আমরা ২০২৫ সালে বসবাস করছি। এখন অনেক নারী লেখালেখি করছেন, সাংবাদিকতা করছেন। নারীর অগ্রগতির যে ধারা, এই যে দিনে দিনে তারা অবগুণ্ঠন ভেঙে নিজে প্রশ্ন করা শিখছে, এর ধারাবাহিক একটা প্রবাহ আছে। আর সেই প্রবাহের সূচনার দিকে তাকালে আমরা যে নাম পাবো সেই নামটি হচ্ছে নূরজাহান বেগম। তিনি স্বপ্ন বুনতেন, একদিন নারী নিজের পায়ে দাঁড়াবে। আশাহত না হয়ে আমি বলতে চাই, সেই দিকেই যাচ্ছে আমাদের নারী সমাজ। প্রগতি, সাহিত্যসাধনা, আর সাংবাদিকতার অনন্য-উজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করছে তারা। এই প্রবাহের অগ্রদূত ও আলোকবর্তিকা আমাদের নূরজাহান বেগম। তার জন্ম শতবর্ষে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। 

নূরজাহান বেগমকে আমি ‘আপা’ ডাকতাম। যারা ‘বেগম’র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তারা প্রত্যেকেই তাকে ‘আপা’ ডাকতেন। আপার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল কাজের সূত্রে। তার সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয়েছিল ৪ জুন ২০১৫ তারিখে। এই মহীয়সী নারীর ব্যক্তিগত স্বার্থের জীবন ছিল না। ‘বেগম’ আর তিনি যেন হাত ধরাধরি করে চলেছেন। এই পত্রিকার মাধ্যমে তিনি নারীদের আহ্বান জানিয়েছিলেন স্বনির্ভর হতে, সাহসী হতে। তিনি মনে করতেন, নারীকে প্রশ্ন করা জানতে হবে। নারী যে জীবনযাপন করতে চায়, সেই জীবন সম্পর্কে তাকে প্রশ্ন করা শিখতে হবে। তিনি ‘প্রশ্ন করাকে’ বিশেষ ক্ষমতা মনে করতেন। প্রশ্ন করা ছাড়া নারী তার প্রকৃত গন্তব্য খুঁজে পাবে না বলে মনে করতেন। 

নূরজাহান বেগম ছিলেন মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন এবং ফাতেমা খাতুন দম্পতির একমাত্র সন্তান। তার ডাক নাম নূরী। নানি নাম রাখেন নূরজাহান বেগম। এ নামেই খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। নূরজাহান বেগম জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৫ সালের ৪ জুন, চাঁদপুরের চালিতাতলি গ্রামে। তার শৈশবের প্রথমভাগ কেটেছে এই গ্রামে। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন চাকরিসূত্রে কলকাতা থাকতেন। এদিকে শৈশবে নূরজাহান বেগম ছিলেন ভীষণ চঞ্চল। তাকে সমাল দিতে মা, মামা, দাদি-নানিদের বেগ পেতে হতো। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন মাঝেমধ্যে ছুটিতে বাড়িতে আসতেন। একবার নূরী  পুকুরে পড়ে যায়। মেয়েকে নিয়ে শঙ্কিত বোধ করেন নাসিরউদ্দীন। এরপরেই তিনি স্ত্রী এবং মেয়েকে কলকাতায় নিজের কাছে নিয়ে যান। তখন নূরীর বয়স মাত্র সাড়ে তিন বছর। ১১, ওয়েলেসলি স্ট্রিটের একটি বাড়িতে বড় হতে থাকে নূরী।

নূরজাহান বেগমের শিক্ষাজীবন শুরু হয় সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুলে। ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। এরপর ভর্তি হন কলকাতার বিখ্যাত লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে। ওই কলেজে পড়ার সময় বন্ধুরা মিলে একটি সাংস্কৃতিক দল তৈরি করেন। সে সময় মুসলিম নারীদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কাজে বাধা ছিল। বাধা উপেক্ষা করে ওই সাংস্কৃতিক দল কবিতা আবৃত্তি, নাট্যাভিনয় করতো। সে সময় ব্যাডমিন্টনও খেলতেন নূরজাহান বেগম। ১৯৪৪ সালে তিনি আইএ পাস করেন। ওই একই কলেজে বিএ ভর্তি হন। ১৯৪৬ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে বিএ পরীক্ষা দিতে পারেননি।

নারীদের ছবি ও লেখাসহ ‘সওগাত’ পত্রিকার নারীসংখ্যা প্রকাশ হতো। ১৯৩০ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত সওগাত নারীসংখ্যা প্রকাশ করে। এরপর ১৯৪৭ সালের ২০ জুন ‘বেগম’-এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। কবি সুফিয়া কামাল সম্পাদক হন। ১৯৪৭ সালের আগস্টে দেশ ভাগ হলে পরবর্তীতে সুফিয়া কামাল ঢাকায় চলে আসেন। সেই শূন্যতা পূরণ করেন নূরজাহান বেগম। তিনি সম্পাদকের দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ১৯৪৮ সালে প্রথমবারের মতো নারীদের ছবিসহ ঈদসংখ্যা প্রকাশ করেন। সে সময় নারী লেখকের সংখ্যা ছিল খুবই কম। নারীর লেখা প্রকাশের পাশাপাশি ব্লক করে ছবিও ছাপা হতো। ১৯৫০ সালে ঢাকার বিজয় চন্দ্র বসুর বিজয়া প্রেসের সঙ্গে সওগাত প্রেস এক্সচেঞ্জ করে ঢাকায় আসেন নূরজাহান বেগম। এরপর ৬৬ নম্বর পাটুয়াটুলী থেকে ‘বেগম’ প্রকাশ হতে শুরু করে। 

কলকাতায় নূরজাহান বেগমের যে পরিচিতি ছিল, ঢাকায় তেমন ছিল না। ফলে লেখা এবং বিজ্ঞাপন দুই-ই জোগাড় করতে কষ্ট হতো। বাবার সঙ্গে প্রথিতযশা বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে যেতেন তিনি। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন যাতে অন্যরা নূরজাহান বেগমকে চেনেন। আর নূরজাহান বেগমও যেন আগ্রহের সঙ্গে মিশতে পারেন এবং লেখা সংগ্রহ করতে পারেন। নাসিরউদ্দীন মেয়েকে বিজ্ঞাপনদাতাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর ধীরে ধীরে বিজ্ঞাপন আসতে শুরু করে।  

১৯৫২ সালে রোকনুজ্জামান খানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন নূরজাহান বেগম। দাদাভাই নিজেও সাংবাদিক। তিনি শিশু সওগাতের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন। দু’জনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন দাদাভাইকে স্নেহ করতেন কিন্তু মেয়ের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি। এরপর শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের মধ্যস্থতায় মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন দাদাভাইয়ের সঙ্গে নূরজাহানের বিয়ে দেন। পরবর্তীতে দাদাভাইয়ের উৎসাহ ও সহযোগিতায় নূরজাহান বেগম ‘বেগম’-এর কাজ এগিয়ে নেন। দুই কন্যা সন্তানের জননী নূরজাহান বেগম। বড় মেয়ে ফ্লোরা নাসরীন খান ও ছোট মেয়ে রীনা ইয়াসমীন খান। 

বাংলার শহর, গ্রাম, চেনা-অচেনা মেয়েদের প্রতি ছিল তার অশেষ মায়া। নূরজাহান বেগম বলতেন, আমাদের মেয়েরা সারাটা জীবন শ্বশুরবাড়িতে কাটায়। তারপরেও তারা নিজেদের জীবন উন্নত করতে চায়। এই মেয়েদের ন্যায্য সম্মান দিতে হবে। তাদের কাজের স্বীকৃতি আসতে হবে। তিনি চাইতেন, নারীরা পড়াশোনা করে প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠুক। দেশকে ভালোবাসতে শিখুক, দেশের মানুষকে ভালোবাসতে শিখুক। তিনি মানবিক মানুষ হতে বলতেন।

নূরজাহান বেগম তার দেওয়া বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলতেন, মেয়েদের বিয়ের সময় শুধু অর্থের দিকে না দেখে যদি পাত্র নির্বাচন করে, তাহলে আমার মতো আরও অনেক নূরজাহান সৃষ্টি হবে। তিনি মনে করতেন, সমাজে যৌতুক একটি অভিশাপ। মেয়েরা সচেতন হলে, স্বনির্ভর হলে, শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত-অশিক্ষিত শ্রেণি থেকে যৌতুকের মতো অভিশাপ দূর হবে। নূরজাহান বেগম বলতেন, বিয়ের সময় কেবল পুরুষের অর্থের দিকে তাকিও না, তার শিক্ষা ও যোগ্যতার দিকে তাকাও। আগে নিজেকে প্রস্তুত করো। 

