চাকরি ছেড়ে আখের ব্যবসায় প্রকৌশলী সাহাবুদ্দিন
Published: 14th, April 2025 GMT
প্রকৌশলী সাহাবুদ্দিনের বাবা কেতাবউদ্দিন আখ থেকে গুড় তৈরি করে সেই গুড় স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতেন। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বা চুয়েট থেকে পড়ালেখা শেষ করে বাবার সেই ব্যবসার হাল ধরেন প্রকৌশলী ছেলে। সাধারণ গুড়ের বাইরে নতুন চারটি ধরন তৈরি করেন তিনি। ছোট পাটালি, ঝোলা গুড়, পাউডার গুড় ও চকলেট আকারের গুড়—গুড়ের এই চার ধরন তৈরি করেই ব্যবসায় বাজিমাত করেন। চলতি মৌসুমে সাহাবুদ্দিনের লক্ষ্য ১০০ টন গুড় বিক্রি করা। এরই মধ্যে বিক্রি করে ফেলেছেন ৭০ টন। এপ্রিল পর্যন্ত চলে আখের মৌসুম।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের দুর্লভপুর ইউনিয়নের বারোরশিয়া মাঠে সাহাবুদ্দিনের খামার। কন্টাক্ট ফার্মিংয়ে বা চুক্তিভিত্তিক চাষের মাধ্যমে ওই এলাকায় এবার ১০০ বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছেন তিনি। তাঁর উদ্যোগের কারণে এলাকায় অমৃত জাতের আখ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সাহাবুদ্দিনের পৈতৃক বাড়ি শিবগঞ্জের খড়কপুর ইউনিয়নের মোবারকপুর গ্রামে। পরিবার নিয়ে থাকেন রাজশাহীর উপশহরে। ২০১৮ সালে চুয়েট থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ালেখা শেষ করেন। এরপর ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরি করেছেন। সেই চাকরি ছেড়ে যুক্ত হন বাবার ব্যবসায়। সাহাবুদ্দিনের মতে, কৃষির প্রতি ছোটবেলা থেকেই তাঁর দুর্বলতা। সেই টানেই গ্রামে ফেরেন এবং বাবার সঙ্গে আধুনিক কৃষি নিয়ে কাজ শুরু করেন।
যেভাবে শুরু
২০২০-২১ সালের কথা। নিজের জমিতে আখ চাষ হয়। তাঁরা ভেজালমুক্ত গুড় তৈরি করেন—শুনে ঢাকার পরিচিত অনেকেই এই গুড় কেনার আগ্রহ দেখান। তিনি ওই সময় আখের গুড়ের বড় পাটালি (২০ কেজির বেশি ওজন) কয়েকজন পরিচিতজনের মধ্যে হোম ডেলিভারি দেন। যাঁরা নিয়েছিলেন, খাঁটি গুড়ের স্বাদ পেয়ে তাঁরা আবার চাইলেন। এভাবে প্রথম বছর ২০০ কেজি গুড় বিক্রি করেন। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে চাকরিতে ঢুকে যান। চাকরির পাশাপাশি গুড়ের বেচাকেনাও চালিয়ে যান। ২০২২ সালে ভেজালমুক্ত নিরাপদ খাদ্য বিপণনকারী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তাঁরা এই গুড় নিয়ে খুব আগ্রহ প্রকাশ করেন। অনেকেই মাঠপর্যায়ে এসে গুড় সংগ্রহ করেন। এভাবে চাহিদা বাড়তে থাকে। বাড়তি চাহিদার কারণে বাবার তিন বিঘা জমির আখ শেষ হওয়ার পর এলাকার পরিচিত চাষিদের দিয়ে গুড় তৈরি করান।
২০২২ সালে বাংলাদেশ সুগারক্রপ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (বিএসআরআই) বিজ্ঞানীদের সঙ্গে পরিচয় হয় সাহাবুদ্দিনের। তাঁরা আখের গুড়ের একটা পাউডার ভ্যারিয়েন্ট (ধরন) বের করেছেন। এটা দেখে তাঁর মনে ধরে যায়। প্রশিক্ষণ নিয়ে এই পাউডার গুড় বানানো শুরু করলেন। ২০২৩ সালে ২১ বিঘা জমি ইজারা নিলেন। সঙ্গে পৈতৃক তিন বিঘা। তাতে চাহিদা মেটানো যায় না। গত বছর থেকে নিজেরাই পাউডার গুড় বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করেন। পাউডার গুড় দুই বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। ঘরে রেখে সারা বছর খাওয়া যায়। তাই ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়াও পেয়েছেন। গত বছর তিনি ৩৫ টন পাউডার গুড় বিক্রি করেন।
বেড়েছে উৎপাদন
বিসিএসআইআরের তথ্য অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে গুড় উৎপাদন ও চিবিয়ে খাওয়া আখের চাষ হয়েছিল ৫ হাজার ২৬৭ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর চাষ হয়েছে ৬ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে। সম্প্রতি কথা হয় স্থানীয় চাষি মো.
