 GMT
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আপনারা বিগত ৫৪ বছরে বিভিন্ন দলের শাসন দেখেছেন। সেখানে জনগণের কাঙ্ক্ষিত কল্যাণ সাধিত হয়নি। বিগত সরকারগুলো হত্যা, লুটপাট, দুর্নীতি, অন্যায়, অত্যাচার, অবিচারের মাধ্যমে দেশকে একটি অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। দেশের মানুষ এখন বলতে শুরু করেছে, সব দলের শাসন দেখা হয়েছে, শুধু বাকি রয়েছে ইসলামি শাসন দেখার। তাই তো আমিরে জামায়াত শফিকুর রহমান একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের ডাক দিয়েছেন। একটি জনমুখী ও কল্যাণকর রাষ্ট্রের রূপরেখা ঘোষণা করেছেন। যেখানে লুটপাট-দুর্নীতির মাধ্যমে দেশ তলাবিহীন ঝুড়ি হবে না, বেকারত্বের অভিশাপ কোনো যুবককে বয়ে বেড়াতে হবে না, সকল বৈষম্য দূর হবে। মানুষ সত্যিকার একটি কল্যাণরাষ্ট্র দেখতে পাবে।’
আজ রোববার সকালে পবিত্র হজ পালন শেষে মিয়া গোলাম পরওয়ার নিজ বাড়িতে আসার পথে খুলনার সিকিরহাট, ফুলতলা বাজার ও শিরোমনি শহীদ মিনার চত্বরে স্থানীয় জামায়াত আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরের কথা অনুযায়ী হয়তো আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন হতে পারে। জামায়াতে ইসলামী একটি নির্বাচনমুখী দল। মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীক দাড়িপাল্লা ফিরিয়ে দিয়েছে। সুতরাং আগামী নির্বাচনে দাড়িপাল্লা প্রতীকের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টির জন্য এখন থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
সকাল ১০টায় ফুলতলা ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মফিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সিকিরহাট খেয়াঘাট চত্বরে, সকাল সাড়ে ১০টায় ফুলতলা উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবদুল আলীম মোল্যার সভাপতিত্বে ফুলতলা বাসস্ট্যান্ড চত্বরে ও খানজাহান আলী থানা জামায়াতের আমির সৈয়দ হাসান মাহমুদের সভাপতিত্বে শিরোমনি শহীদ মিনার চত্বরে অনুষ্ঠিত পৃথক পৃথক পথসভা হয়। এসব পথসভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মিয়া গোলাম কুদ্দুস, জেলা অফিস সেক্রেটারি আশরাফুল ইসলাম, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য শেখ সিরাজুল ইসলাম, জেলা যুব বিভাগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা আল মুজাহিদ, জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি ইউসুফ ফকির প্রমুখ।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মনে করেন, কল্যাণকর ও জনমুখী রাষ্ট্র নির্মাণ করতে হলে সৎ মানুষের প্রয়োজন। জামায়াত নির্বাচিত হলে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কী কী করা হবে, বক্তব্যে সেসব তিনি তুলে ধরেন।
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৫ আসনে জামায়াতে ইসলামীর সংসদ সদস্য ছিলেন গোলাম পরওয়ার। বক্তব্যে নিজের সংসদীয় এলাকায় ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বর্ণনাও তুলে ধরেন তিনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ ল ম পরওয় র ইসল ম র কল য ণ ফ লতল
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি-জামায়াত দেশকে অন্য এক সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে অনৈক্যের সুর দেখতে পাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেছেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, ‘এই বিভেদ এবং অনৈক্য উসকে দিয়েছে বাংলাদেশের একটি বড় পার্টি, সেটা হলো বিএনপি। অভ্যুত্থানের পরে যদি ইতিহাসে লেখা থাকে, প্রথম কোন দল বাংলাদেশে অনৈক্য জন্ম দিয়েছে? সেটা হলো বিএনপি।’ একে ‘অসুস্থ রাজনৈতিক চর্চা’ উল্লেখ করে এখান থেকে সরে আসতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
