সংসার সুখের হয় শাশুড়ির গুণে, কিন্তু কীভাবে
Published: 12th, May 2025 GMT
লিখতে বসার আগে ফেসবুকে একটা পোস্টে চোখ আটকে গেল। যৌথ পরিবারে তিন মাস হয় বিয়ে হওয়া এক বান্ধবী লিখেছে, ‘ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, পুত্রবধূ ও নিজের ছেলের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারেন মা। অথচ অনেকে কেবল উল্টোটাই করেন।’
এক সাক্ষাৎকারে ভারতীয় অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুরের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি কীভাবে সংসারের বিভিন্ন রকম মানুষ সামলান? উত্তরে বলেছিলেন, ‘আমি সে চেষ্টাই করি না। এ জন্যই বোধ হয় সব ঠিক আছে।’
এখানে উল্লেখ্য, শর্মিলা ঠাকুরের ছেলে বলিউড অভিনেতা সাইফ আলী খান এবং তাঁর পুত্রবধূ আরেক বলিউড তারকা কারিনা কাপুর খান। ওই সাক্ষাৎকারে শর্মিলা আরও বলেন, ‘আমি কারও কাছ থেকে উচ্চাশা রাখি না। ওরা সবাই বড় হয়েছে। ওদের জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেচনা আছে, নিজেদের ব্যক্তিগত জায়গা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে একটু সংবেদনশীল থাকতে হবে। আমি কেবল নিজের দায়িত্বটুকু ভালোভাবে পালন করি।’
যুক্তরাষ্ট্রের সুজু মিগেল প্যারেন্টিং বিশেষজ্ঞ। তিনি ‘এম্পটি নেস্ট ব্লেসড’ নামে সন্তান পালনবিষয়ক একটি অনলাইন পোর্টালে লেখালেখিও করেন। তিনি দুই পুত্র ও এক কন্যার মা। তাঁর ছেলেরা বিবাহিত। ‘হাউ টু বি আ গুড মাদার ইন ল’ নামে একটি বই লিখেছেন সুজু। তিনি বলেন, ‘ভালো শাশুড়ি হওয়ার কোনো আইন, নিয়মকানুন আমি পাইনি। তবে আমার শাশুড়িকে দেখে শিখেছি। আর এখন দুই পুত্রবধূর শাশুড়ি হওয়ার পর প্রতিনিয়ত হাতে–কলমে শিখছি। নিজে ভালো শাশুড়ি হওয়ার কোনো বই পাইনি। তাই নিজের অভিজ্ঞতাই লিখে ফেলেছি। অন্যের যদি কিছুটা হলেও কাজে লাগে…।’
সুজু মিগেল আরও বলেন, ‘ভালো শাশুড়ি হওয়ার জন্য একবাক্যে বলতে গেলে নিজের জীবনে, নিজের কাজে মনোযোগী হওয়া, প্রত্যাশা না রাখা, পরিবারের নতুন সদস্যকে সর্বোচ্চ ইতিবাচকতার সঙ্গে গ্রহণ করা, সহানুভূতিশীল হওয়া, ক্ষমা করা আর উপহার দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।’
আরও পড়ুনবউ–শাশুড়ির সম্পর্ক ভালো করার ৯টি উপায়২২ জানুয়ারি ২০২৪‘হাউ টু বি দ্য বেস্ট মাদার ইন ল ইউ ক্যান বি’ শিরোনামে তিনি যে লেখাটি লিখেছেন, সেখান থেকে ভালো শাশুড়ি হওয়ার কয়েকটি নিয়ম থাকল মিগেলের বিবৃতিতে।
১.
২. ছেলে বা মেয়ের সংসার এখন তাদের প্রথম অগ্রাধিকার। তাদেরকে নিজেদের দায়িত্ব বুঝে নিতে দিন। সময়টাকে উপভোগ করতে দিন। নিজেদের বোঝাপড়ার পূর্ণ সুযোগ দিন। তাদের উপার্জিত অর্থ তারা কী করবে বা কোন খাতে খরচ করবে, সেটা একান্তই তাদের ব্যাপার। কবে তারা সন্তান নেবে বা আদৌ নেবে কি না, সে সিদ্ধান্ত একান্তই তাদের। এককথায়, অন্যের সংসারে নাক গলাতে যাবেন না। সেটা আপনার ছেলে বা মেয়ে হলেও না! কেননা ‘ব্যক্তিগত স্পেস’কে সম্মান করতেই হবে। নয়তো জটিলতা তৈরি হবেই।
৩. পুত্রবধূ আর আপনার মধ্যে যতই অমিল থাকুক, মনে রাখবেন, আপনাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মিল হচ্ছে আপনারা দুজনেই একই মানুষকে ভালোবাসেন। আমি যেমন আমার ছেলেকে ভালোবাসি, সে-ও তার জীবনসঙ্গীকে ভালোবাসে। পরিবারের গুরুজন হিসেবে, ছেলে বা মেয়ের মা হিসেবে মেয়েজামাই বা পুত্রবধূকে আপন করে নেওয়ার দায়িত্ব শাশুড়ি হিসেবে একান্তই আমার।
৪. আপনি যেটাতে মনোযোগ দেবেন, সেটাই বেড়ে উঠবে। আপনি যদি আপনার পুত্রবধূর ভুলগুলোতে মনোযোগী হন, সেসব নিয়েই কথা বলেন, ভুল বাড়বে। আপনার চোখে কেবল ভুলই ধরা পড়বে। বরং তার ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে কথা বলুন। প্রশংসা করুন। দৃশ্যপট ইতিবাচকভাবে বদলে যাবে জাদুর মতোই।
আরও পড়ুনবউয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করতে শাশুড়ি ও ননদের কী করা উচিত১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪৫. পুত্রবধূর সঙ্গে ভালো সময় কাটান। নিজেরা একই ধরনের পোশাক কিনতে পারেন। সেটি পরে কারও জন্মদিন উদ্যাপন করতে পারেন বা বাইরে কোথাও খেতে যেতে পারেন।
৬. মনে রাখবেন, আপনি আপনার পুত্র, কন্যা, পুত্রবধূ, মেয়েজামাই কাউকে যদি ‘প্যারা দেন’, সেটা ‘সুদে–আসলে’ আরও বড় হয়ে আপনার কাছেই ফিরে আসবে। ধরুন, আপনি পুত্রবধূর সম্পর্কে নেতিবাচক কোনো কথা বললেন আপনার ছেলের কাছে। ফলে আপনি কেবল ছেলে আর বউয়ের মধ্যেই ঝামেলা বাধালেন না, পাশাপাশি আপনার সঙ্গে ছেলে ও পুত্রবধূর সম্পর্কেও তৈরি হলো জটিলতা। তাই কোনো নেতিবাচক মন্তব্য নয়!
৭. সব সংসারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কমবেশি ঝামেলা হয়ই। যখন তাদের কেউ একজন আপনার কাছে এ রকম সময় সাহায্য চাইতে আসে, সব কথা না শুনে আগেই উপদেশ বা পরামর্শ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। নিরপেক্ষভাবে সমাধানের উদ্দেশ্যে কথা বলুন।
৮. ভালো শাশুড়ি যে আপনাকে হতেই হবে, এমন কোনো কথা নেই। আপনার কারণে সন্তানের সংসারে যাতে কোনো ধরনের জটিলতা তৈরি না হয়, কেবল সেটুকু নিশ্চিত করুন। তাতেই আপনি দিব্যি পাস করে গেলেন!
সূত্র: এম্পটি নেস্ট ব্লেসড
আরও পড়ুনভালো শাশুড়ি হবেন কীভাবে০৯ আগস্ট ২০২৩উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ত রবধ র র জ বন হওয় র আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
অভিনয় নাকি নির্মাণ, কোন পথে হাঁটছেন পলাশ
প্রথমে নির্মাতা, পরে হয়ে গেলেন অভিনেতা। ভিন্নধর্মী অভিনয় দিয়ে এখন জয় করছেন দর্শক হৃদয়। তিনি ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা জিয়াউল হক পলাশ। এ অভিনেতা যখনই নতুন কোনো কাজ নিয়ে হাজির হন, দর্শক তা সাদরে গ্রহণ করেন। চেনা ছকের বাইরে গত ঈদে তাঁকে দেখা গেছে ‘কেন এই সঙ্গতা’ নাটকে। পারিবারিক গল্পের এ নাটকটিতে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে।
পলাশ বলেন, ‘আমি সব সময় ভালো গল্প ও স্ক্রিপ্টের সঙ্গে থাকতে চেয়েছি। কাজের ফর্দ ঘাটলে দেখবেন আমার প্রতিটি কাজই আলাদা। ‘কেন এই সঙ্গতা’ আমার কাছে ভিন্নধর্মী গল্প মনে হয়েছে। এটি আসলে অনেক মানুষের গল্প। তা ছাড়া নির্মাতা আশিকুর রহমান পছন্দের একজন নির্মাতা। তাঁর সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা আমার সবসময় থাকে। সে কারণেই কাজটি করেছি। কাজটিতে দর্শক সাড়াও মিলছে বেশ।’
‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নাটকে কাবিলা চরিত্রে অভিনয় করে রাতারাতি এই নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন পলাশ। কাবিলা চরিত্রটি এখনও মানুষের মুখে মুখে। চরিত্রের জনপ্রিয়তার আড়ালে হারাতে বসেছে তাঁর আসল নামটিই। সম্প্রতি ক্লাব ইলেভেনের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার শুরু হয়েছে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’- সিজন ফাইভ। নাটকটি প্রসঙ্গে তাঁর ভাষ্য ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নাটকটি নিয়ে প্রতিবারই ইতিবাচক-নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ছিল।
এবারে যেহেতু কাজটি ওটিটিতে এসেছে, তাই নতুন দর্শক কাজটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। নতুন যারা দেখছেন, তাদের কাছে এটি বেশি ভালো লাগছে। আবার অনেকেই বলছেন, ‘আগের ওই জিনিসটা মিস করছি’। আড়াই বছর পর শুট করেছি, তাই অনেক কিছুর বদল হয়েছে। প্রত্যেক নিজের জীবনেও তো এই লম্বা সময়ে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। কাবিলা জীবনেরও এসেছে। কাবিলা এখন আগের চেয়ে অনেক ম্যাচিউরড, সে ডিসিশন নিতে জানে। যদিও ফাঁপরবাজিটা আছে, তবে এবার সেটা আরও ইনোভেটিভ। তাঁর ঘরবাড়ির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। উন্নত হয়েছে জীবনযাত্রার মান। এরই মধ্যে মাত্র ৮টি পর্ব প্রচার হয়েছে। আরও ১১২টি পর্ব প্রচার বাকি। এই যে আমার জীবনযাপন পরিবর্তন হয়েছে, এর পেছনেও তো গল্প আছে। এটি ধাপে ধাপে দেখানো হবে। জীবনযাপনের পরিবর্তন, মানুষগুলোর হারিয়ে যাওয়ার সবকিছুর উত্তর আমরা নাটকে পাব।’
অভিনয় দিয়ে ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পেলেও পলাশ ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন পরিচালক হিসেবে। পরিচালনা দিয়েই দর্শকের মনে জায়গা করে নিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তিনি হুট করে হয়ে গেলেন অভিনেতা! একে একে অভিনয় করেছেন অসংখ্য দর্শকপ্রিয় নাটকে। পরিচালনায়ও দেখিয়েছেন মুনশিয়ানা।
অভিনয়ে জনপ্রিয়তা পেলেও নিজের পরিচালনা থেকে দূরে থাকেননি তিনি। ‘ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফি’, ‘সারপ্রাইজ’, ঘরে ফেরা’ ‘সন্ধ্যা ৭টা’সহ অনেক কাজই আলোচিত হয়েছে।
পলাশ বলেন, ‘অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি পেলেও নিজের ভেতর আমি একজন নির্মাতা। অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালক সত্তাটাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। নিজের ভাবনাগুলো পরিচালনার মাধ্যমে মানুষকে দেখাতে চাই। সে লক্ষ্যেই দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।’
বর্তমানে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ ফাইভ-এর শুটিং নিয়েই ব্যস্ত পলাশ। পাশাপাশি নতুন কয়েকটি কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। তাঁর নির্দেশনায় নতুন একটি বিজ্ঞাপন প্রচারের অপেক্ষায় রয়েছে। শিগগিরই ভিন্নধর্মী গল্পের নাটক পরিচালনায় তাঁকে দেখা যাবে।
নির্মাণ-অভিনয়ের বাইরে সামাজিক কাজেও নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। ‘ডাক বাক্স’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছেন তিনি। এর মাধ্যমে অসহায় পিছিয়ে পড়া মানুষকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এই অভিনেতা।
পলাশ বলেন, ‘ডাকবাক্স’ আমার একটি স্বপ্নের ফাউন্ডেশন। সমাজের বিত্তবান মানুষদের এ ফাউন্ডেশনের পাশে থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। এটি যে শুধু মানুষকে সাহায্য করে তা নয়, এটি দিয়ে মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করতে চাই। মানুষ যাতে নিজেদের কর্মসাধন করে নিজেরাই এখান থেকে পয়সা রোজগার করে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারে। এ কাজটি ডাকবাক্সের মাধ্যমে করতে চাই। আশা করছি, এ মহতী কাজে সবাইকে পাশে পাব।