জাতীয় দলের কোচিং স্টাফ নিয়োগের দায়িত্ব বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের কাছ থেকে চেয়ে নেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে এটা তাঁর প্রাপ্য অধিকারও। সে অনুযায়ী প্রধান কোচ ফিল সিমন্সকে দীর্ঘ মেয়াদে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। 

জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের নিয়োগও সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কোনো এক অজানা কারণে এখন পর্যন্ত অফিসিয়ালি নিয়োগ পাননি তিনি। তবে বিসিবির একজন কর্মকর্তা জানান, সালাউদ্দিনকে ২০২৭ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি সিদ্ধান্ত হয়ে আছে। 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে সালাউদ্দিনকে নিয়োগপত্র দেওয়ার কথা ছিল। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ দেশে না থাকায় সেটা সম্ভব হয়নি। তাই চুক্তি ছাড়াই জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করছেন সালাউদ্দিন। এ ব্যাপারে চেষ্টা করা হলে ফোন ধরেননি সহকারী কোচ। নাজমুল আবেদীন ফাহিমও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
 
বিসিবি সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরই জাতীয় দলে দেশি কোচ নিয়োগের উদ্যোগ নেন ফারুক আহমেদ। সে অনুযায়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত ফিল সিমন্সের সহকারী ছিলেন সালাউদ্দিন। বিসিবি সভাপতি ও ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে ফারুক সে নিয়োগ দিয়েছিলেন। তিনি চাইলে সভাপতির ক্ষমতাবলে এখনও নিয়োগ দিতে পারেন। সভাপতি ক্ষমতাবলে এ নিয়োগ দিলে নাজমুল আবেদীন মনঃক্ষুণ্ন হয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ আনতে পারেন বলে মনে করেন একজন কর্মকর্তা। 

তিনি বলেন, ‘বিভেদের গল্প তখন পৌঁছে যাবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে। নিজেদের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা এড়াতেই অপেক্ষা করছেন বোর্ড সভাপতি।’ সালাউদ্দিন কেন নিয়োগ ছাড়া কাজ করছেন জানতে চাওয়া হলে নাজমুল আবেদীন প্রথমে বলেন, ‘চুক্তি ছাড়া কেউ কাজ করতে পারে? চুক্তি হয়েছে বলেই তো কাজ করছে।’ গতকাল পর্যন্ত সহকারী কোচ সালাউদ্দিনের সঙ্গে যে চুক্তি হয়নি সমকাল বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে বলার পর ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান বলেন, ‘নো কমেন্টস।’ 

সালাউদ্দিনের নিয়োগ প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার কারণ হিসেবে ভিন্ন অভিমত পাওয়া যায় বিসিবিতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিসিবি সভাপতির পছন্দের প্রার্থী হওয়ায় ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান নিয়োগপত্র অনুমোদনের সুপারিশ করছেন না।’ 

এ অভিযোগের সত্যতাও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি নাজমুল আবেদীন বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি না হওয়ায়। তবে বোর্ডের অন্য একটি সূত্র বলেছে, সালাউদ্দিনের নিয়োগের বিষয়টি নীতিগতভাবে চূড়ান্ত। তিনি বলেন, ‘সভাপতি আইসিসির মিটিংয়ে যাওয়ায় এবং জাতীয় দলের ক্যাম্প শুরু হওয়ায় চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর হয়নি। এ সপ্তাহে চুক্তি হতে পারে।’

বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য ফারুক আহমদকে ফোন করে পাওয়া যায়নি। হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দিলেও সাড়া দেননি তিনি। বিসিবিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিজামউদ্দিন চৌধুরী। তিনিও এ ব্যাপারে কোনো উত্তর দিতে রাজি হননি। কারণ কোচ নিয়োগে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের সুপারিশ ও পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন প্রয়োজন। প্রশাসনিক বিভাগ শুধু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে। 

দেশি কোচ সালাউদ্দিনের নিয়োগ বিলম্ব হলেও বিদেশি পেস বোলিং কোচ আন্দ্রে অ্যাডামসের জায়গায় শিগগিরই শন টেইটকে দেখা যেতে পারে। পিএসএল শেষ হলে জাতীয় দলের পাকিস্তান সফরে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানা গেছে। শন টেইট বর্তমানে পিএসএলের দল করাচি কিংসে কাজ করছেন। যদিও অ্যাডামসকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি বিসিবি কর্মকর্তারা। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ত য় দল র কর মকর ত ক জ করছ হওয় র সহক র ব ষয়ট করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

দিনমজুর বাদশা মিয়াকে আমাদের সাধুবাদ

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের দিনমজুর বাদশা মিয়া তাঁর এলাকায় ‘গাছের বন্ধু বাদশা’ নামে পরিচিত। এই পরিচয় কোনো সরকারি পদক বা ধনাঢ্য প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি থেকে আসেনি; এসেছে বিগত ২০ বছর ধরে ৩০ হাজারের বেশি গাছ লাগিয়ে। তাঁর এ কাজ প্রমাণ করে, পরিবেশপ্রেম ও নিঃস্বার্থ সামাজিক দায়বদ্ধতা কোনো অর্থ বা ক্ষমতার মুখাপেক্ষী নয়, এটি গভীর মানবিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ।

