Samakal:
2025-11-02@15:40:37 GMT

নতুন বছরে ঘর আলো করে এলো প্রভা

Published: 15th, April 2025 GMT

নতুন বছরে ঘর আলো করে এলো প্রভা

প্রথম কন্যা অরফি আফরিন আভার বয়স সাড়ে ৪ বছর। এর মাঝেই আবার গর্ভবতী হন গৃহিনী মোসা. জুঁই। ৩৭ সপ্তাহের গর্ভবতী ছিলেন। পহেলা বৈশাখের পরে তাঁর সিজার হওয়ার কথা ছিল। তবে নতুন বছরের শুরুর দিনই ঘর আলো করে দ্বিতীয় কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি। তার নাম রাখা হয়েছে প্রভা। নবজাতক ও তার মা সুস্থ আছেন।

পারিবারিকভাবে ২০২০ সালে জুঁইয়ের বিয়ে হয় কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস এলাকায় নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারে। স্বামী আকাশ হোসেন অভি কুষ্টিয়া আদালতে একজন আইনজীবীর সহকারী।

জুঁইয়ের সাথে অভির বিয়ে হওয়ার বছর খানেকের মধ্যে জন্ম হয় প্রথম কন্যা সন্তানের। সেই মেয়েকে নিয়ে তাদের সুখে দিন কাটছিল। এর মাঝে নববর্ষের দিন নতুন যোগ হয়েছে আরও এক কন্যা সন্তান। এতে ভীষণ খুশি তারা।

কুষ্টিয়া লালন শাহ প্রাইভেট হাসপাতালে গর্ভবেদনা নিয়ে সোমবার সকাল সাড়ে ৭টায় ভর্তি হন জুঁই। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম দেন তিনি দ্বিতীয় কন্যা সন্তান। হাসপাতালের চিকিৎসক মোহসিনা হায়দার তাঁর অস্ত্রোপচার করেন। এখন মা ও শিশু হাসপাতালের বরীন্দ্রনাথ কেবিনে আছেন।

জুঁইয়ের স্বামী অভি বলেন, ‘আমাদের বাসা পৌর এলাকার মধ্যে। শ্বশুর বাড়ি কয়েক কিলোমিটার দূরে। সকালে ব্যথা ওঠার পর বাসা থেকে দেড় কিলোমিটারের দূরে লালন শাহ হাসপাতালে এনে ভর্তি করাই। এরপর চিকিৎসক সাড়ে ৮টার দিকে অস্ত্রোপচার করেন। কোন সমস্যা হয়নি।’

প্রায় ৩ কেজি ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া সন্তানকে প্রথম কোলে নেন নানি। এ সময় নানির নিজ হাতে তৈরি করা কাঁথা ও পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয় শিশুটির শরীর। হাসপাতালের পরিচালক হারুন অর রশিদ হিরো নববর্ষের দিনে জন্ম নেওয়া এ শিশুর অভিভাবকদের অভিনন্দন জানান।

জুঁইয়ের স্বামী অভি জানান, তাঁর স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ার পর তিনি নিয়মিত স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নিতেন। খাওয়া-দাওয়া ঠিকভাবে করছেন কি-না সে বিষয়ে খেয়াল রাখতেন। চিকিৎসক মোহসিনা হায়দারকে দেখিয়েছেন বেশ কয়েকবার। স্বাস্থ্যগত কোন সমস্যা ছিল না। জুঁইয়ের বাবার বাড়ি শহরতলির কবরবাড়িয়া এলাকায়। হাসপাতালে জুঁইয়ের আম্মা তার সাথে আছেন দেখাশোনা করার জন্য। বড় মেয়ে আভা আছে তাদের সাথে। নতুন বোন পেয়ে সেও খুব খুশি।

জুঁই বলেন, তাঁর স্বামী আইনজীবীর সহকারী হিসেবে কাজ করেন। এছাড়া মাঝে মধ্যে বালুর ব্যবসা করেন। এ আয় দিয়ে তাদের সংসার চলে। খুব বেশি আয় না হলেও তাদের সংসারে সুখ আছে। কিছুটা আর্থিক সংকট থাকলেও দ্বিতীয় সন্তান পেটে আসার পর কোন সমস্য হয়নি। তাঁর স্বামী নিয়মিত খোঁজখবর নিয়েছেন। যতটা পেরেছেন ভালো খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করেছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘মেয়ের পর আবার মেয়ে হওয়াতে খুশি আমরা। এখন ছেলে-মেয়েতে কোন তফাত নেই। সবই সৃষ্টিকর্তার দান। আমরা দুই মেয়েকে শিক্ষিত করে ভালো মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’

এসএসসি পাশ জুঁই মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান। সংসারে টানাপোড়েন থাকলেও মেয়েদের প্রতি তিনি যত্নশীল। তাদের সব আবদার পূরণ করার চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি।

জুঁই বলেন, বড় মেয়ের নাম আভা। বাবার নাম অভি, অভি থেকে আভা রাখা হয়েছে। এ কারণে মিল রেখে ছোট মেয়ের নাম রাখা হলো প্রভা। দুই মেয়ের নামই তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে রেখেছেন। বাড়িতে গিয়ে আকিকা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। যাতে মহান আল্লাহ মুছিবত দূর করে দেন। বাড়ির সবাই খুশি। হাসপাতালে কয়েকদিন থাকতে হবে। এখানে সবাই সহযোগিতা করছে। কোন সমস্যা হচ্ছে না।

মেয়েদের নিয়ে কি স্বপ্ন আছে জানতে চাইলে বলেন, ‘সবারই স্বপ্ন থাকে। আমরা নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। লেখাপড়া শেষ করতে পারিনি। মেয়েদের ভালো স্কুলে ভর্তি করানোর ইচ্ছা আছে। বড় মেয়েকে সবেমাত্র একটি কিন্ডার গার্ডেনে প্লেতে ভর্তি করিয়েছি। সে স্কুলে যায়। আর ছোট মেয়ের যত্ন নেওয়া আমার প্রধান কাজ। বুকের দুধ পান করছে ছোট মেয়ে। মেয়ে যাতে সুস্থ থাকে এ জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।’

জুঁই বলেন, সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি সন্তানকে আরবি শিক্ষা দেওয়ার ইচ্ছা আছে। সমাজে নৈতিক অবক্ষয় বেড়েছে। তাই ছেলে-মেয়েদের সামাজিক ও পারিবারিক শিক্ষা বেশি প্রয়োজন।

ডা.

মোহসিনা হায়দার বলেন, ‘জুঁই আমার রোগী ছিল। সন্তান পেটে আসার পর বেশ কয়েকবার সে চেকআপের জন্য আসে। পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা ও খাওয়া-দাওয়া করেছে। কোন সমস্যা ছিল না।’

নববর্ষের দিন সিজার করানোর কারণ জানতে চাইলে জুঁইয়ের পরিবার জানায়, পহেলা বৈশাখের দিন সকালে হঠাৎ করেই ব্যথা শুরু হয়। এ জন্য তারা তড়িঘড়ি করে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসেন। চিকিৎসক তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য বলেন। সেখানে অস্ত্রপচার করেন তিনি। এ কারণে নতুন বছরেই তারা নতুন অতিথি পেয়েছেন। এ জন্য সবাই খুশি।

হাসপাতালের নার্স রেবেকা খাতুন বলেন, তিনজন সেবিকা তাদের খোঁজ খবর নিয়েছেন। নতুন বছরে যারা জন্ম নিয়েছেন নার্সরা তাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। শিশুদের কোলে নিয়ে আদর করেছেন। নিয়মিত খোঁজ খবর নিচ্ছেন তারা।

হাসপাতালে যখন শিশুটির জন্ম হয় তখন তার বাবা কালেক্টটরেট চত্বরে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে ছিলেন। সকালে শিশুকে একবার দেখে চলে যান অনুষ্ঠানে। পরে আবার আসেন। হাসপাতালের পরিচালক হারুন অর রশিদ হিরো বলেন, পহেলা বৈশাখে তাঁর প্রতিষ্ঠান রোগীদের জন্য বিশেষ সেবা দিয়ে থাকে। এদিন যাদের ঘরে নতুন অতিথি আসে সেই সব পরিবারকে তারা যথাসাধ্য ছাড় দেওয়াসহ অন্যান্য সুবিধা দেন। এছাড়া হাসপাতালের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ শ র জন ম ক ন সমস য চ ক ৎসক র জন য নত ন ব পর ব র র কর ন হওয় র

এছাড়াও পড়ুন:

ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা

চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।

কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।

এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।

অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।

একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।

এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।

যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা