‘জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্প’ এর সিকিউরিটি অ্যান্ড সাপোর্ট অ্যামিনিটিজ (সি সাইড) এর পূর্ত কাজের এবং কক্সবাজার এবং নোাখালী জেলায় এফডিএমএন সম্প্রদায়ের জন্য সমন্বিত যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং সুযোগ-সুবিধা ক্রয়ের পৃথক দুটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ২৩৭ কোটি ৬৭ লাখ ২৯ হাজার ১৮০ টাকা।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড.

সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির সভায় প্রস্তাব দুটিতে অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় কমিটি সদস্য ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভা সূত্রে জানা যায়, ‘জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্প’ এর সিকিউরিটি অ্যান্ড সাপোর্ট অ্যামিনিটিজ এর পূর্ত কাজ ক্রয়ের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে ৩টি প্রস্তাব আর্থিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশকৃত সর্বোচ্চ স্কোর অর্জনকারী রেসপনসিভ দরদাতা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ঢাকা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে এতে ব্যয় হবে ৭৫ কোটি ৫৭ লাখ ৪ হাজার ৪০০ টাকা। প্যাকেজের আওতায় ২২.১০ কিলোমিটার সীমানা প্রাচীর, ৩টি প্রবেশদ্বার, ৩টি গার্ডরুম, ২৫টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, ২২.১০ কিলোমিটার মাটির বাঁধ কাম হেরিং বোন বন্ড রাস্তা নির্মাণ এবং রাস্তা বরাবর স্ট্রিট লাইট স্থাপন করা হবে।

সভায় কক্সবাজার এবং নোাখালী জেলায় মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত (এফডিএমএন) নাগরিকদের জন্য সমন্বিত যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং সুযোগ-সুবিধা ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের সেবা ক্রয়ের জন্য সিঙ্গেল সোর্স সিলেকশন পদ্ধতিতে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল বরাবর আরএফপি আহ্বান করা হলে প্রতিষ্ঠানটি কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব দাখিল করে। পিইসির প্রস্তাব উপযুক্ত বিবেচেনা করা হয়। পরবর্তীতে পিইসির নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত উপযুক্ত দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে ১৬২ কোটি ১০ লাখ ১৪ হাজার ৭৮০ টাকায় বর্ণিত প্রকল্পের সেবা ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে। প্যাকেজের আওতায় কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় এবং নোয়াখালী জেলার ভাসানচরে বসবাসরত বাস্তুচ্যুত মায়ানমানর নাগরিকদের মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা এবং পরিবার পরিকল্পনা সেবা দেওয়া হবে।

ঢাকা/হাসনাত/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রকল প দরপত র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর ও সাভার থেকে ভাটারা পথে মেট্রোর ব্যয় দাঁড়াবে ২ লাখ কোটি টাকা

ঢাকায় পরবর্তী দুটি মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ঠিকাদারের কাছ থেকে যে দর প্রস্তাব পাওয়া গেছে, তাতে মোট নির্মাণব্যয় দাঁড়াতে পারে দুই লাখ কোটি টাকা, যা সরকারের প্রাক্কলনের দ্বিগুণের বেশি। সরকার ব্যয় ধরেছিল প্রায় ৯৪ হাজার কোটি টাকা।

ঠিকাদার এখন যে দর প্রস্তাব করছে, তাতে নতুন দুই মেট্রোরেল নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি নির্মাণ ব্যয় ৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ঢাকার উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এতে কিলোমিটারপ্রতি খরচ পড়েছে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

মেট্রোরেল প্রকল্পে বাড়তি ব্যয়ের বিষয়টি আমাদের আলোচনায় এসেছে। বিষয়টি নিয়ে জাইকার সঙ্গে আলোচনা করতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন ও মেট্রোরেলের এমডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ

রাজধানীতে মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনাকারী ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানির (ডিএমটিসিএল) হিসাবে, ভারতে সাম্প্রতিক কালে নেওয়া মেট্রোরেল প্রকল্পে এই ব্যয় ৫০০ কোটি টাকার কম। ভিয়েতনাম, তুরস্ক, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশে প্রস্তাবিত দরের চেয়ে কম টাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ করা হচ্ছে।