সমাজের প্রতিক্রিয়াশীলতা ভাঙার কাজ করেছে ‘বেগম’। বেগম নিয়ে যখনই কথা হতো, তিনি ওই সময়ের পরিস্থিতি উল্লেখ করে বলতেন, আমাদের লক্ষ্যটা নারী আন্দোলন। নারী আন্দোলনের মানে কী? আমাদের সমাজ পুরুষপ্রধান। এই সমাজ থেকে নারীদের যদি সামনে আনতে হয়, তাহলে শুধুই মুখের কথায় ‘এটা করো’, ‘ওটা করো’ বললেই হবে না। চেতনা জাগিয়ে তুলতে হবে। 

নূরজাহান বেগমের চেতনার অন্যতম উৎস ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল। আমাদের কাছেও ‘চেতনার আদর্শ’ ছিলেন তিনি। সুফিয়া কামাল ছাড়া নূরজাহান বেগমকে মূল্যায়ন করা কঠিন। সুফিয়া কামাল সম্পর্কে একটু বলা দরকার, নারীর মানবাধিকার অর্জনের লক্ষ্যে আজীবন সংগ্রাম করেছেন। শিশুদের জন্য আনন্দময় জগৎ গড়ে তোলার জন্য কাজ করেছেন। সংস্কৃতির অধিকারচর্চা এগিয়ে নিয়েছেন। লিখেছেন গল্প, কবিতা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দিয়েছেন শত-সহস্র ভাষণ। যে লক্ষ্যে তিনি বাংলাদেশের মাইলের পর মাইল হেঁটেছেন, সেটাকে রাজনীতির বাইরে রাখলে চলবে না। সুফিয়া কামালের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে নূরজাহান বেগমসহ আমরা বিশ্বাস করতে শিখি, রাজনীতি দুই প্রকার- পলিটিক্যাল রাজনীতি, আরেকটা হচ্ছে সাংস্কৃতিক রাজনীতি। এই যে নারীকে জাগিয়ে তোলা এটাও রাজনীতি। আমরা আমাদের কাজটাকে রাজনীতি হিসেবেই দেখেছি। আর সেজন্যই মিছিল, মিটিং, সভা এগুলো করার প্রয়োজন পড়েছে। মিছিল, মিটিং, রাজপথে আন্দোলন এগুলো সেই রাজনীতিরই অংশ। নূরজাহান বেগম শিখিয়েছেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তৈরি হতে হবে। 

সময়টা কী ডিমান্ড করছে? দৈনিক পত্রিকায় কী উঠেছে? সেই বিষয়ে তিনি মিটিংয়ে তথ্য উপস্থাপন করতেন, করতে বলতেন। মিছিলে মিছিলে কেটেছে আমাদের সময়। আবার বাসায় এসে বাচ্চা দেখেছি। এই যে বললাম, আমাদের জানতে হবে, আমাদের দায়িত্বটা কী? আমাকে কাজ করতে হবে, আবার আমার বাচ্চাটাও যাতে মানুষ হতে পারে তার জন্য সঠিক পরিচর্যা করতে হবে। এটা একটা বিশাল ব্যাপার। এই প্রজন্মকে জানতে হবে অগ্রগতির ধারাবাহিক ইতিহাস। তাহলে খুঁজে পাবে নূরজাহান বেগমকে। 

নূরজাহান বেগমকে আমরা তথ্য সংগ্রহ করে এনে দিতাম। তিনি বিষয়টা বলে দিতেন। সাপ্তাহিক মিটিংয়ে বসে সূচিপত্র তৈরি করতেন। আমার ঝোঁক ছিল লেখালেখির দিকে। বেগমের কমিটি সারাদেশ থেকে আসা লেখা বাছাই করতো। সুফিয়া কামাল সবসময় পরামর্শ দিতেন। নূরজাহান বেগম তার পরামর্শ নিতেন; তারপর সিদ্ধান্ত।  

২০১৬ সালের ২৩ মে সোমবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চিরবিদায় নিলেন আমাদের প্রিয় নূরজাহান বেগম। তিনি ছিলেন ছায়াদায়ী, মায়াদায়ী। তিনি ছিলেন মাতৃসম। আমাদের সমাজে, সংস্কৃতিতে এবং সাংবাদিকতার জগতে তিনি যুক্ত করেছেন নারী আন্দোলনের দীর্ঘ যাত্রাপথ। আমাদের সমাজ-সংস্কৃতিতে যে ইতিবাচক প্রবহ তৈরি হয়েছে তিনি সেই প্রবাহে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। 

নূরজাহান বেগমের ৯০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার বাড়িতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম, সেই শেষ দেখা। তার আগে বহু বার, বহু কারণে নূরজাহান আপার সঙ্গে দেখা হয়েছে। যতবার তার সঙ্গে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে তিনি নতুন নতুন অভিজ্ঞতার আলোকে ভরিয়ে দিয়েছেন। স্নেহ করেছেন, ভালোবাসা দিয়েছেন, যত্ন করেছেন। তার স্নেহ, যত্ন, ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছে এদেশের গ্রাম-মফস্বল-শহরের দূর-দূরান্ত অঞ্চলের অন্তঃপুরবাসিনীরা। তিনি ছিলেন বিনয়ী, মমতাময়ী এবং দায়িত্ববান একইসঙ্গে দৃঢ় কঠোর মানুষ।

ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন পরিপাটি ও গোছানো মানুষ। পরিপাটি কাপড় পরতেন, মুখে সুন্দর স্নিগ্ধ হাসি ফুটে থাকতো। দেখা হলেই প্রফুল্ল চিত্তে ‘বেগম’র লেখাগুলোর কথা বলতেন। তার দেখা কলকাতা সমাজের মুসলিম নারীদের নিয়ে স্মৃতিচারণ করতেন। বিশ্বের নারীরা কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে; সেসব কথা বলতেন। আর আশ্বস্ত হতে চাইতেন, এই সমাজের নারীরাও একে একে সব অবগুণ্ঠন ভাঙতে পারবে। তার স্মৃতির কথা শুনতাম, স্বপ্নের কথা শুনতাম, কিন্তু এই সমাজের নারীরা সব অবগুণ্ঠন ভাঙতে পারবে; এই বলে আশ্বস্ত করতে পারিনি কোনোদিন। এই যে না পারা, এই অক্ষমতা মর্মপীড়াদায়ক হয়ে রয়ে গেছে মনে ও মর্মে।

নূরজাহান বেগম যে দায়িত্ব দিতেন, আমরা সেই দায়িত্ব হাসিমুখে পালন করতাম। কোন বিষয়ে লেখা আহ্বান করা হবে, মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিতেন। তিনি পড়তে বলতেন, বারবার বলতেন, পড়, পড়, পড় এবং প্রশ্ন করো। নিজেও ছিলেন একনিষ্ঠ পাঠক। নূরজাহান বেগম ছিলেন বাবা অন্তঃপ্রাণ। তিনি বাবার আদর্শ-নীতি-নিষ্ঠার কথা বলেছেন প্রায়ই। তার বাবা যেমন প্রগতির পথে প্রগতিশীল লেখকদের সংগঠিত করতে সারাজীবন কাজ করেছেন তিনিও সেই লক্ষ্যে সংগ্রাম করে গেছেন। এসব কথা নূরজাহান বেগম স্মৃতি থেকে অকপটে বলতেন কথোপকথনে ও সাক্ষাৎকারে। নূরজাহান বেগম স্বীকার করে নিতেন কবি সুফিয়া কামালের অভিভাবকত্ব ও নেতৃত্বের প্রভাব।
কেবলমাত্র সাংবাদিক হিসেবে নন, তিনি সংগঠক হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। পত্রিকা সম্পাদনা ও পরিচালনার পাশাপাশি বেগম ক্লাব পরিচালনা ও নারী সমিতি পরিচালনায় সংগঠক ও নেত্রী হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন।

