সমাজের মধ্যে আরেকটা সমাজ গড়ে তুলেছিল ‘বেগম’
Published: 30th, April 2025 GMT
দেশভাগের পর থেকে এ জনপদের নারীদের সামাজিক ও মনস্তাত্বিক উন্নয়নে প্রভাব বিস্তার করেছিল ‘বেগম পত্রিকা’। শহুরে সংস্কৃতিতেই শুধু নয়, প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছে বেগমের আবেদন ছিল অনেক বেশি। গ্রামে খোলা ডাকে পৌঁছাতো ‘বেগম’ বেগম পত্রিকা। ওই সময় যারা অল্পবিস্তর লেখাপড়া জানতেন তারা যেমন বেগম পত্রিকার পাঠক ছিলেন, তেমনি উচ্চশিক্ষিতরাও বেগম পড়তেন।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডাকযোগে পত্রিকাটা যেত। মজার একটা ডাক ব্যবস্থা ছিল, ‘বুক পোস্ট’। এই মাধ্যমে স্বাভাবিক ডাক মাশুলের চেয়ে অনেক কম পয়সায় একটি ডকুমেন্ট এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাঠানো যেত। আমার মনে আছে পঁচিশ পয়সায় একটি পত্রিকা চলে যেত ঢাকা থেকে। একটু ফোল্ড করে ওপরে একটি কাগজে ঠিকানা আর পঁচিশ পয়সার একটা স্ট্যাম্প লাগিয়ে দেওয়া হতো। তখনকার দিনে নিয়ম ছিল, আপনি কম টাকায় খোলা ডাকে ডকুমেন্ট পাঠাতে পারবেন। যেখানে একটি চিঠি পাঠাতে খরচ হতো আট আনা।
যদিও বেগম মূলত নারীদের পত্রিকা। কিন্তু তখনতো খুব কম মেয়েই ছিল যে স্কুল কলেজে যেত। অনেক গ্রাম ছিল, যেখানে কোনো প্রাইমারি স্কুলই ছিল না। প্রাইমারি স্কুল খুঁজতে আবার আরেক গ্রামে যেতে হতো। আশির শুরুর দিক পর্যন্ত এই চিত্র ছিল। কিছু মানুষ ব্রিটিশ আমলে চাকরিসূত্রে পরিবারসহ শহরে থাকতেন। যখন দেশ ভাগ হয়ে গেলো তখন তাদের অনেকেই গ্রামে ফিরে আসলেন। এবং তাদের মনে ওই যে ‘শহর’ ছিলো, ওই যে শহুরে সংস্কৃতিতে জ্ঞান চর্চা, লাইব্রেরিতে যাওয়া— ওই সংস্কৃতি তারা গ্রামে পেলেন না। তখন এই অভাবটা পূরণ করতো বেগম, সওগাত, মোহাম্মদী পত্রিকাগুলো। আমার নিজের দেখা যেটা, বেগম পত্রিকাটা পড়া হতো একেবারে সম্মিলিতভাবে। গ্রামে হয়তো একটা বাড়িতে বেগম রাখা হতো। সবাই ওই বাড়িতে যেতেন পত্রিকাটা পড়তে, কেউ কেউ যেতেন শুনতে। বেগম যে শুধু নারীর পত্রিকা তা কিন্তু নয়।মজার ব্যাপার হলো বেগম পুরুষেরাও পড়তেন।
আরো পড়ুন:
‘ব্লু লাইট’ যেভাবে ঘুমের ক্ষতি করে
কাজ নাকি কাজের ‘রেজাল্ট’কে প্রাধান্য দেবেন?
