গত বছর ভয়াবহ বন্যায় আশ্রয় হারানো ফেনীর ১১০টি পরিবারকে নতুন ঘর উপহার দেওয়া হয়েছে। ‘নিজ বসতভিটায় বিশেষ আবাসন নির্মাণ’ শীর্ষক পাইলট প্রকল্পের আওতায় ঘরগুলো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকালে অনলাইনে যুক্ত হয়ে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.

মুহাম্মদ ইউনূস। 

আরো পড়ুন: চব্বিশের বন্যা স্বাভাবিক ছিল না: প্রধান উপদেষ্টা

আরো পড়ুন:

কঙ্গোর রাজধানীতে প্রবল বৃষ্টিপাতে ৩৩ জনের প্রাণহানি

স্লুইসগেট মেরামত না হওয়ায় হুমকিতে ৩ উপজেলার বোরো ধান

অনুষ্ঠানে প্রতীকীভাবে ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়নের শহীদুল ইসলামের হাতে ঘরের চাবি তুলে দেওয়া হয়। চাবি হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা সেনানিবাসের জিওসি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ছিদ্দিকী।

ফেনী জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সদর উপজেলায় ৩৫টি, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও পরশুরামে ২০টি, দাগনভূঞায় ১০টি এবং সোনাগাজীতে ৫টি করে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। একই প্রকল্পে নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামেও ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে।

উপকারভোগী ফেনী সদর উপজেলার শর্শদী ইউনিয়নের জামাল উদ্দিন বলেন, “বন্যায় আমার ঘর একেবারে ভেঙে গিয়েছিল। ছেলে-মেয়েকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হয়েছিল। এই ঘর পেয়ে মনে হচ্ছে, জীবনটা আবারো শুরু হলো।”

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “এটি কোনো স্বাভাবিক বন্যা ছিল না। মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভয়াবহতা বোঝা গেছে, বন্যা শেষ হওয়ার পর। তখন মানুষ জানমাল রক্ষায় ব্যস্ত ছিল। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো গেছে। আমরা দেখাতে পেরেছি, কীভাবে সৎভাবে এবং সম্মিলিতভাবে দুর্যোগ মোকাবিলা করা যায়।”

তিনি আরো বলেন, “ঘর নির্মাণের সময় রাস্তা, সেতু ভাঙা ছিল। কাজটা সহজ ছিল না। তারপরও সেনাবাহিনী আন্তরিকভাবে কাজ করেছে। এটি ছোট প্রকল্প হলেও বড় বার্তা দিয়েছে—সরকার জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে।”

ফেনী জেলা প্রশাসক মো.সাইফুল ইসলাম জানান, গত বছরের বন্যায় ফেনীতে ১ হাজার ৭১৮টি ঘর সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছিল। প্রথম ধাপে ১১০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।”

ঘর হস্তান্তরের অনুষ্ঠানে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, সেনাবাহিনীর সদস্য ও ফেনীর বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/সাহাব/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বন য উপজ ল র প রকল প বন য য়

এছাড়াও পড়ুন:

গোদাগাড়ীতে সন্ত্রাসী হামলায় নারীসহ ৬ জন আহত

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে একটি পরিবার। এতে ছয়জন আহত হয়েছেন। এছাড়া তাদের বাড়িঘরে ভাঙচুর করা হয়েছে। ধানের পালায় অগ্নিসংযোগ এবং খেতের পেয়ারা বাগান কেটে দেয়া হয়েছে। এতে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের পানিপার গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার (১১ জুন) প্রথমে পেয়ারা বাগানের ৪১টি গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর দিন হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। আহত ছয়জন এখন গোদাগাড়ী ৩১ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। 

হাসপাতালে ভর্তিরা হলেন, চর আষাড়িয়াদহ পানিপার গ্রামের আল্লাম হোসেন, তার ছেলে গোলাম মোস্তফা বাবু, মেয়ে ফাতেমা বেগম, নাতি জিহাদ (১৪), ইয়াকুব আলী এবং তাদের প্রতিবেশী বকুল ওরফে কান্দু। তাদের মধ্যে আল্লামের পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়। ফাতেমার গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করা হয়। এছাড়া তাকে শ্লীলতাহানিও করা হয়।

আরো পড়ুন:

বগুড়ায় আসামির ছুরিকাঘাতে ২ পুলিশ আহত

আড়াইহাজারে জামায়াতের পথসভায় বিএনপির হামলা, আহত ৫

আহতরা জানান, দিয়াড় মহব্বতপুর গ্রামের জামিলুর রহমানের কাছ থেকে আল্লাম হোসেনের স্ত্রী ও ছেলে গোলাম মোস্তফা ২০১৬ সালের ১৮ মে  শন্য দশমিক ৪৯৫০ একর ও তার আরেক ছেলে মুরশালীন ইসলাম ২০১৮ সালের ৯ মে শূন্য দশমিক ১১০০ একর জমি কেনেন। এর দলিলও করা হয়। জামিলুর রহমান আরএস রেকর্ডমূলে জমি বিক্রি করেন। পরে বিডিএস রেকর্ডে দলিলের কথা গোপন করে এসব জমি আবার নিজেদের নামে রেকর্ড করা হয়। এরপর থেকে তারা জমিগুলো আবার দখলের চেষ্টা করছিলেন।

তারা আরো জানান, জমি কেনার পর প্রায় পাঁচ বছর আগে সেখানে পেয়ারা বাগান করা হয়। গত ১১ জুন সকালে জামিলুর রহমান ও তার ভাই আদিল হোসেনের নেতৃত্বে তাদের ছেলেরা গিয়ে পেয়ারা বাগানের ৪১টি গাছ কেটে ফেলে। এ ঘটনায় আল্লাম হোসেন গ্রামের লোকজনের কাছে নালিশ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পরদিন জামিলুর রহমান, তার ভাই আদিল হোসেন এবং তাদের ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী ধারালো হাঁসুয়া, চাইনিজ কুড়াল, বল্লম ও বাঁশের লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আল্লাম হোসেনের বাড়িতে হামলা চালান। বাড়িটিতে ভাঙচুর করা হয়। অগ্নিসংযোগ করা হয় ধানের পালায়। দুই দিনের হামলায় প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তারা। 

আহত আল্লাম হোসেন জানান, হামলাকারীরা তার পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। ধানের পালার আগুন নেভাতে গেলে হামলাকারীরা তার নাতি জিহাদকে ধাক্কা দিয়ে আগুনের ভেতর ফেলে দেয়। এতে তার পা পুড়ে যায়। তার আরেক নাতি ইয়াকুবকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। তাদের বাঁচাতে গেলে মেয়ে ফাতেমার গলায় হাঁসুয়া দিয়ে আঘাত করা হয়। তাকে শ্লীলতাহানিও করা হয়। ছেলে গোলাম মোস্তফা বাবুকে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তাকে বাঁচাতে গেলে প্রতিবেশী বকুলকেও পিটিয়ে আহত করা হয়।

ভুক্তভোগী আল্লাম আরো জানান, হামলাকারীরা তাদের আহত অবস্থায় ফেলে গেলে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। হামলাকারীরা এখনো তাদের বাড়ি ঘিরে রেখেছেন। জমির দাবি করলে তাদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। তারা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। হাসপাতাল থেকে তাদের ছুটি দেয়া হলে এ ঘটনায় তারা মামলা করবেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত জামিলুর রহমানকে কয়েকদফা ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন জানান, ঘটনা তিনি শুনেছেন। আহতরা থানায় অভিযোগ করতে চেয়েছেন। অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 
 

ঢাকা/কেয়া/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