মেট্রোরেলের ব্যয় বেশি হওয়ার কারণ ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার বিভিন্ন শর্ত এবং কম প্রতিযোগিতা। প্রকল্পের দরপত্রে ঠিকাদার হিসেবে জাপানি কোম্পানিগুলো অংশগ্রহণ করে। তারা চড়া দাম হাঁকায়, যেখানে দর-কষাকষির সুযোগ কম থাকে।

আরও পড়ুনমেট্রোরেলে কমলাপুর যেতে আরও অপেক্ষা, দেরি কেন ১৯ মে ২০২৫

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেট্রোরেল প্রকল্পে বাড়তি ব্যয়ের বিষয়টি আমাদের আলোচনায় এসেছে। বিষয়টি নিয়ে জাইকার সঙ্গে আলোচনা করতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন ও মেট্রোরেলের এমডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

পরে যোগাযোগ করা হলে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মেট্রোরেল চাই। তবে খরচ নিয়ে আমাদের ভাবতেই হবে।’ তিনি বলেন, প্রকল্পে এমন একটি আর্থিক কাঠামো বেছে নিতে হবে, যা প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানে সহায়ক হয়। এতে ব্যয় সাশ্রয়ের পাশাপাশি বিশ্বমানের ঠিকাদারদের আকৃষ্ট করা সম্ভব হবে।

আরও পড়ুনমেট্রোরেলে সবচেয়ে বেশি যাত্রী কোন স্টেশনে, কম কোথায়, কারণ কী০৮ জুলাই ২০২৫কিলোমিটারে ব্যয় ৩ হাজার কোটি টাকা

ঢাকায় ২০৩০ সালের মধ্যে মোট ছয়টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। এর মধ্যে একটির কাজ শেষের পথে (লাইন-৬: উত্তরা থেকে কমলাপুর)। বাস্তবায়নাধীন দুটি মেট্রোরেল হচ্ছে এমআরটি লাইন-১ (কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর ও কুড়িল থেকে পূর্বাচল) এবং এমআরটি লাইন-৫ (সাভারের হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী, মিরপুর, গুলশান হয়ে ভাটারা)।

সরকারের প্রাক্কলনে এমআরটি লাইন-১-এ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। আর এমআরটি লাইন-৫-এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ২৬১ কোটি টাকা।

দুটি মেট্রোরেলই পাতাল ও উড়ালপথের সমন্বয়ে বাস্তবায়ন করা হবে। এমআরটি-১ নির্মাণ ও ট্রেন কেনাসহ সব কাজ ১৪টি ভাগে (প্যাকেজে) বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে ডিপো উন্নয়নের কাজ চলমান আছে। জাপানি ঠিকাদার এই কাজ করছে।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, উত্তর রামপুরা থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার পাতাল রেলপথ ও আটটি স্টেশন নির্মাণে তিনটি প্যাকেজের চূড়ান্ত দর পাওয়া গেছে। সব কটিতেই নেতৃত্বে আছে জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে তিন প্যাকেজে দর উঠেছে ৩০ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা, যা প্রতি কিলোমিটারে দাঁড়ায় ২ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা।

আরও পড়ুনদর–কষাকষির পর ব্যয় কমছে ১৮৬ কোটি টাকা০১ জুলাই ২০২৫

ঠিকাদারদের কাছ থেকে কয়েকটি প্যাকেজে দর পাওয়ার পর পুরো প্রকল্পের ব্যয় বিশ্লেষণ করে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ। এতে দেখা যায়, ব্যয় বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকলে সব ঠিকাদার নিয়োগ করার পর লাইন-১-এর ৩১ কিলোমিটারের শুধু নির্মাণ ব্যয় দাঁড়াবে ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর সঙ্গে যোগ হবে জমির দাম, পুনর্বাসন, বেতন-ভাতা, শুল্ক-কর, পরামর্শকের খরচ, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, কাজ বৃদ্ধিসহ অন্যান্য ব্যয়। ফলে মোট ব্যয় দাঁড়াবে ৯৪ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে। নির্মাণকাজে দীর্ঘসূত্রতাসহ নানা কারণে আরও বাড়তে পারে।