‘জুলাই সনদের বাস্তবায়ন এবং জাতীয় নির্বাচন কোন পথে’ শীর্ষক সেমিনারে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এ কথাগুলো বলেন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে এ সেমিনারের আয়োজন করে দলের যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তি।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘জামায়াত প্রশ্ন নিয়ে এসেছে, লোয়ার হাউসে (নিম্নকক্ষে) পিআর; বিএনপি প্রশ্ন নিয়ে এসেছে, নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত); এগুলো নিয়ে তারা সরকারের সাথে বার্গেইন (দর–কষাকষি) করতে চায়—কোথায় ডিসি নিয়োগ দিবে, কোথায় এসপি নিয়োগ দিবে? জাতি যখন সংকটে, এই দুই দল বাংলাদেশকে অন্য একটা সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’
গণভোটের প্রসঙ্গ তুলে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘হ্যাঁ’ জয়যুক্ত হলে এটি বাংলাদেশের জনগণের বিজয় হবে। তিনি বলেন, ‘এটা তো জামায়াতে ইসলামীর জয় হবে না। এ জন্য আমরা জামায়াতে ইসলামীর কাছে আহ্বান রাখব, ভণ্ডামি বাদ দেন আপনারা। ভণ্ডামি বাদ দিয়ে অন্তরে কী আছে, একটু খুলে বলেন।’
অসুস্থ রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান
নোট অব ডিসেন্টের (ভিন্নমত) বিষয়ে বিএনপির বক্তব্যের সমালোচনা করে এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘নোট অব ডিসেন্টের বিষয়ে সালাহউদ্দিন সাহেব (সালাহউদ্দিন আহমদ) বলেছেন, কমিশনে যে নোট অব ডিসেন্টগুলো দিয়েছে, আমি সেগুলোকে বলব, “নোট অব ডিসেন্ট” নয় “নোট অব চিটিং”। ঠিক এই “নোট অব চিটিং”য়ের মাধ্যমে তারা পুরো বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের সাথে প্রতারণা করতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই প্রতারণাটা বাংলাদেশের তরুণ ছাত্র–জনতার কাছে ধরা পড়েছে।’
বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে ‘ভেটো’ দিয়েছে উল্লেখ করে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘অথচ তারা (বিএনপি) একটা সময় এটা চেয়েছিল।’
সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) নিরপেক্ষ হওয়ার প্রস্তাবে বিএনপির ভিন্নমতের সমালোচনা করেন নাসীরুদ্দীন। নিরপেক্ষ পিএসসি ও দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) গঠনের দাবি জানান তিনি।
জাতীয় পার্টি সম্পর্কে বিএনপিকে অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে উল্লেখ করে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘এই কুসুম কুসুম প্রেম আপনারা আওয়ামী লীগের সাথে দিয়েছিলেন। এখন জাতীয় পার্টির সাথে দিচ্ছেন, জাতীয় পার্টি সম্পর্কে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, “‘নোট অব চিটিং” বাংলাদেশের মানুষ কখনো মেনে নেয়নি, ভবিষ্যতেও নিবে না। এবং এই “নোট অব চিটিং”য়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বিএনপি যে ধরনের অসুস্থতা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে, আমরা তাদেরকে আহ্বান জানাব যে আপনারা এই সব কার্যক্রম থেকে সরে আসুন। নতুনভাবে বাংলাদেশের মধ্যে রাজনীতি করুন।’
‘নিম্নকক্ষে পিআর জামায়াতের ভণ্ডামি’
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘বাংলাদেশে জামায়াত একটা “বাইট” দেওয়ার চেষ্টা করছে যে তারা খুব সংস্কারের পক্ষে। কিন্তু বিএনপি খারাপ হলেও একদিকে ভালো যে তারা যে সংস্কারের বিপক্ষে, এটা জনগণের সামনে সরাসরি বলে। আর জামায়াত হলো এমন যে মনে বলে সংস্কারের বিপক্ষে; মুখে তারা বলে সংস্কারের পক্ষে। আমরা এখনো সুপারিশমালার কোনো সমাধান করতে পারি...তারা নতুন করে মার্কেটে নিয়ে এসেছে গণভোট হবে।’