নিজের দেখা, আমার মায়ের দাদি, এবং আমার মায়ের মা অর্থাৎ আমার নানি ওনারা এই পত্রিকা পড়তেন। মায়ের দাদা ছিলেন তেজগাঁও থানার ওসি। তিনি যখন গ্রামে ফিরে গেলেন। তখন এই যে শহরকেন্দ্রিক তার যে পদচারণা ছিল, সেইটার ধারাবাহিকতা রক্ষা হলো বেগম পত্রিকার মাধ্যমে। কারণ তারা গ্রামে পর্যাপ্ত বই পায়নি, লাইব্রেরিতো ছিলোই না। সবচেয়ে বড় কথা হলো, তৎকালীন যে সমাজ কাঠামো, সেটা নারী শিক্ষাবান্ধব ছিল না। নারীদের পড়াশোনা করা সমাজ খুব একটা ভালো চোখে দেখতো না। আজকের নারী সমাজের যে অগ্রগতি দেখি তার ভিত্তিমূলে গেলে বেগমের একটা বিশাল ভূমিকা খুঁজে পাওয়া যাবে। বেগমের নারী পাঠক যারা ছিলেন, তারা সচেতন মা হয়ে উঠেছিলেন। উনাদের সন্তানদের পরবর্তীতে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যায় পড়তে হয়নি। তারা শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে গেছে। আমার মা এবং নানিকে দেখেছি বাড়ির শিশুরা ও পুরুষেরা ঘুমিয়ে গেলে অল্প আলোতে বেগম পত্রিকা পড়তেন। দিনের বেলায় হয়তো কাজের জন্য পড়তেন না। রাতে নিজে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পত্রিকাটা পড়তেন তারা। এখনকার মতো ঝলমলে ছিল না বেগম। নিউজপ্রিন্টের কাগজে ছাপা হতো। দেখতে এখনকার ম্যাগাজিনের মতো ছিল না। বর্তমান একটি দৈনিক পত্রিকা ভাঁজ করলে যেমন দেখায়, অনেকটা ওই আকারে প্রকাশ হতো বেগম। সমাজপতিরা বলতেন, বেগম ‘মিস লিড’ করছে নারীদেরকে। নারীদের মাথা নষ্ট করে ফেলছে। আমার জানা মতে, বেগম পত্রিকা যারা পড়তেন তারা সামাজিকভাবে এগিয়ে থাকা মানুষ।
পশ্চাৎপদ একটি গোষ্ঠী যাদেরকে সমাজ সহযোগিতা করছে না, বরং সমাজ তাদেরকে আরও পেছনের দিকে ঠেলছে; যাতে তারা সামনে আসতে না পারে—সেই জায়গায় একটা আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করেছে বেগম পত্রিকা। কারণ সব রকম তথ্য, তত্ত্ব এক জায়গায় করে একটি মলাটের মধ্যে- এই ধরনের মন মানসিকতা যাদের ছিল তাদের কাছে উপস্থাপিত হতো। এবং সেই খানে তৎকালীন ফ্যাশন, সিনেমা, নাটক, সাহিত্য তুলে ধরা হতো। এই লেখাগুলো তৃণমূল পর্যায়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতো।
‘বেগম’ পড়া আর না পড়া মানুষের মধ্যে পরিষ্কার পার্থক্য ছিল। চলাফেরা, বাচনভঙ্গিতে অনেক এগিয়ে থাকতেন বেগমের পাঠক। সেক্ষেত্রে বলা যায়, ৫০ থেকে ৮০- এর দশক বা তার পরেও নারীর সার্বিক মননশীলতা উন্নয়নে বেগমের ভূমিকা নিঃসন্দেহে অপরিসীম। অন্দরে থাকা নারীদের বিশ্বমুখী মনন গঠনে বেগম একটা দারুণ ভূমিকা পালন করেছে। সমাজের মধ্যে আরেকটা সমাজ গড়ে তুলেছে বেগম।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব গম র আম র ম ব গম প পড়ত ন
এছাড়াও পড়ুন:
অভিভাবকরা সন্তানদের নিয়ে নীলচক্র দেখতে বলছেন, কী আছে এই সিনেমায়?