নূরজাহান বেগম অর্জন করেছেন ‘রোকেয়া পদক’ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা, ১৯৯৭ সালে। পেয়েছেন অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার, ২০০২ সালে। এছাড়া বাংলাদেশ মহিলা সমিতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, লেখিকা সংঘ নূরজাহান বেগমকে স্বর্ণপদক প্রদান করেছে। নূরজাহান বেগম বিভিন্ন সংগঠন থেকে পদক পেয়েছেন, পেয়েছেন সংবর্ধনা। তিনি সবচেয়ে বড় পুরস্কর মনে করতেন মানুষের ভালোবাসাকে। তিনি জীবন চলার পথে আমাদের জন্য তৈরি করেছেন এক ঐতিহাসিক মাইলফলক, যা আমাদের কাছে ইতিহাস। এই প্রজন্ম জানুক নূরজাহান বেগম ছিলেন আমাদের অমূল্য সম্পদ। তারা নূরজাহান বেগমের স্বপ্নপূরণে ব্রতী হোক, উদ্দীপিত হোক।

যারা লেখালিখি করেন তাদেরকে বলবো প্রচুর পড়তে হবে। লেখার জন্যও প্রচুর পড়তে বলতেন নূরজাহান বেগম। সেভাবেই আমাদের অভ্যাস গড়ে উঠেছে। আজ যখন নূরজাহান বেগমের জন্মশতবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করছি, তখন আমিও পৌঁছে গেছি জীবনের শেষ বেলায়। বয়স ৮৮। শিক্ষকতা থেকে রিটায়ার করেছি, ঘরেই দিনগুলো কেটে যাচ্ছে। জীবনের শেষ বইটা লিখছি। এরপর হয়তো আর লেখা হবে না। এখনও পড়ছি। মাঠে তথ্য সংগ্রহ করতে যেতে পারছি না, লিখিত তথ্য সংগ্রহ করে পড়ছি। নূরজাহান বেগমের কাছ থেকে জেনেছি, অনুপ্রাণিত হয়েছিÑ পড়তে হবে, ভেতরে প্রশ্নের জন্ম দিতে হবে আর সেই প্রশ্নের উত্তর লিখে যেতে হবে। একই সঙ্গে চালিয়ে যেতে হবে মুক্তির আন্দোলন। সমাজের মূল স্রোতে মিশতে হলে নারীকে এই রাজনীতিটা করতেই হবে। 

সামাজে নারীর কিছু কাজ আছে। যেটা সমাজ বলে দেয়, এটা তোমাদের কাজ। সেই কাজকে কখনও অবহেলা করিনি, এখনও করি না। নারী আন্দোলন মানে নিজের দায়িত্ব অবহেলা করা নয়। নূরজাহান বেগমের কথা ধরে এই প্রজন্মকে বলতে চাই, নিজের একটা ভাষা তৈরি করো। নিজের একটা ভাষা থাকতে হবে। এখন যে সময় যাচ্ছে, এই সময় আর আগের সময় এক নয়। এখন আমাদের অনেক কিছু নতুন করে তৈরি করতে হচ্ছে। কেন নতুন করে তৈরি করতে হচ্ছে? এই প্রশ্ন আমাদের জানতে হবে। নূরজাহান বেগমের জন্ম শতবর্ষে এই আমার প্রার্থনা- আমাদের মেয়েরা প্রশ্ন করা শিখুক, নিজের ভাষা তৈরি করুক।

লেখক: শিক্ষাবিদ, নারী আন্দোলনের প্রখ্যাত নেত্রী

তারা//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন আম দ র শ ন কর ক জ কর র জন ম কর ছ ন লক ষ য প রব হ ন কর ছ র জন য র সময় করত ন বলত ন কলক ত

এছাড়াও পড়ুন:

মেয়েকে নিয়ে টিকে থাকতে না পেরে বিদেশ চলে যান পিয়া বিপাশা

লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিনোদন অঙ্গনে পা রাখেন পিয়া বিপাশা। এরপর অভিনয় করেছেন মিউজিক ভিডিও, নাটক ও সিনেমায়। কিন্তু হুট করেই নাই হয়ে গেলেন। পরে জানা গেল অভিনেত্রী আমেরিকায়। গেল পাঁচ বছর সেখানেই বাস করছেন তিনি। সম্প্রতি দেশের একটি গণমাধ্যমে প্রবাসজীবনসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।

পিয়া বিপাশা জানান, একমাত্র মেয়েকে নিয়ে নিউইয়র্কে বসবাস শুরু করেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিকের সঙ্গে তাঁর প্রেম ও ভালোবাসা তৈরি হয়। তারপর তাঁরা বিয়ে করেন। দুজনে মিলে বিয়ে করলেও আনুষ্ঠানিকতা সারেননি। চলতি বছরের শেষ দিকে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে নেওয়ার ইচ্ছা।

পিয়া বিপাশা বলেন, ‘বাংলাদেশে ভালো লাগত না। কারণ, লবিং ছাড়া কাজ হতো না। ভালো একটা সিনেমা করার কথা ছিল। কিন্তু সেটা আর হয়নি। এরপর আমার মিডিয়ায় কাজ করার ইচ্ছাই নষ্ট হয়ে যায়। আমি আসলে কাজ করতে চেয়েছিলাম টাকা কামানোর জন্য। কাজ না করতে পারলে টাকা কামাব কী করে। তাই সিদ্ধান্ত নিই অন্য কিছু করার।’

বিপাশার কথায়, ‘টাকা রোজগারের জন্য আমি বিনোদন অঙ্গনে কাজ করেছিলাম। কারণ, আমার একটা মেয়ে ছিল। মেয়েকে নিয়ে টিকে থাকার বিষয় ছিল। পরে দেখলাম, যেভাবে কাজ হয়, আমাকে দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, আমেরিকায় চলে আসার। এখানে এসে বাংলাদেশের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিই। অনেক টাকাও আয় করছি।’

পিয়া বিপাশা বলেন, ‘সত্যি বলতে এখন আমার এমন অবস্থা, টাকা ইনকাম না করলেও হয়। যতটুকুই করি, আমার মেয়ে ও হাজব্যান্ড ওরাই বলে। আমার এখন আর কোনো স্বপ্ন নেই। যা চেয়েছি, গত পাঁচ বছরে সবই পেয়েছি। টাকাপয়সা, সুন্দর জীবন, প্রতিষ্ঠিত হওয়া, ভালো স্বামী—সবই আমার হয়েছে। টাকা নিয়ে এখন কোনো চিন্তা নেই আমার—যা আয় করি, তা ব্যয় করার সময় পাই না।’ 

পিয়া বিপাশা জানান, ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে বিভিন্ন পণ্যের যেসব পোস্ট করেন, তার জন্য বেশ ভালো সম্মানী পান। তাঁর দাবি, এই সম্মানী কখনো দুই হাজার ডলার, আবার কখনো তিন হাজার ডলারের মধ্যে।

২০১৩ সালে ‘দ্বিতীয় মাত্র’ নাটকে তাহসান খানের বিপরীতে অভিনয় করেন। ছোটবেলায় রূপকথার বই পড়তে পছন্দ করতেন। বই পড়ার সময় গল্পের নায়িকার চরিত্রে নিজেকে কল্পনাও করতেন। বড় পর্দায়ও অভিনয় করেছিলেন। ‘রুদ্র: দ্য গ্যাংস্টার’ নামের সেই ছবি মুক্তি পায়। এরপর ‘রাজনীতি’ ছবিতে শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয়ের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। পরে সেই ছবিতে পিয়া বিপাশার পরিবর্তে অপু বিশ্বাস অভিনয় করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বৈষম্যবিরোধীদের তোপের মুখে যশোর মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ
  • শ্রীলঙ্কার মাটিতে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ
  • মিরাজ বীরত্বে দারুণ প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলো বাংলাদেশ
  • সেঞ্চুরির পর ৫ উইকেট, মিরাজ ধন্যবাদ দিলেন ৬ জনকে
  • পেশায় বাসচালক, আড়ালে করেন ইয়াবার কারবার
  • ঢাকায় চালান পৌঁছে প্রতি মাসে পান ৬ লাখ টাকা
  • ১৭ মাস পর দেশের মাটিতে টেস্ট জয় বাংলাদেশের
  • নদীতে মিলল স্কুলছাত্রের লাশ, চার সহপাঠী আটক
  • টাকার জন্য দেশে ছেড়েছি, এখন টাকা খরচের সময় নেই: পিয়া বিপাশা
  • মেয়েকে নিয়ে টিকে থাকতে না পেরে বিদেশ চলে যান পিয়া বিপাশা