নুরুল-মাহিদুলের সেঞ্চুরির পর দাপট দেখিয়ে জয় বাংলাদেশের
Published: 7th, May 2025 GMT
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে দারুণ পারফর্ম করে বাংলাদেশ ‘এ’ দলে জায়গা পেয়েছিলেন নুরুল হাসান, কাঁধে উঠেছিল নেতৃত্বের ভারও। প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবের ফর্মটা তিনি টেনে নিয়ে এসেছেন দেশের জার্সিতে।
আজ সিলেটে নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ৫০ ওভারের ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছেন নুরুল। তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন আরেক উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান মাহিদুল ইসলামও। দুজনের সেঞ্চুরিতে প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ ‘এ’ দল ৫ উইকেটে ৩৪৪ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে। যে সংগ্রহ শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন ৮৭ রানের জয়।
এর আগে সিরিজের প্রথম ম্যাচেও ৭ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ। টানা দুই জয়ে তিন ম্যাচের বেসরকারি ওয়ানডে সিরিজটি এক ম্যাচ হাতে রেখেই নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ‘এ’ দল আগের ম্যাচে জিতেছিল বোলিং দাপটে, কিউইদের মাত্র ১৪৭ রানে অলআউট করে। আজ নিজেদের সামর্থ্য তুলে ধরেছেন ব্যাটসম্যানেরা। টস হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ ‘এ’ অবশ্য ১২ রানেই ওপেনার পারভেজ হোসেনকে (৮) হারিয়ে ফেলেছিল। এরপর এনামুল হক (৩৪ বলে ৩৯) ও মোহাম্মদ নাঈম (৪১ বলে ৪০) আশা দেখিয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। তাঁরা দুজন ফিরে যাওয়ার পর জুটি বাঁধেন নুরুল ও মাহিদুল।
চতুর্থ উইকেটে দুজনের জুটিতে আসে ২২৫ রান, দুজনই পান তিন অঙ্কের দেখাও। তাতে অবশ্য ভাগ্যের সহায়ও আছে। ৮১ রানে থাকতে নুরুলের ক্যাচ ছাড়েন ক্রিস্টিয়ান ক্লার্কসন, ৮৩ রানে থাকতে মাহিদুলের সহজ ক্যাচ ছাড়েন জো কার্টার। শেষ পর্যন্ত মাহিদুল ৭ চার ও ৫ ছক্কায় ১০৮ বলে ১০৫ আর নুরুল ১০১ বলে ৭ চার ও সমান ছক্কায় ১১২ রান করে আউট হন।
বড় রান তাড়ায় উদ্বোধনী জুটিতে ৫২ রান তোলার পর ধীরে ধীরে খেই হারাতে শুরু করে নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দল। শেষ পর্যন্ত ৪৩.
সিরিজের তৃতীয় বেসরকারি ওয়ানডে ১০ মে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
গানে–আবৃত্তিতে রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধা
জমিদারির কাজে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, শাহজাদপুর, নওগাঁর পতিসরে বহুবার ভ্রমণ করেছিলেন। পদ্মায় বোটে করে ভাসতে ভাসতে দেখেছেন বাংলার সজল সবুজ প্রকৃতি। নদীর দুই পারের মানুষের জীবনযাত্রা। বাউল, ভাটিয়ালি গানের সুরে মোহিত হয়েছে কবির চিত্ত। কবি সেই সব দেখা ও শোনার অভিজ্ঞতা, আবেগ, অনুভব প্রকাশ করেছেন গানে, কবিতায়, গল্পে আর ‘ছিন্নপত্র’ নামের চিঠিতে। কবির প্রয়াণ দিবসের আয়োজনে সেই রচনা থেকে পাঠ আর গানে গানে শ্রদ্ধা নিবেদন করল ছায়ানট।