অন্যদিকে এমআরটি লাইন-৫ (নর্দান রুট)-এর মোট দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটার। এর মধ্যে হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী এবং নতুনবাজার থেকে ভাটারা পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার হবে উড়ালপথে। বাকিটা পাতালপথে হবে। স্টেশনের সংখ্যা ১৪।

মেট্রোরেলের এই পথ ও স্টেশন নির্মাণ এবং কোচ কেনাসহ সব কাজ ১০টি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ডিপো উন্নয়নের কাজ চলছে। মূল নির্মাণকাজের দরপত্র প্রক্রিয়া চলমান আছে।

ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, লাইন-৫-এর কচুক্ষেত থেকে ভাটারা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার পাতাল রেলপথ ও তিনটি স্টেশন নির্মাণে ঠিকাদার নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। এই অংশের জন্য সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছে জাপানের তাইসি করপোরেশনের নেতৃত্বে ঠিকাদারদের জোট। তারা এই অংশের জন্য ১৫ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা দর প্রস্তাব করেছে। প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় দাঁড়ায় ২ হাজার ৮২৮ কোটি টাকার বেশি। অথচ ২০১৯ সালে প্রকল্প নেওয়ার সময় এই অংশের জন্য মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৩ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা।

এর সঙ্গে বেতন-ভাতা, জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য খরচ যুক্ত হয়ে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে।

ডিএমটিসিএলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, একটি প্যাকেজের মতো অন্য প্যাকেজগুলোতে এভাবে প্রাক্কলনের চেয়ে বেশি দর হাঁকা হলে এই প্রকল্পের ব্যয় এক লাখ কোটি টাকায় পৌঁছাবে। তাতে পাতালপথে প্রতি কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় দাঁড়াবে আড়াই হাজার কোটি টাকা। এর সঙ্গে বেতন-ভাতা, জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য খরচ যুক্ত হয়ে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে।

ডিএমটিসিএলের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত যে মেট্রোরেল চালু আছে, সেটির নির্মাণ ব্যয় নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। মেট্রোরেলের আয় থেকে জাইকার ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার বিদেশি ঋণে বিপুল ব্যয়ে দুটি মেট্রোরেল নির্মাণ করলে দেশের মানুষকে এর বোঝা টানতে হবে। এই পরিস্থিতিতে ঠিকাদারদের বিপুল ব্যয়ের প্রস্তাব অনুমোদন করা নিয়ে সংশয়ে পড়েছে ডিএমটিসিএল। তারা প্রস্তাবিত দর অনুমোদন না করে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সংকেতের অপেক্ষায় আছে।

উল্লেখ্য, মেট্রোরেলের নতুন দুই প্রকল্পে ঋণের শর্ত ও দরপত্রপ্রক্রিয়া ঠিক হয়েছিল বিগত সরকারের আমলে।

ঢাকার মেট্রোর ‘খরচ বেশি’

দুই প্রকল্পে দরপ্রস্তাব পাওয়ার পর ডিএমটিসিএলের পক্ষ থেকে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বাস্তবায়নাধীন মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় বিশ্লেষণ করা হয়। তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশে খরচ অনেক বেশি পড়ছে।

যেমন ভারতের বিহার রাজ্যের পাটনায় মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পের দুটি ভাগের কাজে ঠিকাদার নিয়োগ হয় গত জানুয়ারি মাসে। ডিএমটিসিএলের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, পাটনার মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য আট কিলোমিটারের বেশি। এর মধ্যে স্টেশন হবে ছয়টি। পুরোটাই পাতালপথে। এই কাজের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্রতি কিলোমিটারে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকায়। পাটনার এই মেট্রোরেল লাইনটি নির্মাণেও অর্থায়ন করছে জাইকা। পার্থক্য হলো সেখানে কাজের মূল ঠিকাদার সব ভারতীয়।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে আরেকটি মেট্রোরেল প্রকল্প চলছে ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ইন্দোরে। সাড়ে আট কিলোমিটার পাতালপথ এবং সাতটি স্টেশন নির্মাণে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয় গত মার্চে। কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় ৩৬৩ কোটি টাকা। একই প্রকল্পে মেট্রোরেলের উড়ালপথ নির্মাণে গত মার্চে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয় কিলোমিটারপ্রতি ১৫০ কোটি টাকায়।

ভারতে মেট্রোরেল নির্মাণ ও ঠিকাদারদের বিষয়ে বিশ্লেষণ করে ডিএমটিসিএলের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ভারতও বিদেশি ঋণে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। কিন্তু ঋণে এমন কোনো শর্ত তারা মানে না, যা ঠিকাদার নিয়োগের প্রতিযোগিতা ক্ষুণ্ন করে।

ডিএমটিসিএলের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, পাটনার মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য আট কিলোমিটারের বেশি। এর মধ্যে স্টেশন হবে ছয়টি। পুরোটাই পাতালপথে। এই কাজের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্রতি কিলোমিটারে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকায়। পাটনার এই মেট্রোরেল লাইনটি নির্মাণেও অর্থায়ন করছে জাইকা। পার্থক্য হলো সেখানে কাজের মূল ঠিকাদার সব ভারতীয়।

ডিএমটিসিএলের পক্ষ থেকে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বাস্তবায়নাধীন ও সাম্প্রতিককালে বাস্তবায়িত মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই ব্যয়ের মধ্যে জমি, বেতন-ভাতা ও অন্যান্য খরচও রয়েছে। এতে দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে প্রতি কিলোমিটারে খরচ ১৫ দশমিক ৬ কোটি ডলার (১ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা), তুরস্কে ৬৭২ কোটি টাকা, আইভরিকোস্টে ৪৪৮ কোটি টাকা, দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে ৭৮৪ কোটি টাকা, থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ৭৪০ কোটি টাকা এবং ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটিতে ১ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

ঢাকায় প্রথম মেট্রোলাইন-৬ নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে দেড় হাজার কোটি টাকা এবং নতুন দুই লাইনে তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

শুধু নির্মাণ নয়, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পেছনেও বাংলাদেশে ব্যয় বেশি। বাংলাদেশে এমআরটি লাইন-১-এর কাজ তদারকের পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয় ১১ কোটি ২৬ লাখ ডলারে (বর্তমান মূল্যে ১ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা)। ভারতের বেঙ্গালুরুতে মেট্রোরেল প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে মাত্র ১ কোটি ৭১ লাখ ডলার বা ২০৯ কোটি টাকায়।

ঢাকা মেট্রোরেল লাইন-১ সম্ভাব্যতা যাচাই, নকশা প্রণয়ন ও দরপত্র দলিল তৈরিতে ২০১৮ সালে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছিল ৩ কোটি ৩৯ লাখ ডলারে (৪১৪ কোটি টাকা)। কাছাকাছি সময়ে শ্রীলঙ্কায় লাইট রেলসংক্রান্ত একই কাজে পরামর্শক নিয়োগ দেয় সোয়া কোটি ডলারে (১৫৩ কোটি টাকা)।

প্রতিযোগিতা কম, ব্যয় বেশি

জাইকা ব্যয় বেশি হওয়ার ক্ষেত্রে ভিন্ন একটি যুক্তি দেয়। জাইকার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মিয়াজাকি কাতসুরা ঢাকা সফরে এসে ১ জুলাই প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন অবকাঠামো প্রকল্পে গুরুত্ব দিচ্ছি। প্রাথমিক নির্মাণ ব্যয় যদি কম হয়, দেখা যায় সেটার মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেশি এবং এ ধরনের প্রকল্প প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’ তিনি বলেন, উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন অবকাঠামো হলো যার প্রাথমিক নির্মাণ ব্যয় বেশি, কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত ব্যয় কম। এর উদাহরণ ঢাকা মেট্রোরেল।

অবশ্য ডিএমটিসিএল ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্য দেশে জাপানি অর্থায়নের প্রকল্পের চেয়ে বাংলাদেশে ব্যয় বেশি শর্তের কারণে।