সিনেমা হলে বসে বাবা সন্তানের হাত ধরছেন, এক তরুণী মুছছেন চোখের কোণ, পেছনের সারিতে একজন মা কানে কানে ছেলের সঙ্গে কিছু বলছেন; এমন দৃশ্য এখন দেখা যাচ্ছে ঈদের ‘নীলচক্র’ দেখতে গিয়ে।
দর্শক বলছেন ‘নীলচক্র’ শুধু বিনোদনের সিনেমা নয়, এটা সমাসাময়িক গল্পের এমন একটি সাসপেন্স থ্রিলার যা, এখনকার ইন্টারনেট প্রজন্মকে সচেতন করছে।
এই যেমন বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্স থেকে বের হওয়া এক অভিভাবক ‘নীলচক্র’ সিনেমা দেখে বলছিলেন, ‘আমার মেয়ে মোবাইলে ব্যস্ত থাকে সবসময়, সেটা নিয়ে আমাদের অভিযোগের শেষ নেই। আজ একসঙ্গে আমরা সিনেমাটি উপভোগ করলাম। ইন্টারনেটের একটা ভুল কিভাবে আমাদের জীবন শেষ করে দিতে পারে সেটা দেখলাম। সিনেমা শেষে ও নিজে থেকে আমার কাঁধে মাথা রাখল। কিছু বলার ছিল না,শুধু অনুভব করলাম, ‘নীলচক্র’ আমাদের আরও কাছাকাছি এনে দিল।’
যমুনা ব্লকবাস্টার সিনেমাস ‘নীলচক্র’ দেখে ফেরা একদল তরুণী বলছিলেন, ‘সিনেমাটি দেখে আমার মধ্যে সচেতনতা এসেছে। আমার একটা ব্যক্তিগত ভিডিও কিংবা ছবি আমার পুরো পরিবারকে শেষ করে দিতে পারে সেই ধারণা এলো। সিনেমায় আরিফিন শুভ দারুণ অভিনয় করেছেন, তাঁকে ও পরিচালককে ধন্যবাদ আমাদের দেশে আমার দেশের জন্য দরকারী এমন একটি গল্প নিয়ে সিনেমা করার জন্য।’
একজন মা এসেছিলেন সিনেমাটি দেখতে। তিনি বলছেন, ‘আমি সিনেমাটি দারুণ উপভোগ করেছি। আমাদের সমাজের জন্য খুব দরকারী গল্পের এই সিনেমা। আমার পরিবারে ছেলে ও মেয়ে আছে তরুণ। আমি তাঁদের নিয়ে এই সিনেমাটি আবার দেখব শুধুমাত্র সচেতনার জন্য।’
সিনেমাটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করে দারুণ প্রশংসায় ভাসছেন চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ। এই সিনেমা প্রসঙ্গে তাঁর ভাষ্য, ‘এই গল্প এখনকার। ইন্টারনেট যুগে একটা অসাবধান ক্লিক পুরো জীবন বদলে দিতে পারে। এটাই দেখানো হয়েছে। সাহসী বলেই করেছি, দরকারি বলেই করেছি। অনেকেই সিনেমাটি প্লট দেখে প্রশংসা করছেন জেনে ভাল লাগছে। অভিভাবক হোন বা তরুণ, যারা অনলাইনে থাকেন, সবারই দেখা উচিত। চোখ বন্ধ রাখলে বিপদ থেমে থাকে না।’
একটা ক্লিক, একটা ভিডিও, আর তাতেই পাল্টে যাচ্ছে জীবনের গতিপথ। শহরজুড়ে ফাঁস হচ্ছে একের পর এক ব্যক্তিগত ভিডিও। অন্ধকার, আতঙ্ক আর টানটান উত্তেজনায় মোড়ানো এক সময়ের গল্প নিয়ে পরিচালক মিঠু খানের ‘নীলচক্র: ব্লু সার্কেল’ এ এবার পর্দায় ফিরছেন আরিফিন শুভ। তাঁর বিপরীতে আছে মন্দিরা চক্রবর্তী।