চলতি মৌসুমে চট্টগ্রামের মধু গবেষক এস এম মঈনুল আনোয়ারের পরামর্শে ও সহযোগিতায় চকলেট আকারের গুড় তৈরি করছেন সাহাবুদ্দিন। নতুন ধরনের এই গুড় ১০ থেকে ১২ গ্রাম ওজনের। একটি মুখে দিয়ে একবারেই খেয়ে নেওয়া যায়। এই গুড় বয়ামে সংরক্ষণ করা যায়। এবার একটি বহুজাতিক কোম্পানি তার কর্মচারীদের ঈদের উপহার দিতে ১ হাজার ৩০০ কেজি চকলেট আকারের গুড় কিনেছে। মধু গবেষক মঈনুল আনোয়ার জানান, ব্রিটিশ আমলে কয়েদিদের দ্রুত এনার্জি ফিরে পাওয়ার জন্য এ রকম ছোট আকারের আখের গুড় দেওয়া হতো। সেই থেকে তিনি এই ধারণাটা পেয়েছেন। এই গুড়ের বাণিজ্যিক উৎপাদন সফল হলে তিনি এটির নাম দিতে চান ‘কয়েদি’ গুড়।
সাহাবুদ্দিনের খামারে সম্প্রতি আখমাড়াইয়ের আধুনিক ক্রাশিং মেশিন দেখছেন বিসিএসআইআরের বিজ্ঞানীরাউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস য় বগঞ জ র এই গ ড়
এছাড়াও পড়ুন:
চুইঝাল চাষে সাফল্য পেয়ে প্রবাসফেরত শাহ আলম বললেন, ‘আর বিদেশে যাব না’
সিরাজগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে চুইঝাল চাষ করে সাফল্যের দেখা পেয়েছেন বিদেশফেরত এক ব্যক্তি। জেলায় মসলাজাতীয় ফসল চুইঝালের সফল বাণিজ্যিক চাষ এটিই প্রথম। এই সফলতায় বর্তমানে এলাকার কৃষক, তরুণ ও যুবকেরা চুইঝাল চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ওই ব্যক্তির নাম শাহ আলম (৪৫)। তিনি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রামের শুকুর আলীর বড় ছেলে। প্রায় এক যুগ সৌদি আরবে প্রবাসজীবন কাটিয়ে গ্রামে ফিরে ২০২২ সালে সিরাজগঞ্জে চুইঝাল চাষের উদ্যোগ নেন তিনি।
সম্প্রতি এক দুপুরে শাহ আলমের চুইঝালের খেতে গিয়ে দেখা যায়, জমি থেকে ফসল উত্তোলন করা হচ্ছে। বেশ কিছু স্থানে সমূলে চুইঝাল গাছগুলো তুলে বিভিন্ন স্থানে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। খুলনাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকারেরা গিয়ে এসব চুইঝাল কিনে নিচ্ছেন।
জানতে চাইলে শাহ আলম বলেন, ‘বিদেশে থাকা অবস্থাতেই ইউটিউবে খুলনা এলাকায় চুইঝাল চাষে কৃষকদের সফলতা দেখে আমার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে খুলনা এলাকায় চুইঝালের চারা উৎপাদকারী একটি নার্সারির মালিকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি আমাকে বেশ উদ্বুদ্ধ করেছেন। এরপর দেশে ফিরে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সমন্বিত কৃষি ইউনিটের (কৃষি খাত) আওতায় উচ্চমূল্যের মসলাজাতীয় ফসল উৎপাদন প্রদর্শনী বাস্তবায়নকারী স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (এনডিপি) সহায়তায় চুইঝালের চাষ শুরু করি। ২০২২ সালের ৩০ আগস্ট বাড়ির পাশে ৩৩ শতক জমি ৩ বছরের জন্য ৬০ হাজার টাকায় ইজারা নিয়ে এগুলোর চাষ শুরু করা হয়।’
শাহ আলমের দাবি, চুইঝাল চাষ শুরু থেকে এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা। অন্যদিকে চলতি বছর দুই ধাপে ৭ লাখ ৩৭ হাজার টাকার চুইঝাল বিক্রি করেছেন।
সিরাজগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে চুইঝাল চাষ করে সফল হওয়ার দাবি করেছেন প্রবাসফেরত শাহ আলম