জাইকার অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা প্রকল্পের প্রায় সব কটিতেই ঠিকাদার এবং পরামর্শক ওই দেশের। কিছু ক্ষেত্রে সহযোগী হিসেবে স্থানীয় বা অন্য দেশের ঠিকাদার ও পরামর্শকেরা কাজ করেন। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই, নকশা প্রণয়ন, দরপত্র দলিল তৈরি এবং বাস্তবায়নের প্রায় সব পর্যায়ে জাপানিদের আধিক্য থাকে। এ ছাড়া দরপত্র দলিলসহ ক্রয়সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে জাইকার অনুমোদন নিতে হয়। জাইকার অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা এবং বাস্তবায়নাধীন সব প্রকল্পে একই ব্যবস্থা রয়েছে।

সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ঋণের শর্তের কারণে জাপানি ঠিকাদার ও পরামর্শকদের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে দেয়। এর বাইরে দরপত্র দলিলে কাজের এমন পদ্ধতি ও প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা জাপানি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যদের পূরণ করা প্রায় অসম্ভব।

যেমন টানেল বা পাতালপথ নির্মাণ ‘ওয়ান পাস জয়েন্ট’ পদ্ধতিতে করতে হবে বলে এমআরটি-১ প্রকল্পের দরপত্র দলিলে উল্লেখ করা হয়েছে, যা জাপানি ঠিকাদারের জন্য সুবিধাজনক।

ডিএমটিসিএলের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, শর্তের কারণে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করেও জাপানের বাইরের কোনো ঠিকাদার পাওয়া যায় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঘুরেফিরে জাপানি দু-তিনটা ঠিকাদার চূড়ান্ত দরপত্রে অংশ নেয়। তারা যে দর প্রস্তাব করে, সেটিই মেনে নিতে হয়। যেমন লাইন-১-এর ৪ নম্বর প্যাকেজে প্রাকযোগ্য ঠিকাদার ছিল ছয়টি। দরপত্র কেনে পাঁচটি। চূড়ান্ত দর প্রস্তাব করে মাত্র দুটি জাপানি প্রতিষ্ঠান। একইভাবে ৬ নম্বর প্যাকেজে প্রাকযোগ্য সাতটি ঠিকাদারই দরপত্র কেনে। কিন্তু জমা দেয় দুটি জাপানি প্রতিষ্ঠান।

প্রতি কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয় বোধ হয় বিশ্ব রেকর্ড করবে। নিঃসন্দেহে এটি অতিমূল্যায়িত উন্নয়ন। এই উন্নয়ন শ্বেতহস্তী হবে। ভর্তুকি টানতে টানতে দেউলিয়া হতে হবে।বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহনবিশেষজ্ঞ সামছুল হক‘এই উন্নয়ন শ্বেতহস্তী হবে’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহনবিশেষজ্ঞ সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, প্রতি কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয় বোধ হয় বিশ্ব রেকর্ড করবে। নিঃসন্দেহে এটি অতিমূল্যায়িত উন্নয়ন। এই উন্নয়ন শ্বেতহস্তী হবে। ভর্তুকি টানতে টানতে দেউলিয়া হতে হবে।

এই অধ্যাপক বলেন, জাপানের পেটেন্ট (মেধাস্বত্ব) করা প্রযুক্তি, ঋণের শর্তের কারণে দরপত্রে প্রকৃত প্রতিযোগিতা থাকছে না। জাপানের ঠিকাদার, পরামর্শক ও পণ্য কিনতে হয় বেশি দামে। রক্ষণাবেক্ষণেও একই প্রযুক্তি ও পণ্য কিনতে বাড়তি খরচ হয়। যেমন জাইকার অর্থায়নে কাছাকাছি সময়ে কলকাতা ও জাকার্তায় মেট্রোরেল হয়েছে। কিন্তু ঢাকার মেট্রোরেলে ব্যয় কয়েক গুণ। ফলে ভাড়াও জাকার্তা এবং কলকাতার চেয়ে ঢাকায় বেশি। নতুন করে বাড়তি ব্যয়ে মেট্রোরেল নির্মাণ করে মানুষের কাছ থেকে কত ভাড়া আদায় করা হবে, সেটা বড় প্রশ্ন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া প্রশ্নে রুল
  • পায়রা বন্দরসহ দুই প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঠিকাদারকে দরপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ
  • কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর ও সাভার থেকে ভাটারা পথে মেট্রোর ব্যয় দাঁড়াবে ২ লাখ কোটি টাকা