মেসি–নেইমারদের সঙ্গে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা ফুটবলার এখন দোকানকর্মী
Published: 7th, April 2025 GMT
২০১৪ সালে বার্সেলোনার প্রধান কোচ হওয়ার পর দলে একজন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারের অভাব অনুভব করেছিলেন লুইস এনরিকে। তাঁর অনুরোধে সে বছরই ভ্যালেন্সিয়া থেকে নিয়ে আসা হয় জেরেমি ম্যাথিউকে।
এনরিকের কোচিংয়ে এরপর ইতিহাস গড়ে বার্সা। দুই বছরের মধ্যে জিতে নেয় সম্ভাব্য সব শিরোপা। ২০১৫ সালে ‘ট্রেবল’ (চ্যাম্পিয়নস লিগ, লা লিগা, কোপা দেল রে) জয়ের পাশাপাশি ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ও উয়েফা সুপার কাপে চ্যাম্পিয়ন হয় কাতালান ক্লাবটি।
পরের বছর লা লিগা ও কোপা দেল রে শিরোপা ধরে রাখার পর স্প্যানিশ সুপার কাপের ট্রফি নিয়েও উৎসব করেন মেসি-নেইমার-সুয়ারেজরা। বার্সার সর্বজয়ী দলের সদস্য হিসেবে উৎসবে মেতেছিলেন ম্যাথিউও।
সেই ম্যাথিউ এখনো খেলাধুলার সঙ্গেই আছেন, তবে অন্য ভূমিকায়। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে ম্যাথিউকে তাঁর দেশ ফ্রান্সের একটি ক্রীড়াসামগ্রীর দোকানে দেখা যায়। গলায় ঝোলানো ছিল পরিচয়পত্র।
ফ্রান্সের ক্রীড়া দৈনিক লে’কিপ খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে, ৪১ বছর বয়সী ম্যাথিউ বর্তমানে সেই দোকানের কর্মী। দোকানের যে অংশে ফুটবলসামগ্রী রাখা আছে, সেখানকার ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করছেন। লে’কিপ সেই দোকানের ঠিকানাও দিয়েছে। ফ্রান্সের একস আঁ প্রোভাঁস ও মার্শেই শহরের মাঝামাঝি জায়গায় ইন্টারস্পোর্ট নামের কোম্পানির এই শাখার অবস্থান।
ঠিকানা জানার পর স্থানীয় লোকজন দোকানে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। শত শত ফুটবলপ্রেমী ইন্টারস্পোর্টের সেই শাখায় ফোন দিয়ে ম্যাথিউর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছার কথা জানিয়ে রেখেছেন। গত শনিবার বার্সার সর্বজয়ী এই ফুটবলার ছিলেন দোকানের প্রধান আকর্ষণ। অনেক ক্রেতা তাঁর সঙ্গে ছবিও তুলেছেন।
২০১৭ সালে বার্সেলোনা ছেড়ে পর্তুগিজ ক্লাব স্পোর্তিং লিসবনে যোগ দেন জেরেমি ম্যাথিউ। ২০২০ সালের জুনে অনুশীলনের সময় বাঁ হাঁটুতে গুরুতর আঘাত পান। তাঁর খেলোয়াড়ি জীবন সেদিনই শেষ হয়ে যায়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।