গতকাল বুধবার ২২ শ্রাবণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবসে ‘অন্তরতর হে-বাংলাদেশের রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। সন্ধ্যা সাতটায় ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি–ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল সম্মেলক কণ্ঠে ‘অন্তর মম বিকশিত কর অন্তরতর হে’ গানটি দিয়ে। পরে ইফফাত বিনতে নাজি গেয়েছেন ‘চিত্ত পিপাসিতরে গীত সুধার তরে’। গানের ফাঁকে ফাাঁকে পদ্মাপারের জীবনযাত্রা নিয়ে কবির লেখা থেকে পাঠ ও কবিতা আবৃত্তি করেছেন সুমনা বিশ্বাস ও জহিরুল হক খান। এরপর আবার সম্মেলক কণ্ঠের গান ‘হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে ময়ূরের মতো নাচে রে’।
একদা পদ্মাঘাটে লেগেছিল কবির বোট। পাশেই গ্রামের কোনো এক বধূকে বিদায় দিতে সমবেত হয়েছিল তাঁর বিভিন্ন বয়সী আত্মীয়স্বজন। নানা কথোপকথনে মেতে উঠেছিলেন তাঁরা। কবি সেই বর্ণনা লিখেছিলেন তাঁর অনন্য কাব্যময় ভাষায়। সেটি পাঠ করা হলো। তারপর দুটি একক কণ্ঠের গান। ‘ওলো সই, ওলো সই আমার ইচ্ছা করে তোদের মতো মনের কথা কই’ গানটি গেয়ে শোনালেন মাসকুরা আখতার। অমেয়া প্রতীতি পরিবেশন করলেন ‘তোমার গোপন কথাটি, সখী, রেখো না মনে’।
এবার এক ধবল জ্যোৎস্নার বর্ণনা। পদ্মার জনমানবহীন, বৃক্ষ–তৃণশূন্য, দিগন্তবিস্তৃত ধু ধু বালুচর। কোজাগর পূর্ণিমার জ্যোৎস্নাস্নাত সেই চর দেখে কবির মন ভরে উঠেছিল ভাবাবেগে। তাঁর রচনা থেকে সে রাতের বর্ণনা পাঠের পর অভয়া দত্ত গেয়ে শোনালেন ‘আজি যে রজনী যায়’। দীপ্র নিশান্ত শোনালেন ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা তুমি আমার সাধের সাধনা।’
অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছিল পাঠ আবৃত্তি আর গানে গানে। গান নির্বাচন করা হয়েছিল পাঠ ও আবৃত্তির বিষয়ের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে। ‘দুই পাখি’ কবিতাটি আবৃত্তির পরে কবিতাটির গান পরিবেশন করেন তাহমিদ ওয়াসীফ। ‘বঁধু মিছে রাগ করো না’ গেয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান।
পূর্ব বাংলায় এসে বাউলগানের সুর, মরমি ভাবধারায় কবি গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। সে কথা তিনি লিখেছেনও নানা রচনা ও চিঠিতে। তার খানিকটা পাঠ করে শোনানো হলো শ্রোতাদের। তারপর ‘আমি কান পেতে রই’ গানটি পরিবেশন করলেন অভিজিৎ দাস।
কবির অন্তরের যে আধ্যাত্মিক ভাব ও ভাবনা, সেসব নিয়েই তিনি নৈবেদ্য কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো রচনা করছিলেন। এই কবিতাগুলো নিয়ে তখন স্তুতি ও সমালোচনা, চারপাশের নানা রকম কোলাহল। সেসবের কোনো কিছুতেই তিনি বিচলিত বোধ করছিলেন না। বন্ধু বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুকে তাঁর ভাব–ভাবনার কথা জানিয়ে পত্র রচনা করেছিলেন কবি। পত্র থেকে পাঠ করা হলো। পরে ‘কোলাহল তো বারণ হলো’ গানটি গাইলেন মনীষা সরকার। আজিজুর রহমান তুহিন শোনালেন ‘জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ’। শেষে সম্মেলক কণ্ঠে ‘আজ বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ পরিবেশনা। আর সমাপ্তি হলো বরাবরের মতোই জাতীয় সংগীত দিয়ে।