ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার বর্জ্য অপসারণ, নালা পরিষ্কার ও রাস্তা ঝাড়ু দেওয়া কাজের দরপত্র জমা দিতে এক ঠিকাদারকে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আজ সোমবার দুপুরে পৌরসভা কার্যালয়ের নিচতলায় এ ঘটনা ঘটে। দরপত্র জমা দিতে না পেরে ওই ঠিকাদার পৌর প্রশাসকের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছেন। পরে দরপত্র জমা নেওয়া বন্ধ করেন প্রশাসক।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ৩, ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রতিদিনের সব ধরনের বর্জ্য অপসারণ, নালা পরিষ্কার ও রাস্তা ঝাড়ু দেওয়া কাজের জন্য ৯ জুলাই দরপত্র আহ্বান করে কর্তৃপক্ষ। গতকাল রোববার ছিল দরপত্র বিক্রির শেষ দিন। আজ সোমবার বেলা দুইটা পর্যন্ত দরপত্র জমা নেওয়া হয়। পৌরসভা থেকে ছয়টি দরপত্র বিক্রি হয়। বেলা দুইটা পর্যন্ত তিনটি দরপত্র জমা পড়ে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পৌরসভার তিনজন কর্মী জানান, কিশোরগঞ্জের ভৈরবের বাসিন্দা রাজু সিং নামের এক ঠিকাদার দরপত্র জমা দিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় আসেন। নিচতলায় দরপত্র জমা দেওয়ার বাক্সের পাশে কয়েকজন ঠিকাদার অবস্থান করছিলেন। তাঁরা রাজুর পরিচয় ও আসার কারণ জানতে চান। এরপর রাজুর কাছ থেকে দরপত্র কেড়ে নিয়ে তাঁকে জোরপূর্বক পৌরসভা কার্যালয়ের বাইরে নিয়ে যান। এতে রাজু দরপত্র জমা দিতে পারেননি। বেলা দুইটা থেকে আড়াইটার দিকে রাজু বিষয়টি পৌর প্রশাসক স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক শঙ্কর কুমার বিশ্বাস ও পৌরসভার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম কাউসারকে জানান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম নূরে আলম সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দরপত্র কমিটির মধ্যে আমি নেই। তবে পৌরসভার ৩, ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্জ্য অপসারণ, নালা পরিষ্কার ও রাস্তা ঝাড়ু দেওয়ার কাজটি পরীক্ষামূলকভাবে করা হবে। ঠিকাদার সংশ্লিষ্ট এলাকার বর্জ্য অপসারণ, ড্রেন পরিষ্কার ও রাস্তায় ঝাড়ু দেওয়ার কাজ করবেন। পৌরসভা কাজটির তত্ত্বাবধান করছে।’

ঠিকাদার রাজু সিং কিশোরগঞ্জের ভৈরবের বাসিন্দা এবং মেসার্স সুপার ক্লিন বিডি লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুপুর একটায় দরপত্র জমা দিতে যাই। দুইজন লোক আমার পথ রোধ করে সেখানে যাওয়ার কারণ জানতে চান। তাঁদের একজনের বয়স ৩৬–৩৭ বছর এবং অন্যজনের বয়স ৪০ বছর হবে। কাজটি তাঁরা করবেন এবং আমাকে দরপত্র জমা দিতে নিষেধ করেন। একপর্যায়ে আমার কাছ থেকে দরপত্র ছিনিয়ে নিয়ে খাম খুলে সবকিছু দেখেন। দরপত্র ফেরত চাইলেও তাঁরা দেননি। সমস্যা হতে পারে ভেবে সেখান থেকে দরপত্র ছাড়াই আমি চলে আসি।’

পৌর প্রশাসক শঙ্কর কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, একজন দরপত্র জমা দিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন। দরপত্রের সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র একজন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেওয়া হয়েছে। সবকিছু জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে নেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ষ ক র ও র স ত ব র হ মণব ড় য় প রসভ র

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে