বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তন এনে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন সংশোধন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ–সংক্রান্ত অধ্যাদেশ মঙ্গলবার রাতে জারি করেছে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) সঙ্গে সম্পৃক্ত সব এমএনএ (জাতীয় পরিষদের সদস্য) ও এমপিএ (প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য), যাঁরা গণপরিষদের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন, এখন থেকে তাঁরা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে বিবেচিত হবেন। এত দিন তাঁরা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে বিবেচিত হতেন।

অধ্যাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীদের জন্য মোট পাঁচটি শ্রেণি নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমত, যেসব বাংলাদেশি পেশাজীবী মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে অবস্থানকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন এবং বাংলাদেশের যেসব নাগরিক বিশ্বজনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। দ্বিতীয়ত, যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) অধীন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা দূত, মুজিবনগর সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তৃতীয়ত, মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) সঙ্গে সম্পৃক্ত সব এমএনএ বা এমপিএ, যাঁরা পরবর্তী সময়ে গণপরিষদের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন। চতুর্থত, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সব শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সব বাংলাদেশি সাংবাদিক। পঞ্চমত, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।

এর আগে গত ১৫ মে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল অধ্যাদেশটি শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। ওই সভায় বলা হয়েছিল, মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনতে। সেসব পরিবর্তন এনে রাতে অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার।

বীর মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাঁরা দেশের ভেতরে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এবং যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন, এরূপ সব বেসামরিক নাগরিক (ওই সময়ে যাঁদের বয়স সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের মধ্যে ছিল) তাঁরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন। এর পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর), পুলিশ বাহিনী, মুক্তিবাহিনী, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) ও সেই সরকার স্বীকৃত অন্যান্য বাহিনী, নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার সদস্যরাও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

আরও পড়ুনমুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞায় কেউ হবেন মুক্তিযোদ্ধা, কেউ সহযোগী২৬ মার্চ ২০২৫

নতুন সংজ্ঞায় হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীর মাধ্যমে নির্যাতিত সব নারী (বীরাঙ্গনা) বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী ফিল্ড হাসপাতালের সব চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসা সহকারীরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনের সংশোধনীতে যে জায়গায় ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শব্দ ছিল, তা পরিবর্তন করা হয়েছে।

অধ্যাদেশে ‘মুক্তিযুদ্ধ’ অর্থ বলতে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষায় হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ক ত য দ ধ র সময় ম জ বনগর সরক র ল দ শ সরক র র সরক র র সহয গ সরক র র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

মুজিবনগর সরকারের যারা ছিলেন, তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা: উপদেষ্টা ফারুক ই আজম

অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, মুজিবনগর সরকারের যারা ছিলেন, তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা। তবে মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে বিবেচিত হবেন।

বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। 

ফারুক ই আজম আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাচাই–বাছাই করতে গিয়ে দেখা যায়, মুজিবনগর সরকারের কিছু কর্মচারী ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে গণ্য হচ্ছেন। এখন থেকে তাঁরা হবেন ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে কাউকে বাতিল করা হয়নি। শুধু সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। যিনি যে সুবিধা পাচ্ছেন, তিনি সেই সুবিধা পাবেন। শুধু যাঁরা সরাসরি রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন, তাঁরা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হবেন। অন্যরা হবেন ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’।

বিস্তারিত আসছে...

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সকালেই পড়ুন আলোচিত ৫ খবর
  • বঙ্গবন্ধুর ‘মুক্তিযোদ্ধা’ মর্যাদা বাতিল হয়নি: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপ
  • নতুন অধ্যাদেশে মুজিবনগর সরকারের সব সদস্যকে মুক্তিযোদ্ধার স্পষ্ট স্বীকৃতি দেওয়া আছে: সংস্কৃতি উপদেষ্টা
  • মুক্তিযুদ্ধের নেতাদের মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট বাতিল ফেইক নিউজ: সংস্কৃতি উপদেষ্টা
  • মুজিবনগর সরকারে যারা ছিলেন, তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা: উপদেষ্টা ফারুক ই আজম
  • মুজিবনগর সরকারের যারা ছিলেন, তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা: উপদেষ্টা ফারুক ই আজম
  • পানির নিচে বিস্ফোরক রেখে কার্চ সেতুতে হামলা চালানোর দাবি ইউক্রেনের
  • খাবারের প্রলোভন দিয়ে গুলি, ত্রাণকেন্দ্র ঘিরে রক্তস্রোত
  • খাল দখলকারীরা প্রবল প্রতাপে ভিন্ন চরিত্রে ফিরে এসেছে