৭২ বছর বয়সী বাদশা মিয়ার স্লোগান—এক মুঠো ভাত নয়, এক মুঠো অক্সিজেন চাই। আজকের পরিবেশ সংকটের যুগে এক শক্তিশালী দার্শনিক বার্তা। বাদশা মিয়ার গাছ লাগানোর গল্পটি কেবল সবুজায়নের নয়, এটি এক পিতার গভীর আবেগের গল্প। ২০০৪ সালের এক বিকেলে, টাকার অভাবে সন্তানদের আমের আবদার মেটাতে না পারার কষ্ট থেকে তিনি উপলব্ধি করেন, তাঁর মতো গরিব প্রতিবেশীর সন্তানেরাও ফল কিনতে পারে না। সেই ব্যক্তিগত বেদনা থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন—তিনি এমন কিছু করবেন, যা তাঁর নিজের ও দরিদ্র প্রতিবেশীদের সন্তানদের জন্য ফলের অধিকার নিশ্চিত করবে।

এই স্বপ্ন পূরণে বাদশা মিয়ার ত্যাগ ছিল হিমালয়সম। প্রাথমিক পুঁজি জোগাতে তিনি মেয়ের কানের সোনার রিং বিক্রি করে গাছের গোড়ায় খুঁটি দেন। এরপর সিদ্ধান্ত নেন, দিনমজুরি করে যা আয় করবেন, তার চার ভাগের এক ভাগ ব্যয় করবেন চারা লাগানো এবং পরিচর্যার পেছনে। একজন ভূমিহীন দিনমজুরের কাছে আয়ের এক-চতুর্থাংশ মানে জীবনধারণের সঙ্গে সরাসরি আপস করা। এই আত্মত্যাগই প্রমাণ করে, তাঁর কাছে এই গাছগুলো নিছক চারা নয়—গভীর মমতায় লালন করা এগুলো যেন তাঁর সন্তানের মতোই।

বাদশা মিয়ার কাজকে সমাজ প্রথম দিকে মোটেই সহজভাবে নেয়নি। উল্টো গ্রামের কিছু মানুষ তাঁকে ‘পাগল’ বলে উপহাস করেছে। গাছের চারা লাগাতে গিয়ে তিনি মানুষের বাধা পেয়েছেন, তাঁর লাগানো গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে এবং একপর্যায়ে তাঁকে মারধরও করা হয়েছে। কিন্তু সেই সমাজের মানুষই এখন বাদশা মিয়ার দীর্ঘ ত্যাগ ও পরিশ্রমের সুফল ভোগ করছে।

বাদশা মিয়ার এই উদ্যোগ কেবল একটি স্থানীয় গল্প নয়, এটি সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি শিক্ষা। কোটি কোটি টাকার বন সৃজন প্রকল্প যেখানে অনেক সময় লোকদেখানো বা অপচয়ের শিকার হয়, সেখানে একজন দিনমজুর দেখিয়ে দিলেন, ভালোবাসা ও সদিচ্ছা থাকলে সামান্য সম্পদ দিয়েই পরিবেশবিপ্লব ঘটানো সম্ভব।

উপজেলা প্রশাসন বাদশা মিয়াকে পুরস্কৃত করেছে, যা প্রশংসনীয়। আমরা আশা করব, স্থানীয় বন বিভাগ ও কৃষি বিভাগ বাদশাকে গাছ লাগানোর কাজে স্থায়ীভাবে সহযোগিতা করবে। বাদশা মিয়ারা আমাদের অনুপ্রেরণা। তাঁর প্রতি আমাদের অভিবাদন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিরিয়ায় বিমান ঘাঁটি করবে যুক্তরাষ্ট্র
  • অ-অভিবাসী ৮০ হাজার ভিসা বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন
  • মুগ্ধের ভাই স্নিগ্ধ: বিএনপিতে যোগ দিলেন যে কারণে 
  • যে ৪ ‘মানি রুল’ ধনীরা কাউকে বলেন না
  • নিউ ইয়র্ক-এর ফাস্ট লেডি ‘রামা দুয়াজি’
  • রোমান সম্রাজ্ঞী মেসালিনাকে যেকারণে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিলো
  • ডাকসু নেতার প্রবীণ ব্যক্তিকে লাঠি হাতে শাসানো নিয়ে সমালোচনা-বিতর্ক
  • এক কাপ কফি খাও, তারপর লিখতে বসো—মতি ভাই বললেন
  • মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টকে চুমু দেওয়ার চেষ্টা মাতাল ব্যক্তির
  • দিনমজুর বাদশা মিয়াকে আমাদের সাধুবাদ