জামায়াতে ইসলামীকে সঠিক জায়গায় কথা বলার আহ্বান জানিয়ে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘সঠিক জায়গায় কথা বলুন, বেজাগায় কথা বলিয়েন না। ’৭১–এ আপনারা (জামায়াতে ইসলামী) উল্টাপাল্টা কাজ করেছিলেন, ’২৪–এ এসে এখন উল্টাপাল্টা কাজ শুরু করেছেন। এ জন্য জামায়াতে ইসলামীকে আমরা বলব, গণভোট নিয়ে জনগণের আতঙ্ক সৃষ্টি না করে, সংস্কারের জন্য নোট অব ডিসেন্টের প্রক্রিয়াগুলো কীভাবে সমাধানে পৌঁছতে পারি, আদেশটা কীভাবে জারি করা যায়?... সে বিষয়ে আপনার দাবি তোলা উচিত। আমরা এনসিপির পক্ষ থেকে মনে করি, জামায়াত যে দাবিগুলো তুলছে, লোয়ার হাউসের পিআর...এগুলো হলো জামায়াতের ভণ্ডামি, এগুলো হলো কিছু সিটের (আসন) বার্গেনের (দর–কষাকষি) জন্য।’
এনসিপির রাজনীতির একটি সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে উল্লেখ করে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমরা সেই সম্ভাবনার পক্ষে কাজ করে যাচ্ছি। আপনারা দেখছেন, আপনারা বিচার করবেন। পুরো বাংলাদেশ বিচার করবে।’ এনসিপির নেতাদের গাড়ি–বাড়ি অর্জনের অভিযোগও নাকচ করেন তিনি। এ ছাড়া প্রতীক হিসেবে এনসিপিকে শাপলা বরাদ্দ দিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বানও জানান নাসীরুদ্দীন।
‘জনতা বঙ্গভবনে যাবে’
দেশবাসী উৎকণ্ঠা থেকে মুক্তির জন্য গণ–অভ্যুত্থানের সরকারপ্রধান উপদেষ্টার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন উল্লেখ করে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশমালা দ্রুত আদেশ জারি করার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাঁদের আবেদন থাকবে।
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার একমাত্র এখতিয়ার প্রধান উপদেষ্টার উল্লেখ করে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘ডক্টর ইউনূসকে বাংলাদেশের সামনে অতিসত্বর শহীদ মিনারে গিয়ে জনগণের সামনে উপস্থিত হয়ে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির আদেশ জারি করতে হবে। যদি সে ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় হয়, তাহলে সেটা আমরা কীভাবে করব, সেটা আমরা বাংলাদেশের জনগণকে আবার রাজপথে দেখিয়ে দিব ইনশা আল্লাহ। আমরা যথেষ্ট উৎকণ্ঠা এবং উদ্বেগের মধ্যে রয়েছি।’
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘সরকারের কাছে আমাদের আবেদন থাকবে যে আপনাদের কাছে নীতিমালা এসেছে। আপনারা দ্রুত আদেশ জারি করুন। আমাদের এই উৎকণ্ঠা, বিএনপি অনৈক্য সৃষ্টি করতে চাচ্ছে, এটা থেকে বাংলাদেশকে মুক্তি দিন। আমরা দ্রুত ইলেকশনের ফেজে (নিবার্চনী পর্বে) ঢুকতে চাই।’
অধ্যাদেশ বা প্রজ্ঞাপন বা আদেশ জারির বিষয়ে রাষ্ট্রপতির কোনো বৈধতা নেই, এমন মন্তব্য করে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘যদি চুপ্পুকে (রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন) দিয়ে আদেশ দেওয়ার বাংলাদেশে কোনো চেষ্টা চালানো হয়, তাহলে জনতা বঙ্গভবনে চলে যাবে। আগে গণভবনে গিয়েছিল, নতুন করে যদি এ ধরনের কোনো প্রচেষ্টা চালানো হয়, তাহলে জনতা আবার বঙ্গভবনে যাবে ইনশা আল্লাহ।’
জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক মো. তারিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য দেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসা, যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ প্রমুখ।